Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অনুসন্ধানে সারা দেশে অভিযান

ভোজ্যতেলের মজুত

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৪ মার্চ, ২০২২, ১২:০৩ এএম

রমজান মাস টার্গেট করেই দাম বাড়াতে ভোজ্যতেলের ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। তবে মুনাফাখোর সিন্ডিকেটদের গ্রেফতারে মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এ ধারাবাহিকতায় গতকাল রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ২৩টি জেলায় নিত্যপণ্যের বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। অভিযানে বিভিন্ন অপরাধে ৫৫টি প্রতিষ্ঠানকে ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। গতকাল দিনব্যাপী অভিযান চালিয়ে এসব জরিমানা করা হয়। গতকাল ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমন তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের প্রধান কার্যালয়, বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়ের ২৫ জন কর্মকর্তার নেতৃত্বে ঢাকা মহানগরসহ দেশের ২৩টি জেলায় বাজার তদারকি কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
এতে আরও বলা হয়, ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ অনুযায়ী ঢাকা মহানগরের তেজগাঁও এবং শান্তিনগরসহ দেশব্যাপী মোট ২৬টি বাজার ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পরিচালিত তদারকি কার্যক্রমের মাধ্যমে ভোক্তা-স্বার্থবিরোধী বিভিন্ন অপরাধে ৫৫টি প্রতিষ্ঠানকে ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা আরোপ ও আদায় করা হয়। জনসচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে লিফলেট বিতরণসহ হ্যান্ডমাইকে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হয়।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, স্বাস্থ্য বিভাগ, কৃষি বিভাগ, মৎস্য বিভাগ, কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)’সহ সংশ্লিষ্ট শিল্প বণিক সমিতির প্রতিনিধিরা অধিদপ্তর পরিচালিত এসব অভিযানে সহযোগিতা করেন। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ অনুযায়ী ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ নিশ্চিতকরণসহ স্থিতিশীল বাজার ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছেন।
এদিকে, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে শবনম অয়েল মিল নামে একটি সয়াবিন তেল কারখানা মনিটরিং করেছেন ভোক্তা অধিদফতরের কর্মকর্তরা। গতকাল রোববার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপজেলার তারাবো বাজার এলাকায় এ মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের পরিচালক মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারের নেতৃত্বে এ সময় উপ-নির্দেশক বিকাশ চন্দ্র দাস, সফিউল এথার তাসলিমসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, আমরা বিভিন্ন কারখানায় মনিটরিং, তথ্য যাচাই-বাছাই ও তদারকি শুরু করেছি। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মূল্য বাড়িয়েছে কিনা সেটিও মনিটরিং করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষের কাছে বাজারে সয়াবিন তেল নেই বলে যে তথ্য ছড়ানো হয়েছে সেটি পুরোপুরি গুজব। প্রত্যেক মিলের সরবরাহ স্বাভাবিক আছে। কিন্তু কিছু মিল মালিক অধিক মুনাফার আশায় বাজারে তেল সঙ্কট দেখাচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, একটি উচ্চ পর্যায়ের মহলের কারসাজিতে বাজারে তেলের মূল্য বাড়ছে। আমরা সব মিলের গত তিন মাসের উৎপাদন ও সরবরাহের তালিকা তৈরি করেছি এবং এই প্রতিবেদন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেব।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, ভোজ্যতেল নিয়ে তেলেসমাতি ঠেকাতে সরকারের নজরদারির অংশ হিসেবে চট্টগ্রামের এস আলম এডিবল অয়েল মিলে অভিযান চালিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। এ সময় কারখানায় সয়াবিন বোতলজাতকরণ বন্ধ পাওয়া যায়। বোতলে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি লিখে রাখার প্রমাণও যায় ভোক্তা অধিদফতর।
গতকাল রোববার অধিদফতরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপ-পরিচালক মো. ফয়েজুল্লাহর নেতৃত্বে একটি দল কর্ণফুলী সেতুর ওপারে মইজ্জার টেকে এস আলমের ওই মিলে অভিযানে যায়। অধিদফতরের কর্মকর্তারা সেখানে সয়াবিন তেলের বোতলজাতকরণ কার্যক্রম বন্ধ দেখতে পান। তবে তাদের মিলে খোলা সয়াবিন ও পাম তেল সরবরাহ প্রক্রিয়া স্বাভাবিক ছিল। প্রতিদিন ট্রাকে করে সয়াবিন ও পাম তেল মিলের বাইরে যাচ্ছে।
উপ-পরিচালক ফয়েজুল্লাহ সাংবাদিকদের জানান, সয়াবিন তেলের মূল্যবৃদ্ধি বা মজুদের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানের সময় সয়াবিন তেলের পাঁচ লিটারের একটি বোতলের গায়ে বাড়তি দাম লেখা দেখতে পেয়েছেন জানিয়ে ফয়েজুল্লাহ বলেন, ওই বোতলের মোড়কে ৮৩৫ টাকা লেখা ছিল। কিন্তু সরকারি হিসেবে হওয়ার কথা ৭৯৫ টাকা। কারখানার লোকজন বলেছে, আগের হিসেবে মোড়কে এ দাম লেখা ছিল। সেসব বোতল বাজারে যায়নি। প্রাথমিকভাবে বিষয়টি দেখতে পাওয়ায় তাদের এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে।
কারখানায় সয়াবিন বোতলজাত করার কাজ বন্ধ রয়েছে। রিফাইনিং মেশিনের সার্ভিসিংয়ের জন্য বোতলজাতকরণ কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে বলে কারখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। আগামী দুই দিনের মধ্যে তাদের তেল বোতলজাত প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু হবে বলে আশ্বাস দিয়েছে। তবে কার্যক্রম বন্ধ রাখার বিষয়টি খতিয়ে দেখার কথা জানিয়ে ফয়েজুল্লাহ বলেন, এ ব্যাপরে ঢাকায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দেব।
ওই মিলে সয়াবিন তেলের ঘাটতি দেখেননি জানিয়ে উপ-পরিচালক বলেন, খোলা সয়াবিন ও পাম তেল নির্দিষ্ট ডিও অনুসারে মিলের বাইরে যাচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে ২৮০টির মত ট্রাক মিল থেকে বাইরে যাচ্ছে বলে জানানো হয়েছে। চট্টগ্রামে সয়াবিন তেলের কোন ঘাটতি নেই দাবি করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ফয়েজুল্লাহ বলেন, সররবরাহও এখন ঠিক আছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ার দোহাই দিয়ে গত কিছুদিন ধরেই দেশে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানো হচ্ছিল। এ পরিস্থিতিতে বাজারে নিয়ন্ত্রণ ফেরাতে গত বৃহস্পতিবার সয়াবিনে ২৫ শতাংশ ভ্যাট মওকুফের ঘোষণা দেয় সরকার। পাশাপাশি বাজারে ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে অভিযান শুরু করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। তবে এত কিছুর পরও বাজারে ভোজ্য তেলের দাম বাড়ছে হু হু করে। এতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। তেল ছাড়া রান্নার উপায় খুঁজছে নিম্ন আয়ের মানুষ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভোজ্যতেলের মজুত
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