Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইলেক্টোরাল ভোটের ফাঁদে হিলারি ও ট্রাম্প

মার্কিন নির্বাচন

প্রকাশের সময় : ৭ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ এক অধ্যায়ের সূচনা হতে যাচ্ছে আর একদিন পর। দেশটিতে ৮ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হবে। প্রেসিডেন্ট পদে ভোটযুদ্ধে নেমেছেন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন ও রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। অন্যান্যবারের চেয়ে এবার নির্বাচন ভিন্ন এক মাত্রা ও গতি পেয়েছে। কারণ, দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর একজন নারী। যুক্তরাষ্ট্রে এর আগে প্রেসিডেন্ট পদে কোন নারী প্রার্থী ছিলেন না। হিলারি ক্লিনটন জয়ী হলে দেশটি এই প্রথম একজন নারী প্রেসিডেন্ট পাবে। নির্বাচন একেবারে দরজার কাছে আসায় ভোটযুদ্ধ বেশ জমে উঠেছে। এর আগে বিতর্কে এবং জনমত জরিপে বেশিরভাগ হিলারি ক্লিনটনের পক্ষেই সমর্থনের পাল্লা ভারী দেখা গেছে। কিন্তু একেবারে শেষ মুহূর্তে রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্পের প্রতি সমর্থনের পাল্লা ভারী হয়ে ওঠায় ট্রাম্প শিবির সম্ভাবনার আলো দেখতে পাচ্ছে। ফলে তারা শেষ মুহূর্তের প্রচারে একেবারে জানপ্রাণ ঢেলে দিয়েছেন। অন্যদিকে থেমে নেই হিলারি শিবিরও। এক যুগ আগে থেকেই প্রেসিডেন্ট পদে হিলারি ক্লিনটনের প্রার্থীতা নিয়ে গণমাধ্যমগুলো ছিলো সরব। এবার ভোটের ময়দানে থেকে হিলারি গণমাধ্যমকে ভরিয়ে রেখেছেন। নির্বাচনে জয়লাভের প্রত্যাশায় তিনি মরিয়া হয়ে প্রচার চালাচ্ছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবারই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটের ময়দানে চমক থাকে। জল্পনা কল্পনা, জরিপ যতই হোক না কেন ভোটারদের ভোটে শেষ পর্যন্ত যে ফল দাঁড়ায় তা সবাইকে অবাক করে দেয়। নির্বাচনী সংশ্লিষ্ট পূর্বাভাসের সঙ্গে ভোটের ফল মিলেছে- এমন নজির কমই আছে। দেশটিতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার জন্য প্রার্থীর প্রয়োজন পড়ে ২৭০টি ইলেক্টোরাল ভোট। আর এই ইলেক্টোরাল ভোট আসে অঙ্গরাজ্যগুলো থেকে। কোনো কোনো রাজ্যে ইলেক্টোরাল ভোট অন্য রাজ্যের তুলনায় বেশি। অর্থাৎ ইলেক্টোরাল কলেজের বিশাল ভুমিকা দেখা যায় নির্বাচনে। যে ইলেক্টোরাল কলেজগুলোর ওপর হিলারি ক্লিনটন বা ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়-পরাজয় নির্ভর করছে, তার মধ্যে এবার সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে গণ্য হচ্ছে নর্থ ক্যারোলাইনা রাজ্য। এখানে ১৫টি ইলেকটোরাল ভোট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গত কয়েক সপ্তাহে এই অঙ্গরাজ্যে ভোটার সমর্থকের দিক থেকে হিলারি ক্লিনটন এগিয়ে ছিলেন।
