পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
একটি ঘটনা ঘটে। বাতাসের গতিতে তা রটে। কি ঘটেছে, কেন ঘটেছে কিংবা আদৌ কিছু ঘটেছে কি না, প্রকৃত ঘটনা কি- সেটির বিচার-বিশ্লেষণ পরে। কিন্তু তার আগেই ‘দোষী’ কিংবা ‘নির্দোষ’ গণ্য হচ্ছে মানুষ। এমন একতরফা ‘বিচার’-এ দোষী সাব্যস্ত হচ্ছে- যেটির কোনো আপিল নেই। উচ্চ আদালত কথিত এই ‘বিচার’কে আখ্যা দিয়েছেন ‘মিডিয়া ট্রায়াল’ হিসেবে। মিডিয়া ট্রায়াল এতটাই নির্মম এবং অমানবিক যে, যে ক্ষতি কোনোভাবেই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয় না। ঘটনাই যা-ই হোক, জনমনে সেটিই ‘সত্য’ হয়ে দাঁড়ায় যা সংবাদমাধ্যমে প্রচার হয়। পরে যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ‘ভাইরাল’ হয়। যোগাযোগ প্রযুক্তির বিপুল বিপ্লবে পারস্পরিক যোগাযোগ সেকেন্ডের বিষয় হয়ে উঠেছে সত্য। কিন্তু এটির দায়িত্বহীন প্রয়োগ প্রযুক্তি পরিণত হয়েছে ফ্রাঙ্কেনস্টাইনে। বিষয়টি বিচার বিভাগ, নাগরিক সমাজ, বিশ্লেষক ও মানবাধিকার কর্মীদের ভাবিয়ে তুলেছে।
তাদের মতে, ঘটনার সত্য-মিথ্যা সাব্যস্ত হতে সেটি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। ঘটনাটি অপরাধমূলক কি না, কে বা কারা অপরাধ করেছে, আদৌ তারা অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কি নাÑ এ সিদ্ধান্তে পৌঁছাটা প্রচলিত আইনে বিচারসাপেক্ষ। কিন্তু তার আগেই দেখা যায়, ঘটনা কিংবা দুর্ঘটনার সঙ্গে ব্যক্তি কিংবা ব্যক্তিবর্গের সংশ্লিষ্টতা অনুমান করে রীতিমতো ‘অপরাধী’ বানিয়ে দেয়া হচ্ছে। ‘অপরাধী’ কিংবা ‘নিরপরাধ’ সাব্যস্ত করে জনমনে নির্বিচার ধারণা সৃষ্টি করে। ফলে কথিত অপরাধী কিংবা নিরপরাধী বিচারের আগেই যেন ‘দোষী’ কিংবা ‘নির্দোষী’ সাব্যস্ত হয়ে যাচ্ছেন।
আধুনিক তথ্য ও সম্প্রচার প্রযুক্তির দায়িত্বহীন প্রয়োগে একতরফাভাবে ‘ভিকটিম’ হয়ে যাচ্ছে মানুষ। উদ্ভূত পরিস্থিতিকে কেউ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মিডিয়া-প্রীতি কেউবা আধুনিক সম্প্রচার প্রযুক্তির দায়িত্বহীন ব্যবহারকে দায়ী করেছেন। মানবাধিকার কর্মীদের চোখে মিডিয়া ট্রায়াল মানুষের মানবাধিকার পরিপন্থী। তবে মিডিয়া ট্রায়াল আর মিডিয়ার কাছ থেকে তথ্যপ্রাপ্তির অধিকারকে এক করে না দেখার জন্যও মত দিয়েছেন কেউ কেউ।
সিনিয়র অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান দৃষ্টান্ত দিয়ে বলেন, ধরুন আপনার সামনে একজন লোক আরেক জনকে খুন করল কিংবা খুনের চেষ্টা করল। তারপরও আপনি লোকটিকে অপরাধ হিসেবে সাব্যস্ত করতে পারবেন না। যদি না ওই ব্যক্তি উপযুক্ত আদালতে উপযুক্ত বিচারের মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে দোষী সাব্যস্ত না হচ্ছে। অনেক সময় আমরা যা দেখি তা ঘটে না। আবার যেটা ঘটে সেটি দেখতে পাই না। এ জন্যই বাংলাদেশি আইন মানুষকে সেই অধিকার দেয় না। কারণ বাংলাদেশি আইন মূলত ‘কমন ল সিন্টেম’নির্ভর। আমাদের আইন বলছে, একজন অভিযুক্ত ব্যক্তি প্রকৃত বিচারে দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত ‘নিরপরাধ’ হিসেবে গণ্য হবে। অর্থাৎ ব্যক্তি অভিযুক্ত হলেও চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত তিনি নিরপরাধ। দুঃখজনক বাস্তবতা হচ্ছে, বিদ্যমান আইন যখন অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ‘নিরপরাধ’ বলছে তখন দেশের মিডিয়া বিচারের আগেই তাকে ‘নায়ক’ কিংবা ‘খলনায়ক’ বানিয়ে ফেলছে। মিডিয়ার এমন সংস্কৃতিকেই বলা হচ্ছে ‘মিডিয়া ট্রায়াল’।
