পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘প্রাইম এশিয়া ফাউন্ডেশন’ এবং ‘পিএফআই প্রোপার্টিজ লি:’র নামক দু’টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি থেকে ৭০ কোটি ৬৯ লাখ টাকার বেশি অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ভেঙ্গে দেয়া পরিচালনা পর্ষদ সদ্যরা। ১৫৮ তম পর্ষদ সভার ভুয়া সার-সংক্ষেপ তৈরি করে সেটির বরাত দিয়ে তারা এ অর্থ হাতিয়ে নেন। এ অর্থ সাধারণ গ্রাহক এবং পুজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের অর্থ। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)র গভীর অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এই তথ্য। এ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পৃথক ২টি মামলা করেছে সংস্থাটি। গতকাল মঙ্গলবার সংস্থার সহকারি পরিচালক শারিকা ইসলাম এবং সহকারি পরিচালক বায়েজিদুর রহমান বাদী হয়ে মামলা দু’টি দায়ের করেন।
এজাহারে, পুজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান ‘ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড’র সাবেক চেয়ারম্যান মো: নজরুল ইসলাম, সাবেক পরিচালক কেএম খালেদ,অডিট কমিটির চেয়ারম্যান শাহরিয়ার খালেদ,পরিচালক এম.এ.খালেক,পরিচালক মো: মিজানুর রহমান, পরিচালক ফরিদউদ্দিন এফসিএ, পরিচালক আসাদ খান, কোম্পানি সেক্রেটারি সৈয়দ আব্দুল আজিজ এবং বরখাস্তকৃত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেমায়েত উল্যাহকে এজাহারে আসামি করা হয়েছে।
দুদকের সিনিয়র উপ-পরিচালক (অনুসন্ধান ও তদন্ত-৩) ড. মোহাম্মদ জহিরুল হুদার নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি টিম অভিযোগটি অনুসন্ধান করেন। অপর সদস্যরা হলেন, সহকারি পরিচালক শারিকা ইসলাম ও সহকারি পরিচালক বায়েজিদুর রহমান খান।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লি: ৯টি বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং কয়েকটি নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১৬শ’৫২ কোটির এমটিডিআর (মুদারাবা টার্ম ডিপোজিট রিসিপ্ট) সঞ্চয় স্কিম করে। পরবর্তী ৩ বছরে আরও ৫শ’ ২৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে। ২০১৮ সালে এই সঞ্চয় স্কীম এবং বিনিয়োগকৃত টাকা নগদায়ন করে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির পরিচালক মন্ডলী নিজ নিজ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে ঋণ পরিশোধের খাতে ‘ব্যয়’ দেখানো হয়। এছাড়া ১ হাজার ৩১৩ কোটি টাকার কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লি:র পরিচালকগণ তাদের ব্যক্তিগত অন্তত: ১৩টি প্রতিষ্ঠনে এ অর্থ সরিয়ে নেয় হয়। এর মধ্যে প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি,পিএফআই প্রপার্টিজ’র মতো কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বৈধ কোনো নথিপত্রই নেই।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত পরিচালনা পর্ষদের ১৬৪ তম সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় ১৭টি ব্যাংকে এমটিডিআর খোলা এবং লিজিং কোম্পানিতে বিনিয়োগ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু ফারইস্ট লাইফের এমটিডিআর লিয়েন/জামানত রেখে প্রাইম এশিয়া ফাউন্ডেশকে বিনিয়োগ সুবিধা প্রদানের বিষয়ে ওই সভায় কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ফারইস্টের তৎকালিন চেয়ারম্যান মো: নজরুল ইসলাম এবং তৎকালিন অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেমায়েত উল্যাহ পারষ্পরিক যোগসাজশে অন্যায়ভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রাইম এশিয়া ফাউন্ডেশনকে বিনিয়োগ/ঋণ সুবিধা দেয়ার উদ্দেশ্যে ১৬৪ তম পর্ষদ সভার কার্যবিবরণীর ভুয়া সার-সংক্ষেপ তৈরি করেন। এই ভুয়া সার-সংক্ষেপের ভিত্তিতে প্রাইম এশিয়া ফাউন্ডেশনকে ১৬ কোটি টাকার