Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গদখালি যেন একখণ্ড নেদারল্যান্ড

শীতপ্রধান দেশের ফুল টিউলিপ চাষ : নতুন স্বপ্ন দেখছেন চাষিরা

শাহেদ রহমান, যশোর থেকে | প্রকাশের সময় : ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০৩ এএম

যশোরের ঝিকরগাছায় ফুলের রাজ্যে সফলভাবে চাষ হচ্ছে শীতপ্রধান দেশের ফুল টিউলিপ। ফুলচাষি ইসমাইল হোসেনের বাগানে ফুটেছে লাল, হলুদসহ চার রঙের টিউলিপ ফুল। প্রথমবারের মতো এই ফুল ফুটায় দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন তার বাগানে। এতে করে এই অঞ্চলের ফুলের অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বলেছেন কৃষি বিভাগ। উন্নত জাতের এ ফুল চাষে সরকারি সহায়তা পেলে বাণিজ্যিকভাবে ব্যাপকহারে এর চাষ সম্ভব।
গদখালি থেকে সারাদেশের চাহিদার ৭০ শতাংশ ফুল সরবরাহ হয়। নতুন জাত ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষকরা উন্নতমানের ফুল উৎপাদন করছে। সর্বশেষ চলতি বছরে পানিসারা গ্রামের ইসমাইল হোসেনের কৃষি খামারে দোল খাচ্ছে শীতপ্রধান দেশের নজরকাড়া ফুল টিউলিপ। এর মাধ্যমে গদখালিতে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। কৃষকরা বলছে বসন্ত উৎসব ও ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে প্রতিবছরই গদখালির ফুল চাষিরা নতুন জাতের ফুল উপহার দিয়ে থাকেন। গোলাপ, জারবেরা, গাঁদা, গ্লাডিওলাস, লং স্টিক রোজের পর এবারের ভালোবাসা দিবসে ফুলপ্রেমীদের জন্য নতুন উপহার টিউলিপ।
ফুলচাষি ইসমাইল হোসেন জানান, এর আগে দেশের প্রথম বড় পরিসরে জারবেরা ফুল চাষ শুরু করেছিলেন তিনিই। এখন জারবেরা ফুল বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় চাষ হচ্ছে। প্রায় পাঁচ শতক জমিতে টিউলিপের পরীক্ষামূলক চাষ শুরু করি। বীজ রোপনের ১৮ দিন পরেই টিউলিপের ফুল ফোটেছে। সন্ধ্যা হলে বন্ধ আর সকাল হলেই মেলে যায় এই ফুল। বাংলাদেশের ফুলের বাজারে গোলাপসহ অন্যান্য ফুলের ভিড়ে ব্যাপকভাবে টিউলিপ ছড়িয়ে দিতে চান তিনি। তার বিশ্বাস, এদেশে টিউলিপের বড় বাজার তৈরি করা সম্ভব। বড় পরিসরে উৎপাদনে যাওয়াও সম্ভব। প্রথমে পরীক্ষামূলক চাষ করলেও এখন বাণিজ্যিকভাবে টিউলিপ চাষ করার চেষ্টা করছি। তবে এখানে টিউলিপ গাছের বাল্ব সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই। এছাড়া বিদেশ থেকে বাল্ব আনতেও উল্লেখযোগ্য অঙ্কের শুল্ক লাগে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ইসমাইলের পাঁচ শতক বাগানে টিউলিপ সারি সারি ফুটে রয়েছে। উপরে পলিথিন ও ছোট ছিদ্রযুক্ত নেট দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে সূর্যের আলো। নিচে মাটি বেডে সানরাইজ, অ্যান্টার্কটিকা হোয়াইট (সাদা), লা বেলা রেড (লাল), মিল্কশেক রেড (লাল) এই ৪টি প্রজাতির টিউলিপ ফুটেছে। ইউরোপের টিউলিপের সৌন্দর্য উপভোগ করতে বিভিন্ন স্থান থেকে সেখানে ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা।
যশোর সদর থেকে ফুলের রাজ্যে গদখালি ঘুরতে এসে অবাক মো. সালাউদ্দিন। প্রথমবারে সরাসরি টিউলিপ ফুল দেখে বিমোহিত তিনি। তিনি বলেন, আগে গুগল-ইউটিউবে এই ফুল দেখেছি। সরাসরি দেখতে পেরে খুব ভালো লাগছে। গদখালির ফুল চাষি মনজুর আলম জানান, টিউলিপ সাধারণত শীতপ্রধান অঞ্চলের ফুল। চাষে সাধারণত ৫ থেকে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের তাপমাত্রার প্রয়োজন হয়।
ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন পলাশ জানান, নতুন জাতের ফুল চাষের ইচ্ছা থেকেই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বৃহত্তর কুষ্টিয়া ও যশোর অঞ্চল কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নেদারল্যান্ডস থেকে সরকারি খরচে সাত প্রকারের পাঁচ হাজার বাল্ব আমদানি করা হয়। ওই বাল্ব ইসমাইল হোসেনের ৫ শতক জমিতে বপন করি। ৪ জাতের টিউলিপ ফুল ফুটতে শুরু করেছে। টিউলিপের প্রায় ১৫০টি জাত রয়েছে। তিনি আরো বলেন, একটা নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় টিউলিপ বাল্ব সংরক্ষণ করতে হয়। যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসারা গ্রামে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত ফুলের বীজ বিপণন, সংরক্ষণ, গ্রেডিং, প্যাকেজিং, কুলিং চেম্বার ও কোল্ড স্টোরেজের সুবিধাসহ চারতলা বিশিষ্ট আধুনিক ফুল মার্কেট নির্মাণ চলমান রয়েছে। এই জায়গায় টিউলিপ বাল্ব সংরক্ষণ করার মধ্যে দিয়ে এই অঞ্চলে ব্যাপকহারে বাণিজ্যিকভাবে টিউলিপ ফুল চাষের হাতছানি দিচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফুল টিউলিপ চাষ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