Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সমাজে দানশীলতার প্রভাব

প্রকাশের সময় : ৬ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মুহাম্মদ বশির উল্লাহ
এ সমাজে আমাদের ধনী, বিত্তবান। গরিব, এতিম, মিসকিন, আশ্রয়হীন, অসহায়, লোকদের নিয়ে বসবাস। এ অসহায় লোকদের সহায়তা দান, গরিব-দুঃখীদের দুঃখ-কষ্ট মোচনে সাহায্য সহযোগিতা করা, দান খয়রাত এবং সেবা-যতœ করা ধনীদের হক ও অনেক সাওয়াবের কাজ। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তা’আলার ফরমান হচ্ছে, “তোমরা যে পর্যন্ত না নিজেদের প্রিয়বস্তু দান খয়রাত করবে, সে পর্যন্ত কোনো সাওয়াব পাবে না।” তিনি আরো এরশাদ ফরমান, “যারা অঢেল ধন সম্পদ অর্থ সঞ্চয় করেছে, তারা যেন দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়ার আগেই মহান আল্লাহ তা’আলার নামে দান খায়রাত করে যায়।
এমন অনেক লোক রয়েছেন যারা সাহায্য প্রার্থীকে সাহায্য না দিয়ে উল্টো ধমক দিয়ে বসে। এমনটি করা মোটেই ঠিক নয়। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা দান প্রার্থীকে ধমক দিও না।” আরো বলেন, “হে ঈমানদারগণ, তোমরা দান গ্রহীতাকে কোনো খোটা বা কষ্ট দিয়ে তোমাদের দান খায়রাত সাহায্য ও সেবাকে বরবাদ করে দিও না।” আমাদের প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম রাদি-আল্লাহু তা’আলা আনহুগণ অত্যন্ত দানশীল ছিলেন। তাদের কাছে কেউ কিছু চাইলে যা থাকতো তাই দান করে দিতেন। নিজেরা না খেয়েও অন্যকে খাওয়াতেন।
একদিন প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম মসজিদে নব্বীতে বসে আছেন। এমন সময় এক বৃদ্ধ মুসাফির প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লামের সামনে এসে দাঁড়াল। ফরিয়াদ জানাল, হে আল্লাহ’র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম!। আমি খুব ক্ষুধার্ত, আমাকে খাবার দিন। আমার পরনের জামাটাও ছিঁড়ে গেছে, একটা জামা দিন। আমি একজন মুসাফির। আমার কোনো বাহন নেই একটা বাহনের ব্যবস্থা করুন। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুব মনোযোগ দিয়ে লোকটির কথা শুনলেন। এরপর বললেন, হে মুসাফির! আমার কাছে এখন তেমন কিছু নেই যে তোমাকে দেব। তুমি আমার মেয়ে ফাতিমার কাছে যাও। সে হয়তো তোমাকে সাহায্য করতে পারবে। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম-এর কথা মতো মুসাফির লোকটি হযরত ফাতিমা রাদি-আল্লাহ তা’আলা আনহা’র বাড়িতে গিয়ে দরজায় কড়া নাড়ল। ভেতর থেকে আগন্তুকের পরিচয় জানতে চাওয়া হলে মুসাফির বলল, মা আমি এক বৃদ্ধ মুসাফির। বড়ই ক্ষুধার্ত। আমার পরনের জামাটিও ছিঁড়ে গেছে। চলার মতো কোনো বাহনও আমার নেই। আমাকে কিছু সাহায্য করুন মা। মুসাফির যখন ফরিয়াদ জানাচ্ছিল তখন হযরত ফাতিমা রাদি-আল্লাহ তা’আলা আনহার ঘরে কোনো খাবার ছিল না। দেয়ার মতো কোনো জামাও ছিল না। কিন্তু অসহায় এই লোকটিকে খালি হাতে ফিরিয়ে দিতেও তার মন চাচ্ছিল না। তাই তিনি নিজের গলার হারটি খুলে বৃদ্ধ মুসাফিরকে দিয়ে বললেন, এটি ছাড়া দেওয়ার মতো আমার কাছে আর কিছুই নেই। এটা নিয়ে বিক্রি করে তোমার অভাব পূরণ কর। হারটি পেয়ে মুসাফির যেন আকাশের চাঁদ হতে পেল। আবার মসজিদে নববীতে গিয়ে হাজির। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হারটি দেখিয়ে বলল, হে আল্লাহ’র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আপনার মেয়ে এই হারটি আমাকে দিয়েছে। এ কথা শুনে সাহাবী রাদি-আল্লাহু তা’আলা আনুহুদের অনেকেই চমকে উঠলেন। হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসির রাদি-আল্লাহু তা’আলা আনহু’র মনটা মায়ার ভরে গেল। এমন ত্যাগ দেখে তিনি অবাক হয়ে যান। বলেন, ওহে মুসাফির! কত পেলে এই হারটি আমার কাছে বিক্রি করবে?
