Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কী পরিমাণ কাগজপত্র খোয়া গেছে রেজিস্ট্রার মিলিয়ে দেখা হচ্ছে

তেজগাঁও রেজিস্ট্রি কমপ্লেক্সে দস্যুতা

প্রকাশের সময় : ৭ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

হাসান-উজ-জামান : তেজগাঁও রেজিস্ট্রি কমপ্লেক্স দস্যুতার ঘটনায় কী পরিমাণ কাগজপত্র খোয়া গেছে তা নিশ্চিত হতে রেজিস্ট্রার মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে গতকাল পর্যন্ত এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ কিংবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। গত রাত পর্যন্ত এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, ডকুমেন্টস গায়েব করতেই ভূমি মাফিয়াচক্র এ কাজ করেছে। মূল গেটে তালাবদ্ধ থাকায় ধারনা করা হচ্ছে, দুর্বৃত্তরা ভবনটির ভেতরেই অবস্থান করছিল এবং তারা সেখানেরই কর্মচারী। এ ঘটনার পর টনক নড়ে কর্তৃপক্ষের। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চলতি সপ্তাহের মধ্যেই পুরো ভবনটিতে বসানো হচ্ছে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা (সিসিটিভি)। উল্লেখ্য, গত বুধবার রাতে রেজিস্ট্রি কমপ্লেক্সের নতুন ভবনের দোতালায় তেজগাঁও, তৃতীয় তলায় উত্তরা এবং চতুর্থ তলার সদর রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে দুর্বৃত্তরা।
এরপর রেকর্ড রুমের আলমারির তালা ভেঙে দলিলপত্র তছনছ করে। রেকর্ড রুমে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল হাজারো দলিল।
ওই ঘটনায় পুলিশের তদন্তের কারণে তিনটি অফিসেই বৃহস্পতিবার সব ধরনের কাজকর্ম বন্ধ ছিল। সপ্তাহের প্রথম দিন গতকাল রোববার সামান্য কাজকর্ম হলেও স্টাফরা ব্যস্ত ছিলেন রেজিস্ট্রার মিলিয়ে দেখার কাজে। কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ছিল আতঙ্ক। স্পর্শকাতর এ ঘটনায় সেখানের কর্তৃপক্ষ মামলা করতে রাজি হয়নি। শুধু তিনিট সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের পক্ষ থেকে সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা রেজিস্টার মো: আবদুল জলিল গত রাতে ইনকিলাবকে বলেন, তদন্তে চুরির ঘটনা পাওয়া গেলে প্রাথমিকভাবে দায়ের করা জিডিই মামলায় রুপান্তর করা হবে। এ ঘটনার পর কমপ্লেক্সের নিরপত্তায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যেই পুরো কমপ্লেক্স ভবনে সিসি টিভি বসানো হচ্ছে। এ ঘটনার পর আইজিআর মহোদয় সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে বৈঠকে বসেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিকাল সাড়ে ৫টার পর শুধু বহিরাগতই নয়, একমাত্র নিরপত্তা প্রহরী ছাড়া কমপ্লেক্সে যে কোনো কারোরই অবস্থান নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে নিচতলায় অবস্থিত ব্যাংকের দেয়াল ঘেঁষে গড়ে ওঠা নকল নবিসদের সাংগঠনিক অফিস উচ্ছেদ করা হয়েছে। আবদুল জলিল আরো বলেন, পুলিশ খুব গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি তদন্ত করছে। আশা করছি, মূল ঘটনা উদঘাটনের পাশাপাশি জড়িতরা গ্রেফতার হবে।
এদিকে গতকাল দুপুরেও ঘটনাস্থল তদন্ত করেছেন তেজগাঁও পুলিশের এসি, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ওসি, পরিদর্শকসহ (তদন্ত) জিডির তদন্ত কর্মকর্তাগণ। তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ওসি বলেন, এ ঘটনায় কর্তৃপক্ষ মামলা করতে রাজি হননি। স্পর্শকাতর এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সেখানের সিকিউরিটি গার্ডসহ সন্দেহজনক অন্তত ১৫ জনকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে তাদের সংশ্লিষ্টতা না মেলায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে। উত্তরা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের রেকর্ড রুম তছনছের ঘটনায় জিডির তদন্ত কর্মকর্তা তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল তানার এসআই বারেক বলেন, ঘটনাস্থল তদন্তে নিশ্চিত বলা যায়, ঘটনার সাথে সেখানের কোন অসাধু কর্মচারী জড়িত। যারা ভেতরে অবস্থান করেছিলেন। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের ছেড়ে দেয়া হলেও প্রতিদিন তাদের থানায় হাজিরা দিতে হচ্ছে।
