Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পান রপ্তানি বন্ধের কারণে সবজিতে নেতিবাচক প্রভাব

প্রকাশের সময় : ৮ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইখতিয়ার উদ্দিন সাগর : বাংলাদেশের পানে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ‘স্যালমোনেলা’ থাকার অভিযোগ এনে ইইউ ২০১৪ সালের প্রথম দিকে পান রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ওই অর্থবছরেই সবজি রপ্তানির আয়ে ধস নামে ৩০ শতাংশ। এর ধারাবাহিকতায় চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকেও এ খাত থেকে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৫ শতাংশ আয় কম এসেছে।
রপ্তানিকারকরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে আমদানিকারকেরা শুধু পান কিনতেন না। পানের সঙ্গে শসা, বেগুনের মতো সবজিরও কার্যাদেশ দিতেন। এখন পানের রপ্তানি বন্ধ থাকায় তাঁরা অন্য দেশ থেকে এসব পণ্য আমদানি করছেন। এতে করে আমাদের দেশের রপ্তানি আয় কমছে। তবে এই খাতের উন্নয়নের জন্য সরকার কাজ করছে বলে জানা গেছে। তাড়াতাড়ি পান রপ্তানি করার জন্য গত রোববার ইউউ প্রতিনিধিদের সাথে কৃষি অধিদফতরে একটি বৈঠক হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ শাখার উপ-পরিচালক (রপ্তানি) মুহা. আনোয়ার হোসেন খান। মূলত ইউরোপে পানসহ বেশে কিছু পণ্য প্রবেশের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ, পরিবহন জটিলতাসহ নানা কারণে বাজার হারাচ্ছে সবজি। সংশ্লিষ্ট মহল থেকে ছাড়পত্র না পাওয়া সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে দেখছেন ব্যবসায়ীরা। আবার কিছু সবজিপণ্য রপ্তানি সরকার নিজেই বন্ধ করে রেখেছে। এ সব কারণে সবজি রপ্তানি আয় গত তিন বছরে অর্ধেকে নেমেছে এসেছে।
তবে এই খাতের আয়ের ব্যর্থতা ঠেকাতে কৃষি অধিদপ্তর কাজ করছে। সবজি উৎপাদনের বিভিন্ন স্তরে বিদ্যমান সমস্যা চিহ্নিত করা ও তা সমাধানের উপায় নিয়ে একটি গবেষণা করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউট (বিএফটিআই)।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ শাখার উপ-পরিচালক (রপ্তানি) মুহা. আনোয়ার হোসেন খান বলেন, চুক্তিভিত্তিক চাষের মাধ্যমে স্যালমোনেলামুক্ত পান উৎপাদন করা সম্ভব হলে রপ্তানি করা যাবে। এ জন্য অ্যাকশন প্ল্যান অনুসারে পান উৎপাদন, পরিবহনসহ যথাযথ নীতিমালা অনুসরণ করা এবং সম্পূর্ণ জীবাণুমুক্ত অবস্থায় প্যাকেজিং নিশ্চিত করতে হবে। স্যালমোনেলামুক্ত রপ্তানিযোগ্য পান উৎপাদনের লক্ষ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে। এতে পান খাতের উন্নয়নের জন্য ১৩টি জেলায় প্রায় ৬০০ চাষিকে নিয়ে কাজ করবে। তিনি আরো বলেন, দেশের বেশ কয়েকটি এলাকায় জমি নির্বাচনের জন্য কাজ চলছে। এই বিষয়ে কিছুদিনের মধ্যেই চাষিদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।
দেশ থেকে রপ্তানি হওয়া পানের বেশিরভাগই এখন যায় মধ্যপ্রাচ্যে। আগে ৪৫ শতাংশ যেত ইউরোপে। ইপিবির তথ্য মতে, ২০১০ থেকে ২০১৪ পযর্ন্ত প্রতি অর্থবছরে গড়ে ৪ কোটি ডলার আয় হয়েছে। কিন্তু ২০১৪ সালে ইউউ পান রপ্তানিতে এক বছরের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে এর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। এ সময় শেষ হওয়ার আগেই কয়েকটি শর্ত দিয়ে আরও দুই বছর ইউরোপে পান নেয়া বন্ধ ঘোষণা দেয় ইইউ।