এ বিচার প্রকৃতপক্ষে আদালতের বিচারের মতো কিছু নয়। সংবাদ মাধ্যম যখন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বিশেষের বিষয়ে ধারাহিক সংবাদ প্রচার করে মানুষের কাছে ‘দোষী’ কিংবা ‘গুণী’ হিসেবে প্রমাণের চেষ্টা করে তখনই এটিকে ‘মিডিয়া ট্রায়াল’ বলা হয়। অনেক সময় কোনো বিষয়ের বিচার চলাকালে রায়ের আগে-পরে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে পত্রিকা, টেলিভিশন, অনলাইন মিডিয়া ও অনলাইন প্ল্যাটমর্মে ‘দোষী’ বা ‘নির্দোষ’ প্রমাণের চেষ্টায় সংবাদ প্রচার করতে দেখা যায়। এ ধরনের প্রচার সাধারণত উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে থাকে। এই ‘ট্রায়াল’ পরবর্তীতে আমাদের মনোজগতকে মিডিয়ার উপনিবেশ করে তোলে। আমাদের চিন্তার নিজস্ব কাঠামোকে পলিটিসাইজড করে প্রভাবশালী গণমাধ্যম তাদের এজেন্ডা অনুযায়ী সাধারণ মানুষকে ভাবতে বাধ্য করে। বিশ্লেষকদের মতে, ‘মিডিয়া ট্রায়াল’ তথ্য সন্ত্রাসবাদের উৎকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে।
যে ‘বিচার’-এর আপিল নেই : স্পর্শকাতর অনেক ঘটনায় ‘সন্দেহভাজন’ অনেককে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরপরই আটককৃতদের মিডিয়ার সামনে হাজির করা হয়। এটি নিয়ে বিভিন্ন সময় অনেকে প্রশ্ন তুলছেন।
মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বলেন, বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং গণমাধ্যম অভিযুক্ত ব্যক্তিকে এমনভাবে উপস্থাপন করে যাতে বিচারের আগেই অভিযুক্তরা জনমনে দোষী হিসেবে চিহ্নিত হয়ে যান। এটি আটককৃতদের মানবাধিকার ক্ষুণ্ন করে। সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে যেন সেটি মিডিয়া ট্রায়াল হয়ে যাচ্ছে। সস্তা জনপ্রিয়তার উদ্দেশ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সন্দেহভাজনদের এভাবে উপস্থাপন করে থাকে।
বিশ্লেষকদের মতে, মিডিয়া ট্রায়াল সব সময়ই ছিল। নবতর সংযোজন হচ্ছে ‘সোশ্যাল মিডিয়া ট্রায়াল’। ধরা যাক একটি সংবাদ প্রচারিত হয়েছে। সেখানে মিস্টার ‘এক্স’ ঘটনার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। তাৎক্ষণিকভাবে মনে হলো তিনি অভিযুক্ত। এটি কিন্তু প্রমাণিত নয়। এখানে ভিকটিমের বক্তব্য থাকতে পারে। আদালতে চূড়ান্ত বিচারে মিস্টার ‘এক্স’ নির্দোষ প্রমাণিত হতে পারেন। সেটি হওয়ার আগেই আমরা অনেক সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় তাকে ‘দোষী’ কিংবা ‘নির্দোষ’ দাবি করে স্ট্যাটাস দিই। তখন এটি যদি ভাইরাল হয় তাতে মিস্টার ‘এক্স’-এর মানহানি হয়ে যায়, যা তার অপূরণীয় ক্ষতি।
সোশ্যাল মিডিয়া ট্রায়াল অনেক সময় মূলধারার মিডিয়ার অনুগামী হয়ে যায়। অর্থাৎ এক বা একাধিক মূল মিডিয়া যখন প্রাথমিক রসদ সরবরাহ করে। মানুষ নিজেই তখন বিচারক হয়ে যায়। এ বিষয়ে তার চিন্তাটা জাজমেন্টাল হয়ে যায়। মানুষ তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে তখন পক্ষে-বিপক্ষে জাজমেন্ট দিয়েই নিবৃত হচ্ছে না। রীতিমতো গালাগালও করতে থাকে। বিশেষ করে হুজুগে মেতে মানুষ গুজব, গুঞ্জন, মিথ্যা রটনার শেয়ার করছে। আর তখনই ঘটছে ছেলেধরা আখ্যা দিয়ে নিরীহ গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যার মতো ঘটনা।
