Inqilab Logo

বুধবার ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নাসিরনগরের ঘটনায় সারাদেশ উত্তপ্তের প্রয়াস

প্রকাশের সময় : ৫ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৫৪ পিএম, ৪ নভেম্বর, ২০১৬

স্টালিন সরকার : ‘গাহি সাম্যের গান- যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা-ব্যবধান/ যেখানে মিশছে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলিম-ক্রীশ্চান’ (কাজী নজরুল ইসলাম)। জাতীয় কবির এ উপলব্ধিতে আবহমান বাংলাদেশের চিত্র ফুটে উঠেছে। বাংলাদেশ সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির দেশ। হাজার বছর ধরে সব ধর্মের মানুষ একসঙ্গে বসবাস করছে। সৌহার্দ্যরে এই দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের চেষ্টা হয়েছে বহুবার। সাম্প্রদায়িক বিরোধ বাঁধানোর চেষ্টা হলেও সব ধর্মের মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে সেগুলো মোকাবিলা করেছে। ধর্মীয় ইস্যু নিয়ে ‘সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টায়’ নাসিরনগর ইস্যুতে আবার দেশ উত্তপ্তের অপচেষ্টা শুরু হয়েছে। সরকারের ভাবমর্যাদা নষ্ট করতে ক্ষমতাসীনদের কিছু সুবিধাভোগী এবং উচ্ছিষ্টভোগী ব্যক্তি-সংগঠন ধর্মীয় ইস্যুতে সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলার চেষ্টা করছে। প্রশাসনিক দায়-দায়িত্ব পালনে সরকারের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করছে। সরকারের নিরপেক্ষতা প্রশ্নের মুখে দাঁড় করাতে মন্ত্রীর পদত্যাগ চাচ্ছে। এ কাজে যেমন সরকারের শরীক দল রয়েছে; তেমনি রয়েছে বিদেশী টাকায় পরিচালিত কিছু এনজিও নেতা ও হিন্দু সংগঠন। কি ঘটেছিল সেদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলায়?
বিএনপিসহ কয়েকটি দল নাসিরনগরের ঘটনার প্রকৃত তথ্য উদঘাটনে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছে। আর ইসলামী ধারার দলগুলো বলছে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশে প্রশাসনের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে দেশকে অস্থিতিশীল করার নীলনকশা হচ্ছে। তাদের দাবি কা’বাঘর অবমাননাকারীর বিচারের পাশাপাশি হিন্দুদের মন্দিরে প্রকৃত হামলাকারীদের খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। তবে এনজিও, সরকারের শরীক একাধিক দল ও বামদলগুলো মন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি জানাচ্ছেন; এবং ঘটনার জন্য আলেম-ওলামাদের দায়ী করে পরিস্থিতিকে কার্যত উস্কে দিচ্ছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনায় হলো এমন- নাসিরনগরের রসুরাজ নামের এক হিন্দু যুবক মুসলমানদের সর্বোচ্চ পবিত্র স্থান কা’বাঘরের ওপর ফটোশপের মাধ্যমে শিবমূর্তি স্থাপন করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়। এনিয়ে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে এলাকার মানুষ। প্রতিবাদের ঝড় ওঠে সর্বত্র। স্থানীয় আলেম-ওলামাদের মধ্যে দেখা দেয় অসন্তোষ। ঘটনার পর পর অভিযুক্ত ওই যুবককে ধরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। সেখানেই তাকে থানা পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়। অভিযুক্ত যুবক বর্তমানে রিমান্ডে। অভিযুক্ত রসুরাজের বিচারের দাবিতে এলাকার সাধারণ মানুষ ও আলেম-ওলামা প্রতিবাদ সমাবেশ করে প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে। আইন-শৃংখলা বাহিনী সে সমাবেশের নিরাপত্তা দেয় এবং কেউ যাতে উচ্ছৃংখল আচরণ না করে সে লক্ষ্যে সতর্কতা অবলম্বন করে। তারপরও কিছু ব্যক্তি পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উপর