পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যকার যুদ্ধের নয় দিন পেরিয়েছে। এরমধ্যেই এই যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে আন্তর্জাতিক বাজারে। কয়েক বছরের রেকর্ড ভেঙে জ্বালানি তেলের দাম এখন সর্বোচ্চে। এই পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে জ্বালানি খাতে ভর্তুকি বাড়াবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে দেশের প্রাকৃতিক গ্যাস ফুরিয়ে আসায় বিশ্ববাজার থেকে তরলীকৃত গ্যাস (এলএনজি) আমদানির ওপরে অধিক গুরুত্ব দিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। এলএনজির আমদানি বাড়াতে জ্বালানি রফতানিকারক দেশগুলোর সঙ্গে দেন-দরবার শুরু করেছে জ্বালানি বিভাগ।
গত দুই বছরে করোনাভাইরাসের যে প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতিতে পড়েছে, তা এখনো কাটিয়ে ওঠা যায়নি। ২০২২ সালে করোনার প্রভাব কিছুটা কম থাকায় খানিকটা চাঙ্গা হতে যাচ্ছিল, কিন্তু বছরের শুরুতেই ইউক্রেন-রাশিয়া সংকট প্রভাব ফেলতে যাচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতিতে। ব্লুমবার্গের ভোক্তা তথ্য অনুযায়ী, গতকাল শনিবার ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম দাঁড়িয়েছে ব্যারেল প্রতি ১১৮ দশমিক ১ ডলারে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বাড়তি এই দাম রেকর্ড অবস্থানে চলে গেছে। যা ২০১৪ সালের পর এটাই সর্বোচ্চ। রাশিয়া তেল রফতানি বন্ধ করলে এই দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিশ্ববাজারে জ্বালানির এই পরিস্থিতিতে শঙ্কিত বাংলাদেশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতির অনিশ্চয়তা বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। তারা বলছেন, যদিও এখনো যুদ্ধের আঁচ বাংলাদেশের ওপর পড়েনি। কিন্তু এই পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে সেটা সামলানো বাংলাদেশের জন্য মুশকিল হয়ে পড়বে। জ্বালানি তেলের সরবরাহ ও খরচ দুইদিক থেকেই বাড়বে।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, এখন দেশে বছরে ৬২ লাখ টন তরল জ্বালানির চাহিদা রয়েছে। এ সকল জ্বালানির মধ্যে রয়েছে ডিজেল, ফার্নেস অয়েল, জেট ফুয়েল, কেরোসিন, পেট্রোল ও অকটেন। বাংলাদেশে বছরে যে পরিমাণ জ্বালানি দরকার হয়, তার প্রায় পুরোটাই বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। আমদানি করা মোট জ্বালানির মধ্যে প্রায় ৮০ ভাগই পরিশোধিত জ্বালানি। যা অপরিশোধিত তেলের চেয়ে কয়েকগুণ ব্যয়বহুল। যা আসে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে দেশের জ্বালানি আমদানির ওপরে প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। বিপিসি সূত্র জানায়, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে সেচ মৌসুমে দেশের জ্বালানি চাহিদা মেটাতে প্রায় ১৫ লাখ টন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির চুক্তি রয়েছে সংস্থাটির। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ছয়টি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান থেকে এই পরিমাণ জ্বালানি সরবরাহ করবে বিপিসি। এরমধ্যে রয়েছে পিটিটি থাইল্যান্ড, বিএসপি ইন্দোনেশিয়া, ইউনিপেক চায়না, ইনক ইউএই, পেট্রোচায়না এবং পিটিসিএল মালয়েশিয়া।
সূত্র আরও জানায়, বিশ্ববাজারে পরিশোধিত জ্বালানি তেলের ব্যারেল প্রতি ৯২ ডলারের চেয়ে বেশি দাম উঠে গেলেই বিপিসি লোকসানে পড়ে যায়। চলতি মাস থেকে তারা প্রতি ব্যারেল ডিজেল ১১৫ ডলার দামে আমদানি করেছে। এমনিতেই এখন প্রতিদিন ১৫ কোটি টাকা লোকসান গুনছে বিপিসি। যুদ্ধ বাড়লে লোকসানের বোঝা আরও বাড়বে।
এদিকে দেশে রান্নায় ব্যবহারের জন্য প্রতিদিন যে ১ লাখ টন তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) চাহিদা রয়েছে, তার সবটুকুই মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমদানি করতে হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে যে সঙ্কট তৈরি হয়েছে তাতে এলপিজি সরবরাহেও প্রভাব পড়তে পারে। এ প্রসঙ্গে ওমেরা এলপিজির সিইও শামসুল হক আহমেদ বলেন, বিশ্ববাজারে চাহিদা বৃদ্ধির কারণে সরবরাহকারীরা ডেলিভারি দিতে দেরী করছে। এর ফলে কিছুদিন পরেই সংকট দেখা দিতে পারে।