এখন একটা কিছু হলেই মানুষ সেটিকে ফেসবুকে নিয়ে যাচ্ছে। ইউটিউবে ছেড়ে ভাইরাল করছে। লাইক, ভিউয়র সাবস্ক্রাইবার বাড়াচ্ছে। নীরবেই হয়ে যাচ্ছে মিডিয়া ট্রায়াল। অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্ত কিংবা বিচারের আগেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিটি হয়ে যাচ্ছেন আসামি। সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ে এ বিষয়ে রায় দেয়ার জন্য। ফলে সঙ্গে সঙ্গেই সামাজিকভাবে দোষী সাব্যস্ত হয়ে যাচ্ছেন ওই ব্যক্তি।
সামাজিকভাবে মানুষ এই ব্যক্তিকে ঘৃণা করছে, গালি দিচ্ছে। কিন্তু প্রকৃত বিচারে দেখা যায়, ওই ব্যক্তি নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে বেকসুর খালাস পেয়ে যাচ্ছেন। আবার দেখা যায়, কোনো একটি অভিযোগে হয়তো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একজনকে গ্রেফতার করল। তাকে মিডিয়ার সামনে চরম মন্দ লোক হিসেবে হাজির করল। কিন্তু আদালত চূড়ান্ত বিচারে যখন তাকে ‘নির্দোষ’ হিসেবে খালাস দিলো, তখন কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সংবাদমাধ্যম আগের মতো করে তুলে ধরে না। তিনি যে অপরাধ করেননি এবং আদালতে নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেনÑ এই সত্যটি তুলে ধরারও কোনো দায়িত্ব বোধ করে না। অর্থাৎ বিচারে নিরপরাধ প্রমাণিত হলেও সমাজের চোখে তিনি আজীবন অপরাধী বা ‘দোষী’ হিসেবেই থেকে যান।
মিডিয়া ট্রায়াল কতটা মর্মান্তিক এবং অমানবিক তা যিনি শিকার হয়েছেন তিনিই জানেন। বিষয়টি মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন হলেও এ বিষয়ে সুধীসমাজের কোনো উচ্চ-বাচ্য নেই। এসব বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও কে মানে কার কথা। ‘মিডিয়াল ট্রায়াল’র মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটিয়েই চলেছে। প্রচলিত বিচারে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল এবং প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমা প্রার্থনার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু মিডিয়া ট্রায়ালে একবার ‘দোষী’ সাব্যস্ত হলে সেটির কোনো আপিল নেই।
উপেক্ষতি হাইকোর্টের নির্দেশনা : মাদকের মামলায় ‘আটক’ দেখিয়ে চিত্রনায়িকা পরীমণির মিডিয়া ট্রায়াল করা হয়েছে। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি এ মন্তব্য করেছেন বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম এবং বিচারপতি মোহাম্মদ সেলিমের ডিভিশন বেঞ্চ। পরবর্তীতে আদালত পরীমণির বিরুদ্ধে চলমান মাদক আইনের মামলার কার্যক্রম ৩ মাসের জন্য স্থগিত করেন। উচ্চ আদালতের এ মন্তব্যই প্রমাণ করে ‘মিডিয়া ট্রায়াল’ এখনও অব্যাহত রয়েছে। অথচ ২০১২ সালে বিচারিক আদালতের একজন বিচারককে ফেনসিডিলসহ আটকের পর হাইকোর্টের নির্দেশনা ছিল যে, গ্রেফতার বা সন্দেহভাজন হিসেবে আটকের পর কোনো ব্যক্তিকে যেন গণমাধ্যমের সামনে হাজির না করা হয়।
২০১৯ সালে বরগুনার রিফাত হত্যা মামলার আসামি তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারের পর মিন্নি জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ফৌজদারি কার্র্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার আগেই সংশ্লিষ্ট পুলিশ সুপার মিন্নি হত্যাকাণ্ডের দায় শিকার করেছেনÑ মর্মে সংবাদমাধ্যমকে জানান। ওই মামলায় মিনি শর্তসাপেক্ষে জামিন পান। জামিন আদেশে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের তৎকালীন ডিভিশন বেঞ্চ এই মর্মে পর্যবেক্ষণ দেন যে, ‘ইদানীং প্রায়শই লক্ষ করা যায় যে, বিভিন্ন আলোচিত অপরাধের তদন্ত চলাকালীন সময়ে পুলিশ-র্যাবসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতারকৃত অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্ট আদালতে হাজির করার আগেই বিভিন্নভাবে গণমাধ্যমের সামনে উপস্থাপন করা হয়, যা অনেক সময় মানবাধিকারের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে অমর্যাদাকর এবং অনুমোদনযোগ্য নয়। বিভিন্ন মামলার তদন্ত সম্পর্কে অতিউৎসাহ নিয়ে গণমাধ্যমের সামনে ব্রিফিং করা হয়। আমাদের সবাইকে স্মরণ রাখতে হবে যে, যতক্ষণ পর্যন্ত আদালতে একজন অভিযুক্ত বিচার প্রক্রিয়া শেষে সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে দোষী সাব্যস্ত না হন ততক্ষণ পর্যন্ত চূড়ান্তভাবে বলা যাবে না যে, তিনি প্রকৃত অপরাধী বা তার দ্বারাই অপরাধটি সংঘটিত হয়েছে।
ওই রায়ে আরো বলা হয়, গণমাধ্যমের সামনে গ্রেফতারকৃত কোনো ব্যক্তিকে এমনভাবে উপস্থাপন করা সঙ্গত নয় যে, তার মর্যাদা ও সম্মানহানি হয়। তদন্ত চলাকালে অর্থাৎ পুলিশ রিপোর্ট দাখিলের আগে গণমাধ্যমে গ্রেফতারকৃত কোনো ব্যক্তি বা মামলার তদন্ত কার্যক্রম সম্পর্কে এমন কোনো বক্তব্য উপস্থাপন সমীচীন নয়, যা তদন্তের নিরপেক্ষতা নিয়ে জনমনে বিতর্ক বা প্রশ্ন সৃষ্টি করতে পারে। আমাদের আরো স্মরণ রাখা প্রয়োজন যে, মামলার তদন্ত এবং বিচার পর্যায়ে একজন অভিযুক্তের প্রাপ্ত আইনি অধিকার নিশ্চিত করা সংশ্লিষ্ট সকলের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। উপরোক্ত বিবেচনায় হাইকোর্টের সুচিন্তিত অভিমত এই যে, গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের আদালতে উপস্থাপনের আগেই গণমাধ্যমের সামনে উপস্থাপন এবং কোনো মামলার তদন্ত চলাকালীন সময়ে তদন্ত বিষয়ে কতটুকু তথ্য গণমাধ্যমের সামনে প্রকাশ করা সমীচীন হবে সে সম্পর্কে একটি নীতিমালা অতি দ্রুততার সঙ্গে প্রণয়ন করা বাঞ্ছনীয়।
মিডিয়া ট্রায়াল আর তথ্যপ্রাপ্তি এক নয় : তবে ভিন্নমত পোষণ করেছেন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি)-এর প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। তিনি বলেন, মিডিয়া ট্রায়াল নাগরিকের বিচার পাওয়ার অধিকারকে ক্ষুণ্ন করে। বিচারের আগেই পূর্বধারণা সৃষ্টি করা নাগরিকের জন্য অনেক ক্ষতিকর। তবে যে ঘটনা ঘটেছে সেটির তথ্য মিডিয়ার মাধ্যমে প্রাপ্তির অধিকারও মানুষের রয়েছে। দু’টি সম্পূর্ণ আলাদা জিনিস। মিডিয়া ট্রায়াল আর যা ঘটেছে তার তথ্য মিডিয়ার মাধ্যমে পাওয়া এক বিষয় নয়। দু’টি গুলিয়ে ফেললে হবে না। ‘নিউজ ফর দ্য মিডিয়া’ আর ‘মিডিয়া ট্রায়াল’ এক নয়। পরীমণির বাসা থেকে মাদক উদ্ধার করা হয়েছেÑ এটি দেশবাসী দেখেছে। আমার দৃষ্টিতে এটি কোনো মিডিয়া ট্রায়াল নয়। পক্ষান্তরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বরিশালের মিন্নির বিষয়ে অনেক তথ্য প্রচারিত হয়েছে। বিষয়টি রহস্যজনক ছিল। কিন্তু তদন্ত সংস্থা কিংবা আদালত মিডিয়া দ্বারা প্রভাবিত হয়নি। আমার ব্যক্তিগত মত, মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে বিচারের ক্ষেত্রে পূর্বধারণা সৃষ্টির সুযোগ নেই। ইনফরমেশন যদি মিডিয়া প্রকাশ না করে তাহলে মিডিয়ার তো কোনো কাজই থাকে না। যে ঘটনা ঘটেছে সেটির সংবাদ তো সংবাদমাধ্যমকে প্রকাশ করতেই হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।