পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অর্গানোগ্রামে নেই। তা সত্ত্বেও ২০১৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চালু করে নিজস্ব ‘গোয়েন্দা ইউনিট’। এই ইউনিটের আওতায় দেশের ২২টি সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে কাজ করছেন ২২ কর্মকর্তা। তারা ‘গোয়েন্দাবৃত্তি’ করছেন মূল কাজের অতিরিক্ত ‘অতিরিক্ত দায়িত্ব’ হিসেবে। তাদের এই ‘গোয়েন্দাবৃত্তি’ চলছে এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অন্য কর্মকর্তার।
দুদকের চাকরি বিধিমালার ৫৪(২) ধারায় একতরফা অভিযোগের ভিত্তিতে কর্মকর্তা-কর্মচারিদের পত্রপাঠ বিদায় করে দেয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু নেই দুদকের কোনো ‘কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সি’। ফলে অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দাবৃত্তিতেও ব্যর্থ হচ্ছে সংস্থাটি। প্রতিষ্ঠানের কোথায় কি ঘটছে সে বিষয়ে কমিশনকে থাকছে অন্ধকারে।
সম্প্রতি একজন উপ-সহকারি পরিচালককে কমিশন কর্তৃক চাকরিচ্যুতির ঘটনায় এ বাস্তবতার প্রতিফলন রয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারিদের শৃঙ্খলা নিশ্চিতে সংস্থাটির নীতি নির্ধারকগণ ব্যর্থ হন। নীতিনির্ধারকরা এ কথা স্বীকারও করেন যে, গোয়েন্দাবৃত্তিতে নিয়োজিত ইউনিট সদস্যদের নেই প্রাতিষ্ঠানিক কোনো প্রশিক্ষণ। তাদেরকে ‘গোয়েন্দা প্রতিবেদন’ দিতে হচ্ছে ‘কমনসেন্স’ আর ‘আইডিয়া’র ওপর ভিত্তি করে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দুর্নীতি বিরোধী সংস্থায় স্বয়ংসম্পূর্ণ, দক্ষ ও শক্তিশালী নিজস্ব গোয়েন্দা ইউনিট রয়েছে। মালয়েশিয়ায় রয়েছে গঅঈঈ. হংকং এ রয়েছে ওঈঅঈ, ভারতে রয়েছে ঈইও এর মতো দক্ষ ও কার্যকরী গোয়েন্দা ইউনিট। এসব দেশে দুর্নীতি একেকটি অনুসন্ধান শুরু হয় নিজস্ব গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে।
আন্ডারকাভার অপারেশন বা সার্ভিল্যান্সের মাধ্যমে গোয়েন্দা তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করা হয় অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে। ফলে দুর্নীতির মতো অপরাধের শাস্তি নিশ্চিত হচ্ছে শতভাগ। একই সঙ্গে দুর্নীতিও সহনশীল মাত্রায় নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
পক্ষান্তরে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধান প্রক্রিয়াটি শুরু হয় রীতিমতো ঢাক-ঢোল পিটিয়ে। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিষয়ে বিভিন্ন দফতরে চিঠিপত্র দিয়ে, সংবাদ মাধ্যমে ফলাও প্রচার করে অনুসন্ধানের জানান দেয়া হয়। যাতে প্রতীয়মান হয়-দুর্নীতির শাস্তি নয়-দুদক যে কথিত দুর্নীতিবাজের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে-এটিই বড় বিষয়। যে কারণে দেশের দুর্নীতি বিরোধী একমাত্র রাষ্ট্রীয় সংস্থা দুদক আইন এবং অগ্রানোগ্রামে ‘গোয়েন্দাবৃত্তি’র কোনো অস্তিত্ব রাখা হয়নি।
২০১৮ সালের ৮ অক্টোবর মন্ত্রিপরিষদ দুদকের নতুন অর্গানোগ্রাম অনুমোদন করে। তাতে গোয়েন্দা ইউনিটের কোনো অস্তিত্ব নেই। তবে কমিশন অফিস সার্কুলারের মাধ্যমে (স্মারক নম্বর-৬৪৮৮) ২০১৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি গঠন করে ১০ সদস্যের নিজস্ব গোয়েন্দা ইউনিট। এ সংক্রান্ত একটি কার্য নির্দেশিকাও জারি করা হয়। তাতে গোয়েন্দা ইউনিট গঠনের উদ্দেশ্য, কার্যাবলী, কর্মপরিধি, প্রতিবেদন দাখিলের প্রক্রিয়া, তথ্য অনুসন্ধানের ক্ষেত্র নির্বাচনের বিষয় উল্লেখ রয়েছে।