আক্রমণ করে এবং বাড়িঘরে আগুন দিয়ে। আইন-শৃংখলা বাহিনী বিক্ষুব্ধ ব্যক্তিদের প্রতিহত করার চেষ্টা করে। তারপরও ঘটে ন্যক্কারজনক ঘটনা। ঘটনা এ পর্যন্তই। কা’বাঘরের উপর শিবমূর্তি স্থাপন করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়া ‘অপরাধ’ এবং ওই কারণে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘরে আগুন দেয়াও ‘অপরাধ’। দুই অপরাধ ঘটনায় জড়িতদের বিচারের দাবি উঠবে সেটাই স্বাভাবিক। সে উদ্যোগ নিয়ে প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। কিন্তু হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ঘরে আগুন দেয়ার ঘটনাকে ইস্যু করে সম্প্রীতি বিনষ্টের আগুন ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে দেশে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রথমে উত্তাপ ছড়ায় স্থানীয় কিছু তথাকথিত প্রগতিশীল সাংবাদিক ছোট ঘটনা নিয়ে ‘বিরাট খবর’ প্রচার করে। বুদ্ধিজীবীদের কেউ কেউ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের ঘটনায় কক্সবাজারের রামুর ঘটনার রূপ খোঁজার চেষ্টা করছেন। ঢাকা থেকে যেসব মানবাধিকার সংগঠনের নেতা, রাজনৈতিক দলের নেতা, বিশিষ্টজন, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি নাসিরনগরে যাচ্ছেন তারা ছাইচাপা আগুনে ঘি ঢালার চেষ্টা করছেন। সুষ্ঠু তদন্তের দাবির বদলে তারা একদিকে সরকারের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলছেন; অন্যদিকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উস্কে দিচ্ছেন। নাসিরনগরে হিন্দুদের বাড়িতে আগুনে দেয়ার ঘটনার পর দ্বিতীয় দফায় গভীর রাতে কারা আবার আগুন দিল তা রহস্যজনক। দেশের অন্য দুইতিন জায়গায় কেন একই কা- হলো, ঢাকা উত্তপ্ত করার চেষ্টা কারা করলো সবকিছুই রহস্যজনক বৈকি। ঘটনার পর নাসিরনগর থানার পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তদন্তও চলছে। মন্ত্রী সায়েদুল হক নিজেই এলাকায় গিয়ে পরিস্থিতির পর্যবেক্ষণ করে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিচ্ছেন। তিনি ঘটনাকে ইস্যু করে ‘পানি ঘোলা’ করা থেকে বিরত থাকার আহবান জানিয়েছেন। কিন্তু মন্ত্রীকে উপেক্ষা করে পরিস্থিতি জিইয়ে রাখার চেষ্টা তার বিরুদ্ধে ‘হিন্দু বিদ্বেষী’ অভিযোগ তোলা হচ্ছে। স্থানীয় সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ছোট ঘটনাকে বৃহৎ করে প্রচার করছে কিছু স্থানীয় সাংবাদিক। কিছু টিভি মিডিয়া যারা সরকারের সমর্থক হিসেবে পরিচিত সেগুলো নাসিরনগরের ঘটনাকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে প্রচার করে সরকারকেই বিব্রতকর অবস্থায় ফেলার চেষ্টা করছেন। আর ঢাকা থেকে বিভিন্ন সংগঠনের জাঁদরেল নেতা, রাজনৈতিক দলের নেতা ও বিশিষ্টজনদের ঘটনা পরিদর্শনের খবর ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে তুলে ধরা হচ্ছে। টিভি পর্দায় নিজেদের খবর প্রচার হবে এ জন্য ওই পরিদর্শনকারীরা আরো জোশেই বক্তব্য দেয়ার প্রয়াস পান।
মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়া চরম অপরাধ। সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হলেও দেশের সব ধর্মের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করছে। কিছুদিন আগে পালিত হলো দুর্গাপূজা। একই সময় ছিল মুসলমানদের শোকাবহ মহররম মাস। ঢাকাসহ সারাদেশে দুর্গাপূজায় যে উচ্ছল-প্রাণচঞ্চল-জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে ভারত-নেপালেও তেমন দেখা যায়নি।
