পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিধবা মালতী রানীর (৭৫) চোখে এখন ধূসর অন্ধকার। অনিশ্চয়তার অমানিশায় আচ্ছন্ন তার প্রতিটি মুহূর্ত। কখন, কোন মুহূর্তে ভূমিদস্যুর বুলডোজার এসে গুড়িয়ে দেয় দোকানটি এই দুশ্চিন্তায় কাটছে একেকটি প্রহর। স্থানীয় জালিয়াতচক্র আর স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনীতিক, ভূমিদস্যু গিলে খেয়েছে তার শেষ সম্বল। দৈনন্দিন সংসার খরচ, বাসা ভাড়া, ওষুধ-পথ্যের সংস্থান কোত্থেকে হবে-জানেন না তিনি। শেষ সম্বল রক্ষায় জালিয়াতচক্রের সঙ্গে আইনি লড়াইয়েও তিনি নিঃস্ব, ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত। নানা বাঁক পেরিয়ে জীবনের এই পর্যায়ে এসে মালতী রানী একদিকে কিংকর্তব্যবিমূঢ়, অসহায় ও নিঃসঙ্গ। অন্যদিকে ভুগছেন চরম নিরাপত্তাহীনতায়। নিজের কাছেই প্রশ্ন-দেশের মাটি ও মানুষের টানে বাংলাদেশে থেকে আমি কি তাহলে ভুল করেছি ?
মালতী রানী দেবনাথ জানান, বরিশাল বিভাগীয় শহরের চকবাজার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ২৪ নং চকবাজারস্থ রাজেন্দ্র রায় চৌধুরীর ভিটায় টিনশেড ঘরে ৩০ এর দশক থেকে তার পরিবারের বসবাস। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে প্রয়াত স্বামী তারকেশ্বর রায় দেবনাথের স্মৃতি। তারকেশ্বর এ বাড়ির রাস্তাসংলগ্ন একটি অংশে ‘দেবনাথ বস্ত্রালয়’ নামক কাপড়ের দোকান চালাতেন। আরেক অংশে মনোহরী দোকান চালাতেন সুনীল কুমার সাহা। তারকেশ্বর পরলোকে গেলে মালতী রানী বাড়িটির মালিক রাজেন্দ্র কুমার রায় চৌধুরীকে বুঝিয়ে দেন। নিজে ওঠেন পেছনের একটি ভাড়া বাসায়। তবে সামনের দোকানটি রেখে দেন নিজ জিম্মায়। মালতী ছেড়ে যাওয়া বাড়িটি রাজেন্দ্র কুমার রায়ের কাছ থেকে সামনের দোকানসহ ভাড়া নেন সুনীল সাহা। কাপড়ের দোকানটি পরিচালনার দায়িত্ব দেন মালতীর জামাতা বাবুল নাথকে। দোকান ভাড়ায় চলতো মালতীর সংসার, চিকিৎসা, ভরণ-পোষণ। এদিকে রাজেন্দ্র রায়ের মৃত্যুর পর তার একমাত্র ওয়ারিশ পুত্র শঙ্কর কুমার রায় চৌধুরীর কাছ থেকে ২০০৩ সালের ১১ অক্টোবর ২৫ শতাংশের টিনশেড বাড়িটি কেনেন মালতী রানী। তাকে বাড়ি এবং দোকানের পজিশন বুঝিয়ে দেন শঙ্কর রায় চৌধুরী। সেই সঙ্গে মালতী রানীকে মাসে মাসে ভাড়া পরিশোধ করতে সুনীল কুমার সাহাকে নির্দেশ দেন। নির্দেশনা মতো সুনীল কুমারও মালতীকে ভাড়া পরিশোধ করতে থাকেন। কিন্তু দু’মাস যেতেই বেঁকে বসেন সুনীল। অস্বীকৃতি জানান ভাড়া পরিশোধে। রীতিমতো নিজেকেই বাড়ি ও দোকানের মালিক দাবি করে বসেন তিনি। এর সপক্ষে শঙ্কর রায় চৌধুরীর পিতার কাছ থেকে অনিবন্ধিত মৌখিক পত্তনের ওপর ডিক্রিকৃত কাগজ বের করে দেখান। হতভম্ব মালতী তখন রেজিস্ট্রি অফিস, ভূমি অফিস এমনকি দেওয়ানি আদালতগুলোতে তল্লাশি দিয়ে তন্ন তন্ন করেন। ভূমি-অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, সুনীল সাহার দেখানো কাগজটি সম্পূর্ণ ভুয়া। কারণ যে এসএ খতিয়ান থেকে কথিত এই পত্তন নেয়া হয়েছে তখন সুনীল সাহার জন্মেই হয়নি। ১৯৪৩ সালে বরিশাল মৌজায় কোনো এসএ খতিয়ান ছিল না। দীর্ঘ বিরোধের পর মালতী সুনীল সাহার বিরুদ্ধে দেওয়ানি মামলা করেন। বিচারাধীন অবস্থায় বাড়ি ও দোকান বিক্রি করতে উদ্যত হন সুনীল। মালতীর বাধায় সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। তিনি তখন ২০১০ সালে বিরোধীয় সম্পত্তির হস্তান্তর, দখল এবং সম্পত্তির ওপর সবধরনের কার্যক্রমের ওপর হাইকোর্ট থেকে একটি ‘নিষেধাজ্ঞার