পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনা মহামারীর কারণে ২০২০ সালে পরীক্ষা ছাড়াই ঘোষণা করা হয়েছিল এইচএসসি, আলিম ও সমমানের পরীক্ষার ফল। তবে সংক্রমণ কিছুটা কমে আসায় ২০২১ সালে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে তিনটি বিষয়ে পরীক্ষা গ্রহণ করা হয় গত ডিসেম্বরে। গ্রুপভিত্তিক তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ে অনুষ্ঠিত পরীক্ষা শেষ হওয়ার দেড় মাস পর গতকাল রোববার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। প্রকাশিত ফলাফলে ৯টি সাধারণ বোর্ড, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সার্বিক পাসের হার ৯৫ দশমিক ২৬ শতাংশ।
জিপিএ-৫ পাওয়ার দিক থেকেও আগের যে কোন বছরের ফলকে ছাড়িয়ে রেকর্ড সংখ্যক ১ লাখ ৮৯ হাজার ১৬৯ জন শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ এই ফলাফল অর্জন করেছে। অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে জিপিএ-৫ পাওয়ার হার ১৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ। এবার শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১ হাজার ৯৩৪টি এবং একজনও পাস করতে পারেনি এমন প্রতিষ্ঠান ৫টি।
পাসের হারে সবার শীর্ষে রয়েছে যশোর শিক্ষাবোর্ড। এই বোর্ডে পাসের গড় ৯৮ দশমিক ১১ শতাংশ। সবার নিচে চট্টগ্রাম বোর্ডে গড় ৮৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ। বরাবরের মতোই এবারও পাস এবং জিপিএ-৫ পাওয়ার দিক দিয়ে ছেলেদের চেয়ে এগিয়ে আছে মেয়েরাই। জিপিএ-৫ বেশি পেয়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে ৫৯ হাজার ২৩৩ জন।
গতকাল রোববার রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে ২০২১ সালের এইচএসসি, আলিম ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। এতে ফলাফলের সার্বিক দিক তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। এর আগে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করে আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীক, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান ছাড়াও বিভিন্ন বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষামন্ত্রী জানান, ২০২১ সালের সংশোধি ও পুনর্বিন্যাসকৃত সিলেবাসে গ্রুপভিত্তিক তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ে ৬টি পত্রে পরীক্ষা হয়। বাংলা, ইংরেজি, আইসিটিসহ অবশিষ্ট বিষয়সমূহের নম্বর এসএসসি,দাখিল ও সমমান এবং জেএসসি-জেডিসি থেকে সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে জেএসসি-জেডিসির ২৫ শতাংশ এবং এসএসসি, দাখিল ও সমমানের ৭৫ শতাংশ নম্বর বিবেচনায় নেয়া হয়েছে।
চতুর্থ বিষয়ের ক্ষেত্রে উচ্চতর গণিত হলে এসএসসি, দাখিল ও সমমানে উচ্চতর গণিত এবং জেএসসি-জেডিসিতে বিজ্ঞান ও গণিতে প্রাপ্ত গড় নম্বর। চতুর্থ বিষয় জীববিজ্ঞান হলে এসএসসি, দাখিল ও সমমানে জীববিজ্ঞান এবং জেএসসি-জেডিসিতে বিজ্ঞান ও গণিত বিষয়ে প্রাপ্ত গড় নম্বর সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পরামর্শক কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে সাবজেক্ট ম্যাপিং করে ফল প্রকাশ করা হয়।
প্রকাশিত ফলাফল থেকে জানা যায়, ২০২১ সালের এইচএসসি, আলিম ও সমমানের পরীক্ষায় মোট ১৩ লাখ ৭১ হাজার ৬৮১জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। যা গতবছর ছিল ১৩ লাখ ৬৭ হাজার ৩৭৭। এর মধ্যে পাস করেছে ১৩ লাখ ৬ হাজার ৭১৮ জন। সার্বিকভাবে এবার পাসের হার ৯৫ দশমিক ২৫ শতাংশ। যা ২০২০ সালে ছিল শতভাগ। এবার রেকর্ডসংখ্যক ১ লাখ ৮৯ হাজার ১৬৯ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। আগের বছর এটি ছিল ১ লাখ ৬১ হাজার ৮০৭ জন। অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে জিপিএ-৫ পাওয়ার হার ১৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ। একজন শিক্ষার্থীও পরীক্ষায় ফেল করেনি এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এবার ১ হাজার ৯৩৪টি এবং একজনও পাস করেনি এমন প্রতিষ্ঠান ৫টি।