মুসলমানদের সর্বোচ্চ পবিত্র স্থান হলো কা’বাঘর। মুসলমানদের কাছে এটি ‘আল্লাহর ঘর’। বিশ্বের সকল মুসলমান এই পবিত্র কা’বাঘরকে ঘিরেই সৃষ্টিকর্তার কাছে সেজদাবনত হয়। এই কা’বা শরীফ মুসলিম সম্প্রদায়ের হৃদয় জুড়ে আবেগ, শ্রদ্ধা, পবিত্রতা বহন করে তা বলাই বাহুল্য। হিন্দু যুবক রসুরাজ ওই কা’বাঘরের ওপর ফটোশপের মাধ্যমে শিবমূর্তি স্থাপন করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেন। যা মানুষের হৃদয় ক্ষতবিক্ষত করেছে। বিকৃত মস্তিষ্কের ওই রাসুরাজ বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে। স্থানীয় প্রশাসন যথাযথ ভাবেই দায়িত্ব পালন করেছে। নাসিরনগরের ঘটনার সূত্রপাত এখান থেকেই! রসুরাজের ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে নাসিরনগরের সাধারণ মুসলমানদের অন্তরে জ্বলতে থাকা পুঞ্জিভূত ক্ষোভের আগুনে কেউ না কেউ ঢেলে দেয় ঘি। ক্রোধের আগুন জ্বলে ওঠে দাউ দাউ করে। সেই আগুনে পুরে ছারখার হলো নিরপরাধ কিছু হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষের ১৫টি মন্দির, অর্ধশত ঘরবাড়ি। সেটাকে পুঁজি করে বিদেশী অর্থে জীবনযাপনে অভ্যস্ত কিছু ব্যক্তি পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার চেষ্টা করছে। তাদের বিবেক এতো বেশি দামে বিক্রী করা যে নিজেদের সরকারের ভালমন্দ বোঝার অবস্থায় তারা নেই। নাগিরনগরে যাদের উপর আক্রমণ করা হলো তাদের সকলেই কিন্তু দোষী নয়; সবাই নিরীহ মানুষ। একমাত্র দোষী হলো রসুরাজ। আবার অগ্নি সংযোগ ঘটনায় অজ্ঞাত শত শত মানুষের বিরুদ্ধে থাকায় মামলা হওয়ায় পুলিশী গ্রেফতার এড়াতে মুসলমান বাড়িগুলো পুরুষশুন্য হয়ে পড়েছে। পুলিশী গ্রেফতারের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে শত শত মানুষ। ভীতি আর আতঙ্কে কাটছে হাজার হাজার মানুষের দিন।
সরকার যখন বিব্রত তখন আওয়ামী লীগের ভিতরেই যেন ‘ঘর পোড়া আগুনে আলু পুড়ে খাওয়া’র চেষ্টা চলছে। মন্দিরে আগুন দেয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্থানীয় আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে বিরোধ এখন তুঙ্গে। একদিকে মন্ত্রী সায়েদুল হক। অন্যদিকে র আ ম উবায়দুল মোক্তাদির চৌধুরী। গতকাল নাসিরনগর সদরের শহীদ মিনারে সংসদ সদস্য মোক্তাদির চৌধুরীর সমর্থকরা বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ব্যানারে মানববন্ধন করে। মানববন্ধনে অংশ নেন দেড় শতাধিক মানুষ। তারা মন্দিরে আগুন দেয়া ইস্যুতে মন্ত্রী ছায়েদুল হকের পদত্যাগ দাবি করেন। তাদের বক্তব্য হলো হিন্দুদের মধ্যে বিভেদের দেয়াল তুলে রাজনৈতিক ফায়দা লুটার অপচেষ্টা করেছেন মন্ত্রী। মন্ত্রীর হস্তক্ষেপে নাসিরনগরের অনেক হিন্দু মানববন্ধন থেকে বিরত থেকেছেন। তিনি নিজ সমর্থকদের দিয়ে বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে মানববন্ধনে আসতে বাধা দিয়েছেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের। মানববন্ধনে অনুপস্থিত ছিলেন ছায়েদুল হক পন্থী হিন্দু নেতা ও পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা। এর আগে বুধবার কেন্দ্রীয় হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. রানা দাশগুপ্তসহ কয়েকজন নেতা নাসিরনগর যান। তারা স্থানীয় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উস্কিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার চেষ্টা করেন। স্থানীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ তোলেন। তবে মন্ত্রী সায়েদুল হক বৃহস্পতিবার রাতে নাসিরনগর ডাক বাংলোতে বৈঠক করে কিছু হিন্দু নেতাকে বিরত রাখেন মানববন্ধনে অংশগ্রহণ থেকে। তিনি ছোট ঘটনাকে ফুলেফেঁপে না তুলে পরিস্থিতি শান্ত করে প্রকৃত অপরাধীর বিচার করার আশ্বাস দেন। সিপিবি, ওয়ার্কার্স পাটির্, জাসদসহ ঢাকা থেকে যাওয়া কিছু বাম দলের নেতা ও কয়েকটি সংগঠনের নেতারা পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার লক্ষ্যে মানববন্ধনে জ্বালাময়ী বক্তৃতা করেন। তাদের কেউ কেউ সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন, এ দেশ হিন্দুদের বসবাসের অনুপযোগী করা হচ্ছে।
