পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বৈশ্বিক মহামারি করোনায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য। বিশ্বের অন্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পড়েছে এর নেতিবাচক প্রভাব। প্রায় সব ধরনের ব্যবসায় এক প্রকার ধস নামে। আর্থিক সঙ্কটের কারণে ইতোমধ্যে অনেকেই ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছেন। করোনার এ প্রভাব পড়ে দেশের নির্মাণ খাতেও। অনেক ব্যবসায়ীই ব্যাংক লোন আর জমানো অর্থ বিনিয়োগ করে পড়েছেন সঙ্কটে। আবার করোনা সংক্রমণ ধীরে ধীরে কমে আসায় সবকিছু স্বাভাবিক হওয়ায় মানুষ দীর্ঘদিন পর ব্যক্তিগতভাবে বাড়ির নির্মাণকাজ শুরু করেছেন। পাশাপাশি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে আবাসন ব্যবসাও। কিন্তু হঠাৎ করে নির্মাণসামগ্রীর দাম বাড়তে থাকায় ফের বাড়ছে সঙ্কট। নির্মাণকাজের অন্যতম প্রধান উপকরণ রড, সিমেন্ট, শিট, অ্যাঙ্গেল, ইট, বালু আর পাথরের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপুল সংখ্যক নির্মাণাধীন ফ্ল্যাট নিয়ে বিপাকে আবাসন ব্যবসায়ীরা। আর যারা দীর্ঘদিন পর ব্যক্তিগতভাবে ঘর-বাড়ির নির্মাণকাজে হাত দিয়েছেন তাদের মাথায়ও হাত। এদিকে নির্মাণসামগ্রীর দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর প্রভাব পড়ে বড় বড় উন্নয়ন কাজে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো ইতোমধ্যে কাজের গতি কমিয়ে দিয়েছে। কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধির কারণে সামগ্রিকভাবে দেশের নির্মাণ শিল্পে ভাটা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে নির্মাণকাজের অন্যতম প্রধান উপকরণ রডের দাম দফায় দফায় বেড়ে এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। প্রতি টন রড এখন খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে কোম্পানিভেদে ৮৩ হাজার থেকে ৮৮ হাজার টাকায়। দাম বেড়েছে নির্মাণকাজে ব্যবহৃত অ্যাঙ্গেল, শিট, মোটা প্লেট, পাতলা প্লেট, ইট, বালু, পাথর ও সিমেন্টের। অথচ চলতি বছরের বাজেটে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সিমেন্ট ও স্টিল শিল্পে আগাম কর প্রত্যাহার করেছেন। যে কারণে নির্মাণসামগ্রী সিমেন্ট, স্টিল, রডের দাম কমবে বলে আশাবাদী ছিল সবাই।
সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম এবং জাহাজ ভাড়া ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় রডসহ নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়েছে। করোনার প্রভাব কাটিয়ে বিশ্বে নির্মাণকাজ বেড়ে যাওয়ায় চাহিদা অনুসারে কাঁচামাল পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে নির্মাণকাজের ভরা মৌসুম হওয়াতেও এখন রডসহ অন্যান্য সামগ্রীর চাহিদা বেশি। তবে কাঁচামালের দাম না কমা পর্যন্ত রড-সিমেন্ট-ইটের দাম কমবে না বলেও উল্লেখ করেছেন তারা।
করোনার স্থবিরতা কাটিয়ে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ আবারও পুরোদমে শুরু হয়েছে। পাশাপাশি নির্মাণ মৌসুম হওয়ায় এখন শহর-গ্রামে ভবন নির্মাণ বেড়েছে। তাই বাজারে এখন নির্মাণসামগ্রীর চাহিদাও বাড়ছে। তাই বাড়তে শুরু করেছে এসব নির্মাণশিল্পের উপকরণের দামও।
সূত্র মতে, বেশ কয়েক মাস ধরেই লাগামহীনভাবে বাড়তে থাকা রডের বাজার কিছুদিন স্থিতিশীল থাকার পর আবারও বাড়ছে। এ সপ্তাহে টনপ্রতি এক হাজার টাকা বেড়েছে। তবে রডের দাম বাড়লেও পাইকারি সিমেন্টের দাম আগের মতোই রয়েছে। যদিও খুচরা পর্যায়ে সিমিন্টের দাম বস্তাপ্রতি আগের থেকে ১০ থেকে ২০ টাকা বাড়িয়েছে বিভিন্ন সিমেন্ট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান।