ইউনিটটি দুদক চেয়ারম্যানের নিজস্ব তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়ে আসছে। তবে এ ইউনিটের কার্যপরিধি নির্দিষ্ট করা থাকলেও বিগত কমিশন কার্যত এই ইউনিটটিকে ব্যবহার করেছে দুদক কর্মকর্তাদের নজরদারিতে। অনেক সময় নিজস্ব এজেন্ডা বাস্তবায়নেও এটিকে ব্যবহার করা হয়।
গোয়েন্দা ইউনিটের কার্যক্রম গতিশীলতা আনতে ২০২০ সালের ৮ মার্চ এটির কার্যক্রম দেশের ২২টি জেলায় বিস্তৃত করা হয়। দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের (সজেকা) কর্মকর্তাদের ‘অতিরিক্ত দায়িত্ব’ হিসেবে দেয়া হয় গোয়েন্দাবৃত্তির দায়িত্ব।
দুদকের একাধিক সূত্র জানায়, কোনো ধরণের পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়াই তৎকালিন কমিশন প্রধান কার্যালয় কেন্দ্রিক ‘গোয়েন্দা ইউনিট’ চালু করে। চালুর পর ইউনিটে জনবল বৃদ্ধি ও কার্যক্রমে বৈচিত্র আনয়ন বা প্রশিক্ষিত জনবল সৃষ্টি করেনি। ফলে এটি একটি ‘অকার্যকর ইউনিট’ হিসেবেই রয়ে যায়। পরিপূর্ণ ইউনিট হিসেবে দাঁড় করানো হয়নি। এ ইউনিটে যারা কাজ করছেন তাদের গোয়েন্দাবৃত্তিতে প্রাতিষ্ঠানিক কোনো প্রশিক্ষণ নেই। শুধুমাত্র কমনসেন্স ও আইডিয়া দিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছেন ইউনিট সদস্যরা। প্রতিবেদনও দিতে হচ্ছে একইভাবে। ফলে গত সাড়ে ৩ বছরে ইউনিটটি কার্যকর কোনো সুফল বয়ে আনতে পারেনি।
সূত্রগুলো আরও জানায়, নামমাত্র গোয়েন্দা ইউনিটটি শুধু কেন্দ্রীয় কার্যালয়ভিত্তিক। শুধুমাত্র গোয়েন্দাবৃত্তির জন্য নিবেদিত কোনো কর্মকর্তা এই ইউনিটে নেই। এ ইউনিটকে অভ্যন্তরীণ নজরদারিতেই ব্যস্ত থাকতে হয়। দুর্নীতির অনুসন্ধান-তদন্তে তাদের কোনো সহায়তা নেয়া হয় না। এছাড়া এ ইউনিটের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের গোয়েন্দা কার্যক্রমের পাশাপাশি অনুসন্ধান, তদন্ত, এনফোর্সমেন্ট, প্রসিকিউশন, প্রতিরোধসহ বিভিন্ন কার্যক্রমেও ব্যস্ত রাখা হয়। ফলে তাদের পক্ষে সঠিকভাবে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ যেমন সম্ভব হয় না, তেমনি বিশ্লেষণধর্মী গুণগত মানসম্পন্ন প্রতিবেদনও তাদের পক্ষে দেয়া সম্ভব হয় না।
সূত্র মতে, এ বাস্তবতায় গত ১৮ জানুয়ারি কমিশন সভায় ইউনিটটিকে কার্যকর করার সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে ১০ কর্মকর্তার একটি তালিকা প্রণয়ন করা হবে। তাদের গোয়েন্দা কার্যক্রমের ওপর বেসিক প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। ‘গোয়েন্দা অনুবিভাগ’ চালুর লক্ষ্যে কমিশনের সাংগঠনিক কাঠামোয় অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্তও হয়।
এ বিষয়ে দুদক কমিশনার ড. মোজাম্মেল হক খান বলেন, বর্তমান কমিশন আগের চেয়ে শক্তিশালী। পূর্বতন ধারণায় পরিবর্তন এনে ভালো কিছু করার চেষ্টা করছে। দুর্নীতি বিরোধী কার্যক্রমে গোয়েন্দা ইউনিট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আগে এটির কার্যক্রম কুক্ষিগত করে রাখা হয়েছে। আমরা ইউনিটটিকে আরও সম্প্রসারিত এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির চিন্তার করছি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।