Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩ মার্চ, ২০২২, ১২:১৪ এএম

১৯৭১ সালের ৩ মার্চ বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নানা নিপীড়নে বাঙালির হৃদয়ে দানা বাধতে থাকে স্বাধীনতার স্বপ্ন। আর তাই মার্চ থেকেই ফুঁসে ওঠে মুক্তিকামী বাঙালি। ৩ মার্চ পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ঢাকায় পার্লামেন্টারি পার্টিগুলোর নেতাদের সঙ্গে এক গোলটেবিল বৈঠক আহ্বান করেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সে প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন।

বিকালে ছাত্রলীগ সভাপতি নুরে আলম সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় এক বিশাল ছাত্র জনসভা। এ সভায় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাজাহান সিরাজ বঙ্গবন্ধুর সামনে পাঠ করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইশতেহার। আর এ ইশতেহারে বলা হয়- ৫৪ হাজার ৫০৬ বর্গ মাইল বিস্তৃত ভৌগোলিক এলাকার সাত কোটি মানুষের জন্য আবাসভূমি হিসেবে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের নাম বাংলাদেশ।

এই দেশ গঠন করে নিম্নলিখিত তিনটি লক্ষ্য অর্জন করতে হবে- ১. স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ গঠন করে পৃথিবীর বুকে একটি বলিষ্ঠ বাঙালি জাতি সৃষ্টি ও বাঙালির ভাষা, সাহিত্য, কৃষ্টি, সংস্কৃতি বিকাশের ব্যবস্থা করতে হবে। ২. স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ গঠন করে অঞ্চলে অঞ্চলে, ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে বৈষম্য নিরসনকল্পে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি চালু করে কৃষক শ্রমিক রাজনীতি কায়েম করতে হবে। ৩. স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ গঠন করে ব্যক্তি, বাক ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতাসহ নির্ভেজাল গণতন্ত্র কায়েম করতে হবে।

এছাড়া বাংলার স্বাধীনতা আন্দোলন পরিচালনার জন্য কর্মপন্থা ঘোষণা করা হয়। একই সঙ্গে ওই সভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের সর্বাধিনায়ক হিসেবে ঘোষণা করা হয়। স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ গঠন আন্দোলনের এ পর্যায়ে নিম্নলিখিত জয়ধ্বনি ব্যবহৃত হবে বলে উল্লেখ করা হয় ওই সভায়- ‘স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ, দীর্ঘজীবী হউক’; ‘স্বাধীন কর স্বাধীন কর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর’; ‘স্বাধীন বাংলার মহান নেতা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব’; ‘গ্রামে গ্রামে দুর্গ গড়, মুক্তিবাহিনী গঠন কর’; ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর’ ; ‘মুক্তি যদি পেতে চাও, বাঙালিরা এক হও’।

ইশতেহারটি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে প্রচণ্ড করতালির মধ্যে প্রস্তাব গৃহীত হলে ‘জয় বাংলা’ স্লােগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পল্টন ও পার্শ্ববর্তী এলাকা। প্রস্তাবটি লিখেছিলেন ছাত্রলীগের তৎকালীন দফতর সম্পাদক এম এ রশীদ।

৩ মার্চের ওই জনসভাতেই ঘোষণা আসে ৭ মার্চে রেসকোর্সের (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) সেই ঐতিহাসিক জনসভার। যেখান থেকে বাঙালি জাতির মহান পুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তবে অবস্থা আয়ত্বে আনার জন্য ওইদিনই পাকিস্তান সরকার জারি করে সান্ধ্য আইন। কিন্তু তা উপেক্ষা করেই অব্যাহত থাকে জনতার বিক্ষোভ ও মিছিল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