দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
পূর্ব প্রকাশিতের পর
বিদায়ী ছাত্র ছাত্রীদের জন্য র্যাগ ডে’র পরিবর্তে দোয়া অনুষ্ঠান আয়োজনের ব্যবস্থা করা:
একটা সময় ছিল স্কুল থেকে বিদায়লগ্নে ছাত্র ছাত্রীরা তাদের চোখের পানি ফেলত, কান্না করত। শিক্ষকদের কাছে তাদের ভুলত্রæটির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করত। সহপাঠীরা একজন অপরজনের সাথে সংঘটিত বিভিন্ন ভুলত্রæটির জন্য ক্ষমা চাইত। আর এখন র্যাগ ডের নাম দিয়ে ছাত্র ছাত্রী একে অপরের সাথে হাসাহাসি, আনন্দ-ফুর্তি ও রং মাখামাখি করে বিশ্রী ও অশ্লীল ভাষায় একে অপরের মন্তব্য করছে, যা খুবই দুঃখজনক। এই অপসংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে আমাদেরকে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ কর্তৃক র্যাগ ডে এর পরিবর্তে বিদায় অনুষ্ঠান “ দোয়া ও মিলাদ মাহফিল” নামে আয়োজনে ব্যবস্থা করতে হবে। আর এই অনুষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক অনুষ্ঠিত হতে হবে, ছাত্রদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় করা যাবে না। প্রতিষ্ঠান প্রধান এবং শিক্ষকমন্ডলীর পরামর্শ ও প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনার মাধ্যমে পরীক্ষার্থীগণ এই অনুষ্ঠান পরিচালনা করবে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, সেখানে অনুষ্ঠানটি কুরআনুল কারিমের তিলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু করার ব্যবস্থা করা। পরিশেষে ছাত্র-ছাত্রীর কামিয়াবির জন্য দোয়ার ব্যবস্থা করা।
সুশীল সমাজ ও প্রশাসনের দায়িত্ব ও ভ‚মিকা:
এই অপসংস্কৃতি শুরুতেই নির্মূল করার জন্য আমাদের প্রশাসনকে গুরুত্বের সাথে বিষয়টির প্রতি নজর দিতে হবে। এই অপসংস্কৃতি এখন আমাদের মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে চলে এসেছে, যা আমাদের জন্য চরম উদ্যোগের কারণ। আমাদের উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণীরা এই অপসংস্কৃতিতে গা ভাসিয়ে দিয়ে তাদেরকে বেহায়াপনা ও নির্লজ্জতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, যা কোন সুস্থ মস্তিস্কের অধিকারী সম্পন্ন অভিভাবকের কখনো কাম্য হতে পারে না। এসব অপসংস্কৃতি উচ্চমাধ্যমিক, মাধ্যমিক লেভেলের স্কুলগুলোতে যাতে বিস্তার লাভ করতে না পারে সেজন্য স্কুলের প্রধান শিক্ষক, কলেজর অধ্যক্ষ, উপজেলা পর্যায়ে নির্বাহী কর্মকর্তা, ওসি, থানা শিক্ষা অফিসার, জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা), পুলিশ সুপার, শিক্ষা অফিসার, ও সকল পর্যায়ের অভিভাবকদের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আমাদের সন্তানরা কোন পথে পরিচালিত হচ্ছে, তাদের ভবিষ্যৎ কি? এই ব্যাধির বিস্তার রোধে দ্রæত পদক্ষেপ না নিলে এই ব্যাধির জাতির রন্দ্রে রন্দ্রে ছড়িয়ে পড়বে যা দেশ ও জাতীর জন্য চরম ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়াবে।
শিক্ষার্থী যুব সমাজের দায়িত্ব ও কর্তব্য:
এই অপসংস্কৃতিটি রোধে প্রতিষ্ঠান প্রধান, শিক্ষক মহোদয়, প্রশাসন, সুশীল সমাজ ও অভিভাবকের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদেরকে জোরালো ভুমিকা রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের নি¤েœাক্ত বিষয়াবলীর প্রতি দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন।
আল্লাহর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস থাকা:
