পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নাছিম উল আলম : মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে বঙ্গোপসাগরে দ্বিতীয় দফার নিম্নচাপের প্রভাবে দক্ষিণাঞ্চলসহ সারা দেশের অন্যতম প্রধান খাদ্য ফসল আমন নিয়ে ঝুঁকি ক্রমশ বাড়ছে। দক্ষিণাঞ্চলে আমনের ছড়া বের হয়েছে সবেমাত্র। কোথাও ধানের গাছে থোর এসেছে। তবে অনেক এলাকাতেই আমন পাকতেও শুরু করেছে। বর্তমান বৃষ্টিসহ মেঘলা ও গুমোট আবহাওয়ায় পোকার আক্রমণের শংকাও প্রবল হচ্ছে। গত ২২-২৩ অক্টোবর ঘূর্ণিঝড় ‘কায়ান্ট’-এর প্রভাবে হালকা থেকে মাঝারি বর্ষণে উপকূলীয় এলাকার প্রধান এ খাদ্য ফসলে কিছু ক্ষতি হয়। কায়ান্ট দ্রুত দুর্বল হয়ে পড়ায় বাতাসের তীব্রতাও কম ছিল। পাশাপাশি বৃষ্টিপাতের প্রবণতা দ্রুত হ্রাস পাওয়ায় ক্ষতির পরিমাণ বাড়েনি। তবে বেশ কিছু জমির উঠতি আমন ধান মাটিতে শুয়ে পড়ায় এসব ধানে চিটা হবার সম্ভাবনা প্রবল হয়েছে। সে ক্ষত মুছে যাবার আগেই নতুন করে পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় আরেকটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হওয়ায় কৃষকের দুশ্চিন্তা ক্রমশ বাড়ছে। নিম্নচাপটির প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগরে গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। ফলে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাবার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। বৃহস্পতিবার রাত থেকেই বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় হালকা বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। গতকালও দিনভরই হালকা থেকে মাঝারি বর্ষণে দক্ষিণাঞ্চলের স্বাভাবিক জনজীবনে ছন্দপতন ঘটে।
গতকাল পটুয়াখালীতে ২৬ মি.মি. ও বরিশালে তার ১০ মি.মি. বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়া বিভাগ থেকে আজ শনিবার দক্ষিণাঞ্চলসহ উপকূলীয় এলাকার মাঝারী থেকে ভারী বর্ষণের পূর্বাবাস দেয়া হয়েছে।
আবহাওয়া বিভাগ থেকে পায়রাসহ সবকটি সমুদ্র বন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখানোর পাশাপাশি উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেই সাথে কোন মাছ ধরা নৌকা ও ট্রলারকে গভীর সাগরে যেতেও নিষেধ করেছে আবহাওয়া বিভাগ। বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের সবকটি নদী বন্দরকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতেও বলা হয়েছে।
কিন্তু মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে দ্বিতীয় দফার দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলসহ সারা দেশের উঠতি আমন ধান নিয়ে শংকা ক্রমশ প্রবল হচ্ছে। যদিও নিম্নচাপটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর, উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হবার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। এতে করে নিম্নচাপটি ভারতের উড়িষ্যাসহ সংলগ্ন এলাকায় আঘাত হানার সম্ভাবনা বেশি। নিম্নচাপটি গতকাল সন্ধ্যায় বরিশালের পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৮ শতাধিক কিলোমিটার দক্ষিণÑপশ্চিমে অবস্থান করলেও এর প্রভাবে দক্ষিণাঞ্চলসহ সারা দেশেই হালকা থেকে মাঝারি বর্ষণ অব্যাহত ছিল। যা এ সময়ে মাঠে থাকা উঠতি আমনের জন্য যথেষ্ট ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে করছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবিদগণ।
বিগত রবি ও খরিপ-১ মওসুমে দেশে বোরো ও আউশ আবাদে লক্ষ পূরণ না হবার পরে চলতি খরিপ-২ মওসুমে কৃষকগণ আমন আবাদে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছেন। এবার দেশে ৫২ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আমন-এর প্রকৃত আবাদ হয়েছে ৫৩ লাখ ৮৩ হাজার হেক্টরে। আবাদকৃত এসব জমি থেকে ১ কোটি ৩৫ লাখ টন চাল পাবার লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে ১ কোটি ৪০ লাখ টনের বেশি হবার আশাবাদ কৃষি মন্ত্রণালয় ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের। এর মধ্যে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলেই প্রায় ৭ লাখ হেক্টর জমিতে আমন-এর আবাদ হয়েছে চলতি মওসুমে। যেখান থেকে প্রায় ১৫ লাখ টন চাল পাবার আশা করছে ডিএই।
বিগত মওসুমে দেশের প্রধান খাদ্য ফসল বোরো আবাদ লক্ষ্যও অর্জিত হয়নি। গত রবি মওসুমে দেশে ৪৮ লাখ হেক্টরে বোরো ধান আবাদের মাধ্যমে ১ কোটি ৯০ লাখ টন চাল পাবার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও বাস্তবে আবাদ হয় ১.২০ লাখ হেক্টর কম, ৪৬ লাখ ৮০ হাজার হেক্টরে। এমনকি বিগত খরিপ-১ মওসুমে দেশের ১০ লাখ ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রার স্থলে বাস্তবে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার হেক্টর কম জমিতে এ ধানের আবাদ হয়েছে। ধানের বাজার দর কম ও উৎপাদন ব্যয় বেশি হবার কারণে কৃষকদের মধ্যে আউশ আবাদের উৎসাহ হ্রাস পাচ্ছে বলে মনে করছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবিদগণ। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর-ডিএই’র দায়িত্বশীল মহলের মতে, গত রবি মওসুমে বোরো আবাদ কিছুটা কম হলেও ফলন ভাল হওয়ায় দেশের প্রধান ঐ খাদ্য ফসলের উৎপাদন লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে। ফলে দেশে খাদ্য ঘাটতির কোন শংকা নেই।
সাম্প্রতিককালে ধানের দর কিছুটা বৃদ্ধির ফলে এর আবাদে কৃষকদের মধ্যে আগ্রহ কিছুটা বাড়ছে বলে মনে করছেন ডিএই’র দায়িত্বশীল মহল। কিন্তু মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে দু’দফার দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া উঠতি আমনের জন্য যথেষ্ট ঝুঁকির সৃষ্টি করছে। দক্ষিণাঞ্চলসহ সারা দেশের আমন চাষীদের স্নায়ু চাপ ক্রমশ বাড়ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর-ডিএই তার কর্মীদের মাঠ পর্যায়ে নিবিড় নজরদারিসহ কৃষকদের সব ধরনের পরামর্শ প্রদানের নির্দেশ জারি রেখেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।