Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভর্তিযুদ্ধের অপেক্ষা

জিপিএ-৫ পেয়েও বঞ্চিত হবে বিশ্ববিদ্যালয়-মেডিকেলে

ফারুক হোসাইন | প্রকাশের সময় : ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০৪ এএম

উচ্চমাধ্যমিক স্তরে অংশ নেয়া বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরই স্বপ্ন থাকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের। এক্ষেত্রে তাদের পছন্দের শীর্ষে থাকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জন্য ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেলের জন্য মেডিকেল কলেজ। পরীক্ষার সর্বোচ্চ সাফল্য জিপিএ-৫ যারা পান এবং জিপিএ-৪ থেকে ৪.৯৯ যেসব শিক্ষার্থী অর্জন করেন তাদেরও টার্গেট থাকে বিশ্ববিদ্যালয়-মেডিকেল কলেজে ভর্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার। ২০২১ সালের এইচএসসি, আলিম ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী, এবার শুধু জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৮৯ হাজার ১৬৯ জন শিক্ষার্থী, ৪ থেকে ৪.৯৯ এর মধ্যে রয়েছে আরও ৬ লাখ ১৯ হাজার ৯৪৪ জন শিক্ষার্থী। অথচ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে আসন রয়েছে মাত্র ৬১ হাজার। ফলে ভর্তি যুদ্ধের অপেক্ষায় থাকা শিক্ষার্থীদের মধ্যে জিপিএ-৫ পাওয়া দুই-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থীই পাবেন না এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ। তবে সার্বিকভাবে উচ্চশিক্ষায় আসন সঙ্কট নেই বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এদিকে ফলাফল ঘোষণা করা হলেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষা কোন সিলেবাসে হবে সে বিষয়ে এখনো দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেন পরীক্ষার্থীরা। সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে এইচএসসি, আলিম ও সমমানের পরীক্ষা হওয়ায় সেই সিলেবাসেই ভর্তি পরীক্ষা হওয়া যৌক্তিক বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভিসিরা বলছেন যখন তারা সভায় বসবেন তখন সিদ্ধান্ত হবে কোন সিলেবাসে পরীক্ষা হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সূত্র জানায়, দেশে একাডেমিক কার্যক্রমে থাকা ৩৯টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন রয়েছে ৫০ হাজার ৩৯৬টি, সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে আছে আরও ১০ হাজার ৫০০টির মতো। সর্বশেষ প্রকাশিত এইচএসসি, আলিম ও সমমানের পরীক্ষায় যারা ভালো ফল করেছেন তাদের টার্গেট থাকবে মূলত এসব আসনে ভর্তির। এগুলোর মধ্যে আবার সবচেয়ে বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও মেডিকেল কলেজগুলোতে। আর এসব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আগামী শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬ হাজার ৮৫, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ হাজার ৯২৬, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ হাজার ৬৯৩, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ হাজার ১৩৩, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ হাজার ৭৫৬ এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ২১৫টি আসন রয়েছে।

তবে পরীক্ষায় যেসংখ্যক পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছেন উচ্চশিক্ষায় ভর্তিতে তাদের আসন সঙ্কট হবে না বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বরং কিছু সংখ্যক আসন খালি থাকবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা যায়, ১০৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শিক্ষা কার্যক্রম চালু থাকা ১০০টিতে আসন প্রায় ২ লাখ ৫ হাজার, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজে ৮ লাখ ৭২ হাজার ৮১৫, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত মাদরাসায় ৬০ হাজার, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজে ৭৭ হাজার ৭৫৬, দুটি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৪০, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ৭ কলেজে ২৩ হাজার ৩৩০, ৪টি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ৭২০, ছয়টি টেক্সটাইল কলেজে ৭২০, সরকারি-বেসরকারি নার্সিং ও মিডওয়াইফারি প্রতিষ্ঠানে ৫ হাজার ৬০০, ১৪টি মেরিন অ্যান্ড এরোনটিক্যাল কলেজে ৬৫৪, ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানে ২৯০টি আসন রয়েছে।

সবমিলিয়ে উচ্চশিক্ষায় সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অনার্স, অনার্স (পাস) ও সমমান কোর্সে ১৩ লাখ ১৭ হাজারের মতো আসন রয়েছে। আর ২০২১ সালের এইচএসসি, আলিম ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন ১৩ লাখ ৬ হাজার ৭১৮ জন। যদিও উত্তীর্ণ সকল শিক্ষার্থীই উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হবেন না বলে বিগত বছরগুলোর পরিসংখ্যান তুলে ধরে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

