পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে ’আমি প্রবাসী অ্যাপস ’নিয়ে চলছে তুঘলকি কাণ্ড। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীর নিকট আত্মীয় নামিরা আহমাদের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পাওয়ায় মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সচেতন কর্মকর্তারা পড়েছেন বেকায়দায়। কেবিনেট ক্রয় কমিটির সুপারিশ নেয়ার উদ্যোগ না নিয়ে বিএমইটি কর্তৃপক্ষ আমি প্রবাসী লি. এর সাথে দ্বিতীয় দফা চুক্তি করতে মরিয়া হয়ে উঠছে। কার স্বার্থে তড়িঘড়ি দ্বিতীয় চুক্তি পাকাপোক্ত করা হচ্ছে তা নিয়ে খোদ প্রবাসী মন্ত্রণালয়ে নানা কানাঘুষা শুরু হয়েছে। এ ব্যাপারে যারা বিরোধিতা করেছেন তাদেরকে বিএমইটি থেকে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে। এর মধ্যে একজন এডিজি ও একজন ডিরেক্টরও রয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে প্রবাসী কর্মীদের সহজ তথ্যপ্রাপ্তির জন্য অ্যাপ কেনার সিদ্ধান্ত নেয় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। নাম ‘আমি প্রবাসী’। থ্যান সিস্টেম নামের একটি কোম্পানি অ্যাপটি সরবরাহ করে। এজন্য মন্ত্রণালয়ের খরচ হয় ২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। গত বছর ৮ মে ভার্চুয়াল মাধ্যমে এটি উদ্বোধন করেন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমদ। প্রবাসীমন্ত্রীর কথিত ভাতিজা নামির আহমাদ উক্ত কোম্পানির অংশিদার বলে জানা গেছে। প্রবাসী মন্ত্রীর প্রভাব খাটিয়ে আমি প্রবাসী অ্যাপ মন্ত্রণালয়ের সাথে প্রথম চুক্তির সুযোগ হয়েছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। সরকারি অ্যাপের নাম এবং লোগো দিয়ে ইতোমধ্যেই খোলা হয়েছে লিমিটেড কোম্পানি। ইতোমধ্যে সাড়ে ১১ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রভাবশালী চক্রটি।
মন্ত্রী সম্পর্কে ফুপা হওয়ায় মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের অনেকেই মুখ খুলতে নারাজ। ভেতরে ভেতরে ক্ষোভ প্রকাশ করলেও নথিতে আপত্তি জানাতে পারছেন না তারা। এ সুবাদে মন্ত্রীর কথিত আত্মীয় নামির আহমাদ জবরদখলের এই বাণিজ্যে আরো এক ধাপ এগিয়ে যেতে জোর লবিং চালাচ্ছেন। প্রথমে সমঝোতা স্মারক করলেও এবার একেবারে দ্বিতীয় চুক্তির সব বন্দোবস্ত চূড়ান্ত প্রায়। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে প্রবাসী মন্ত্রীর দফতরে প্রবাসী সচিব ড. আহমদ মুনিরুছ সালেহীনের সাথে আমি প্রবাসী অ্যাপের সাথে দ্বিতীয় চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়টি দ্রুত সম্পন্ন করতে দীর্ঘ বৈঠকে মিলিত হন ভাতিজা নামিরা আহমাদ। তবে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে তা’ জানা যায়নি। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সরবরাহকৃত আমি প্রবাসী অ্যাপের ব্যাপারে প্রবাসীমন্ত্রী ও সচিবের বক্তব্য নেয়ার জন্য গতকাল সরেজমিনে প্রবাসী মন্ত্রণালয়ে গেলে মন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান ইনকিলাবকে বলেন, মন্ত্রীর সাথে দেখার কোনো সুযোগ নেই। স্যার আজ খুবই ব্যস্ত।
