পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সরকারি দল চায় প্রেসিডেন্ট নিয়োগ দিবেন সর্বদলীয় আলোচনার দাবি বিএনপির
হাবিবুর রহমান : আগামী চার মাসের মধ্যে মেয়াদ শেষ হচ্ছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন কমিশনের। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বিদায় নিচ্ছে এ কমিশন। এরই মধ্যে দেশের রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্নি মহলে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে দাবি উঠেছে রাজনীতিক অঙ্গণে। এবার একটি সর্বদলীয় আলোচনা ও বাছাই কমিটি নিয়ে যেমন আলোচনা হচ্ছে তেমনি এবার সংসদে নির্বাচন কমিশন বিষয়ক আইন পাশের সরকারের কাছে চাপও জোরালো হচ্ছে।
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ টি এম শামসুল হুদা বলেছেন, এখন থেকে এটি উদ্যোগ না নিলে একটি গ্রহণযোগ্য কমিশন গঠন করা কঠিন হয়ে পড়বে। অন্যদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সর্বদলীয় আলোচনা ছাড়া নির্বাচন কমিশন গঠিত হলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।
নির্বাচন কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের সংবিধানের ৩২৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন প্রক্রিয়া পরিচালনার জন্য ভারতের নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন সংবিধান-স্বীকৃত কর্তৃপক্ষ। সেখানে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ইসি গঠন করা হয়। সেদেশের নির্বাচন কমিশনকে নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিরোধ নেই। কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সংবিধানে ইসি গঠনের আইন প্রণয়ণের কথা বলা হলেও বিগত ৪৪ বছরে তা করেনি কোনো সরকার। তাই বারবার আমাদের দেশের নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক হয়। রাজনৈতিক দলসহ বিশিষ্টজনদের দাবি, সকলের মতামতের ভিত্তিতে সার্চ কমিশন গঠন করা হোক।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক ইনকিলাবকে বলেন, বর্তমান কমিশনের মতোই সার্চ কমিটির মাধ্যমে আগামী কমিশন গঠন করা হবে। আইন প্রণয়নের বিষয়টি এখনও সরকারের বিবেচনায় আসেনি। আগে যে নিয়মে হয়েছে এবারে সেই ভাবে হবে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ইনকিলাবকে বলেন, সবদলীয় আলাপ ছাড়া শুধু প্রেসিডেন্ট তার ক্ষমতাবলে গঠিত নতুন একটি নির্বাচন কমিশন মোটেই গ্রহণযোগ্য হবে না। নির্বাচন কমিশন গঠনের ব্যপারে একটি সর্বদলীয় কনসেনসাস খুব বেশি প্রযোজন। এটা না হলে নিবাচন কমিশন গঠন করা হলে তা জাতির আস্থা আসবে না।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ ইনকিলাবকে বলেন, প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমান সকল রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বৈঠকে করে তাদের পরামর্শ অনুযায়ী সার্চ কমিটি গঠন করেন। সেই সার্চ কমিটির সুপারিশে তিনি নিবার্চন কমিশন গঠন করেছিলেন।
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এটিএম শামসুল হুদা ইনকিলাবকে বলেন, আগামী নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোরে ঐকমত্যের ভিত্তিতে পুনর্গঠন করা জরুরি। নির্বাচন কমিশন, বিচারব্যবস্থা, প্রশাসন ও রাষ্ট্রীয় অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর যে আস্থার অভাব রয়েছে তা দূর করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, আমাদের নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা ভারতের নির্বাচন কমিশনের চেয়ে বেশি। তারপরও আমরা ভারতের মতো গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে পারছি না। আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য ভালো একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হলে এখনই কার্যক্রম শুরু করতে হবে। লোক দেখানো সার্চ কমিটি গঠন না করে, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও উপযুক্ত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের আহ্বান জানান তিনি।