গত বছর সেপ্টেম্বরে বাজারে ভালো মানের (৬০ গ্রেডের ওপরে) প্রতি টন রডের দাম ছিল ৬৯ থেকে ৭০ হাজার টাকা। সেটি অক্টোবর থেকে বাড়তে বাড়তে এখন প্রতি টন হয়েছে কোম্পানির মানভেদে ৮৩ থেকে ৮৮ হাজার টাকা, যা দেশের ইতিহাসে রডের সর্বোচ্চ দাম। কয়েক মাসের ব্যবধানে ঘরবাড়ি ও স্থাপনা নির্মাণের অন্যতম প্রধান এই উপকরণের দাম প্রতি টনে বেড়েছে ১৩ থেকে ১৮ হাজার টাকা। এর আগে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে (২০০৭ সালের জানুয়ারির পর) ভালো মানের (৬০ গ্রেডের ওপরে) এক টন রডের দাম ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত উঠে যায়। সেটিই দেশের বাজারে এখন পর্যন্ত রডের সর্বোচ্চ দাম ছিল। পরে রডের দাম কমে ৪৫ হাজার টাকায় নেমে আসে। গত বছরের শেষের দিকে রডের দাম ৮১ হাজার টাকায় ওঠে।
এতে বিপাকে পড়েছেন ব্যক্তিগত বাড়ি নির্মাণকারী ও আবাসন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করছেন, এই দাম আরো বাড়তে পারে। অন্যদিকে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দাম বেড়েছে নির্মাণশিল্পের অন্যতম উপকরণ ইট ও সিমেন্টের। প্রতিটি ইটের দাম বেড়েছে ৩ থেকে ৪ টাকা। ১ নম্বর ইট প্রতি হাজার আগে যেখানে বিক্রি হতো ৯ হাজার টাকা, এখন এটি বিক্রি হচ্ছে ১৩ হাজার টাকায়। দ্বিতীয় গ্রেডের ইট বিক্রি হচ্ছে ১১ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকায়। অথচ ভালো মানের ইট এর আগে সাড়ে ৯ থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যেই বিক্রি হয়েছে। ইটের দাম বৃদ্ধির ব্যাপারে সাভারের ডিবিএস ব্রিকফিল্ডের ম্যানেজার মো. মোকলেসুর রহমান জানান, এক টন কয়লা ছিল সাত হাজার টাকা, তা বেড়ে এখন হয়েছে ১৪ হাজার টাকার বেশি। কয়লা সিন্ডিকেটের কারণে এটার দাম বেড়েছে।
সিমেন্টের ক্ষেত্রে সিমেন্ট মালিকরা না বাড়ালেও খুচরা পর্যায়ে কোম্পানিভেদে বস্তাপ্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা বাড়িয়েছে। প্রতি বস্তা সিমেন্ট ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ কয়েক মাস আগে প্রতি ব্যাগ সিমেন্ট ৩৯০ টাকার মধ্যে পাওয়া যেত। অবশ্য সিমেন্টের দাম বাড়া নিয়ে ডিলাররা জানিয়েছেন, কারখানা পর্যায়ে সিমেন্টের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন মালিকেরা। তাই খুচরায় সিমেন্টের দাম বেড়েছে। অন্যদিকে কারখানার মালিকেরা বলছেন, ডলারের দাম বাড়ার কারণে এখন ক্লিংকার পরিবহনে জাহাজের ভাড়া বেড়েছে। পাশাপাশি ক্লিংকার ক্রয়েও বাড়তি ব্যয় হচ্ছে। তাই উৎপাদন পর্যায়ে খরচ বেড়ে যাওয়ায় সেটি সিমেন্টের দামের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে। যদিও দাম বাড়ানোর সরাসরি ঘোষণা দেননি মালিকরা।
অবশ্য এই অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির পেছনে কাঁচামাল সঙ্কটই প্রধান অনুঘটক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, রড তৈরির কাঁচামাল স্ক্র্যাপ মেটাল বা মেল্টিং স্ক্র্যাপের দাম বিশ্ববাজারে এখন বেশি। গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি দামে এই মেটাল কিনতে হচ্ছে। এদিকে দাম বেড়েছে ইটভাটায় কাঁচা ইট পোড়ানোর একমাত্র বৈধ জ্বালানি কয়লারও। ভাটা মালিকদের অভিযোগ- কয়লা বিক্রিতে সিন্ডিকেটের কারণে এই জ্বালানির দাম টনপ্রতি দ্বিগুণের বেশি হয়েছে। ফলে স্বভাবতই ইটের দামও চড়া।
এদিকে নির্মাণসামগ্রীর অন্যতম অনুষঙ্গ রডের দাম বৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েছেন এ খাত সংশ্লিষ্টরাও। ইতোমধ্যে এ খাতের ব্যবসায়ীরা রডের দাম নিয়ন্ত্রণে আগামী বাজেটে কর ও ভ্যাট কমানোর দাবি জানিয়েছেন। বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসএমএ) সভাপতি মানোয়ার হোসেন সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে রডের কাঁচামাল ও রাসায়নিকের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশেও রডের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। তাতে দামও বাড়ছে। এ অবস্থায় রডের দাম নিয়ন্ত্রণে আগামী বাজেটে কর ও ভ্যাট কমানোর দাবি জানিয়েছেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা। বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান ইস্পাত খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসএমএ) সভাপতি মানোয়ার হোসেন।