বিনিয়োগ সুবিধা দেয়া হয়। এটি মূলত: ফারইস্টের তৎকালিন চেয়ারম্যান মো: নজরুল ইসলামেরই একটি প্রতিষ্ঠান। ফারইস্টের পরিচালক কেএম খালেদ প্রাইম এশিয়া ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান। শাহরিয়ার খালেদ প্রতিষ্ঠাটির পরিচালক। প্রাইম এশিয়া ফাউন্ডেশনকে ১৬ কোটি টাকা দেয়া হলেও প্রতিষ্ঠানটি ওই টাকা আর পরিশোধ করেনি। ফলে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কাছ থেকে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লি:’র ধানমন্ডি শাখাকে মুনাফাসহ ২২ কোটি ৫৭ লাখ ৭৮ হাজার ৩৭৪ টাকা সমন্বয় করে।
অন্যদিকে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লি:র ফরেন এক্সচেঞ্জ শাখায় ২২টি এমটিডিআর খুলে ১শ’ ১ কোটি টাকা রাখে। এই টাকার বিপরীতে মো: নজরুল ইসলামের মালিকানাধীন আরেক প্রতিষ্ঠান পিএফআই প্রোপার্টিজ লি: ৪০ কোটি টাকার ঋণ সুবিধা নেয়। পিএফআই প্রোপার্টিজ এই ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে মুনাফাসহ দায়ের অংক দাঁড়ায় ৭০ কোটি ৮৩ লাখ ৬৯ হাজার ৪৩৯ টাকা। এই অর্থ এমটিডিআর থেকে এ দায় সমন্বয় করা হয়।
অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পারষ্পরিক যোগসাজশে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লি:ও (এফআইএলআইসিএল)র ১৫৮ তম পর্ষদ সভার কার্য বিবরণীর ভুয়া সার-সংক্ষেপ সৃজন করে এ সার-সংক্ষেপের বরাত দিয়ে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লি:র ফরেন এক্সচেঞ্জ শাখার, মতিঝিলে ‘এফআইএলআইসিএল’র নামে রক্ষিত ২২টি এমটিডিআর জামানত রেখে আত্মসাতের উদ্দেশ্যে পিএফআই প্রপার্টিজ লি:কে ৪০ কোটি টাকার ঋণ/বিনিয়োগ সুবিধা দেয়ার মাধ্যমে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ৭০ কোটি ৮৩ লাখ ৬৯ হাজার ৪শ’৩৯ টাকা আত্মসাত করেন। যা ১৮৬০ সালের দন্ডবিধি ১০৯ ও ৪০৯ ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন,২০১২ এর ৪(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, এমএ খালেক,কেএম খালেদ,ফরিদউদ্দিন,মিজানুর রহমান,আসাদ খান এবং এমএ খালেকের পুত্র শাহরিয়ার খালেদ একই সঙ্গে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লি: এবং ‘প্রাইম এশিয়া ফাউন্ডেশন’র পরিচালনা পর্ষদ সদস্য। সুতরাং ফারইস্ট’র চেয়ারম্যান মো: নজরুল ইসলাম,অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেমায়তে উল্যাহ, কোম্পানি সেক্রেটারি সৈয়দ আব্দুল আজিজ এবং এফআইএলআইসিএল ও প্রাইম এশিয়া ফাউন্ডেশনের পরিচালক এম.এ.খালেক, কেএম খারেদ, ফরিদউদ্দিন, মিজানুর রহমান,আসাদ খান ও শাহরিয়ার খালেদ পরষ্পর যোগসাজশের মাধ্যমে আত্মসাতের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠানটির ৪০ কোটি টাকা তাদেরই মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান পি.এফআই প্রোপার্টিজ লি:কে ঋণ দিয়েছেন। পরবর্তীতে এ ঋণ পরিশোধ না করে আত্মসাত করেন। এর ফলে ফারইস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স লি:র মোট ৭০ কোটি ৮৩ লাখ ৬৯ হাজার ৩৪৯ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে সংস্থার সচিব মো: মাহবুব হোসেন বলেন,ইতিমধ্যেই কমিশন মামলার অনুমোদন দিয়েছেন। আমরা এজাহার দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছি।
এদিকে দুদকের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে নন-ব্যাংকিং বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স’ থেকে নিজেদেরই মালিকানাধী ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে অন্তত: সাড়ে ৮শ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতিষ্ঠানটির বিগত পরিচালনা পর্ষদ। ব্যাপক দুর্নীতি,অনিয়ম আর লুটপাটের প্রেক্ষিতে গতবছর ১ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙ্গে দেয় বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।