২০১৩-১৪ অর্থবছরে সবজিতে আয় ছিল ১৪ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। পান রপ্তানি বন্ধের ওই অর্থবছরেই দেশ থেকে ১০ কোটি ৩২ লাখ ডলারের সবজি রপ্তানি হয়েছে। যা আগের বছরের চেয়ে কমেছে ৩০ শতাংশ। সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরের সবজি রপ্তানিতে আয় হয়েছে ১০ কোটি ৩৪ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার। যা এই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কিছুটা বেশি। গত তিন বছরের গড়ে রপ্তানি আয় কমেছে প্রায় ২৫ শতাংশ। এছাড়া প্রথম প্রান্তিকে সবজি রপ্তানিতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ কম আয় হয়েছে।
এর আগে বাংলাদেশি সবজিতে কয়েক দফায় ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ও পোকা পাওয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এ পণ্যে নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দেয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) গত অর্থবছরে এদেশ থেকে ইইউভুক্ত দেশগুলোতে তিন ধরনের সবজি ও ফল রপ্তানি নিষিদ্ধ করে। এগুলো হলো অ্যামারেনথাস প্রজাতি (লালশাক ও ডাঁটাশাক), সাইট্রাস প্রজাতি (জারা লেবু ছাড়া অন্যান্য লেবু) এবং ত্রিকোসানথেস প্রজাতি (করলা, চিচিঙা, ধুন্দল ও পটোল)। এসব সবজি ও ফলের পিসি ইস্যু করা বন্ধ করে দিয়েছে ডিএই। এসব পণ্যকে ইইউ ‘ক্রিটিক্যাল কমোডিটি’-এর তালিকায় রেখেছে।
বাংলাদেশ ফল ও সবজি এবং এ সংক্রান্ত পণ্য রপ্তানিকারক সমিতির (বিএফভিএপিইএ) তথ্য অনুযায়ী, দেশ থেকে যত সবজি ও ফল রপ্তানি হয়, তার ৪৭-৪৮ শতাংশই যায় ইউরোপে। কিন্তু ইউরোপে নিষেধাজ্ঞার কারণে রপ্তানিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়ছে।
ইপিবি সূত্র জানিয়েছে, ফাইটোস্যানিটারি সনদ (পিসি বা স্বাস্থ্য সনদ) ছাড়া ইউরোপে সবজির অনেক চালান ফেরত এসেছে। এসব কারণে কৃষি মন্ত্রণালয় বলে দিয়েছে নিবন্ধিত রপ্তানিকারক ছাড়া কেউ সবজি রপ্তানি করতে পারবে না। রপ্তানিকারকদের অনেকেই নিবন্ধিত হয়নি। এসব কারণেই বাংলাদেশ থেকে সবজি রপ্তানি কমেছে।
বাংলাদেশ ফ্রুট, ভেজিটেবল অ্যান্ড অ্যালাইড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফভিএপিইএ) সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেছেন, ইউরোপে অঞ্চলে পান, সবজি ও ফলে সরাসরি পাঠানো নিষেধাজ্ঞা থাকায় রপ্তানি কমেছে। তবে এক্ষেত্রে মূল প্রতিবন্ধকতা পরিবহন সমস্যা। এদেশ থেকে সবজি পরিবহনে বাড়তি ব্যয় ও কার্গোতে জায়গা কম পাওয়া। এসব কাঁচা পণ্য সময়মতো রপ্তানি করা না গেলে সবই নষ্ট হয়, রপ্তানিও কমে। তিনি আরো বলেন, এ খাত থেকে রাজস্ব আয় কম হবে, এটা ভেবে সরকার সংশ্লিষ্টরা গুরুত্ব দেয় না। ইউরোপে পান রপ্তানি করতে পারলে এ খাতের আয় আরো বাড়বে বলে তিনি জানান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পান রপ্তানি বন্ধের কারণে সবজিতে নেতিবাচক প্রভাব
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