আদেশ’ নেন। এ পর্যায়ে ২০১৩ সালে হঠাৎই নিরুদ্দেশ হয়ে যান সুনীল। পরে জানা যায়, তিনি গোপনে ভারত চলে গেছেন। লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ে, বরিশাল চকবাজারের ব্যবসায়ী ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৈয়দ জামাল হোসেন নোমান কিছু কাগজে স্বাক্ষর রেখে ভয় দেখিয়ে সুনীল কুমার সাহাকে রাতের আঁধারে ভারত পাঠিয়ে দিয়েছেন। এর পর প্রভাবশালী সৈয়দ জামাল হোসেন নোমানের সঙ্গে বিধবা মালতীর শুরু হয় নতুন লড়াই। হুমকি-ধামকি, রাতারাতি দখল, চালু দোকান থেকে মালতীর জামাতাকে বের করে তালা লাগিয়ে দেয়া হয়ে ওঠে নিত্য দিনের ঘটনা। বরিশাল প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালতে ১৯ বছর ধরে চলমান মামলা (নং-৩৭/১৪), হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপে আপাতঃ নিবৃত হন তিনি। কিন্তু পরক্ষণেই মালতীর ওপর নিপীড়ন চলে ভিন্ন আঙ্গিকে। একের পর এক সৃজন করতে থাকেন ভুয়া কাগজ। কখনো জজ কোর্টের ডিক্রি, কখনো হাইকোর্টেরÑ যখন যেটা প্রয়োজন হাজির করেন নোমান। অর্থ আর প্রভাবের কাছে নথি স্বীকার করে স্থানীয় সমাজ, পুলিশ প্রশাসনও। কিছুতেই পেরে উঠতে পারছেন না নিঃস্ব, দরিদ্র বিধবা মালতী। জামাতা বাবুল নাথকে আমমোক্তার দিয়েছিলেন তিনি। তাকে সঙ্গে নিয়ে আদালত আর থানা-পুলিশের বারান্দায় বহু রাত কাটে মালতীর। সম্প্রতি নোমানের সন্ত্রাসী বাহিনী বাড়ি দখল করতে এসে চড়াও হয় বাবুল নাথের ওপর।এ ঘটনায় স্ট্রোক করেন বাবুল নাথও। এতে আরো অসহায় হয়ে পড়েন মালতী রানী। এদিকে নোমান হাইকোর্টে এনে দাঁড় করান অন্য এক বাবুল নাথকে। যদিও বৈশ্বিক মহামারির কারণে তখন দেশের উচ্চ আদালতসহ বিচারিক আদালতের কার্যক্রম ছিল প্রায় বন্ধ। মালতীর অভিযোগ, নোমান অন্য এক ব্যক্তিকে ‘বাবুল নাথ’ সাজিয়ে মামলা চালাবেন নাÑ মর্মে আবেদন দিয়ে হাইকোর্টকে বিভ্রান্ত করে আদেশ দিয়েছেন নোমান। এ বিষয়ে মালতি রানী দেবনাথের পক্ষের অ্যাডভোকেট নিজামুল হক নিজাম ইনকিলাবকে বলেন, ২০২০ সালের ৮ অক্টোবর এক আদেশে বিচারপতি রেজাউল হাসানের তৎকালীন বেঞ্চ নিষেধাজ্ঞা ভ্যাকেট করার (সিভিল রিভিশন নং-৪২৪৮/২০০৮) যে আদেশ দিয়েছেন সেটি ছিল একতরফা। এ পক্ষের কোনো আইনজীবী শুনানিকালে উপস্থিত ছিলেন না। এই গ্রাউন্ডে আমরা ওই আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছি।
মালতী রানী বলেন, বরিশালের প্রভাবশালী ভূমিদস্যু নোমান ও কামালের লোকজন আমার জায়গার ওপর তড়িঘড়ি নির্মাণ কাজ শুরু করেছে। আমি সাফকবলা দলিল অনুসারে এই সম্পত্তির বৈধ মালিক। অন্যদিকে সুনীল কিংবা নোমানের কোনো দলিলই নেই। এই প্রশ্নটিই এখন পর্যন্ত কেউ করছে না। ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে আমার দোকান, ভিটা-বাড়ি সব দখল করে নিয়েছে নোমান। আমি এখন রাস্তায়। আমার ঘরে এক কেজি চাউল নেই। ওষুধ নেই। আমি অসহায়। আমার পাশে কেউ নেউ। অশ্রুসজল চোখে মালতী এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, মানবাধিকার সংস্থা এবং প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এদিকে সৈয়দ জামাল হোসেন মালতীর ভিটাবাড়ি দখলের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এটি আমারই সম্পত্তি। সুনীলের কাছ থেকে কিনে রেখেছি। হাইকোর্টের যে স্থগিতাদেশ ছিল সেটি ‘ভ্যাকেট’ করা হয়েছে। সে সময় মালতীর আইনজীবী উপস্থিত না থাকলেতো আদালত ‘ভ্যাকেট’ করতেন না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।