কিন্তু সর্বশেষ কুইনিপিয়াক বিশ্ববিদ্যালয়ের চালানো এক জরিপের ফলে দেখা গেছে, এখানে ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন বেড়ে গেছে। ভোটের মাত্র দুদিন আগে দেখা যাচ্ছে এই রাজ্যে হিলারি ও ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন যথাক্রমে ৪৮ ও ৪৬ শতাংশ। আর এখন এই রাজ্যই ভোট জেতার জন্য ইস্কাপনের টেক্কা। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার জন্য নর্থ ক্যারোলিনায় ট্রাম্পকে জিততেই হবে। এখানে যদি তিনি জয় না পান তাহলে হিলারির সঙ্গে তাঁর যে ব্যবধান আছে, তা ঘোচানো সম্ভব হবে না। কারণ, অনেক নির্বাচনেই দেখা গেছে পেনসিলভানিয়া, উইনকনসিন, নেভাডা, কলোরাডো ও নিউ হ্যাম্পশায়ার অঙ্গরাজ্যে জয় পাওয়া প্রার্থীদের জন্য নর্থ ক্যারোলিনার চেয়েও কঠিন। এই রাজ্যগুলোয় সমর্থকদের মতিগতি আগে থেকে অনুমান করা সম্ভব হয় না। অবশ্য ট্রাম্পের জন্য সুখবর হলো যে, নর্থ ক্যারোলাইনা রিপাবলিকানদের ঘাঁটি হিসেবেই পরিচিত। এ ছাড়াও ট্রাম্পকে জয়ী হতে হবে ফ্লোরিডা, ওহাইও এবং আইওয়া অঙ্গরাজ্যে।
গণমাধ্যমে হিলারি ক্লিনটনের উপস্থিতি শুরু থেকেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের তুলনায় অনেক বেশি ছিলো। কিন্তু সর্বশেষ জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে, গুরুত্বপূর্ণ ইলেক্টোরাল ভোট ব্যাংক হিসেবে বিবেচিত অঙ্গরাজ্যগুলোর কোনো কোনোটিতে ট্রাম্প এগিয়ে আছেন। কোথাও আবার হিলারির সমান্তরালে রয়েছেন।
সিএনএন-এর প্রকাশ করা নতুন ইলেক্টোরাল মানচিত্রে দেখা যাচ্ছে হিলারির অনুকূলে রয়েছে ২৬৮ ভোট আর ট্রাম্পের অনুকূলে আছে ২০৪ ভোট। অন্যদিকে নিউইয়র্ক টাইমস ও ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার সর্বশেষ জরিপে দেখা যাচ্ছে হিলারির অনুকূলে ইলেক্টোরাল ভোট রয়েছে ২৭০-এর বেশি। কিন্তু ট্রাম্প সার্বিকভাবে হিলারির তুলনায় মাত্র তিন পয়েন্ট পিছিয়ে আছেন। আর এতেই ট্রাম্প শিবিরে ফুটে উঠেছে আশার আলো। ভোটাভুটির দু’দিন বাকি কিন্তু এরই মধ্যে ২ কোটি ২০ লাখ ভোটার ভোট দিয়ে ফেলেছেন। মোট ভোটারের ৪০ শতাংশ এবার আগাম ভোট দিয়ে ফেলবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই আগাম ভোটের ওপরও অনেকখানি নির্ভর করে চূড়ান্ত ভোটের ফল।
হিলারির নির্বাচনী পরামর্শকরা ধারণা করেছিলেন, তৃণমূল পর্যায়ে শক্তিশালী ব্যবস্থাপনার কারণে হিলারি ক্লিনটন আগাম ভোটে এগিয়ে থাকবেন। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ইলেক্টোরাল কলেজগুলোতে শেষ পর্যন্ত তা দেখা যায়নি। তিনি ভোটারদের সমর্থণ যথেষ্ট আদায় করতে সক্ষম হননি। নর্থ ক্যারোলাইনা অঙ্গরাজ্যে হিলারির অনুকূলে অর্থাৎ ডেমোক্র্যাটিক পার্টির অনুকূলে আফ্রিকান-আমেরিকানদের সম্ভাব্য ভোটের পরিমাণ আগের দুটি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তুলনায় প্রায় ১৬ শতাংশ কম। অন্যদিকে শ্বেতাঙ্গ ভোটারদের অংশগ্রহণ বেড়েছে ১৫ শতাংশ। তবে এর বেশিরভাগই ট্রাম্প অর্থাৎ রিপাবলিকান পার্টির অনুকূলে। হিলারির জন্য আশার কথা যে, হিস্পানিক ভোটাররা তার অনুকূলে রয়েছেন। হিলারির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্য নেভাডা ও অ্যারিজোনায় জরিপের ফলে দেখা যাচ্ছে তার অনুকূলে হিস্পানিকদের ভোট আগের তুলনায় প্রায় ১২ শতাংশ বেশি। নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট, সিএনএন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইলেক্টোরাল ভোটের ফাঁদে হিলারি ও ট্রাম্প
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