এদিকে কমপ্লেক্স ভবনের রেজিস্ট্রার সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ভূমি অফিসগুলোতে ঘুষবাণিজ্য ও অনিয়মরোধে বেশ সক্রিয়। দুদকের কর্মকর্তারা কখনো প্রকাশ্যে, আবার কখনো গোপনে রেজিস্ট্রি কমপ্লেক্সের সব কিছু মনিটরিং করেন। তাদের জালে ইতোমধ্যে প্রভাবশালী অনেক জালিয়াতচক্র গ্রেফতার হয়েছে। অনেকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। অনেকে জেলে। একটি ঘটনার উল্লেখ করে ওই কর্মচারী বলেন, ২০১৫ সালে সেগুনবাগিচার একটি জমি নাল দেখিয়ে একজন নকল নবিস পিয়নের সহযোগিতায় রেজিস্ট্রি হয়। (দলিল নং ৩২৬৭)। বিষয়টি পড়ে সাব-রেজিস্ট্রারের কাছে ধরা পড়ে। অনেক চাপে রেজিস্ট্রার ঘাটতি কর আদায় করেন। কিন্তু জমিটি খাস খতিয়ানভূক্ত হওয়ায় ঢাকা জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপে অবশেষে উদ্ধার হয়। ওই জমির গ্রহিতাদের একজন অপর একটি প্রতারণা মামলায় বর্তমানে জেলে রয়েছেন। ওই কর্মকর্তার দাবি প্রতারণার মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায়ে দুদকের মামলা থেকে বাঁচতেই কিংবা প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে কোনো চক্র দলিল ধ্বংস করতে রেকর্ডরুম তছনছ করেছে। এ ছাড়া অফিসের কোথায় কোন দলিলাদি তা বহিরাগতদের জানার কথা নয়। এর সঙ্গে ভেতরের লোকজন জড়িত।
গত বছরে পুরাতন ভবনের রেকর্ডরুম থেকে ১৮টি বালাম বই (জমির মালিকানার তথ্যসংবলিত মূল ভলিউম) চুরি হয়। এর মধ্যে ১৪টি বই মিরপুরের এক দলিল লেখকের বাসা থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ঘটনায় গ্রেফতারকৃতরা জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছে, প্রতিটি বইয়ের জন্য তারা মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েছে। ওই ঘটনার কিছুদিন পর চোরের দল আবার রেকর্ডরুম থেকে কয়েকটি বালাম বই চুরির ব্যর্থ চেষ্টা চালায়। কিন্তু একের পর এক ঘটনা ঘটলেও কমপ্লেক্স ভবনের নিরপত্তায় কর্তৃপক্ষ ছিলেন উদাসিন। সন্ধ্যা নামতেই কমপ্লেক্স ভবন এলাকাটি অরক্ষিত হয়ে পড়ে। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এলাকাটি পরিণত হয় কুখ্যাত সন্ত্রাসী, ছিনতাইকারী ও চাঁদাবাজদের আড্ডায়। চলে মাদক সেবন। সঙ্গে নারীদের নিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপ। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দৈনিক ৬০টাকা ভিত্তিতে নৈশ প্রহরীরা কাজ করে। কিন্তু তাদের নিয়োগ নিতে হয় লাখ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে। এসব নৈশপ্রহরী রাতে নিজ দায়িত্ব পালন না করে দিনে তদবির ও টু পাইস কামানোর ধান্ধায় থাকে। কোনো রকম যাচাই-বাছাই না করেই দলিল লেখকদের সনদ দেয়া হয়। তারা পেশিশক্তি ও রাজনৈতিক পরিচয়ে দু’নম্বরি করে যাচ্ছে। এসব অনিয়ম বন্ধ না হলে বছরে কয়েক শ’ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের এ অফিসটিতে ফের বড় যে কোনো ধরনের আশঙ্কা থেকেই যাবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কী পরিমাণ কাগজপত্র খোয়া গেছে রেজিস্ট্রার মিলিয়ে দেখা হচ্ছে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