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার বলেন, শ্রীলংকা, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার অনেক দেশে রাজনৈতিক দলের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়। একইভাবে আমাদের দেশে কমিশন গঠিত হলে কারও আপত্তি থাকবে না। সাংবিধানিক নির্দেশনার আলোকে নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য আইনি-কাঠামো থাকা খুবই জরুরি।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য মূলত দরকার স্বাধীন নির্বাচন কমিশন এবং সরকারের সদিচ্ছা। সরকার চাইলেই সবার সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে কমিশন গঠন করতে পারে। যারা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিপক্ষে নির্বাচন করতে পারবে। এই প্রক্রিয়ায় কমিশন গঠন হলে তা নিয়ে কেউ প্রশ্নও তুলতে পারবে না।
কমিশনার নিয়োগে সার্চ কমিটিতে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, নাগরিক সমাজ এবং গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করার পক্ষে মত দেন সুজন সম্পাদাক ড. বদিউল আলম মজুমদার।
সুজন সম্পাদক বলেন, সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে আইনের বিধানাবলী সাপেক্ষে প্রেসিডেন্টের মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। এর জন্য একটি আইন প্রণয়নের বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা ৪৪ বছরেও করা হয়নি। তাই আইন প্রণয়ন না করে ইসি নিয়োগ দেওয়া হলে, তার বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে।
জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষেণ পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, সবার সঙ্গে আলোচনা করে পূর্বের ধারাবাহিকতা না রেখে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বা নির্বাচন নিয়ে যারা কাজ করে এমন কাউকে কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। এছাড়া আমি বলবো আগামী কমিশনে একজন হলেও নারী কমিশনার নিয়োগ দেওয়া যেতে পাবে। তাছাড়া কমিশন নিয়োগের জন্য যে আইনটা করার কথা সে আইনটিও করা দরকার।’
স্থানীয় সরকার ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, নিজেদের সুবিধার কথা বিবেচনা করেই হয়তো কোনো সরকার আইন করেনি। এর আগে প্রেসিডেন্ট একটি সার্চ কমিটি গঠন করে নিয়োগ দিয়েছেন। এবার কী হবে সেটা দেখার বিষয়। তবে আইন করা প্রয়োজন।
সংবিধান বিশেষজ্ঞ আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, নিবাচন কমিশন কিভাবে নিয়োগ হবে সেটা সংবিধানে বলা নেই। কিন্তু সংবিধানে এটা বলা আছে যে সংসদ এই সম্পর্কিত একটি আইন পাশ করবে এবং সেই আইন অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট নিয়োগ দিবেন। এতদিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দিতেন কোন আইন ছাড়াই। এটা নিয়ে কেউ কখনো প্রশ্ন করেনি। তিনি বলেন, এবার একটি সরদীয় আলোচনা ও বাছাই কমিটি নিয়ে যেমন আলোটনা হচ্ছে তেমনি এবার সংসদে নির্বাচন কমিশন বিষয়ক আইন পাশের চাপও জোরালো দাবি হচ্ছে।
শাহদীন মালিক বলেন, আইন প্রণয়ন ছাড়া নির্বাচন কমিশন গঠন করা হলে তা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। আইন প্রণয়ন ছাড়া ভবিষ্যতে যারা কমিশনার হিসেবে শপথ নেবেন তারা আইনি ঝামেলায় পড়তে পারেন।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সংবিধানের আলোকে কমিশন নিয়োগে স্বচ্ছ ও শক্তিশালী আইন হলে এ নিয়ে বিতর্ক অনেকটাই কমে যাবে। আমাদের সময় কমিশনের পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্টের কাছে এ বিষয়ে আইন করার প্রস্তাব করেছিলাম কিন্তু সেটি এখনও বাস্তবায়ন হয়নি।
নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল ইলেকশন ওযার্কিং গ্রুপের (ইডব্লিউজি) পরিচালক আবদুল আলীম বলেন, নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেওয়া জন্য একটি গাইডিং প্রিন্সিপাল আছে। সিস্টেম আছে যেখানে সার্চ কমিটি গঠন করা হয়। সেই সার্চ কমিটিতে সব দলের লোক থাকে। আমাদের সার্চ কমিটিতে রাখার প্রয়োজন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।