Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিয়ন্ত্রণ নীতির বেড়াজালে বিএনপি!

প্রকাশের সময় : ৫ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৫৫ পিএম, ৪ নভেম্বর, ২০১৬

সিপাহী বিপ্লব দিবস পালনের অনুমতি পাচ্ছে না : মাঠে নামলে
কঠোরভাবে প্রতিহত করার হুমকি শাসক দলের
আফজাল বারী : রাজপথে নামতেই পারছে না বিএনপি। শর্ত সাপেক্ষেও সভা-সমাবেশের অনুমতি পাচ্ছে না। কোন না কোন অজুহাতে বন্ধ করা হয় অনুমতি। কার্যত: চার দেওয়ালে আটকা পড়েছে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপির রাজনীতিক কার্যক্রম। দৃশ্যত: নিয়ন্ত্রণ নীতির বেড়াজালে বিএনপি!
৭ নভেম্বর বাদ দিয়েই পরদিন ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ পালন করতে চাইলেও সমাবেশের জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ব্যবহারের অনুমতি মেলেনি। উপরন্তু দিবসটি পালনের নামে কেউ মাঠে নামলে তাদের কঠোরভাবে প্রতিহত করার হুমকি দিয়েছে শাসক দল।
আর বিএনপি নেতারা বলছেন, রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি পালনে সরকার নিয়ন্ত্রণনীতি অবলম্বন করছে। তারা গণতন্ত্র ও ভিন্ন মতে বিশ্বাস করে না বলেই আমাদের সভা-সমাবেশ করতে দিচ্ছে না। চলতি বছরের ১১ মাসের মধ্যে মাত্র ২টি সভা-সমাবেশের অনুমতি মিলেছে। তাদের একচোখা নীতির মধ্য দিয়ে আলামত পাওয়া যায় যে, এই সরকারের অধীনে গঠিত নির্বাচন কমিশন ও জাতীয় নির্বাচন কেমন হবে।
প্রথমে ৭ নভেম্বর ও পরে ৮ নভেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি চেয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের কাছে আবেদন করে বিএনপি। গত বৃহস্পতিবার ডিএমপির তরফ থেকে জানানো হয় যে, সোহওরায়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে দেয়া হবে না। এদিকে সরকারের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলও (জাসদ-ইনু) ‘সিপাহী-জনতা বিপ্লব দিবস’ উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বরাদ্দ চেয়ে ডিএমপিকে চিঠি দিয়েছিল। গতকাল ফের আবেদন করা হয়েছে। নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশটি করতে চায় বিএনপি
গত ২৮ অক্টোবর দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপির এক যৌথসভা শেষে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, তারা ৭ নভেম্বর ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে ৭ বা ৮ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রশাসনের অনুমতিও চাওয়ার কথা জানান তিনি। পাশাপাশি দিবসটি উপলক্ষে ১০ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি
দুইদিন পরই মোহাম্মদপুরের একটি সভা থেকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ হুমকি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ৭ নভেম্বর বিএনপির তথাকথিত সিপাহী বিপ্লব দিবস পালন করতে দেয়া হবে না। সিপাহী বিপ্লব পালনের নামে কেউ মাঠে নামলে তাদের কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে। প্রত্যাশা মিশ্রিত মৃদু পাল্টা হুমকি দেয় বিএনপিও। দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রিজভী আহমেদ বলেন, সেদিন সমাবেশ করবোই। প্রয়োজনে জলপাই পাতা নিয়ে। আশা রাখি সরকার অনুমতিও দিবে। দুইপক্ষের হুমকি-পাল্টা হুমকির প্রেক্ষিতে ‘না’ সূচক সিদ্ধান্ত দিয়েছে ডিএমপি।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই সিদ্ধান্ত প্রদানের মধ্যে দিয়ে তারা (সরকার) তাদের স্বরূপ উন্মোচিত করেছে এবং এটা যে একটা একদলীয় সরকার ব্যবস্থা তারা প্রবর্তন করতে চাচ্ছে, তারই প্রতিফলন আমরা দেখতে পারছি। অজুহাত দেখিয়ে অতীতেও তারা (সরকার) সমাবেশ বন্ধ করেছে, এবারও করলো। তবে আমরা অবশ্যই বিকল্প জায়গা চাইবো। আশা করছি, সেখানে আমরা সমাবেশ করার অনুমতি পাবো।
বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের কাউন্সিল করতে জায়গা দেয়া হয় না, বারবার অনুরোধ করেও সমাবেশের অনুমতি মিলে না আবার তারা (সরকার) গণতন্ত্রের কথা বলে, মানুষের অধিকার রক্ষার কথা বলে। মানুষ মনে করেছিলো সময়ের সাথে আওয়ামী লীগের মানষিকতার পরিবর্তন ঘটবে কিন্তু তা হয়নি।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রিজভী আহমেদ অভিযোগ করেন, ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসকে কেন্দ্র করে ঢাকা মহানগরীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে পুলিশ হানা দিচ্ছে এবং ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। আমরা মনে করছি এটি বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর শুধু অগণতান্ত্রিক আচরণই নয় বরং এটি অবৈধ রাষ্ট্রক্ষমতার জোরে দেশব্যাপী আধিপত্য বজায়ের আরও একটি ন্যক্কারজনক দৃষ্টান্ত।
দলীয় সূত্রমতে, ২০১৬ সালের ৪ নভেম্বর পর্যন্ত বিএনপিকে মাত্র দুইবার সভা-সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়। তার মধ্যে একটি গত ৫ জানুয়ারি নয়াপল্টনের সমাবেশ। ২০১৪ সালেল ৫ জানুয়ারি নির্বাচনকে বিএনপি প্রশ্নবিদ্ধ দাবি করে ওই দিনটিকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করে। তবে ওই সমাবেশ উপলক্ষে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের একপাশের রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়। সমাবেশের আশপাশের এলাকায় র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থান নেয়। দ্বিতীয় অনুমতি ছিলো গত ১৯ মার্চ দলের কাউন্সিলে। তবে সেটিও ছিলো সংকুচিত স্থানে। প্রস্তুতি বিশাল হলেও মুলত: চার দেওয়ালেই ঘেরা ছিলো কাউন্সিল।
এছাড়া বিএনপির অন্যান্য কর্মসূচী পালন করতে হয়েছে বিচ্ছিন্নভাবে। সেসব কর্মসূচীতে পুলিশি ও ক্ষমতাসীনদের হামলা, লাঠিচার্জসহ গণগ্রেফতারের ঘটনা রয়েছে।



 

Show all comments
  • anisuzzaman ৫ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০৫ পিএম says : 0
    বিচার মানি তবে তাল গাছ আমার । আমরা যে অবস্হায় আছি তা দেখে শয়তানও মনে হয় হাসে ।
    Total Reply(0) Reply
  • anisuzzaman ৫ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০৯ পিএম says : 0
    তন্ত্রমন্ত্র বাদ দিয়ে আল্লাহ্ দেখানো পথে চলুন ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নিয়ন্ত্রণ নীতির বেড়াজালে বিএনপি!
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