পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সকাল ৬টায় নগরীর জামালখান সড়কে লাইনে দাঁড়ান কলেজ ছাত্র মোশারফ হোসেন। তার সামনে তখন আরও ৩০ জন। পেছনে দীর্ঘলাইনে আরও অনেকে। সবার প্রতীক্ষা কখন আসবে টিসিবির পণ্যবাহী ট্রাক। দুপুর ১২টা নাগাদ আসে ট্রাক। আরও এক ঘণ্টা পর এক লিটার সয়াবিন, দুই কেজি চিনি ও এক কেজি মসুর ডাল কেনার সুযোগ পান মোশারফ। কিছু টাকা সাশ্রয় করতে প্রায় সাত ঘণ্টা তাকে লাইনে দাঁড়াতে হয়েছে।
নগরীর বাকলিয়া কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মোশারফ প্রায় সেখানে এসে লাইনে দাঁড়ান। এতে তার পড়ালেখা বিঘ্নিত হচ্ছে, কিন্তু উপায় নেই। দরিদ্র পিতার সাত সদস্যের পরিবারে অভাব-অনটন স্থায়ী হয়েছে। বাধ্য হয়ে তিনি এভাবে লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। তার মত আরও অনেকে টিসিবি ও খাদ্য বিভাগের পণ্যবোঝাই ট্রাকের পেছনে লাইন ধরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকছে। কিন্তু দীর্ঘলাইন শেষ না হতেই ফুরিয়ে যাচ্ছে পণ্য। দীর্ঘ প্রতীক্ষায় গলদঘর্ম হয়েও খালি হতে ফিরছেন অনেকে। টিসিবির কর্মকর্তারা বলছেন, একটি ট্রাকের পেছনে অন্তত ৫০০ লোক লাইনে দাঁড়াচ্ছে। সর্বোচ্চ ৩০০ জনকে পণ্য দেওয়া যাচ্ছে। বাকি ২০০ ফিরছেন খালি হাতে।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা চট্টগ্রামের স্বল্প আয়ের মানুষ। চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের বাজার এখন চড়া। করোনার কারণে মানুষের আয় রোজগার কমেছে। অনেকে কর্ম হারিয়েছেন। এ অবস্থায় দ্রব্যমূল্যের কষাঘাতে জর্জরিত স্বল্প ও সীমিত আয়ের মানুষ। বেশি বিপাকে পড়েছেন দিনমজুর, রিকশা ও ঠেলাচালক থেকে শুরু করে খেঁটে খাওয়া মানুষ। মধ্যবিত্তদেরও কষ্টের শেষ নেই।
এমন পরিস্থিতিতে ন্যায্যমূল্যের পণ্য কিনতে পঙ্গপালের মত ছুটছেন অনেকে। কিন্তু জনসংখ্যার তুলনায় টিসিবি ও খাদ্য বিভাগের পণ্য অতিসামান্য। হাতেগোনা কিছু এলাকায় সরকারি এসব পণ্য মিলছে। কাকডাকা ভোরে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে কেউ কেউ পণ্য কিনতে পারলেও অনেকে নিরাশ হয়ে ফিরছেন। টিসিবি এবং খাদ্য বিভাগের দেয়া পণ্যের মান নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। চট্টগ্রাম মহানগরীতে জনসংখ্যা প্রায় পৌনে এক কোটি। এরমধ্যে বিরাট অংশ স্বল্প ও সীমিত আয়ের। দিনে এনে দিনে খাওয়া মানুষের সংখ্যাও কয়েক লাখ। গত দুই বছরে করোনার কঠিন সময়ে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা আরও বেড়েছে। বিশেষ করে শ্রমিকদের বিরাট অংশ চাকরিচ্যুত হয়েছেন।
অর্থনৈতিকভাবে টানাপোড়েনের মধ্যে তাদের সংসার চলছে। বাজারে ভোজ্যতেল থেকে শুরু করে চাল, ডাল, তেল, আটা সবকিছুর দাম লাগামহীন। ভোজ্যতেলের দাম অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙেছে। ৫০ টাকার নিচে মিলছে না ভালোমানের মোটা চাল। ভরমৌসুমেও শাকসবজির দাম চড়া। এ অবস্থায় সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে টিসিবি এবং খাদ্য বিভাগ কিছু উদ্যোগ নিলেও তাতে তেমন সুফল মিলছে না। কারণ লোকসংখ্যার তুলনায় সরকারি উদ্যোগে ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করা পণ্যের পরিমাণ একেবারেই সামান্য।