সাধারণ শিক্ষা বোর্ড: ৯টি সাধারণ শিক্ষাবোর্ডের অধীনের এবার ১১ লাখ ১৫ হাজার ৭০৫জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছিল। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ১০ লাখ ৬৬ হাজার ২৪২জন। পাসের হার ৯৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৭৮ হাজার ৫২২ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জিপিএ-৫ পেয়েছে ঢাকা বোর্ডে ৫৯ হাজার ২৩৩ জন। অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীর তুলনায় জিপিএ-৫ প্রাপ্তির হার ১৬ শতাংশ। সাধারণ বোর্ডগুলোতে শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠান ৭৩৬টি এবং শূণ্য পাসের প্রতিষ্ঠান ৫টি।
মাদরাসা বোর্ড: মাদরাসা বোর্ডের অধীনে ২০২১ সালের আলিম পরীক্ষায় অংশগ্রহণকরে ১ লাখ ৬ হাজার ৫৭৯ জন পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে পাস করেছে ১ লাখ ১ হাজার ৭৬৮জন। পাসের হার ৯৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ হাজার ৮৭২জন। জিপিএ-৫ প্রাপ্তির হার ৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ। এই বোর্ডে সর্বোচ্চ সংখ্যক ১ হাজার ৩টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা শতভাগ পাস করেছে।
কারিগরি বোর্ড: এই বোর্ডে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৩৯৭ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৮ জন। পাসের হার ৯২ দশমিক ৮৫ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫ হাজার ৭৭৫ জন। জিপিএ-৫ প্রাপ্তির হার ৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এই বোর্ডে শতভাগ পাস করেছে ১৯৫টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী।
বিভাগভিত্তিক ফলাফল : ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের বিজ্ঞান ও গার্হস্থ্য অর্থনীতিতে পরীক্ষার্থী ছিল ২ লাখ ৫১ হাজার ৬৮ জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ২ লাখ ৩৬ হাজার ৩৯৪ জন। পাসের হার ৯৪ দশমিক ১৬ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার ২৩০ জন। মানবিক, ইসলামি শিক্ষা ও সঙ্গীত বিভাগে পরীক্ষার্থী ছিল ৬ লাখ ৪২ হাজার ৩১৪ জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৬ লাখ ২২ হাজার ৬৩১জন। পাসের হার ৯৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪১ হাজার ৩৭৩ জন। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পরীক্ষার্থী ছিল ২ লাখ ২২ হাজার ৩২৩ জন এবং উত্তীর্ণ হয়েছে ২ লাখ ৭ হাজার ২১৭ জন। পাসের হার ৯৩ দশমিক ২১ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৬ হাজার ৯১৯ জন।
ফলাফল ঘোষণা শেষে শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, যদি মূল্যবোধ তৈরি না হয় তাহলে শুধু বেশি নম্বর পেয়ে কি হবে, মানবিক গুণে গুণান্বিত হও, চারপাশে তাকাও, মানুষকে ভালোবাস। নীতি-নৈতিকতা নিয়ে বেড়ে ওঠো, স্বদেশ প্রেমে উজ্জীবিত হও, নিঃস্বার্থ চিত্তে মানব কল্যাণে নিবেদিত হওয়। অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, সন্তানকে অসুস্থ প্রতিযোগিতার দিকে ঠেলে দিবেন না, স্বার্থপর হিসেবে গড়ে তুলবেন না। দেশের কল্যাণে, মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত হওয়ার শিক্ষা যদি আপনার সন্তান না পায়, মনে রাখবেন এ শিক্ষা অর্থবহ হবে না, শিক্ষার আসল উদ্দেশ্যই বৃথা যাবে।
শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, যারা শিক্ষকতা পেশায় আছেন তাদের দ্বায়িত্বই অনেক বেশি। শিক্ষার গুণগত পরিবর্তনে বিষয়ভিত্তিক মানসম্পন্ন শিক্ষাদানে শিক্ষকদের ভূমিকায় প্রধান। মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন নাগরিক তৈরির ক্ষেত্রেও শিক্ষকদেরকেই অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।