Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হিস্পানিক ভোটে বিপদ সামলাবেন হিলারি

প্রকাশের সময় : ৮ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিততে হলে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নেভাদা ও ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্য নিজ দখলে আনতে হবেÑ এ কথা তিনি খুব ভালো করেই জানেন। সে জন্য নির্বাচনী প্রচারণার শেষ সপ্তাহে তিনি বারবার এই দুই রাজ্যে ফিরে এসেছেন। কিন্তু আগাম ভোটের হিসাব যদি সঠিক হয়, ট্রাম্প সম্ভবত এই দুই রাজ্যই হারাচ্ছেন, এর সঙ্গে সঙ্গে তার প্রেসিডেন্ট হওয়ার স্বপ্ন। আর এই হার হয়তো তাকে মানতে হবে হিস্পানিক ভোটারদের কারণে, যাদের তিনি ধর্ষক ও মাদক ব্যবসায়ী বলে নিন্দা করেছিলেন। একাধিক সংবাদমাধ্যম নিশ্চিত করেছে, নেভাদায় হিস্পানিকদের আগাম ভোটের পরিমাণ আগের যেকোনো সময়ের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। ‘পলিটিকো’ জানিয়েছে, এই রাজ্যের সবচেয়ে জনবহুল ক্লার্ক কাউন্টিতে হিস্পানিকদের কারণে হিলারি কমপক্ষে ৭২ হাজার ভোটে এগিয়ে আছেন। এই রাজ্যের একজন নির্বাচনী বিশ্লেষক জানিয়েছেন, নেভাদাকে হিলারির খাতায় তুলে দিতে এই সংখ্যা পর্যাপ্ত। ২০১২ সালে ওবামা নেভাদা জিতেছিলেন ৭ পয়েন্টে। সেবার এই কাউন্টিতে ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে আগাম ভোট পড়েছিল ৭১ হাজার। একজন ডেমোক্রেটিক কর্মকর্তা মন্তব্য করেছেন, ট্রাম্প চেয়েছিলেন মেক্সিকোর সঙ্গে দেয়াল তুলতে। নেভাদায় সেই দেয়াল তিনি পেয়ে গেলেন, তবে এই দেয়াল হিস্পানিক ভোটারদের তোলা দেয়াল।
ফ্লোরিডা থেকেও খবর এসেছে, রোববার সমাপ্ত আগাম ভোটে সেখানে প্রায় ৬২ লাখ মানুষ ভোট দিয়েছেন, যার ১০ লাখ ভোটার হলেন হিস্পানিক। ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন নির্বাচনী পরিসংখ্যান বিশারদ জানিয়েছেন, তার হিসাব অনুযায়ী এই হিস্পানিক ভোটারদের এক-তৃতীয়াংশই এ বছর প্রথমবারের মতো ভোটে অংশ নিচ্ছেন।
এদিকে রোববার প্রকাশিত এনবিসি/ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের গৃহীত সর্বশেষ জাতীয় জনমত জরিপে চার পয়েন্টে এগিয়ে রয়েছেন হিলারি। ভাবা হচ্ছে, এই ব্যবধান যদি বজায় থাকে, তাহলে ডেমোক্র্যাটরা সম্ভবত সিনেটে তাদের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাবেন। সে সম্ভাবনা রুখতে রিপাবলিকান পার্টি প্রচারণার শেষ সপ্তাহে অতিরিক্ত ৩৭ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই শেষ মুহূর্তে এসে রিপাবলিকান স্পিকার পল রায়ানও নির্বাচনী প্রচারণায় হাত লাগিয়েছেন। রোববার সিএনএনের ওয়েবসাইটে এক সংক্ষিপ্ত নিবন্ধে তিনি সব রিপাবলিকান প্রার্থীর পক্ষে ভোট প্রদানের আবেদন করেছেন। সূত্র : ওয়েবসাইট।
ডেমোক্র্যাটদের সময় মার্কিন অর্থনীতি ভালো থাকে!