প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের সচেতন কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলছেন, চুক্তি হয়ে গেলে ভবিষ্যতে সবাইকে দুদকের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। এক্ষেত্রে কেউই দায় এড়াতে পারবেন না। প্রবাসীমন্ত্রীর নিকট আত্মীয় নামিরের কাছ থেকে নিয়ম নীতি তোয়াক্কা না করে আমি প্রবাসী লিমিটেডের প্রস্তাবিত আরো ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস প্রদানে দ্বিতীয় চুক্তি করার লক্ষ্যে গত ১ ফেব্রুয়ারি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্ত বিভাগের সিনিয়র সচিবের কাছে মতামত চেয়ে চিঠি দেয়া হয়েছেÑ এমন প্রশ্নের জবাবে গতকাল প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. সারওয়ার আলম তার দফতরে ইনকিলাবকে বলেন, আসলে বিএমইটির ডিজিই নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিদেশগামীদের সুবিধার্থে আধুনিক অ্যাপ স্থাপনের উদ্যোগ নিতে পারেন। তিনি বলেন, কেউ যদি জেগে থেকে ঘুমের ভান ধরে থাকেন তাহলে যা হবার তাই হবেই।
প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলছে, এভাবে একটি বেসরকারি কোম্পানিকে ব্যবসার সুযোগ করে দেয়া অনৈতিক এবং দুর্নীতির শামিল। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার কারণে লাখো প্রবাসী ইতোমধ্যে অ্যাপের দিকে ঝুঁকছে। ১১ লাখের বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশী নিবন্ধন করেছেন এই অ্যাপে। ফলে প্রবাসীদের বিশাল তথ্যভাণ্ডারের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়া এবং বাণিজ্যিক ব্যবহারেরও আশঙ্কা রয়েছে। সূত্র বলছে, এই অ্যাপে ভ্যাকসিনের নিবন্ধন করতে গিয়ে জটিলতার মুখে পড়েছেন হাজারো প্রবাসী। নিবন্ধন সম্পন্ন না হলেও টাকা কেটে নেয়া হয়েছে অনেকের। আবার এক জায়গায় নিবন্ধন পেন্ডিং থাকায় সুরক্ষা অ্যাপেও নিবন্ধন করা যাচ্ছে না। ফলে অপেক্ষমাণ অনেকের ভিসার মেয়াদ ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। দিনদিন ভুক্তভোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
আমি প্রবাসী অ্যাপসের প্রথম চুক্তিতে স্বচ্ছতা নেই, দ্বিতীয় চুক্তির জন্য বিএমইটি মরিয়া এবং ওপেন টেন্ডর করছেন না কেন এমন প্রশ্নের জবাবে বিএমইটির ডিজি শহীদুল আলম গতকাল বলেন, আমি প্রবাসী লি. অ্যাপস নিয়ে আমার বলার মতো পরিস্থিতি এখনো হয়নি। এছাড়া উচ্চ পদোন্নতির লোভে কেউ কেউ আমি প্রবাসী লি. অ্যাপের সাথে দ্বিতীয় চুক্তি সম্পাদনে তড়িঘড়ি করছেন বলেও শোনা যাচ্ছে।
মন্ত্রীর ভাতিজা নামির আহমাদ গতকাল মঙ্গলবার রাতে ইনকিলাবের সাথে আলাপকালে দাবি করেন, ‘অ্যাপ প্রবাসী অ্যাপস ডেভেলপ থেকে শুরু করে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমঝোতা বা চুক্তির ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম হয়নি। প্রতিটি পদক্ষেপ সম্পাদিত হয়েছে আইনকানুন মেনে। আমি ঐ কোম্পানির সাথে ২০১৬ সাল থেকে জড়িত রয়েছি। তিনি বলেন, আমি প্রবাসী অ্যাপস চালু হওয়ায় বিএমইটির ডেমো অফিসগুলোতে বিদেশগামী কর্মীরা নিবন্ধন করতে যাচ্ছে না। ডেমো অফিসের কর্মকর্তারা একজন বিদেশগামী কর্মীর নিবন্ধন করতে এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন। নামির আহমাদ বলেন, মালয়েশিয়ার সিন্ডিকেট চক্র আমি প্রবাসী অ্যাপস নিয়ে অপপ্রচারে লিপ্ত। প্রবাসীমন্ত্রী সম্পর্কে তার ফুপা হলেও এ সম্পর্কের খাতিরে মন্ত্রণালয় থেকে কোনো অবৈধ সুবিধা নেননি বলে তিনি দাবি করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।