Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মূলধন ঘাটতিতে ১০ ব্যাংক

নানা অনিয়মের কারণে ব্যাংকগুলো সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারেনি : ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১২ মার্চ, ২০২২, ১২:০০ এএম

খেলাপি কমাতে বিশেষ সুবিধা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দেওয়া হয়েছে ঋণ পরিশোধের ছাড়। তারপরও ব্যাংক খাতে লাগামহীন বেড়েছে খেলাপি ঋণ। ফলে এসব মন্দ ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে গিয়ে বড় আকারে মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে সরকারি-বেসরকারি ১০ ব্যাংক। ডিসেম্বর শেষে মূলধন ঘাটতিতে থাকা ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী, জনতা, রূপালী, অগ্রণী, বেসিক ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর মধ্যে মূলধন ঘাটতি রয়েছে বাংলাদেশ কমার্স, আইসিবি ইসলামিক ও ন্যাশনাল ব্যাংকের।
আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং রীতি ব্যাসেল-৩ অনুযায়ী ঝুঁকি বিবেচনায় ব্যাংকগুলোকে নিয়মিত মূলধন সংরক্ষণ করতে হয়। বর্তমান নিয়মে ব্যাংকগুলোকে ৪০০ কোটি টাকা অথবা ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশের মধ্যে যা বেশি সেই পরিমাণ অর্থ নূন্যতম মূলধন হিসেবে সংরক্ষণ করতে হয়। এর বাইরে আপৎকালীন সুরক্ষা সঞ্চয় হিসেবে ব্যাংকগুলোকে ২০১৬ সাল থেকে অতিরিক্ত মূলধন রাখতে হচ্ছে। ব্যাসেল-৩ অনুযায়ী নূন্যতম যে মূলধন থাকা প্রয়োজন, ১০ ব্যাংকের তা নেই।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো বড় বড় আর্থিক কেলেঙ্কারির পর এখন পর্যন্ত ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। এজন্য দীর্ঘদিন ধরেই তাদের মূলধন সংকট চলছে। আর সরকারি মালিকানাধীন বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণে অনিয়ম ও বেশি সুদে তহবিল নিয়ে কম সুদে ঋণ দেওয়ার ঘাটতিতে পড়েছে। অন্যদিকে অনিয়ম-জালিয়াতির কারণে বেসরকারি কয়েকটি ব্যাংক প্রয়োজনীয় মূলধন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে।
ব্যাংকগুলো গ্রাহকের আমানতের অর্থ থেকে ঋণ দেয়। সেই ঋণ খারাপ হয়ে পড়লে আইন অনুযায়ী নির্দিষ্ট হারে নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে হয়। আবার খারাপ ঋণের ওপর অতিরিক্ত মূলধন রাখার বাধ্যবাধকতাও রয়েছে। কাক্সিক্ষত মুনাফা করতে না পারা ও লাগামহীন খেলাপি ঋণের কারণে দীর্ঘদিন ধরে বেশ কিছু ব্যাংক মূলধন সংরক্ষণে করতে পারছে না। ফলে মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে।
নিয়ম অনুযায়ী যে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ যত বেশি, ওই ব্যাংককে ততবেশি মূলধন রাখতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক তথ্য বলছে, ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা। হিসাব করলে যা দাঁড়ায় মোট বিতরণকৃত ঋণের ৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ। ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশের খেলাপি ঋণ ছিল ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা যা মোট ঋণের ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ। সেই হিসাবে এক বছরের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৪ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা। এতে মূলধনের প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে।
মূলধন ঘাটতি প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, নানা অনিয়মের কারণে সরকারি ব্যাংকগুলো যে সমস্যায় পড়েছে তা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এছাড়া ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ আদায়ে কোনো উদ্যোগ নেই। তাদের কেউ চাপ দিচ্ছে না। জবাবদিহিতাও নেই। নিজেদের ইচ্ছে মত চলছে। আদায় না হওয়ায় খেলাপি ঋণ বাড়ছে। নিয়ম অনুযায়ী খেলাপির বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে গিয়ে মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে।
তিনি বলেন, ঘাটতি কমাতে ঋণ আদায়ে বিকল্প কিছু নেই। এজন্য ঋণ আদায়ে টার্গেট বেঁধে দেওয়া উচিত। যদি কেউ তা অর্জন করতে না পারে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে ঢালাও সুযোগ-সুবিধাও কমিয়ে দিতে হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, ডিসেম্বর শেষে বিশেষায়িত খাতের দুইসহ রাষ্ট্রায়ত্ত সাত ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ৩১ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১২ হাজার ৪২৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ঘাটতি বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জনতার মূলধন সংকট চার হাজার ২৫৬ কোটি ১২ লাখ টাকা। এছাড়া অগ্রণী ব্যাংকে তিন হাজার ৮৭৭ কোটি ১৫ লাখ টাকা, সোনালীর তিন হাজার ৬৩৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা, রূপালী তিন হাজার ৩৭ কোটি ৭৭ লাখ, বেসিক দুই হাজার ৫২৯ কোটি ৭০ লাখ এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ঘাটতি এক হাজার ৬৬৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা।
বেসরকারি খাতের তিনটি ব্যাংকের মূলধন সংকট ৩ হাজার ২০৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের ঘাটতি ১ হাজার ৬৬১ কোটি ৩২ লাখ টাকা, বাংলাদেশ কমার্সের ১ হাজার ৮৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা এবং ন্যাশনাল ব্যাংকে ৪৫৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে ১০ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৪ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা।