গতকাল নগরীর কাজির দেউড়ী, চকবাজার, জামালখান এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শত শত মানুষের লাইন। অনেকে ভোর ৫টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। নারী-পুরুষ থেকে শুরু করে শিশু-কিশোরদেরকেও লাইনে দেখা গেছে। কাজির দেউড়ী এলাকায় সার্কিট হাউসের পাশে সকাল ১০টায় দেখা গেছে শতাধিক মানুষের দীর্ঘলাইন। কিন্তু তখনও পণ্যবাহী ট্রাক আসেনি। ভোর থেকে অপেক্ষায় আছেন মরিয়ম বেগম। তিনি জানান, গতকালও লাইনে ছিলেন। কিন্তু দেরিতে আসায় পণ্য কিনতে পারেননি। এ কারণে কাকডাকা ভোরে এসে রাস্তায় বসে পড়েছেন।
চকবাজার প্যারেড ময়দানের পশ্চিম পাশে দুপুর ১২টায় দেখা যায়, দুটি ট্রাককে ঘিরে শত শত মানুষের ভিড়। লাইনে দাঁড়িয়ে নারী-পুরুষদের ধাক্কাধাক্কি আর হৈ চৈ করতে দেখা যায়। লাইনে দাঁড়ানো মানুষের অভিযোগ, ট্রাকে যে পরিমাণ পণ্য থাকার কথা তা থাকে না। এতে অল্প সময়ে পণ্য শেষ হয়ে যায়। খালি হাতে ফিরতে হয় অনেককে। কোন কোন এলাকায় কখনও সকাল ১০টায় আবার কখনও দুপুর নাগাদ ট্রাক আসে। এতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। কর্মজীবীদের অনেকে কাজ ফেলে পণ্যের জন্য লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। কিন্তু খালি হাতে ফিরে যাওয়ায় তাদের বিপাকে পড়তে হচ্ছে। একদিকে আয় বন্ধ, অন্যদিকে পণ্যও কিনতে পারছেন না। হতদরিদ্রদের পাশাপাশি নিম্নবিত্ত এমনকি মধ্যবিত্তদের অনেকেও ন্যায্যমূল্যের পণ্য কিনতে লাইনে দাঁড়াতে বাধ্য হচ্ছেন। টিসিবি ও খাদ্য বিভাগের পাশাপাশি নগরীর কয়েকটি এলাকায় বেসরকারি উদ্যোগেও ন্যায্যমূল্যের ভোগ্যপণ্য বিক্রি হচ্ছে। সেখানে মানুষের দীর্ঘলাইন।
টিসিবির কর্মকর্তারা জানান, নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে ১৭টি ট্রাকে প্রতিদিন পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। কয়েকটি এলাকায় স্থায়ীভাবে ট্রাকে এসব পণ্য বিক্রি করা হয়। বাকি এলাকায় একেকদিন একেক পয়েন্টে পণ্যবাহী ট্রাক যাচ্ছে। প্রতিটি ট্রাকে দিনে ১৬০০ কেজি পণ্য বিক্রি করা হয়। এরমধ্যে রয়েছে ৬০০ লিটার সয়াবিন, ৫০০ লিটার করে মসুর ডাল ও চিনি। আবার কোন কোন ট্রাকে ৫০০ কেজি করে পেঁয়াজও বিক্রি করা হয়। প্রতিকেজি মসুর ডাল ৬৫ টাকা, চিনি ৫৫ টাকা, পেঁয়াজ ৩০ টাকা এবং সয়াবিন প্রতি লিটার ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
নগরীর জামালখান মোড়, কাজির দেউড়ী মোড়ের সার্কিট হাউস এলাকা, ষোলশহর ২নং গেইটসহ কয়েকটি পয়েন্টে প্রতিদিন টিসিবির পণ্য আসছে। হতদরিদ্র ও স্বল্প আয়ের মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে এ উদ্যোগ নেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আগামী ১৫ মার্চ থেকে পবিত্র রমজান উপলক্ষে পণ্য বিক্রি আরও বাড়ানোর প্রস্তুতি চলছে বলে জানান টিসিবির কর্মকর্তারা। তবে আপাতত ট্রাকের সংখ্যা বাড়ানোর কোন সম্ভাবনা নেই বলে জানান তারা।
এদিকে খাদ্য বিভাগের উদ্যোগে নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে তিনটি ট্রাকে চাল ও আটা বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতি ট্রাকে প্রতিদিন দুই টন চাল ও এক টন আটা বিক্রি করা হয়। চাল প্রতিকেজি ৩০ টাকা এবং খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে ১৮ টাকা দরে। জনপ্রতি পাঁচ কেজি চাল ও আটা কিনতে পারছেন। এছাড়া নগরীর ১৯ জন ডিলারের দোকানে প্রতিদিন দেড় টন করে চাল বিক্রি করা হচ্ছে। আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।