পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
![img_img-1719815764](https://old.dailyinqilab.com/resources/images/cache/169x169x3_1678437663_IMG-20230310-WA0005.jpg)
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশেষ সংবাদদাতা : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয় বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার অন্যতম দ-প্রাপ্ত রাশেদ চৌধুরীকে অবিলম্বে বাংলাদেশের কাছে ফিরিয়ে দিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি দাবি জানিয়েছেন।
নিউইয়র্ক টাইমসে গত সোমবার প্রকাশিত জয়ের লেখা একটি নিবন্ধে বলা হয়,আমাদের জানামতে রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থীর মর্যাদা পায়নি। অতএব সে প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া মুক্ত নয়। তাকে প্রত্যর্পণের বিলম্ব করার আর কোন যুক্তি নেই। এ বিষয়টি নিষ্পত্তিতে বাংলাদেশের অনুরোধে যুক্তরাষ্ট্রের সাড়া দেয়া উচিত, যাতে বিচার সম্পন্ন করা যায়। তিনি লিখেন এই হত্যাকা-ের ঘটনায় ১৯৯৮ সালে ১৫ জন সামরিক কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করা হয়। আপিল ও অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষে আদালত ২০০৯ সালে চূড়ান্ত রায়ে ঘাতকদের মৃত্যুদ-ের রায় বহাল রাখেন। এখানেই কাহিনীর শেষ নয়।
মামলা শুরুর আগেই ১৯৯৬ সালে রাশেদ চৌধুরী বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া অপর কয়েকজন ষড়যন্ত্রকারীর সঙ্গে যোগ দেয়। সে সানফ্রান্সিসকোতে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করে। কিন্তু তার অভিবাসন অবস্থা পরিষ্কার নয়। এরপর থেকে সে লসএ্যাঞ্জেলস ও শিকাগোতে বসবাস করে আসছে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ সরকারের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও সরল দৃষ্টিতে চৌধুরী লুকিয়ে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের উচিত তাকে আশ্রয় না দেয়া। রাশেদ চৌধুরীকে বাংলাদেশে প্রত্যর্পণ করা হলে তাকে মৃত্যুদ- মোকাবেলা করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো বাংলাদেশও রাষ্ট্রদ্রোহিতা, সন্ত্রাস ও নৃশংস হত্যাকা-ের মারাত্মক অপরাধের জন্য মৃত্যুদ- অনুমোদন করে।
আমেরিকায় আশ্রয় প্রার্থনাকারীদের মধ্যে সেই একমাত্র ঘাতক ছিল না, লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদও ছিল। ২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত মহিউদ্দিনের স্থায়ীভাবে বসবাস করার আবেদন নাকচ করে দেয়ার পর তাকে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয় এবং অপর চারজনের সঙ্গে তার সাজাও কার্যকর করা হয়।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এক সামরিক অভ্যুত্থানে বাংলাদেশের নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়। সৈন্যরা প্রেসিডেন্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবনে হামলা চালিয়ে পরিবারের অপর ১৮ জন সদস্যের সাথে আমার নানাকেও গুলি করে হত্যা করে। তাদের মধ্যে আমার নানি, তিন মামা এবং আমার গর্ভবতী মামিও ছিলেন। আমার মা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জার্মানিতে তার বোনের সাথে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান।
আমার পরিবারের ঘাতকদের একজন রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রের লিবার্টিতে বসবাস করছে। ঢাকার আদালতে এই হত্যাকা-ের ঘটনায় তার বিচার হয়েছে।
রাশেদ চৌধুরী ১৯৯৬ সালের পর থেকে পলাতক থাকায় তার অপরাধের শাস্তি পায়নি। বাংলাদেশ ২০০০ সালের পর থেকে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে আসছে এবং প্রায় দেড় দশকের অধিক সময় অপেক্ষা করছে। তাকে বিচারের মুখোমুখি করতে দেশে পাঠাতে হবে।
আমার নানা যখন খুন হন, তখন আমার বয়স ছিল চার বছর। তার মৃত্যুতে আমার ও আমার পরিবারের জন্য ব্যক্তিগত ক্ষতির চেয়েও অনেক বেশি ক্ষতি হয়েছে। আমাদের সমগ্র জাতি শোকাহত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের জাতির পিতা এবং প্রথম প্রেসিডেন্ট। তিনি বঙ্গবন্ধু হিসাবে অধিক পরিচিত।
তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। এটি আমার জন্মের বছর। রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সময়ে পাকিস্তানী সেনারা এবং তাদের এ দেশীয় দোসররা ১১ মাসে ত্রিশ লাখ বাঙালিকে হত্যা করে। আন্তর্জাতিকভাবে এটি গণহত্যা হিসাবে স্বীকৃত।
আমার নানাকে হত্যা করার পর দেশে রাজনৈতিক বিশৃংখলা ও সামরিক শাসন চলে। সামরিক জান্তা অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসে ঘাতকদেরকে রক্ষা করে। এই হত্যাকা-ের প্রধান সুবিধাভোগীদের একজন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান। তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি শুধুমাত্র এই হত্যাকা-ের বিচারে বাধা সৃষ্টি করেননি, তাদের নিরাপত্তাও দিয়েছেন। তাদেরকে সরকারে এবং কূটনৈতিক মিশনে গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছেন।
যখন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও আমার মা শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আরোহণ করে প্রধানমন্ত্রী হন শুধুমাত্র তখনই হত্যাকা-ের বিচার শুরু হয়। দ্রুত রায় বাস্তবায়নের জন্য জনগণের পক্ষ থেকে চাপ ছিল, কিন্তু আমার মা জানতেন শুধুমাত্র রায় বাস্তবায়ন করলেই চলবে না। সবার চোখে ন্যায্যভাবে তা প্রদর্শিত হতে হবে। রায় বাস্তবায়নে আইনের শাসন মেনে সকল প্রকার স্বচ্ছতা অনুসরণ করা হয়। সাংবিধানিক সকল সুরক্ষার সুযোগ দিয়ে হত্যাকারীদের বেসামরিক আদালতে বিচার করা হয়।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যাকা-ের সাথে জড়িত ও সাজাপ্রাপ্ত ১২ জনের মধ্যে ৫ জনের মৃত্যুদ- ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া শেষে কার্যকর হয়। অপর ৬ জন মাথার উপর ফাঁসির রায় নিয়ে বিদেশে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
তারা হলো- আব্দুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, নুর চৌধুরী, মোসলেম উদ্দিন, রাশেদ চৌধুরী ও আব্দুল মাজেদ। অন্য এক দ-প্রাপ্ত আব্দুল আজিজ পাশা ২০০১ সালে জিম্বাবুয়েতে পলাতক থাকা অবস্থায় মারা যায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।