এদিকে বাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির ও বাড়িঘর ভাঙচুরের প্রতিবাদে গতকাল দুপুরে রাজধানীর শাহবাগ মোড় এক ঘন্টা অবরোধ করে রাখা হয়। অবর্ণনীয় দুর্দশায় পড়েন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা। অবরোধ চলাকালে ওই পথে যাওয়ার সময় বিক্ষোভের মুখে পড়েন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। বিক্ষোভকারীরা তাঁর গাড়িতে লাথি মারতে থাকেন। পরে তিনি বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনদের মন্দির ও বাড়িঘরে ভাঙচুর, লুটপাটের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ শিরোনামে ব্যানারে এই অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হয়। মিছিলকারীরা জাতীয় প্রেসক্লাব হয়ে শাহবাগ এলাকায় গিয়ে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন।
হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির ও ঘরবাড়ি ভাঙচুর, লুটপাটের প্রতিবাদে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিভিন্ন সংগঠন প্রতিবাদী মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি পালন করে। এসব কর্মসূচি থেকে হামলাকারীদের শাস্তি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, মন্ত্রী ছায়েদুল হকের পদত্যাগের দাবি জানানো হয়। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশন, সচেতন হিন্দু পরিষদ, জগন্নাথ হল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ, জাতীয় হিন্দু সমাজসংস্কার সমিতি, মাইনরিটি সংগ্রাম পরিষদ, জগদ্বন্ধু মহাপ্রকাশ মঠ, জাগো হিন্দু পরিষদ, ছাত্র যুব ঐক্য পরিষদ, মহিলা ঐক্য পরিষদ, জাতীয় হিন্দু ছাত্র মহাজোট, জাতীয় হিন্দু যুব মহাজোট, জাতীয় হিন্দু মহাজোটসহ বিভিন্ন সংগঠন যৌথভাবে এ কর্মসূচি পালন করে। মানববন্ধন শেষে প্রেসক্লাব এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করে সংগঠনগুলো। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য নিম চন্দ্র ভৌমিক বলেন, সারাদেশে বিভিন্ন জায়গায় হামলা হচ্ছে। হিন্দুদের মন্দির ভেঙে দেওয়া হচ্ছে, বাড়িঘরে হামলা হচ্ছে। এর আগে বিদেশিদের ওপর হামলা হয়েছে, খ্রিষ্টানের ওপর হামলা হয়েছে, মুসলমানদের ঈদের জামাতে হামলা হয়েছে। এসব হামলার মাধ্যমে বিভেদ, অনৈক্য সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে। অন্যদিকে সরকারের প্রতি ৫ দফা দাবি জানিয়ে আগামী ১৫ দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে জাতীয় হিন্দু মহাজোট। তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রশাসনের ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে বলেছে, দাবি পূরণ না হলে কঠোর গণ-আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। দাবিগুলো হলো- ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত, ক্ষতিগ্রস্ত মন্দির এবং ঘরবাড়ি সরকারি খরচে নির্মাণ করে দেয়া, হিন্দু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হকের পদত্যাগ এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপারের অপসারণ এবং একটি সংখ্যালঘু কমিশন গঠন।