মুসাফির বলল, পেট পুরে খাবার, একটি ভালো জামা আর বাড়ি ফেরার জন্য একটি বাহন পেলেই আমি খুশি।
হযরত আম্মার রাদি-আল্লাহু তা’আলা আনহু বললেন, ঠিক আছে। তোমাকে অনেক খাবার, ভালো ইয়েমেনি কাপড় আর বাড়ি ফেরার জন্য একটি মোটাতাজা উঠ দিব। আর বাড়তি আটতি সোনার মোহর ও দুইশ’ রুপার দিরহাম দিব। তুমি হারটি আমার কাছে বিক্রি কর।
মুসাফির রাজি হলো। লেনদেন শেষ হলো। এবার মুসাফির সবকিছু নিয়ে খুশি মনে বাড়ির দিকে রওয়ানা হলো।
হযরত আম্মার রাদি-আল্লাহু তা’আলা আনহু হারটিতে আতর মাখলেন। একটি কাপড় মুড়ে তার গোলামের হাতে দিয়ে বললেন, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম এর কাছে যাও। হারটি তাকে দিবে। আর তুমিও তার কাছে থাকবে। গোলাম তাই করল। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লামকে সব কিছু খুলে বলল।
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম গোলামের কথা শুনে খুশি হয়ে হযরত আম্মার রাদি-আল্লাহু তা’আলা আনহুকে ধন্যবাদ জানালেন। তারপর গোলামকে বললেন, আম্মার তোমাকে আমার কাছে পাঠিয়েছে। আর আমি তোমাকে ফাতিমার জন্য দিয়ে দিলাম। এটি নিয়ে তুমি তার (হযরত ফাতিমা রাদি-আল্লাহু তা’আলা আনহা) কাছে যাও। গোলাম হারটি নিয়ে হযরত ফাতিমা রাদি-আল্লাহু তা’আলা আনহার কাছে চলে গেল। সবকিছু খুলে বলল। হযরত ফাতিমা রাদি-আল্লাহু তা’আলা আনহা অত্যন্ত খুশি হলেন এবং আল্লাহকে ধন্যবাদ জানালেন। হযরত আম্মার রাদি-আল্লাহু তা’আলা আনহু এর জন্য দুআ করলেন। গোলামকে বললেন, তোমাকেও আমি মুক্ত করে দিলাম। আজ থেকে তুমি স্বাধীন।
গোলাম খুশি হয়ে গেল আর বলল, বাহ! কী দারুণ এক হার। এটি একজনকে পেট পুরে খাওয়াল, নতুন কাপড় পরাল, মুসাফিরের জন্য টাকা ও বাহনের ব্যবস্থা করল এবং একজন ক্রীতদাসও মুক্তি পেল। আবার যার হার তার কাছেই ফিরে এলো। সত্যিই এক চমৎকার হার।
শুধু এখানেই শেষ নয়, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম এর পরিবার ও বংশের সবাই ছিলেন দানশীল।
ইতিহাসের পাতা উল্টালে আমরা দেখতে পাচ্ছি, হযরত ইমাম হাসান রাদি-আল্লাহু তা’আলা আনহু দুইবার সকল সহায় সম্পদ আল্লাহ’র রাস্তায় বিলিয়ে দিয়েছিলেন। বেশ কয়েকবার নিজের অর্থ সম্পদের অর্ধেকটা গরিব অসহায়দের দান করেছিলেন। তিনি কখনো কোনো সাহায্যপ্রার্থীকে ফিরিয়ে দেননি। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমিও মহান আল্লাহর দরবারে একজন সাহায্য প্রার্থী। আমি চাই তিনি যেন কখনো আমাকে নিরাশ না করেন। এ আশাতেই আমার কাছে যারা সাহায্য চায় তাদেরকে ফিরিয়ে দিতে বা হতাশ করতে লজ্জাবোধ করি।
লেখক : ছাত্র, কামিল ২য় বর্ষ (হাদিস)



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সমাজে দানশীলতার প্রভাব
আরও পড়ুন