এদিকে নির্মাণসামগ্রীর দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর প্রভাব পড়ে আবাসন ব্যবসায়ের পাশাপাশি বড় বড় ঠিকাদারি কাজে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে কাজের গতি কমিয়ে দিয়েছে। কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধির কারণে সামগ্রিকভাবে দেশের নির্মাণশিল্পে ভাটা দেখা দিয়েছে। ফলে নির্মাণশিল্পের সঙ্গে জড়িত সিমেন্ট, ইট, বালু, পাথর, হার্ডওয়্যার, টাইল্স ফ্যাক্টরিগুলো বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে। এ সমস্যা পুনরুদ্ধারের ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে দেশের নির্মাণ ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন ব্যাহত হবে এবং নির্মাণ ও অবকাঠামো উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার প্রায় ২ কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ফলে দেশে এক অর্থনৈতিক মহামারির সৃষ্টি হবে।
কয়েক মাস আগে নির্মাণ ও অবকাঠামো খাতের মূল কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার গৃহীত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যথাসময়ে সম্পন্ন করা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। এমন পরিস্থিতিতে প্রকল্পে নির্মাণ ব্যয় সামাল দিতে রড আমদানির অনুমতি চেয়েছে ব্যবসায়ীদের এ শীর্ষ সংগঠনটি। একই সঙ্গে সরকারি নীতিমালার কারণে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে গেলে ঠিকাদারকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার বিধান করার অনুরোধ জানিয়েছে এফবিসিসিআই। একই সঙ্গে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি জসিম উদ্দিন প্রধানমন্ত্রীকে দেয়া এক চিঠিতে দেশের নির্মাণসংশ্লিষ্ট পণ্যের অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি রোধ ও নির্মাণ খাতে চলমান অস্থিরতা নিরসনে হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
ঠিকাদারদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কন্সট্রাকশন-বাসির সভাপতি প্রকৌশলী এস এম খোরশেদ আলম জানান, এভাবে রডসহ নির্মাণসামগ্রীর দাম হঠাৎ বাড়তে থাকায় চলমান কাজ সময়মতো শেষ করা নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন তারা। কাজে এরই মধ্যে ধীরগতি নেমে এসেছে। তাদের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। কারণ, তারা যখন টেন্ডার জমা দিয়েছিলেন সেখানে এই নির্মাণসামগ্রীর দাম বাড়তে শঙ্কায় বর্ধিত মূল্য নির্ধারণের সুযোগ ছিল না। অথচ এখন বর্ধিত দামে কিনতে হচ্ছে। তিনি জানান, স্টিলনির্ভর যে কোনো অবকাঠামো নির্মাণে রডের দরকার হয় ২৫ ভাগ। আর এই রডের দাম যদি ২৫ ভাগ বেড়ে যায় তাহলে পুরো প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে যায় ৬ থেকে ৭ শতাংশ। অথচ বর্তমান প্রতিযোগিতার বাজারে কোনো প্রকল্প থেকে ৫ শতাংশ লাভ করা যায় না।
এ নিয়ে কথা হয় রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সভাপতি আলমগীর সামসুল আলামিনের। তিনি ইনকিলাবকে বলেন, নির্মাণসামগ্রীর দাম বাড়ার প্রভাব সরাসরি আবাসন খাতে পড়েছে। দীর্ঘদিন পর ব্যবসা-বাণিজ্য কিছুটা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। আর এ সময়ে দাম বাড়ার প্রভাবে আবাসন খাত বড় অঙ্কের ক্ষতির মুখে পড়েছে। তিনি বলেন, আবাসন খাতে সাধারণত নির্মাণের আগেই বিক্রি করা হয়। তাই হঠাৎ করে সবকিছুর দাম বাড়ায় সামনে ফ্ল্যাটের দামও বাড়াতে বাধ্য হব। এতে ক্রেতা-বিক্রেতা দুই পক্ষই ক্ষতির মুখে পড়বে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।