একজন শিক্ষার্থী সর্বদা আল্লাহর উপর পূর্ণ বিশ্বাস রাখবে। কারণ পরীক্ষা এটাও এক প্রকার মুসিবত। তাই মুসিবতের সময় আনন্দ-ফুর্তি না করে বরং আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা রেখে আল্লাহর কাছে বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য প্রার্থনা করাই হচ্ছে একজন শিক্ষার্থীর মূল কর্তব্য। তাই তারা সবসময় আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখে এই বিপদ থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপসহ আপ্রাণ চেষ্টা করবে ও ভালো-মন্দ সবকিছু আল্লাহর উপর ন্যস্ত করবে। কোন কিছুতেই কখনো হতাশ হবে না। সবকিছু আল্লাহর ফয়সালা হিসেবে মেনে নিবে।
ইবাদত বন্দেগিতে আত্মনিয়োগ:
একজন শিক্ষার্থী মুসলমান হোক অথবা অন্য যে ধর্মের অনুসারী হোক, তাকে ধর্মীয় রীতিনীতি যথাযথভাবে পালন করতে হবে। মুসলমানগন মহান আল্লাহর ইবাদত তথা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতে আদায় করার চেষ্টা করবে। অন্যান্য ধর্মাবলম্বীগণ তাদের ধর্মীয় রীতিনীতি অনুযায়ী নিজেদের মধ্যে ধর্ম চর্চা করবে। সর্বদা মানুষের উপকার করার চেষ্টা করতে হবে। কাউকে কোন প্রকার কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকবে। সৃষ্টি, সমাজ ও জাতীর সেবা করবে, তাহলেই প্রভুর সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভব হবে। আর ইবাদত-বন্দেগী করলে আত্মতৃপ্তি লাভ হয়, তখন মনও প্রফুল্ল থাকে।
আল্লাহর দয়া ও সাহায্য প্রার্থনা করা:
আল্লাহর দয়া ও সাহায্য ছাড়া কোনো মানুষ কখনই সফলকাম হতে পারে না। মানুষ সবসময় আল্লাহর দয়া ও সাহায্যের উপর নির্ভরশীল। একজন মানুষ বিপদে পড়লে সর্বপ্রথম তিনি আল্লাহকে স্মরণ করেন এবং আল্লাহর কাছে ঐ বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য দোয়া করেন। একজন শিক্ষার্থীও তার ব্যতিক্রম নয়। তাকেও আল্লাহর দয়া ও সাহায্য নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। তাই শিক্ষার্থীসহ সকল মুসলমান সর্বদা ইবাদত-বন্দেগী করার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে পূর্ণ সাহায্য ও সহযোগিতা কামনা করবে। কামিয়াবির জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া ও সাহায্য প্রার্থনা করবে। কোন অবস্থাতে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগী ছেড়ে দিবে না।
আউলিয়ায়ে কেরামদের ওসিলা নিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করা:
আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করার ক্ষেত্রে আল্লাহর মকবুল বান্দাদের বেছে নেয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে আল্লাহর আউলিয়াদের মাজার জিয়ারত করে তাদের ওসিলা নিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া এবং সাহায্য প্রার্থনা করবে, যাতে আল্লাহ পাক দোয়া কবুল করেন এবং কাজটি যাতে তার জন্য সহজ দেন। আমরা প্রতিনিয়ত এভাবে করে আসছি, কোন ভাল কাজ শুরু করার পূর্বে আল্লাহকে স্মরণ করে আউলিয়ায়ে কেরামের মাজার জিয়ারত করার মাধ্যমে শুরু করি। এই কাজের বরকতও অপরিসীম। তাই সর্বদা শিক্ষার্থীদের উচিত, ইবাদত-বন্দেগী করার পাশাপাশি পীর, মুর্শিদ, উস্তাদ, মুরব্বি এবং আল্লাহর আউলিয়ায়ে কেরামেরদের সান্নিধ্য গমন করা। মুরব্বিদের দোয়াও একজন শিক্ষার্থী সফলতার অন্যতম কারণ হতে পারে।
মা-বাবার খেদমত করার মাধ্যমে দোয়া নেয়া:
একজন শিক্ষার্থী সে সর্বদা মা-বাবার খিদমত করে মা-বাবাকে রাজি করার চেষ্টা করবে। কারণ মা-বাবাই হচ্ছে সন্তানের জন্য বড় নিয়ামত। প্রত্যেক মা-বাবা চাই তাদের সন্তান বড় হয়ে আদর্শ মানুষ হোক, তার দ্বারা দেশ ও জাতি উপকৃত হোক। তার সুনাম চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়–ক। মা-বাবার এই আশা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীদেরকে তাদের পড়ালেখা চালিয়ে যেতে হবে। যাতে সে মা-বাবার স্বপ্ন পূরণ বাস্তবায়ন করতে পারে। এজন্য প্রথমত মা-বাবা স্বপ্ন পূরণে যথেষ্ট আন্তরিক ও সচেষ্ট হবে। সর্বোচ্চ চেষ্টা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে স্বপ্ন বাস্তবায়নে এগিয়ে যেতে হবে। শিক্ষার্থী ভাল ফলাফল অর্জন করলে সমাজে নিজের সুনামের পাশাপাশি শিক্ষক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মা-বাবার মুখও উজ্জ্বল হয়, এটাই মা-বাবার একমাত্র চাওয়া হয়ে থাকে।
আত্মীয়-স্বজন ও প্রবীণ মুরব্বিদের দোয়া নেয়া:
আমরা আমাদের অগ্রজদের কাছ থেকে শিখেছি, তারা পরীক্ষা দেয়ার জন্য ঘর হতে বের হওয়ার সময় মা-বাবা এবং মুরব্বীদেরকে কদমবুচি করে ঘর থেকে বের হতেন এবং সকলের কাছে দোয়া নিতেন। আমরাও এরকম করে আসছি, এখনও পর্যন্ত যদি পরীক্ষা দিতে যাই তাহলে আমাদের মা-বাবা এবং মুরব্বীদের কদমবুচি করে ঘর থেকে বের হই এবং তাদের দোয়া কামনা করি। আর এখনকার ছাত্রদের অবস্থা দেখলে মনে হয়,পরীক্ষাটা তাদের কাছে চিন্তার কোন কারণ নয়, বরং পরীক্ষাটা আনন্দ-ফুর্তির বিষয়। যুগের বিবর্তনে এসব আদব-শিষ্টাচার উঠে যাচ্ছে, যা মোটেও সুন্দর আদর্শ নয়।
মনোযোগ সহকারে পড়াশোনা করা:
একজন শিক্ষার্থীর প্রধান কাজ হচ্ছে পড়াশোনা করা। নিজেকে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করে তোলাই হল একজন শিক্ষার্থীর প্রধান কাজ। শিক্ষার্থীদেরকে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে যাবতীয় দিক নিদের্শনা ও পরামর্শ প্রদান করবেন অভিভাবক ও শিক্ষকগণ। তাদের কোন বিষয়ের ঘাটতি থাকলে, সাথে সাথে তার সমাধান দেয়ার চেষ্টা করবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। তাদেরকে পড়াশুনার কাজে ব্যস্ত রাখাই হচ্ছে একজন অভিভাবক ও শিক্ষকের মূল কাজ। তাদেরকে পড়াশোনা কি জিনিস! সেটা ভালোভাবেই বুঝিয়ে দিতে পারলেই তারা নিজেরা নিজেদের প্রস্তুতি ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে অভিভাবক ও শিক্ষকদের সহযোগিতা কামনা করবে। সেক্ষেত্রে অভিভাবক ও শিক্ষকগণ সফল হবেন শতভাগ।
মোবাইল ফোন বা আড্ডায় সময় নষ্ট না করা:
শিক্ষার্থীদের মধ্যে মোবাইল ফোন ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক্ষেত্রে অভিভাবকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনে মোবাইল ফোন ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে তা যেন দীর্ঘ সময়ব্যাপী না হয়। কারণ পড়াশোনা বইয়ে, মোবাইলে নয়। শিক্ষার্থী আপনাকে মোবাইল নিয়ে পড়াশোনা করার কথা বলে অথচ দেখা যায় সে মোবাইল নিয়ে গেম বা অন্যান্য সাইটে লগিনে ব্যস্ত। সর্বক্ষণ মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকা কখনো কোনো শিক্ষার্থীর কাজ হতে পারে না। এমন যাতে না হয় বই বাদ দিয়ে ছেলে পড়াশোনার নাম দিয়ে সর্বক্ষণ মোবাইল ব্যবহার করছে। তাদেরকে মোবাইলের সর্বাধিক ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষক মহোদয়ও ভ‚মিকা রাখতে পারেন।
লেখক: সহকারি মাওলানা, চরণদ্বীপ রজভীয়া ইসলামিয়া ফাযিল (ডিগ্রি) মাদরাসা বোয়ালখালী, চট্টগ্রাম।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।