Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জমি ও সীমানা জটিলতায় বিএসএফের আপত্তির মুখে থমকে আছে পরশুরামের বিলোনীয়া স্থলবন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নকাজ

ছাগলনাইয়া (ফেনী) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১:২৮ পিএম

জমি ও সীমানা জটিলতায় থমকে আছে ফেনীর বিলোনীয়া স্থলবন্দরের ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়নকাজ। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের আপত্তির মুখে পড়ে অচলাবস্থা বিরাজ করছে সম্ভাবনাময়ী এ স্থলবন্দরটির উন্নয়ন যজ্ঞে। এদিকে চলতি বছরের জুনে শেষ হতে চলেছে প্রকল্পের মেয়াদকাল। সঠিক সময়ে কাজ শেষ না হলে বাড়তে পারে প্রকল্প ব্যয়। সব মিলিয়ে নানা জটিলতায় পড়েছে ফেনীর পরশুরাম উপজেলার বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী এ বন্দরটি। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, বিলোনীয়া স্থলবন্দরের ৩৮ কোটি টাকার অবকাঠামো উন্নয়নকাজের বিষয়টি প্রায় আড়াই বছরেও কোনো সমাধান মেলেনি। এতে বিলোনীয়া স্থলবন্দরের উন্নয়ন ও বন্দরের স্বাভাবিক কাজকর্ম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আর্থিক ক্ষতির সম্মুক্ষীণ হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বন্দরটি পরিদর্শনে এলে এ বিষয়ে কথা হয় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বলেন, সমস্যাগুলো দেখা ও জানার জন্য সরেজমিনে বন্দরটি পরিদর্শন করেছি। জমি অধিগ্রহণে দুর্বলতা ছিল কিনা, জমি অধিগ্রহণে আন্তর্জাতিক আইন মানার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের দুর্বলতা আছে কিনা, প্রকল্প ব্যয়, এসব বিষয়গুলো আমরা দেখে এসেছি। আমরা সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। প্রকল্প পরিচালক কে এম আতিকুল ইসলাম বলেন, মোট কাজের ৪৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ আরও সাড়ে ৫ মাস রয়েছে। আশা করছি, আমরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারবো। জমি জটিলতার ব্যাপারে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সীমারেখার ১৫০ গজের মধ্যে কোনো অবকাঠামো নির্মাণে গেলে দু’দেশের সম্মতি লাগে। এখানে অবকাঠামো নির্মাণ নিয়ে ভারত অলিখিতভাবে না করে দিয়েছে। এটা নিয়ে দিল্লিতে দ্বিপাক্ষিক সভা হয়েছে। আমরা আশা করছি, এ মাসের মধ্যে এটার সমাধান হবে। আমাদের আরও দু’টি স্থলবন্দরে এ সমস্যা ছিল, সেখানেও সমাধান হয়েছে। স্থানীয় পরশুরাম পৌরসভার মেয়র নিজাম উদ্দিন চৌধুরী সাজেল বলেন, বন্দরের জটিলতার কারণে ঠিকাদাররা প্রায় তিন বছর ঠিকমতো কাজ করতে পারছেন না। ব্যাহত হচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্য। আশা করছি, দু’দেশের নীতি নির্ধারণী মহল বিষয়টির সমাধান করবেন। বন্দরের শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, কাজের ধীর গতির কারণে সাধারণ শ্রমিকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। দ্রুত কাজ শেষ হলে বন্দরের শ্রমিকদের কর্মসংস্থান হবে। মোট জায়গার ২৫ শতাংশের মধ্যে কাজ হলেও বাকী ৭৫ শতাংশ জায়গার মধ্যে নানা জটিলতায় উন্নয়ন কাজ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে স্থানীয়রা বলেন, আন্তর্জাতিক সীমারেখার ১৫০ গজের মধ্যে কোনো দেশ স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ করতে পারবে না বলে একটি আইন থাকলেও এখানে তা মানা হয়নি। বাংলাদেশের সরকার স্থলবন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিলে জমি অধিগ্রহণের সময় ১৫০ গজের মধ্যে জমি অধিগ্রহণ করা হয়। যার ফলে এ জটিলতা দেখা দেয়। যে ৩০ শতাংশ জমির মধ্যে জটিলতা নেই সেগুলোতে কাজ চলছে। বাকি অংশে কাজ বন্ধ রয়েছে। বন্দর সংশ্লিষ্টরা জানান, ফেনীর পরশুরাম উপজেলার বিলোনীয়া সীমান্ত এলাকায় ২০০৮ সালে দেশের ১৭তম এ স্থলবন্দরটি স্থাপন করে সরকার। ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় ত্রিপুরাসহ সংশ্নিষ্ট এলাকার আমদানি-রপ্তানি বাড়ানোর লক্ষ্যে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ সিদ্ধান্তে স্থলবন্দরটি চালু করা হয়। বন্দরের কার্যক্রম চালুর পরই দু’দেশে ব্যাপক সাড়া পড়ে। বাংলাদেশ থেকে ইট, পাথরসহ প্যাকেটজাত খাদ্যসামগ্রী রপ্তানি শুরু হয়। ত্রিপুরা এলাকার স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যও আসতে থাকে। পরিবহন খরচ তুলনামূলক কম থাকায় আমদানি-রপ্তানি নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে আগ্রহ বাড়ে। কিন্তু বিলোনীয়া স্থলবন্দর আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হলেও অবকাঠামো তেমন ছিল না। সার্বিক পরিবেশও ছিল অত্যন্ত খারাপ। অবকাঠামো বলতে ছিল একটি পুলিশ বক্স। আমদানি-রপ্তানি পণ্য খোলা আকাশের নিচে রাখা হতো, ছিল না কো ওয়্যার হাউজ। এতে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েন ব্যবসায়ীরা। মালামাল পরিবহনের ভালো কোনো রাস্তাও ছিল না। ছিল না সরকারি কর্মকর্তাদের থাকার কোনো ব্যবস্থা, ছিল না ভালো কার্যালয়ও। অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে ব্যবসায়ী ও সংশ্নিষ্টরা ক্ষতির সম্মুখীন হতে থাকে। এ অবস্থায় সরকার বাংলাদেশ ভারতের মধ্যে আমদানি রপ্তানি মালামাল সংরক্ষণ ও পার্কিং সুবিধার উন্নয়নের উদ্দেশে বিলোনীয়া স্থলবন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নে পরিকল্পনা গ্রহণ করে। বন্দর উন্নয়নে বরাদ্দ দেওয়া হয় সাড়ে ৩৮ কোটি টাকা। ১০ একর ভূমি উন্নয়নের জন্য অধিগ্রহণ করা হয়। প্রকল্পগুলোর মধ্যে ছিল টার্মিনাল ভবন নির্মাণ, ওয়্যারহাউস, ওপেন ইয়ার্ড, বন্দর অফিস, বিশ্রামাগার, ব্যারাক ও ডরমিটরি ভবন, মসজিদ ও ড্রেন নির্মাণ। ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে তখনকার নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান বন্দরের প্রকল্পগুলোর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ। ২০১৯ সালে বন্দরের অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হলে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেয়। বন্দরের অবকাঠামোগত জটিলতা তৈরি হলে ভারতীয় বিএসএফ নির্মাণকাজে বাধা দেয়। ফলে নকশার যে অংশ আন্তর্জাতিক সীমারেখায় অবস্থিত সে অংশের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এ অচলাবস্থা চলছে গত আড়াই বছর যাবৎ। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জানায়, ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) প্রাথমিক অবস্থায় নির্মাণে সহযোগিতা করে। কিন্তু কাজ অনেক দূর এগিয়ে যাওয়ার পর বিএসএফ মত বদলায়। কাজ করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে চিঠি দেয়। এ অবস্থায় মাত্র কয়েক মাস কাজ করার পর নির্মাণকাজের বড় অংশের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, আমদানি-রপ্তানির সুবিধার্থে ভারতীয় ইমিগ্রেশনের আদলে বিলোনীয়া স্থলবন্দরের অবকাঠামোর নকশা তৈরি করা হয়। নো-ম্যান্স ল্যান্ডে অবস্থিত নকশার ৩০ শতাংশ অংশের নির্মাণকাজ করা সম্ভব হলেও বাকি ৭০ শতাংশের কাজ বন্ধ হয়ে রয়েছে। অথচ বন্ধ থাকা কাজের ১০ শতাংশ শুরুতেই শেষ হয়। এতে বিপুল লোকসানে পড়ে তারা। যে ৩০ শতাংশ নির্মাণকাজ হচ্ছে তা বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রমে আশানুরূপ উপকারে আসবে না। বন্দর সংশ্লিষ্টরা চান দু’দেশের দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মধ্য দিয়ে বিষয়টির সুন্দর সুরাহা হোক।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