এদিকে দেশীয় প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুত কমে আসায় বিশ্ববাজার থেকে এলএনজি সরবরাহে মরিয়া হয়ে উঠেছে সরকার। এরইমধ্যে রফতানিকারক দেশগুলোর সঙ্গে দেন-দরবার শুরু করে দিয়েছে। এ লক্ষ্যে প্রতি মাসে যে পাঁচটি এলএনজি কার্গো সরবরাহের জন্য আসে সেখানে আরও অতিরিক্ত তিনটি এলএনজি কার্গো আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মূলত কাতার-ওমান থেকে এলএনজি আমদানি করে বাংলাদেশ। কাতারের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় অতিরিক্ত আরও ১০ লাখ টন এলএনজি আমদানি করবে জ্বালানি বিভাগ। এরইমধ্যে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এ আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। তিনি গত মঙ্গলবার কাতারের জ্বালানি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সা’দ শেরিদা আল কাবিরের সঙ্গে এক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে ২০২২ সালের মাঝামাঝি থেকে বার্ষিক অতিরিক্ত ১ মিলিয়ন টন এলএনজি কাতার থেকে আমদানির কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এই আমদানি একটি সাইড লেটার চুক্তির মাধ্যমে কার্যকর করা যেতে পারে।
জানা গেছে, দেশটির সঙ্গে এলএনজি আমদানিতে বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি রয়েছে। এই চুক্তির আওতায় সাইড লেটার চুক্তির মাধ্যমে এই পরিমাণ অতিরিক্ত এলএনজি আমদানি করতে চায় জ্বালানি বিভাগ। তবে বর্তমান ইউক্রেন-রাশিয়া পরিস্থিতিতে বিশ্বে জ্বালানির বাজার উত্তপ্ত। এই পরিস্থিতিতে সহজেই জ্বালানি মিলবে কি না এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।
এ প্রসঙ্গে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এবং ক্যাবের জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা প্রফেসর শামসুল আলম বলেন, পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে তার প্রভাব তো বাংলাদেশে পড়বেই। কারণ বাংলাদেশ জ্বালানির প্রায় পুরোটাই বাইরে থেকে আমদানি করে থাকে। তবে এমন ক্রাইসিস মোমেন্ট যখন সামনে আসে তখন এই অবস্থা মোকাবিলা করার জন্য তিন মাসের একটি পরিকল্পনা থাকা উচিত।
তিনি বলেন, আমরা বারবার বলছি দেশে গ্যাসের অনুসন্ধান করার জন্য। কিন্তু সরকার সেদিকে গুরুত্ব না দিয়ে চড়া দামে এলএনজি সরবরাহ করছে, যা দুর্ভাগ্যজনক এবং এর নেতিবাচক প্রভাব দেশের অর্থনীতিতে পড়বে।
আরেক জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম তামিম বলেন, এরইমধ্যে বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম রেকর্ড পরিমাণ হারে বেড়েছে। বাংলাদেশ যেহেতু জ্বালানি সরবরাহের ক্ষেত্রে পুরোটাই আমদানি নির্ভর। সেহেতু প্রভাব তো পড়বেই। তবে এলএনজি এলপিজির ক্ষেত্রে যেহেতু আমাদের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি রয়েছে সেহেতু এখনই এ রকম চিন্তার কারণ নেই।
বিদেশ থেকে জ্বালানি আমদানি করতে ২০১১ সালের ১৬ জানুয়ারি কাতারের জ্বালানি ও শিল্প মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। এই সমঝোতা স্মারকের আলোকে বছরে ১ দশমিক ৮ থেকে ২ দশমিক ৫ মিলিয়ন টন এলএনজি সরবরাহের জন্য ১৫ বছর মেয়াদী এলএনজি সেলস অ্যান্ড পারচেজ এগ্রিমেন্ট-এসপিএ স্বাক্ষর হয় ২০১৭ সালে। ওই চুক্তির আওতায় কাতার থেকে বাংলাদেশ দেড় মিলিয়ন টন এলএনজি আমদানি করছে। এখন এই আমদানি আরও বাড়াতে চায় জ্বালানি বিভাগ। এরইমধ্যে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ কাতার সফর করে এই অতিরিক্ত জ্বালানি আমদানির প্রস্তাব দিয়েছে। যদিও কাতারের পক্ষ থেকে এখনো ইতিবাচক সারা পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর কারণে গত নভেম্বর কেরোসিন ও ডিজেলে লিটার প্রতি ১৫ টাকা করে দাম বাড়ায় সরকার। ওই সময়ে গণপরিবহনসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজারে যে প্রভাব পড়ে, তা এখনো স্বাভাবিক করা যায়নি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।