পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সংবাদদাতা : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা ও ভাঙচুর ঘটনায় আরো ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ নিয়ে গ্রেফতারের সংখ্যা ৫৩ জন। শনিার রাতে ভিবিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে। পুলিশ জানিয়েছে তাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ দিকে নাসিরনগরে আর কোন অঘটন ঘটেনি। উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন স্থানে র্যাব-পুলিশ-বিজিবিসহ অন্তত ৫শ’ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে। এদিকে সৃষ্ট পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল রোববার দুপুরে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী এডভোকেট সায়েদুল হক সাংবাদিক সম্মেলন করবেন। ডাকবাংলোতে তিনি এ সংবাদ সম্মেলন করবেন।
প্রতিবাদে মানববন্ধন
হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে, মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুরের প্রতিবাদে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলা পরিষদের সামনে গতকাল রোববার সকালে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গণসচেতন হিন্দু নাগরিক সমাজের ও পূজা উদযাপন কমিটির ব্যানারে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন মানববন্ধনে অংশ নেয়। সকাল সাড়ে ১১টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী এ মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করা হয়। নাসিরনগরে হিন্দু পরিবারের ওপর হামলা ও তাদের বাড়িঘর, মন্দির ভাঙচুরের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অঞ্জন কুমার দেব, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান প্রদীপ কুমার রায়, পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি কাজল জ্যোতি দত্ত, অরুন জ্যোতি ভট্টাচার্য্য প্রমুখ। মানববন্ধনে বক্তারা দ্রুত হামলাকারীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী কৃষক শ্রমিক জনতালীগের সভাপতি বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলার ঘটনায় সরকার ও প্রশাসনের চরম ব্যর্থতা রয়েছে। আমরা চাই সব ধর্মের মানুষ নিরাপদে বাংলাদেশে থাকুক। গতকাল রোববার সকাল ১১টার ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির ও ঘরবাড়ি পরিদর্শনকালে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। তিনি বলেন, নাসিরনগরে হামলার ঘটনায় আমার কাছে সবচেয়ে বেশি মনে হয়েছে প্রশাসনিক দুর্বলতা। দেশে রাজনীতি না থাকলে, মানুষের সম্মান না থাকলে, প্রতিবাদের ক্ষমতা না থাকলে প্রশাসন অথর্ব হয়ে যায়। আমরা এর প্রতিকার চাই। ভারতের সঙ্গে এতো বন্ধুত্ব থাকলে একটি সম্প্রদায় এতো নির্যাতিত হবে কেনো? হাজার বছর আগেও আমাদের এমন সাম্প্রদায়িক রেষারেষি ছিল না। নাসিরনগরের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের পাশাপাশি সাবেক প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক বি. চৌধুরী ও গণফোরামের সভাপতি ডঃ কামাল হোসেনকে নিয়ে একটি বেসরকারি তদন্ত কমিটি গঠনের পরামর্শ দেন। তিনি আরো বলেন, হামলার সম্পৃক্ততার অভিযোগে তিন আওয়ামী লীগ নেতা বহিষ্কার হওয়ায় বিএনপি নেতা মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন বলেছেন, তাই ঘটনায় আওয়ামী লীগ জড়িত। এর আগে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের হাবিবুর রহমান বীরপ্রতীক, ইকবাল সিদ্দিকী, শফিকুল ইসলাম দেলোয়ার, এডভাকেট মনমোহন দেবনাথ, এডভোকেট আতিকুর রহমান ও এডভোকেট রফিকুল ইসলামসহ একটি প্রতিনিধিদল নাসিরনগর গৌর মন্দির, দত্তবাড়িসহ ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর পরিদর্শন করেন।
সিরাজগঞ্জে প্রতিমা ভাঙচুর
সিরাজগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা : সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বাগবাটিতে কালিমন্দিরের দুটি প্রতিমা ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। গত শনিবার গভীর রাতে উপজেলার বাগবাটি ইউনিয়নের ফুলকোচা গ্রামের কুন্ডুবাড়ীতে মূর্তি ভাঙচুরের এ ঘটনা ঘটে। সিরাজগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন জানান, রাতের কোন এক সময়ে দুর্বৃত্তরা ফুলকোচা কালিমন্দিরের দুটি প্রতিমার মাথা ভেঙ্গে নিয়ে যায়। রোববার সকালে স্থানীরা প্রতিমার মাথা ভাঙ্গা দেখে পুলিশে খবর দেয়। পরে প্রতিমা ভাঙচুরের খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক কামরুন নাহার সিদ্দীকা, পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন আহম্মেদ, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান রিয়াজ উদ্দিন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ব্রেনজন চাম্বুগং, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি এ্যাড. সুকুমার চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ কুমার কানু ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ কুমার কানু প্রতিমা ভাঙচুরকারীদের দ্রত গ্রেফতারের দাবি জানান।
সোনাগাজীতে মন্দিরে রহস্যজনক আগুন
সোনাগাজী (ফেনী) উপজেলা সংবাদদাতা : গত বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার ৫নং চরদরবেশ ইউনিয়নের চরসাহাভিকারী গ্রামের নিতাই আমিন দাসের বাড়ির দরজায় জগন্নাথ মন্দিরে রহস্যজনক আগুনের সূত্রপাত ঘটে। পরদিন শুক্রবার বিকেলে ফেনী-৩ আসনের এমপি হাজী রহিম করেন।
এলাকাবাসী ও ওই বাড়ির পূজারীরা জানান, আমরা বৃহস্পতিবার রাত ১১ ঘটিকা পর্যন্ত মন্দিরে পূজা করে নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে যায়। সকালে মন্দিরে এসে দেখি মন্দিরের দরজার চৌ-কাঠের কিছু অংশ একটি মাদূরের কিছু অংশ, একটি প্লাস্টিকের জগ কিছু অংশসহ একটি প্লাস্টিকের টেবিল ক্লথ কিছু অংশ পুড়ে যায়। এতে হাজার খানিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। এলাকাবাসী আরো জানায়, কে বা কাহারা পূর্ব শত্রুতার কারণে অথবা মোমবাতি বা সরিষার তেলের কুঠি বাতি থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। শুক্রবার সকালে মন্দিরে আগুন খবর পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসী ও স্থানীয় প্রশাসন দ্রুত মন্দির প্রাঙ্গণে ছুটে যান। স্থানীয় প্রশাসন আগুনের সূত্রপাতের কারণ জানার জন্য বহু চেষ্টা করেন। এ সময় অনেকে মন্তব্য করেন, এটা রহস্যজনক আগুন। এ দিকে দুপুর বেলা খবর পেয়ে সহকারী পুলিশ সুপার ও সোনাগাজী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ হুমায়ুন কবিরসহ বেশ কিছু প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। এ সময় পূজারীরা বলেন, আগুন লাগাইতে আমরা কাউকে দেখিনি, রাত ১১টা পর্যন্ত আমরা পূজা অর্চনায় ব্যস্ত ছিলাম। সকাল বেলা দেখা যায়, মন্দিরের সামান্য কিছু জিনিসপত্র আগুনে পুড়ে যায়। এ সময় পূজারীরা মন্দির উন্নয়নের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের কাছে সাহায্য কামনা করেন। এ ব্যাপারে সোনাগাজী উপজেলা পূজা উদ্যাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বাবু সমর চন্দ্র দাস জানান, মন্দিরে আগুনের কথাটা আমি শুনেছি, তবে এ ব্যাপারে কোন বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। বিকেলে স্থানীয় এমপি হাজী রহিম উল্যাহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এব্যাপারে সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির জানান, আমি সোনাগাজী থানায় যোগদান করার পর থেকে স্থানীয় কিছু নেতা আমার বিপক্ষে অবস্থান নেয়। তারাই সোনাগাজীতে বিভিন্ন অজুহাতে নৈরাজ্য সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন অপকর্ম চালানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমিও স্থানীয় প্রশাসন তা কঠোর হস্তে দমনের চেষ্টা করে যাচ্ছি। স্থানীয় এমপি হাজী রহিম বলেন, সোনাগাজীসহ ফেনীতে নিজাম হাজারীর পালিত কিছু নেতাকর্মী সোনাগাজীসহ ফেনীকে বার বার অশান্তি করার বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছে। এটা হতে দেয়া যায় না। এ সময় তিনি স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি সব ধরণের সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন এবং নগদ ৪০ হাজার টাকার অনুদান প্রদান করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।