পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রতি বছর বাংলাদেশে প্রায় ১৯ হাজার মানুষ পানিতে ডুবে মারা যায়। তার মধ্যে ১০ হাজারই থাকে পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশু। শিশুদের এভাবে প্রাণহানি রোধে এবার প্রকল্প নিয়েছে সরকার। এ প্রকল্পের মাধ্যমে শিশুদের প্রারম্ভিক বিকাশের কার্যক্রমও পরিচালিত হবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়। গ্রামাঞ্চলে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত বাবা-মায়েরা যখন কাজে ব্যস্ত থাকেন তখন শিশুরা বেশি পানিতে ডুবে মারা যায়। এজন্য ওই সময়টা শিশুদের নির্দিষ্ট স্থানে রাখতে পারলে এই মৃত্যুহার অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব বলে প্রস্তাবনায় বলা হয়।
গত ২২ ফেব্রæয়ারি একনেকে (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি) ‘ইন্টিগ্রেটেড কমিউনিটি বেইজড সেন্টার ফর চাইল্ড কেয়ার, প্রটেকশন অ্যান্ড সুইম-সেইফ ফ্যাসিলিটিজ’ নামে প্রকল্পটি অনুমোদন পেয়েছে। তিন বছর মেয়াদি এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২৭১ কোটি ৮২ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। বেসরকারি সংস্থা ও সরকারের অন্যান্য দফতরের সহায়তায় মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় শিশু একাডেমির মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এই প্রকল্পের আওতায় দেশের ১৬ জেলার ৪৫টি উপজেলায় আট হাজার শিশু যতœকেন্দ্র করা হবে। গবেষণা মোতাবেক পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর ঝুঁকিপূর্ণ সময় অর্থাৎ সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত শিশুরা এসব কেন্দ্রে থাকবে। কেন্দ্রে পাঁচ ঘণ্টা থাকার সময় শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশের সহায়ক নানা শিক্ষা ও বিনোদনমূলক কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এই ৪৫ উপজেলায় এক থেকে পাঁচ বছর বয়সি দুই লাখ শিশু কার্যক্রমটির আওতায় আসবে। একই সঙ্গে এই ৪৫ উপজেলায় ছয় থেকে ১০ বছর বয়সি তিন লাখ ৬০ হাজার শিশুকে সাঁতার শেখানো হবে। এছাড়া প্রকল্পের আওতাভুক্ত অঞ্চলের দুই লাখ মা-বাবাকে সচেতন করা হবে, যেন তারা শিশু যতœ, সুরক্ষা এবং বিকাশে ভ‚মিকা রাখতে পারেন। গত ২০১৬ সালে স্বাস্থ্য অধিদফতরের বাংলাদেশ হেলথ ও ইনজুরি সার্ভে রিপোর্ট অনুযায়ী, ইনজুরি বা আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মৃত্যুর ক্ষেত্রে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে পানিতে ডুবে মৃত্যু। ইনজুরি বা আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মৃত্যুর মধ্যে ১১ দশমিক ৭ শতাংশ পানিতে ডুবে মারা যায়। জরিপ অনুযায়ী, প্রতিদিন ৪০টি শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। এছাড়া প্রতি বছর বাংলাদেশে সব বয়সের প্রায় ১৯ হাজার মানুষ পানিতে ডুবে মারা যায়। এর মধ্যে ১০ হাজারই থাকে পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশু।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডবিøউএইচও) গেøাবাল রিপোর্ট অন ড্রাউনিংয়ে বলা হয়, বাংলাদেশে এক থেকে চার বছরের শিশু মৃত্যুর ক্ষেত্রে ৪৩ শতাংশই মারা যায় পানিতে ডুবে। পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু রোধে বেসরকারি সংস্থার কিছু উদ্যোগ থাকলেও এতদিন সরকারের দৃষ্টিগ্রাহ্য কোনো কার্যক্রম ছিল না। ডুবে শিশুমৃত্যু রোধ এবং শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশ নিয়ে এই প্রথম বড় আকারে প্রকল্প নিলো সরকার। পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু রোধে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা ও বিশেষজ্ঞরা সরকারের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। ডুবে শিশুমৃত্যু রোধে আশার আলো দেখছেন তারা। এ বিষয়ে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন, পরিকল্পনা ও পরিসংখ্যান) অনুবিভাগ মহিউদ্দীন আহমেদ
বলেন, প্রকল্পটি একনেকে পাস হয়েছে। রেজুলেশন অনুমোদনের পর আমরা যখন পাবো, এরপর কাজ শুরু হয়ে যাবে। প্রকল্প পরিচালক বা পিডি নিয়োগ দেয়া হবে। আমাদের দিক থেকে অন্যান্য পদগুলো পূরণ করে দেব। তিনি বলেন, বিষয়টিতে আমাদের নজর ছিল না, সেই বিষয়ে আমরা কাজ শুরু করতে যাচ্ছি। এটা খুবই আনন্দের বিষয়।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে অনেক শিশু পানিতে ডুবে মারা যাচ্ছে। প্রকল্প নেওয়ার আগে গবেষণা হয়েছে। কোন শিশুটি ঝুঁকিপূর্ণ, তা সেখানে উঠে এসেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রামাঞ্চলে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত বাবা-মায়েরা যখন কাজে ব্যস্ত থাকেন তখন শিশুরা বেশি পানিতে ডুবে মারা যায়। এজন্য ওই সময়টা শিশুদের নির্দিষ্ট স্থানে রাখতে পারলে এই মৃত্যুহার অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব। একই সঙ্গে ওই সময়টায় শিশুদের শিক্ষামূলক নানা কর্মকাÐে রাখা যেতে পারে, যেন শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশটা হয়। সেই অনুযায়ী নতুন প্রকল্পটি নেয়া হয়েছে।
৪৫ উপজেলায় নেয়া হবে প্রকল্প : দেশের ১৬ জেলা তথাÑ বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, ল²ীপুর, নরসিংদী, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা, শেরপুর, সিরাজগঞ্জ, নীলফামারী, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ জেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
বাংলাদেশ শিশু একাডেমির শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশ (ইসিডি) বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ও প্রকল্পের পরামর্শক মো. তারিকুল ইসলাম চৌধুরী জানান, বাংলাদেশ সরকার ২০১৩ সালে শিশুর প্রারম্ভিক যতœ ও বিকাশ নিয়ে একটি সমন্বিত নীতি অনুমোদন করে। এই নীতিতে বলা হয়েছে, শিশুর যে চাহিদা সেটা অনুযায়ী একটি সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। এজন্য উদ্যোগী মন্ত্রণালয় হলো মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়। আমরা হয়তো শিক্ষার দিকে ফোকাস দেই, কেউ হয়তো পুষ্টি নিয়ে কাজ করে, কেউ স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করে। কিন্তু শিশুর সমন্বিত যতœ একটি সেন্টারে এনে কীভাবে করা যায়, সেটি ভাবা হচ্ছিল। শিশুমৃত্যুর হার কমানো সরকারের একটি বড় লক্ষ্য। সেই প্রেক্ষাপটে প্রকল্পটি নেয়া হয়েছে। শিশুর ব্রেন ডেভেলপমেন্টের (মস্তিষ্কের বিকাশ) ৮০-৯০ শতাংশ হয়ে যায় প্রথম পাঁচ বছরের মধ্যে। এ সময়ের ওপরই নির্ভর করে শিশু কেমন মানুষ হবে। প্রকল্পের আওতায় দেশের ১৬ জেলায় আট হাজার শিশু যতœকেন্দ্র করা হবে। দুই লাখ শিশুকে সেখানে রাখা হবে। প্রতিটি সেন্টারে সর্বোচ্চ ২৫ জন শিশু ভর্তি করা হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।