পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাংলা সাহিত্য ও সংবাদপত্র শিল্পের জীবন্ত কিংবদন্তি ভাষা সৈনিক জ্ঞানতাপস অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল গফুরের ৯৪তম জন্মদিন আজ। তিনি ১৯২৯ সালের এইদিনে রাজবাড়ী জেলার দাদপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের অধিকারী প্রবীণ সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক, সাংস্কৃতিক সংগঠক, দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার ফিচার সম্পাদক, তমদ্দুন মজলিসের অভিভাবক পরিষদের সভাপতি ও নজরুল একাডেমীর সহ-সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল গফুরের শিক্ষা জীবনের হাতেখড়ি পিতার প্রতিষ্ঠিত গ্রামের মক্তবে।
অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল গফুরের ৯৪তম জন্মদিন উপলক্ষে তমদ্দুন মজলিস ও নজরুল একাডেমীর যৌথ উদ্যোগে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে দেশের খ্যাতনামা কবি-সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন।
অধ্যাপক গফুর ছাত্র জীবন থেকেই প্রখর মেধাবী। ১৯৪৫ সালে ফরিদপুর ময়েজ উদ্দীন হাই মাদরাসা থেকে হাই মাদরাসা (প্রবেশিকার সমমানের) পরীক্ষায় সমগ্র বাংলা ও আসামের মধ্যে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে উত্তীর্ণ হন। ১৯৪৭ সালে ঢাকা গভর্নমেন্ট ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজ (বর্তমানে সরকারি নজরুল কলেজ) থেকে ঢাকা বোর্ডের ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় নবম স্থান অধিকার করেন।
দেশপ্রেমী ও প্রখর সমাজ সচেতন আবদুল গফুর ছাত্রজীবনেই পাকিস্তান আন্দোলন ও ভাষা আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ফাইনাল অনার্স পরীক্ষার দু’মাস আগে ভাষা আন্দোলনসহ তমদ্দুন মজলিসের কাজে সার্বক্ষণিক কর্মী হিসেবে আত্মনিয়োগ করার কারণে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকেন। তবে দীর্ঘ ১১ বছর পর ১৯৬২ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজকল্যাণে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৪৭ সালে ছাত্রাবস্থায় তিনি পাক্ষিক জিন্দেগী পত্রিকার মাধ্যমে সাংবাদিকতা জীবন শুরু করেন। ১৯৪৮ থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত তমদ্দুন মজলিস থেকে প্রকাশিত ‘সাপ্তাহিক সৈনিক’ এর সহকারী সম্পাদক ও সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৫২ সালে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের একজন সক্রিয় সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এতে সরকার তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। তিনি ১৯৫৭ সালে দৈনিক মিল্লাত ও ১৯৫৮ সালে দৈনিক নাজাত-এর সহকারী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৫৯ থেকে ১৯৬০ সালে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের পূর্বসূরি প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম ‘ইসলামিক একাডেমির সুপারিন্টেডেন্ট পদে কাজ করেন। ১৯৬২ সালে এম এ পাস করার পর পূর্ব পাকিস্তান সরকারের সমাজকল্যাণ বিভাগের অধীন চট্টগ্রাম জেলা যুব কল্যাণ অফিসার পদে যোগদান করেন। ১৯৬৩ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে এবং ১৯৭২ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত ঢাকার আবুজর গিফারী কলেজে অধ্যাপনা করেন। এর মধ্যে ১৯৭১ সালের মে থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দৈনিক আজাদ পত্রিকার বার্তা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ইংরেজি দৈনিক ‘পিপলস’ পত্রিকার সহকারী সম্পাদক এবং ১৯৭৯ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত দৈনিক দেশ পত্রিকার সহকারী সম্পাদক পদে কর্মরত ছিলেন। ১৯৮০ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬ সালে দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে তিনি ফিচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। এখনো তিনি নিয়মিত লিখছেন।
অধ্যাপক গফুর ভাষা আন্দোলনের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন তমদ্দুন মজলিস ছাড়াও বাংলা একাডেমী, নজরুল একাডেমী, আবুজর গিফারী সোসাইটি প্রভৃতি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। তিনি ২০০৫ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থাবলীর মধ্যে রয়েছে ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও ইসলাম, বিপ্লবী উমর, কর্মবীর সোলায়মান সমাজকল্যাণ পরিক্রমা, কোরআনী সমাজের রূপরেখা, খোদার রাজ্য, ইসলাম কি এ যুগে অচল, ইসলামের জীবন দৃষ্টি, রমজানের সাধনা, ইসলামের রাষ্ট্রীয় ঐতিহ্য, আসমান জমিনের মালিক, শাশ্বত নবী, আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম, বাংলাদেশ আমার, স্বাধীনতা, স্বাধীনতার গল্প শোনো, আমার কালের কথা প্রভৃতি। এছাড়াও ইংরেজি ও বাংলায় ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, সাহিত্য, ইসলাম ও সমসাময়িক বিশ্ব প্রভৃতি বিষয়ে তাঁর আরো অনেক গ্রন্থ প্রকাশের অপেক্ষা রয়েছে।
ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন এবং পত্রিকায় কর্মরত সংবাদকর্মীরা অধ্যাপক আবদুল গফুরের ৯৪তম জন্মদিনে অভিনন্দন জানান এবং তাঁর দীর্ঘজীবন কামনা করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।