পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) সাশ্রয়ী মূল্যের পণ্য কিনে বাস্তবে আর দাম সাশ্রয় হচ্ছে না। কারণ, একজন ক্রেতাকে মাথাপিছু দুই কেজি করে তেল, চিনি বা ডাল কেনার জন্য এর দ্বিগুণ অর্থাৎ চার কেজি করে পেঁয়াজ ও ছোলা কিনতে বাধ্য করছেন ডিলাররা। এ ‘প্যাকেজ’ ছাড়া তারা পণ্য বিক্রি করছে না। বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে দিন দিন টিসিবির ট্রাকের পেছনে সারি লম্বা হচ্ছে। প্রতিনিয়ত এই সারিতে যুক্ত হচ্ছে নতুন মুখ। চাহিদার চেয়ে ট্রাকগুলোতে পণ্য সরবরাহ কম থাকায় প্রতিদিন অনেক ক্রেতা পণ্য না পেয়ে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন।
গতকাল সোমবার রাজধানীর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় টিসিবির ট্রাকে বিক্রয়কর্মীদের সঙ্গে ক্রেতাদের এ নিয়ে বাগবিতন্ডা চলে। সেখানে ক্রেতারা অভিযোগ করে বলেন, ডিলারের বিক্রয়কর্মীরা চার কেজি পেঁয়াজ আর চার কেজি ছোলা না নিলে তেল চিনি ডাল দিচ্ছে না। প্যাকেজ ছাড়া বিক্রি করছে না। দুই কেজি তেল ও চিনির জন্য চার কেজি ছোলা ও পেঁয়াজ আমাদের গছানো হচ্ছে। এটা জুলুম।
এ বিষয়ে টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ূন কবির বলেন, পেঁয়াজ পচনশীল। টিসিবির কাছে বেশি পেঁয়াজ থাকায় সেটা বিক্রির জন্য দেওয়া হয়েছে। ছোলা রমজান উপলক্ষে বেশি দেওয়া হয়েছে। যেন একটি পরিবার একবার ছোলা কিনে পুরো রমজান খেতে পারে। তিনি বলেন, এখন ছোলা সবার প্রয়োজনীয়। সেজন্য সর্বোচ্চ চার কেজি বিক্রি করতে বলা হয়েছে ডিলারদের। তবে কেউ না নিলে সেজন্য জোর করা যাবে না।
এখন টিসিবিতে প্রতি লিটার ১১০ টাকা দরে দুই লিটার সয়াবিন তেল, ৫৫ টাকা দরে দুই কেজি চিনি, ৬৫ টাকা দরে দুই কেজি মসুর ডাল, ৫০ টাকা দরে চার কেজি ছোলা এবং ৩০ টাকা দরে চার কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীতে সোমবার ১৩৭টি ট্রাকসেলের মাধ্যমে এসব পণ্য বিক্রি হচ্ছে।
খুচরা বাজারে প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, প্রতি কেজি মসুর ডাল ১১০ থেকে ১৩৫ এবং চিনি প্রতি কেজি ৮০ টাকায় বিক্রি করা হয়। সেজন্য এসব পণ্য সাশ্রয়ী মূল্যে কিনতে টিসিবির ট্রাকে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে মানুষ। কিন্তু সেই সুযোগে পেঁয়াজ ও প্রয়োজনের অতিরিক্ত ছোলাও গছিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
অন্যদিকে রাজধানীর বাইরে ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে দুই কিস্তিতে ১ কোটি পরিবারের কাছে টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। প্রথম কিস্তি চলবে ২০-৩০ মার্চ এবং দ্বিতীয় কিস্তি চলবে ৩-২০ এপ্রিল। বাজারে নিত্যপণ্যের আগুন দাম থেকে নিম্ন আয়ের মানুষকে খানিকটা স্বস্তি দিতে এ প্রকল্প চালু করলেও সারাদেশেই হট্টগোল, ধাক্কাধাক্কি, কার্ড বিতরণ ও ডিলার নিয়োগে অনিয়ম, বিক্রি কার্যক্রমে বিলম্বসহ নানা অভিযোগের খবর পাওয়া গেছে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) জরিপ অনুযায়ী, করোনার কারণে দেশে দারিদ্র্যের হার ৪২ শতাংশে পৌঁছেছে। তবে সরকারি গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সর্বশেষ তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে দারিদ্র্যের হার ২৫ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রাক্কলন অনুযায়ী, দেশের মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি। দরিদ্র মানুষের সংখ্যা প্রায় চার কোটি ২৫ লাখ। আর বিআইডিএসের হিসাবে মোট জনসংখ্যার এক কোটি ৭০ লাখ মানুষ অতিদরিদ্র। সরকারি এই হিসাব আমলে নিলে অতি দরিদ্রদের মধ্যেই ৭০ লাখ মানুষ টিসিবির পণ্য কেনার সুবিধার বাইরে থেকে যাবে।
টিসিবির ট্রাক থেকে একজন ক্রেতা ১১০ টাকা দরে দুই লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল, ৫৫ টাকা দরে দুই কেজি চিনি ও ৬৫ টাকা দরে দুই কেজি বড় দানার মসুর ডাল কিনতে পারছেন। বর্তমানে বাজারে বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১৬৮ টাকা, প্রতি কেজি চিনি ৮০ টাকা ও বড় দানার মসুর ডাল ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সেই হিসাবে টিসিবির পণ্য কিনলে একজন ক্রেতার সাশ্রয় হচ্ছে আড়াইশ টাকার বেশি।
ফ্যামিলি কার্ড ও পণ্য কেনা নিয়ে নানা অভিযোগ : কুমিল্লার অনেকেই জানতেন না টিসিবির পণ্য ট্রাক থেকে কার্ডের মাধ্যমে কিনতে হবে। ফলে অনেকেই খালি হাতে ফিরেছেন। কিছু এলাকায় সারিতে কে কার আগে দাঁড়াবে তা নিয়ে লাগে হট্টগোল। কুমিল্লা নগরীর ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা কলি বেগম সকাল ৮টা থেকে দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা শেষে সাড়ে ১১টার দিকে জানতে পারেন তালিকায় তার নাম নেই। কেউ কেউ তালিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। স্থানীয় এমপি, সিটি মেয়র, পুরুষ ও নারী কাউন্সিলরের চার তালিকা সমন্বয় করতে গিয়ে শেষ পর্যায়ে অনেকেরই নাম বাদ পড়ে যায়। একই পরিবারের চারজন কার্ড পেয়েছেন-এমন অভিযোগও রয়েছে। একজনের নাম দু’বারও তালিকায় রয়েছে। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ও ১২, ১৩ ও ১৪ ওয়ার্ডের সংরক্ষিত কাউন্সিলর নুরজাহান আলম পুতুুল বলেন, আমার দেওয়া কার্ডপ্রাপ্তদের ফেরত দেওয়া হয়েছে। ফেরত আসা উত্তেজিত শতাধিক ব্যক্তি তার বাসার সামনে এসে বিক্ষোভ করেছেন। কার্ডে নাম না থাকায় চট্টগ্রামেও অনেক ক্রেতা পণ্য না পেয়ে ফিরে গেছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সদর উপজেলা যুবলীগ সভাপতি মো. আলী আজমের মোবাইল নম্বর দেখা গেছে পাঁচ ডিলারের তালিকায়। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের নামেও ডিলারশিপ থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সারিতে দাঁড়ানো নিয়ে হুড়াহুড়ি ও ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটেছে কুড়িগ্রামেও। সেখানেও কেউ কেউ পণ্য না পেয়ে কার্ড ছিঁড়ে চলে যান।
অনিয়মের ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, সারাদেশে একসঙ্গে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। জেলা প্রশাসকরা এর আগে এ ধরনের কাজ করেননি। তাই কোথাও কোথাও কিছু সমস্যা হয়ে থাকতে পারে। তবে এটা আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।