Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নাসিরনগরের মূল হোতা ক্ষমতাসীনরা

সংবাদ সম্মেলনে মেজর (অব.) হাফিজ

প্রকাশের সময় : ৬ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি
স্টাফ রিপোর্টার : নাসিরনগরে হিন্দু মন্দির ও বাড়িঘরে তা-ব চালানোর ঘটনায় ‘ক্ষমতাসীনরাই মূল হোতা’ বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আসা প্রতিনিধিদলের নেতা দলের ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ গতকাল শনিবার সকালে গুলশানে চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন। হাফিজ বলেন, গতকাল (শুক্রবার) আওয়ামী লীগ তাদের নেতৃবৃন্দকে সাময়িক বহিস্কার করে তারা ঘটনাটি সামলাবার চেষ্টা করেছেন। দেশবাসীর কাছে আজ স্পষ্ট হয়েছে, কারা এই ধরনের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার মূল হোতা। আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই, অতীতে গত ৭ বছরে যেসব ঘটনা ঘটেছে, তার প্রত্যেকটি ঘটনার সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ হাত রয়েছে, এটি আজ দিবালোকের মতো স্পষ্ট। আওয়ামী লীগকে একটু ধন্যবাদ জানাতে চাই, যে নাসিরনগরের ঘটনা কারা ঘটিয়েছেন, সেটি তারা দলীয় নেতৃবৃন্দকে শাস্তি দিয়ে জনসমক্ষে তাদের স্বরূপ উšে§াচন করেছেন।
নাসিরনগরের ঘটনার তদন্তে হাইকোর্টের একজন বিচারপতির নেতৃত্বে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠনের দাবিও জানান হাফিজউদ্দিন। একই সঙ্গে গত ৭ বছরে হিন্দু সম্প্রদায়ের সম্পত্তি দখলসহ বিভিন্ন হামলার ঘটনার পেছনে শাসক দলের যেসব লোক রয়েছেন, তাদের পরিচয়ও জনসমক্ষে প্রকাশ এবং ব্যর্থতায় দায়ে সরকারের পদত্যাগও দাবি করেন তিনি। বিএনপির এই নেতা বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে ভয়াবহ অবণতি হয়েছে, বিশেষ করে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের হাতে হিন্দু সম্প্রদায়ের জানমালের ক্ষতি হচ্ছে, নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে বর্তমান অনির্বাচিত আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ দাবি করছি।
ঘটনাস্থলের ক্ষতিগ্রস্থদের বক্তব্য তুলে ধরে হাফিজউদ্দিন বলেন, নাসিরনগরে আমরা কোনো রাজনীতি করতে যাইনি, পলিটিক্যাল পয়েন্টস স্ক্রোর করার জন্য যায়নি। ঘটনাস্থলে এর ব্যাপকতা দেখে আমরা বেদনাহত হয়েছি, যার নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। স্বাধীন বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপরে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এই ধরণের হামলা আমাদের স্তম্ভিত করেছে। কেনো এই হামলা? দেশের বিভিন্ন এলাকায় আমরা লক্ষ্য করেছি, সরকারের ক্ষমতাসীন ব্যক্তিরা হিন্দু সম্পত্তি গ্রাস করেছেন। পুরনো জেলাগুলোতে স্বাধীনতার পর থেকেই হিন্দু সম্পত্তিগুলো আওয়ামী লীগের লোকেরা দখল করে রেখেছেন এটা প্রমাণিত সত্য।।
হিন্দু সম্প্রদায় ‘ভোট ব্যাংক’ বলে ক্ষমতাসীনরা মনে করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারপরেও কেনো তাদের ওপরে এই সরকারের আমলে এতো হামলা হচ্ছে? এর প্রধান কারণ হচ্ছে, আওয়ামী লীগের আর ভোটের প্রয়োজন নেই। সেজন্য তারা এসব করছে।
বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন অভিযোগ করেছেন, পুলিশবাহিনী ওই হামলার সময়ে আমাদের কোনো কাজে লাগেনি। বরং তাদের প্রতিবেশী মুসলিম পরিবারগুলো এসে মন্দির ভাঙার কাজে বাধা দিয়েছেন এবং হিন্দু পরিবারগুলো যখন আশ্রয় নিতে গেছেন, তাদের আশ্রয় দিয়েছেন। বিএনপির পক্ষ থেকে দেশের সংখ্যাগরিষ্ট জনগণকে আমরা বিনীত অনুরোধ জানাই, এ ধরনের ঘটনায় তারা যেন হিন্দু ভাই বোনদের রক্ষায় এগিয়ে আসেন। আমরা এই দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি দৃঢ় করবো- এটাই আমরা কামনা করি।
নাসিরনগরে দলের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্থদের সহযোগিতা প্রদান করবে জানিয়ে হাফিজউদ্দিন আহমেদ বলেন, নাসিরনগরে সৈয়দ একরামুজ্জামানের নেতৃত্বে আমরা ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় অতি অল্প সময়ের মধ্যে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করবো। ক্ষতিগ্রস্থ মন্দির ও ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের জন্য আমরা প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবো।
নাসিরনগরে দ্বিতীয় দফায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে আগুন লাগানোর ঘটনার জন্য পুলিশের দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে অভিযোগ করে হাফিজ বলেন, পুলিশবাহিনীর পেশাদারিত্ব একেবারেই নেই। তারা তাদের মৌলিক দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হচ্ছে এই কারণে যে, এটি একটি দলীয় বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। তারা দেশে নাগরিকদের নিরাপত্তা বিধানের পরিবর্তে বিএনপির ও অন্যান্য বিরোধী নেতা-কর্মীদের তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে, তাদেরকে খোঁজা-খুজিতে ব্যস্ত। মিথ্যা মামলা দায়েরের কাজেই এই পুলিশবাহিনীর অধিকাংশ সময় ব্যয় হয়।
এর আগে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্দেশে শুক্রবার হাফিজের নেতৃত্বে ৭ সদস্যের প্রতিনিধিদল নাসিরনগরের ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দু পল্লী এলাকা পরিদর্শন করেন। ফেইসবুকে ইসলাম অবমাননার অভিযোগ তুলে গত ৩০ অক্টোবর নাসিরনগরে ১৫টি মন্দির এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের দেড় শতাধিক ঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়।
নাসিরনগরের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এসেছিলেন এমন নেতাদের মধ্যে সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন বিএনপি সদস্য চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য সঞ্জীব চৌধুরী, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের আহ্বায়ক গৌতম চক্রবর্তী, অ্যাডভোকেট ফাহিমা নাসরিন মুন্নী, সুশীল বড়ুয়া, আব্দুুল আউয়াল খান প্রমূখ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নাসিরনগরের মূল হোতা ক্ষমতাসীনরা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