পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপি-জামায়াতের ধারাবাহিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া নারিসনগরে হিন্দুদের মন্দির ও বাড়ি-ঘরে হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাববুবুল আলম হানিফ। একই সঙ্গে তিনি অভিযোগ করেন, সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এটা রাজনৈতিক ইস্যু বানাতে চায় বিএনপি। এছাড়াও নাসিরনগরে হিন্দুদের ওপর হামলার পর সংখ্যালঘুদের নিয়ে প্রাণী সম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হক আপত্তিকর বক্তব্য দিয়েছেন বলে যে অভিযোগ উঠেছে তাও বিশ্বাস করেন না হানিফ। কারও কাছে ওই কথিত বক্তব্যের বিষয়ে প্রমাণ থাকলে আওয়ামী লীগকে তা দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। হানিফ আশ্বাস দিয়েছেন, ছায়েদুল যদি সত্যি সত্যি এ ধরনের কথা বলে থাকেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে আওয়ামী লীগ।
গতকাল শনিবার বিকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে হানিফ এসব কথা বলেন। ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে মন্দিরসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আওয়ামী লীগ জড়িত’ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
হানিফ বলেন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীমের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এছাড়াও স্থানীয় নেতাদের নির্দেশ দেয়া হয় তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার জন্য। যাতে করে বিচ্ছিন্ন এই ঘটনাটি আর না বাড়ে।
বিএনপি হঠাৎ করে ওইখানে কর্মসূচি ঘোষণা দেয় উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, এই ঘটনাকে রাজনৈতিক ইস্যু করার জন্য মাঠে নেমেছে বিএনপি। এছাড়া এ ঘটনাটি যখন শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথে ঠিক তখনই আবার ৬টি বাড়িতে হামলা হলো। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।
তিনি অভিযোগ করেন, বিএনপি-জামায়াত বিভিন্ন সময় চোরাগোপ্তা হামলা করে সফল হতে না পেরে এখন চক্রান্তের নতুন চাল হিসেবে নাসিরনগরের হামলা করে নতুন কৌশল হাতে নিয়েছে। তারা শেষ পন্থা হিসেবে বেছে নিয়েছেন হিন্দু ধর্মবলম্বীদের বাড়ি-ঘর ও উপাসনালয়ে হামলা। তিনি বলেন, বিগত ৮ বছরে জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার দেশকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে এসেছে। বিএনপি-জামায়াতের মাথাব্যথার কারণ এই উন্নয়ন। তারা সর্বশেষ পন্থা হিসেবে সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে এই হামলা চালিয়েছে।
নাসিরনগরের হামলায় ঘটনাস্থল পরিদর্শনে বিএনপির পক্ষে মেজর হাফিজ উদ্দিনকে দায়িত্ব দেয়ার সমালোচনা করে হানিফ বলেন, ১৯৯১ সাল থেকে ৯৬ পর্যন্ত এবং ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে ভোলার তমিজউদ্দিনে হিন্দু পরিবারের ওপর অমানবিক নির্যাতন নেমে আসে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর হাফিজের নির্দেশে এ নির্যাতন চালানো হয়। আর তাকেই দায়িত্ব দেয়া হলো হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনা পরিদর্শনের জন্য। এটা উপহাস, পরিহাস ছাড়া কিছুই না।
বিএনপি কখনই সংখ্যালঘুদের পাশে দাঁড়ায় না দাবি করে হানিফ বলেন, হাফিজ উদ্দিন সংবাদ সম্মেলনে মিথ্যাচার করেছেন। তিনি ১/১১ তত্ত্বাবধায়ক সকারের দালাল ছিলেন।
হানিফ বলেন, বিএনপি-জামায়াতের ৭১’র প্রেতাত্মারা সরকারের উন্নয়ন নস্যাৎ করার চক্রান্তে নতুন কৌশল হিসেবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি ধ্বংস করতে মিথ্যা পোস্ট দিয়ে পরিবেশ অস্থিতিশীল করতে চায়।
হিন্দু সম্প্রদায়কে নিয়ে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী ছায়েদুল হকের বক্তব্য প্রসঙ্গে হানিফ বলেন, তিনি ৬ বার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে অযৌক্তিক মন্তব্য গ্রহণযোগ্য হবে না। তিনি নিজেও বলেছেন তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হচ্ছে। যদি কেউ প্রমাণ দিতে পারেন, তাহলে তার (ছায়েদুল) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
হাফিজের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিচার করা হবে কী নাÑ এমনটা জানতে চাইলে হানিফ বলেন, সন্ত্রাসী কার্মকা-ের বিচার চলছে। বিচার প্রক্রিয়া শেষ হলে অবশ্যই তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের তিন নেতার বহিষ্কার সম্পর্কে জানতে চাইলে হানিফ বলেন, স্থানীয়ভাবে কাউকে বহিষ্কার করা যায় না। কাউকে বহিষ্কার করতে হলে কেন্দ্র থেকে করতে হয়। কেন্দ্র থেকে কাউকে বহিষ্কার করা হয়নি। তিনি বলেন, নাসিরনগরে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাড়ি-ঘর ও উপাসনালয় ৫ দিনের ব্যবধানে আবার বাড়ি-ঘরে হামলা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা প্রতিহত করতে তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেনি। এই তিন নেতাকে সতর্ক করার জন্য সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত থাকার কারণে বহিষ্কার করা হয়নি।
গত রবিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে মন্ত্রী ছায়েদুল হকের নির্বাচনী এলাকায় হিন্দুদের ১৫টি মন্দির ও শতাধিক ঘরবাড়িতে হামলা-ভাঙচুর হয়। অভিযোগ উঠে, ছায়েদুল হক এই ঘটনায় এলাকায় গিয়ে হিন্দুদের নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্য দিয়েছেন। ছায়েদুলের এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে যাওয়ার পর হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। মন্ত্রীসভা থেকে তার পদত্যাগ দাবিতে রাজধানীতেও বিক্ষোভ করে কয়েকটি সংগঠন। অবশ্য ছায়েদুল হক সংবাদ সম্মেলন করে আপত্তিকর বক্তব্য দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
এই বিষয়টি উল্লেখ করে হানিফ বলেন, তিনি (ছায়েদুল) এলাকায় অনেক জনপ্রিয়। তিনি ৬ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তার মতো একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদ এই ধরনের শব্দ ব্যবহার করবেন, এটা আমাদের বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। আমরা এটা মানতে পারছি না। তারপরও যদি কারও কাছে কোনো প্রমাণ থাকে তাহলে আমাদেরকে তা দিলে আমরা ব্যবস্থা নেব-বলেন হানিফ।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, একেএম এনামুল হক শামীম, দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, তথ্য গবেষণ বিষয়ক সম্পাদক আফজাল হোসেন, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন নাহার লাইলি, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক সুজিদ রায় নন্দী প্রমুখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।