 

Show all comments
  • Shorab Hossain ১২ মার্চ, ২০২২, ৬:৫৫ এএম says : 0
    বাংলাদেশের মত ছোট একটা দেশে দেশী ও বিদশী মিলিয়ে মোট ব‍্যাংকের সংখ‍্যা 62।আমার পাশের দেশ ভারতে ও এত ব‍্যাংক নেই।
    Total Reply(0) Reply
  • Abul Bashar Rana ১২ মার্চ, ২০২২, ৬:৫৫ এএম says : 0
    এই ১০ ব্যাংক কোন কোন টি। নামটা দিন। আগে থেকে সাবধান হই।
    Total Reply(0) Reply
  • Na Zmul ১২ মার্চ, ২০২২, ৬:৫৫ এএম says : 0
    আরে উন্নয়ন হইছে তো। টাকা না থাকলে কি যায় আসে। আমরা এখন সিংগাপুর
    Total Reply(0) Reply
  • M. Ariful Islam ১২ মার্চ, ২০২২, ৬:৫৫ এএম says : 0
    এসবের জন্য একমাত্র বাংলাদেশ ব্যাংক দায়ী
    Total Reply(0) Reply
  • Ibrahim Khalil ১২ মার্চ, ২০২২, ৬:৫৬ এএম says : 0
    ঘাড়তি হলে ব্যাংকগুলা এখন বন্ধ করে দিন। অন্যান্য কোম্পানির মতো করে। কোন ব্যাংক যদি ঘাড়তিতে থাকে তাহলে তারা কি ভাবে ব্যাংক পরিচালনা করবে? এখানে গ্রাহকের টাকার সুরক্ষা কতটুকু?
    Total Reply(0) Reply
  • Robin DK ১২ মার্চ, ২০২২, ৬:৫৬ এএম says : 0
    পভিশন ঘাটতির মূল কারন,, বিনা তথ্যে ঘুষের মাধ্যমে ঋণ পাস করা,, মাত্রা অতিরিক্ত ঋণ দেওয়ার কারনে পভিশন রাখার অর্থ নেই।। করাকরি ভাবে পভিশন বাড়ানো না গেলে অচিরেই বিশাল পরিমান মূলধনে ঘাটতি দেখা যা
    Total Reply(0) Reply
  • সালাহ্উদ্দিন খোকন ১৩ মার্চ, ২০২২, ২:১০ পিএম says : 0
    এত বেসরকারি ব্যাংক কাদের স্বার্থে খোলার অনুমতি দিচ্ছেসরকার
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কেন্দ্রীয় ব্যাংক

২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