Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জার্মানিতে বহু মানুষের স্বাস্থ্য বিমা নেই

প্রকাশের সময় : ৬ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : জার্মানিতে এক লক্ষেরও বেশি মানুষ স্বাস্থ্য বিমার আওতাভুক্ত নন। প্রিমিয়াম দিতে না পারায় ঋণের বোঝাও বেড়েছে তাদের। এই বছরের শেষ নাগাদ ঋণ মওকুব করা হবে ভুক্তভোগীদের।
ক্রিশ্টোফের এমন কোনো দিন যায় না, যে দিনটিতে তার ব্যথা থাকে না। ভার বহন করার ফলে তার এই অবস্থা। শয্যাশায়ী মায়ের সেবা শুশ্রƒষা করেন তিনি। বিছানা করা, ধোয়ামোছা, খাওয়ানো সবকিছুই করতে হয়।
৮৬ বছর বয়সি মাকে দেখতে নিয়মিত ডাক্তার আসেন। তবে ক্রিশ্টোফ নিজে ব্যথাবেদনা সত্তে¡ও চিকিৎসা করাতে পারছেন না। বহু বছর ধরে তার কোনো স্বাস্থ্য বিমা নেই। বিশেষ করে দাঁতের ডাক্তারের কাছে যাওয়াটা জরুরি হয়ে পড়েছে। অনেক দাঁতও পড়ে গেছে বলে জানান এই ভুক্তভোগী সামাজিক ভাতা বাদ হয়ে যাবার পর প্রিমিয়াম দিতে না পারায় স্বাস্থ্য বিমাও বাতিল হয়ে গেছে তার। তার ওপর বিমা সংস্থার কাছে জমে গিয়েছে অনেক ঋণ।
আগে ক্রিশ্টোফের একটা ভাল চাকরি ছিল। কিছু দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা তাকে যেন আঁধারে নিক্ষেপ করে। বান্ধবী ছেড়ে চলে যায়। এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু মারা যায়। গভীর অবসাদের কবলে পড়েন তিনি। সামাজিক দপ্তর থেকে আসা চিঠিগুলোও খুলে দেখার ইচ্ছা হতো না তার। ফলে কিছুদিনের মধ্যে ভাতাও বন্ধ যায়।
ইতোমধ্যে মায়ের ডিমেনশিয়া দেখা দেয়। মায়ের বাসায় এসে ওঠেন ক্রিশ্টোফ। ডিপ্রেশন কিছুটা হালকা হলে সামাজিক ভাতার জন্য আবার আবেদন করেন। তবে তা প্রত্যাখ্যান করা হয়। কারণ দেখিয়ে বলা হয়, ‘আপনি তো মায়ের সেবা শুশ্রƒষা করছেন। তাহলে কোনো কাজ নেয়া আপনার পক্ষে সম্ভব হবে না।’ উল্লেখ্য, সামাজিক ভাতা পেতে হলে সবসময় চাকরির করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়। কাজ না পাওয়া পর্যন্ত অনবরত বিভিন্ন জায়গায় আবেদন করে যেতে হয়।
স্বাস্থ্য বিমা না থাকার কথা শোনা যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে। জার্মানিতে বিষয়টি অস্বাভাবিক মনে হয়। কিন্তু এই দেশেই এক লক্ষেরও বেশি মানুষের স্বাস্থ্য বিমা নেই। যদিও ২০০৭ সাল থেকে বিমা করাটা বাধ্যতামূলক। সামাজিক ভাতা বাতিল হলে স্বাস্থ্য বিমার প্রিমিয়াম দেয়া সম্ভব হয় না অনেকের পক্ষে। পরিণতিতে বিমাও বাতিল হয়ে যায়। প্রায়ই নারীরা এই অবস্থার শিকার হন। বিবাহ বিচ্ছেদ হলে স্বাস্থ্য বিমার আওতা থেকে বের হতে হয় অনেককে।
বিমা না থাকাটা দÐনীয় নয়। তবে বিমার প্রিমিয়াম দিতে না পারলে অনেক ঋণ হয়ে যায়। সেই সাথে যুক্ত হয় অতিরিক্ত মাশুল। ক্রিশ্টোফের দশ হাজার ইউরো ঋণ হয়ে গেছে। মাকে দেখাশোনা করার জন্য সেবা বাবদ মাত্র ৭০০ ইউরো পান তিনি। বিমা সংস্থার ঋণ পরিশোধ করার সামর্থ্য তার নেই।
মস্তিষ্কের রক্ত চলাচলে ব্যাঘাতের কারণে এই রোগ যে কোনো সময় যে কারও হতে পারে একেবারে হঠাৎ করেই। স্ট্রোক হলে বাকশক্তি, দৃষ্টিশক্তিও হারিয়ে যেতে পারে। শরীরের যে কোনো অংশ অবস হতে পারে। সারাজীবন হয়তো বা হুইলচেয়ারে চলতে হতে পারে। তবে এটা নির্ভর করে মস্তিষ্কের কোন অংশে স্ট্রোক হয়েছে বা আঘাতটা কত বেশি তার ওপর।
নতুন এক আইনের ফলে এই ঋণভারে জর্জরিত মানুষরা কিছুটা স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলতে পারবেন। এতে বলা হয়েছে, ‘স্বাস্থ্য বিমার আওতাভুক্ত নন এমন ব্যক্তিরা চলতি বছরের মধ্যে যদি আবার বিমা করাতে চান তাহলে তাদের বাকি পড়া প্রিমিয়াম ও মাশুল মওকুব করা হবে।’ তবে এখন পর্যন্ত খুব কম আবেদনই পড়েছে এক্ষেত্রে। কারণ ভুক্তভোগীদের অনেকেই এই আইন সম্পর্কে জানেন না। বিশেষ করে অভিবাসীরা এ ব্যাপার পিছিয়ে আছেন। তবে ঋণমুক্ত হলেই যে সমস্যার সমাধান হবে এমনটি বলা যায় না। কেননা বিমার আওতাভুক্ত হওয়ার পর আবার তাদের প্রিমিয়াম দিয়ে যেতে হবে। বিমা সংস্থাগুলো নূ্যুনতম প্রিমিয়াম মাসে ১৫০ ইউরো ধার্য করেছে। এই পরিমাণ অর্থ দেয়া অনেকের পক্ষেই সম্ভব হবে না। ক্রিশ্টোফ কষ্টেসৃষ্টে এই অর্থটা দিতে পারবেন। তাকে আবার গ্রহণ করার জন্য পুরনো বিমা সংস্থায় আবেদন করেছেন তিনি।’ ‘আমার অনেক কিছু কাটছাঁট করতে হবে। তবে আবার বিমার আওতায় আসতে পারবো বলে অবিশ্বাস্য রকমের হালকা বোধ করছি এখন,’ হেসে বলেন ক্রিশ্টোফ। -ওয়েবসাইট



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জার্মানিতে বহু মানুষের স্বাস্থ্য বিমা নেই
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