আজ শুরু হওয়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কে নির্বাচিত হবেন, তা নিয়ে জোর জল্পনার মধ্যে অর্থনৈতিক বিশ্লেষণগুলোও চলে আসছে। কে নির্বাচিত হলে তা যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা বিশ্বের অর্থনীতির জন্য মঙ্গল আনবে, তা নিয়ে চলছে বিভিন্ন পর্যালোচনা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদদের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্টের সময় অর্থনৈতিক অগ্রগতি বেশি হয়েছে রিপাবলিকানদের প্রেসিডেন্টদের চেয়ে। গবেষণায় দেখা গেছে, মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্টদের আমলে গড়ে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ। অন্যদিকে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টের সময়ে গড়ে আড়াই শতাংশ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রেসিডেন্ট ট্রুমানের সময় থেকে বারাক ওবামা পর্যন্ত চলে গেছে ৭৬৮ মাস। এই সময়ে ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্টদের অর্থনৈতিক মন্দার হার ছিল গড়ে ৩ দশমিক ৩ মাস। অন্যদিকে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন গড় অর্থনৈতিক মন্দা ছিল ১৩ দশমিক ৮ মাস।
বেকারত্বের হার কমাতেও এগিয়ে আছেন ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্টরা। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন বেকারত্বের হার গড়ে শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ হারে কমেছে। অন্যদিকে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন বেকারত্বের হার বেড়েছে ১ দশমিক ১ শতাংশ। জিডিপি অনুপাতে বাজেট ঘাটতির পরিমাণও বেশি রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টের সময়ে। ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন গড়ে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ জিডিপির দেড় শতাংশ; যা রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টের ক্ষেত্রে ২ দশমিক ২ শতাংশ।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্বের হার ৫ শতাংশের কাছাকাছি। তাই এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটারদের কাছে কর্মসংস্থান একটা বড় বিষয়। এ ব্যাপারে দু’জনই সজাগ থাকলেও ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারির মতো তেমন কোনো পরিকল্পনা নেই রিপাবলিকান ট্রাম্পের। ট্রাম্পের নীতিতে ধনী মার্কিনদের বিষয়ে কিছুটা দুর্বলতা দেখা গেছে। তবে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের জন্য কর ছাড় দিতে চান দু’জনই। হিলারি তার প্রচারণায় বলেন, তিনি এমন অর্থনীতি চান, যেখানে সবাই উপকৃত হবে, শুধু শীর্ষে যারা আছেন, তারাই নন। অবকাঠামো, জ্বালানি খাত ও শিক্ষাব্যবস্থায় বিনিয়োগে জোর দিচ্ছেন হিলারি ক্লিনটন।
বর্তমানে দেশটির ঋণের পরিমাণ ১৯ ট্রিলিয়ন ডলার। মোট জিডিপির ৭৫ শতাংশই ঋণ পরিশোধে ব্যয় করে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৩ শতাংশের নিচে। হিলারির অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির ওপর জোর দেয়া হয়েছে। তবে এ বিষয়ে তেমন কোনো পরিকল্পনার কথা জানাননি ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অর্থনৈতিক নীতি একটি বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দুই প্রার্থীর বিতর্কে উঠে এসেছে কর্মসংস্থান, কর হার ও ন্যূনতম মজুরির মতো বিষয়। শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বাড়াতে চান হিলারি। এ বিষয়ে একমত নন ট্রাম্প। তার মতে, কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে অর্থ ঢালা বন্ধ করা উচিত। তবে কর্মসংস্থানের জন্য অবকাঠামো খাতে ব্যয় বাড়াতে চান দু’জনই। করপোরেট করের হার কমাতে চান ট্রাম্প, আর হিলারি বাড়াতে চান না। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের আয়বৈষম্য আছে, মনে করেন হিলারি। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প বিষয়টি এত প্রকট বলে মনে করেন না। সূত্র : ওয়েবসাইট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হিস্পানিক ভোটে বিপদ সামলাবেন হিলারি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