ইউজিসির সদস্য প্রফেসর মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, চলতি বছর উচ্চশিক্ষায় আসনের ক্ষেত্রে কোনো সংকট হবে না। তবে মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং পছন্দের কোর্সের ক্ষেত্রে সংকটে পড়তে হবে। আমাদের উচ্চশিক্ষার ৭০ শতাংশ আসনই অধিভুক্ত কলেজে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ না পেয়ে সেখানে শিক্ষার্থী ভর্তি হয়।
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, উচ্চশিক্ষায় ভর্তিতে আসন সঙ্কট নেই। তবে সকলকেই যে অনার্স-মাস্টার্স করতে হবে এর কোন যৌক্তিকতা নেই। তিনি বলেন, অনেকেই হয়তো আর সামনে পড়াশুনা করবেন না। আবার অনেকেই কারিগরি শিক্ষাসহ নানা দিকে চলে যাবে।

শিক্ষার্থীরা যখন উচ্চশিক্ষায় ভর্তি যুদ্ধে নামতে প্রস্তুতি নিচ্ছে তখন তারা জানেই না যে কোন সিলেবাসে পরীক্ষা হবে। করোনার কারণে এবার সংশোধিত ও পুনর্বিন্যাসকৃত সিলেবাসে গ্রুপভিত্তিক ৩টি নৈর্বাচনিক বিষয়ে ৬টি পত্রে পরীক্ষা হয়েছে। এর মধ্যে বাংলা ও ইংরেজির মতো বিষয়ে পরীক্ষার পরিবর্তে এসএসসি, দাখিল ও সমমান এবং জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে এইচএসসি, আলিম ও সমমানের পরীক্ষার ফল নির্ধারণ করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষাতেও এই দুটি বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। এছাড়া যেসব বিষয়ে পরীক্ষা হয়েছে সেগুলোও সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে। ফলে ভর্তি পরীক্ষায় সেই সিলেবাসে প্রশ্ন হবে নাকি বিগত বছরগুলোর মতো সম্পূর্ণ সিলেবাসে পরীক্ষা হবে সেটি নিয়ে এখনো দ্বিধাদ্বন্দ্বে পরীক্ষার্থীরা। ভর্তিচ্ছু একাধিক শিক্ষার্থী অবশ্য দাবি জানিয়েছেন, তারা যে সিলেবাসে পরীক্ষা দিয়েছেন সেই সিলেবাসেই ভর্তি পরীক্ষা হলে সুবিধা হবে।

একই কথা বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনিও। তিনি বলেন, সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিয়েছেন সেই সিলেবাসেই ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ করা যৌক্তিক হবে। মন্ত্রী বলেন, কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির সাথে তিনি কথা বলেছেন এবং তারা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা নেয়ার কথা জানিয়েছেন। এছাড়া স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেও সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা নেয়ার অনুরোধ জানাবেন বলে মন্ত্রী বলেন।
সংক্ষিপ্ত সিলেবাসেও মানসম্মত প্রশ্ন করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ও কম্পিউটার বিজ্ঞানী ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ। তিনি বলেন, সংক্ষিপ্ত সিলেবাস হলেই এমন নয় যে ওই সিলেবাসে পরীক্ষা নেয়া যাবে না। বরং সংক্ষিপ্ত সিলেবাসেও মানসম্মত প্রশ্ন করা যায়।

বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মুনাজ আহমেদ নূর বলেন, সংক্ষিপ্ত হোক কিংবা সম্পূর্ণ সিলেবাসেই পরীক্ষা হোক সেটি সবার জন্যই একই হবে। তবে যে বিষয়ে তারা পড়েনি সে বিষয়ে ভর্তি পরীক্ষা নিতে গেলে তাদের ওপর বাড়তি আর্থিক চাপ পড়বে। তারা কোচিংয়ের দিকে ঝুঁকবে। আবার যদি যেটার উপর তারা পরীক্ষা দিয়েছে সেই সিলেবাসে প্রশ্ন করা হয় তাহলে আর্থিক ও মানসিক দুই চাপই কমে যাবে। তবে প্রশ্ন কেমন হবে এ বিষয়ে তিনি বলেন, এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ভর্তির বিষয়ে ভিসিদের যে সংগঠন আছে সেটির সভায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলে জানান বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