পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের দেয়া স্যাংশনের মাধ্যমে বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধ সম্ভব নয়। এই ধরনের পদক্ষেপ সাময়িকভাবে সমস্যার সমাধান করতে পারে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে সমাধানের জন্য নিজেদের উদ্যোগ নিতে হবে। এজন্য দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফেরানোর পাশাপাশি মানুষের ভোটে অধিকার নিশ্চিত করা এবং জনগণের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে হবে। জনগণের কাছে জবাবদিহিতার ভয় নিয়ে কোনো সরকার বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে না। গতকাল বুধবার সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড : বেহাল গণতন্ত্র, প্রশ্নবিদ্ধ আইনের শাসন’ শীর্ষক ওয়েবিনারে অংশ নিয়ে বক্তারা এই অভিমত ব্যক্ত করেন।
সিজিএস-এর চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে করেন অনুষ্ঠিত ওয়েবিনার আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ গণঅধিকার পরিষদের আহবায়ক ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, আমাদের দেশের গুরুত্বপূর্ণ আদেশগুলো এক জায়গা থেকে আসে। বিচার বহিভূত হত্যাকাণ্ডের যে প্যাটার্ন তা সরকারের ক্ষমতায় থাকার একটা ইনস্ট্রুমেন্ট। যুক্তরাষ্ট্রের স্যাংশনের পর সরকারের রিঅ্যাকশন খুবই হতাশাজনক। যাদের বিরুদ্ধে স্যাংশন দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে সরকার কোনো তদন্ত করেনি, ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। উল্টো তাদের পুরস্কৃত করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পর্যাপ্ত তথ্যের ওপর স্যাংশন দিয়ে থাকে। এসব থেকে সন্দেহ হয় সরকার এমন হত্যাকাণ্ডের পেছনে।
জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদ (জানিপপ)- এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, শুধুমাত্র বিভিন্ন ঘটনা উদঘাটন করার জন্য আমাদের আইন প্রণেতাদের সংসদে উচকিত হতে হবে, সাব কমিটি যেগুলো আছে সেগুলোকে উচ্চকিত হতে হবে। যারা তদন্তের দায়িত্বে আছেন তারা যেন আইন হাতে তুলে না নেন। হিউম্যান রাইটস এডুকেশনের ওপরও জোর দেয়া জরুরি। পাশাপাশি আমাদের দোষারোপের সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা হালকাভাবে নেয়া বোকামী হবে।
আইন ও শালিস কেন্দ্রের নির্বাহী কমিটির মহাসচিব নূর খান লিটন বলেন, গত ৩ বছরে ৫৯০ জনের মতো মানুষ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডের পর দুইমাসে মাত্র একটি ঘটনা ঘটে। সেটা একটা বিরতি ছিল মাত্র। কারণ মেজর সিনহার পেশাগত সহকর্মীদের প্রতিক্রিয়া ছিল। গত বছরের ১০ ডিসেম্বর মার্কিন স্যাংশেনের পর অপরাধীদের পুলিশের ওপর গুলির ঘটনা কমে গেছে। আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনাও কমে গেছে। গত ১০ বছরে আইনশৃংখলা বাহিনীর যারা পদক পেয়েছেন তাদের অধিকাংশের বিরুদ্ধে ক্রসফায়ার বা হেফাজতে মৃত্যুর অভিযোগ রয়েছে।
অতীতে যাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ছিল তাদের প্রমোশন বন্ধ হয়ে যেত। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তাদের পদক দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, উন্নয়নের জন্য রক্ত দিব এটা ভাবতে পারছি না। আইনশৃংখলা পরিস্থিতির জন্য এই ধরণের ঘটনা ঘটলে সংসদের দরকার নেই। এত বিচারালয়ের দরকার নেই।
রাষ্ট্রদূত মো. শফিউল্লাহ বলেন, ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশী রাষ্ট্রদূত বিদায়ের আগে তিনজনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেন। মার্কিন রাষ্ট্রদূত তা না করেই দেশ ত্যাগ করেছেন। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট পরবর্তী রাষ্ট্রদূতের কিছু প্রকাশ করেনি। আমাদের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক কোন পর্যায়ে আছে সে বিষয়টি অনুধাবন করা দরকার।
বিএনপি’র সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, বাংলাদেশের ৫০ বছরের ইতিহাসে যা ঘটেছে তার দায়িত্ব দেশ পরিচালনায় থাকা রাজনীতিবিদদের নিতে হবে। রাষ্ট্র ব্যবস্থা যারা নিয়ন্ত্রণ করে তাদের এই দায় নিতে হবে। বিচারবহির্ভূত হত্যার বিষয়ে এখন আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশকে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে। রাজনীতির মধ্যেই এই সমস্যা নিহিত। রাজনীতির মাধ্যমেই এটা সমাধান করতে হবে। তিনি বলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের সম্পর্ক রয়েছে। এর সমাধান হিসেবে গণতন্ত্রের বিকল্প নেই। এর জন্যও জাতীয় ঐকমত্যের প্রয়োজন। আইনের শাসন না থাকলে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। জাতীয় ঐকমত্য মৌলিক কিছু বিষয়ে হতে হবে। মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত জনগণের হাতে ক্ষমতা পরিবর্তনের শক্তি না আসবে ততক্ষণ উন্নয়নের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চলতে থাকবে। ১৮ কোটি মানুষের কাছে যদি প্রধানমন্ত্রীর জবাবদিহিতার ভয় থাকলে এগুলো বন্ধ হয়ে যেত। জনগণের ভয়ে রাজনীতিবিদরা ভীত থাকলেই একমাত্র বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সমাধান।
সিজিএস চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, স্বাধীনতা উত্তর সময়েও বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হয়েছে। এরপর ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর অপারেশন ক্লিনহার্টের সময় বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। তখনকার এই কাজে জড়িত যৌথবাহিনীকে বিচারের আওতায় আনা হয়নি। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এই কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। কিন্তু তিনি ক্ষমতায় এসেও এসব ঘটনার বিচার করেননি। তিনি আরো উল্লেখ করেন, র্যাবের ওপর স্যাংশন এটা শুধু ব্যক্তির জন্য অপমানজনক হয়নি, পুরো জাতির জন্য অপমানজনক। বাংলাদেশের মানবাধিকারকে কম্বোডিয়া, বেলারুশ কিংবা নর্থ কোরিয়ার সাথে তুলনা করা হচ্ছে। এদিকে গত বছরের ১০ ডিসেম্বরের পর থেকে সেই দুর্বল বিচার বহিভূত কর্মকাণ্ডের চিত্রনাট্য নেই হয়ে গেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।