এদিকে বিবিসির খবরে বলা হয়, ঘটনার সময় এক মুসলমান হামলা করেছে; কিন্তু অপর মুসলমান হামলা ঠেকিয়েছে। বাড়িঘরে আগুন নিভিয়েছে মুসলমানরাই। দত্তবাড়ির বাসিন্দা নীলিমা দত্ত বলেছেন, ‘এক মুসলমান হামলা করেছে, আরেক মুসলমান বাঁচাইছে। ওরা যদি আমাদের রক্ষা না করতো, তাহলে এখানে লুটপাট হইতো’। নীলিমা দত্ত আরো বলেন, ‘যে হিন্দু যুবকের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে কা’বাঘরকে অবমাননা করে ছবি দিয়েছিল তার কঠোর শাস্তি হওয়া দরকার।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতী ফয়জুল্লাহ নাসিরনগরের উত্তেজনাকর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য রক্ষার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ধর্মকর্ম, নীতি নৈতিকতা ও শিক্ষা-সংস্কৃতিতে বাংলাদেশ দ্রুত পিছিয়ে পড়ছে। ইসলাম, মুসলমান, ইনসাফ, মানবিক মর্যাদা, সাম্য ও মানবতার বিরুদ্ধে শত্রুতা ও নাশকতা চলছে। উগ্র ইসলাম বিরোধী অপশক্তি আল্লাহ, রাসূল (সা.), বাইতুল্লাহ কা’বা ও দেশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করছে প্রকাশ্যে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই দেশে সাম্প্রদায়িক দাংগা লাগিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার নীলনকশা করছে। আল্লাহর পবিত্র কা’বা অবমাননার বিরুদ্ধে সুশৃঙ্খল, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের সাথে সাথে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জান মাল রক্ষায় অতন্দ্র প্রহরীর মত ভূমিকা রাখাতে হবে। খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক ও মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেছেন, কা’বা শরীফের অবমাননা এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলার ঘটনা এদেশের শান্তিপ্রিয় জনগণের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। এ ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলার ঘটনাও কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। যারা হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ী-ঘর বা উপাসনালয়ে হামলা করেছে তারা কোন গোষ্ঠীর এজেন্ডা হাসিলের কুমতলবে এ সব অপকর্ম করে যাচ্ছে। আবহমানকাল ধরে এ দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের পাশাপাশি হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টানসহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বী মানুষ শান্তিতে বসবাস করে আসছে। এ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নস্যাতকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
বিশ্বদরবারে বাংলাদেশ সম্প্রীতির দেশের রোলমডেল। আমরা প্রত্যেকটি নাগরিক জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে একে অন্যের ভাই। ভাই ভাইয়ের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি চলে না। আসুন আমরা সকলেই সতর্ক হই, ধর্মীয় উস্কানিদাতাদের চিহ্নিত করি। একজনের অপরাধের কারণে দশজনকে কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকি। গড়ে তুলি সম্প্রীতির বন্ধন। সরকারকে বিব্রত করা বা ঘর পোড়া আগুনে আলু পুড়ে খাওয়ার মানসিকতা পরিহার করি।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 



 

Show all comments
  • kamal ৫ নভেম্বর, ২০১৬, ১১:৩৮ এএম says : 0
    আসুন আমরা সকলেই সতর্ক হই, ধর্মীয় উস্কানিদাতাদের চিহ্নিত করি।
    Total Reply(0) Reply
  • Arif ৫ নভেম্বর, ২০১৬, ১১:৫৯ এএম says : 0
    ai gotoner sustho investigation howa uchit
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নাসিরনগরের ঘটনায় সারাদেশ উত্তপ্তের প্রয়াস
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