Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পরিবেশের দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রিট জালিয়াতির অভিযোগ

মোটা অঙ্কের লেনদেন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০২ এএম

রিট পিটিশন নং-৪২০৭/২০২১। বরিশালের এ.এম.ফারুক বাদী হয়ে রিটটি ফাইল করেন। বিবাদী করা হয় ‘সরকার গং’ কে। ০৬/০২/২০২২ ইং তারিখ পর্যন্ত রিটের বিষয়ে কোনো আদেশ হয় নি। এ.এম.ফারুকের করা রিটের ঠিক এই নম্বরটিই জাল করেছেন পরিবেশ অধিদপ্তর,নারায়ণগঞ্জ’র উপ-পরিচালক মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন ও পরিদর্শক মো: হাবিবুর রহমান। রিটের নম্বরটি ব্যবহার করা হয়েছে পরিবেশ দূষণের দায়ে অভিযুক্ত জেলার সোনার গাঁ উপজেলার পরমেশ্বরদী গ্রামের ‘নিউ মীর পোল্ট্রি ফার্ম’র মালিক মোশাররফ হোসেনকে অবৈধ সুবিধা দিতে। যার বিপক্ষে এই জাল-জালিয়াতি করা হয়েছে, তিনি পরিবেশ দূষণের ভুক্তভোগী পোল্ট্রিফার্ম সংলগ্ন বাড়ির নিরীহ বাসিন্দা মো: ওসমান গনি মৃধা।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, তার ঘরের জানালা ও দেয়াল ঘেঁষে স্থাপন করা হয়েছে বিশাল ‘নিউ মীর পোল্ট্রি ফার্ম’। এই ফার্মের মুরগির বিষ্ঠার দুর্গন্ধে ঘরে টিকতে পারছেন না ওসমান গনি মৃধা। দমবন্ধ করা অবস্থায় তিনি কাটাচ্ছেন বছরের পর বছর। দুর্গন্ধে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন পরিবারের কয়েক সদস্য। পোল্ট্রির দুর্গন্ধের কারণে তার বাড়িতে কোনো আত্মীয়-স্বজন এখন আর বেড়াতে আসেন না। কয়েকবছর ধরে তিনি প্রায় একঘরে। পরিবেশগত ‘ছাড়পত্র’ ছাড়াই স্থানীয় প্রভাবশালী মো: মোশাররফ হোসেন গড়ে তুলেছেন এই পোল্ট্রি খামার।
ওসমান গনি মৃধা অভিযোগ করেন, পোল্ট্রি ফার্মের অনেক জায়গা থাকা সত্ত্বেও তাকে ভিটেছাড়া করার দুরভিসন্ধি থেকে বসতঘর ঘেঁষে পোল্ট্রি শেডটি স্থাপন করা হয়েছে। এ নিয়ে গ্রামে একাধিকবার সালিশ-দরবার হয়েছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা ! স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় মোশাররফ সালিশকে থোড়াই তোয়াক্কা করেন। পরে বাধ্য হয়ে তিনি ২০১৮ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি পরিবেশ অধিদফতরের নারায়ণগঞ্জ জেলা কার্যালয়ে অভিযোগ দেন। অভিযোগের প্রায় ৩ বছর পর গতবছর ১৬ জুন পরিদর্শক হাবিবুর রহমান পরমেশ্বর্দী (ছনকান্দা) ওসমান গনি মৃধার বাড়ি ও খামার পরিদর্শন করেন। এর ভিত্তিতে পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (নারায়ণগঞ্জ) মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন গতবছর ১৬ আগস্ট খামারটি ২ মাসের মধ্যে অন্যত্র স্থানান্তরে মোশাররফ হোসেনকে নির্দেশ (স্মারক নং-২২.০২.৬৭০০.১৪০.৬০.০০৭.২০২১-৩৪৩) দেন। কিন্তু ৬ মাস অতিক্রান্ত হলেও পোল্ট্রি খামারটি স্থানান্তর হয়নি। খামারের মালিকের বিরুদ্ধেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পরিবেশ অধিদফতর,নারায়ণগঞ্জ। উপায়ন্ত না পেয়ে ওসমান গনি মৃধা পরিবেশ অধিদফতর, নারায়ণগঞ্জ অফিসে ফোন করেন। ফার্মটি স্থানান্তরে ব্যবস্থা নিতে দুই কর্মকর্তার প্রতি বহুবার করুণ মিনতি জানান। এ জন্য ইন্সপেক্টর হাবিব তার সঙ্গে দুর্ব্যবহারও করেন। এক পর্যায়ে উপ-পরিচালক মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন ও পরিদর্শক হাবিবুর রহমান ওসমান গনিকে জানিয়ে দেন যে, ‘নিউ মীর পোল্ট্রি ফার্ম’র বিষয়ে তাদের কিছুই করার নেই। কারণ, পোল্ট্রি শেড সরিয়ে নিতে ২০২১ সালের ১৬ আগস্ট যে নোটিশ করা হয়েছে সেটির প্রেক্ষিতে মোশাররফ হোসেন হাইকোর্ট থেকে স্থগিতাদেশ এনেছেন। ওসমান গনি ‘স্থগিতাদেশ’র কপি চাইলে সেটি দেখাতে গড়িমসি করেন পরিবেশের দুই কর্মকর্তা। একপর্যায়ে আব্দুল্লাহ আল মামুনের দফতর থেকে ওসমান গনিকে একটি ‘ল’ইয়ার সার্টিফিকেট’ দেয়া হয়। সার্টিফিকেটটি অ্যাডভোকেট দেব দুলাল বড়াল স্বাক্ষরিত। ‘রিট পিটিশন নং-৪২০৭ অব ২০২১’র প্রেক্ষিতে দেয়া হয় এ সার্টিফিকেট। যদিও সার্টিফিকেটটির ভেতরে উল্লেখ রয়েছে ভিন্ন একটি নম্বর। বলা হয়, বাদী (মো: মোশাররফ হোসেন) একটি রিট (নং-৮৭৩৭ অব ২০২১) ফাইল করেছেন। মেমো নং-২২.০২.৬৭০০.১৪০.৬০.০০৭.২০২১-৩৪৩, তারিখ: ১৬/০৮/২০২১ এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। দায়েরকৃত রিটটি বিচারপতি এম.ইনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি মো: মোস্তাফিজুর রহমানের ডিডিভিশন বেঞ্চে দ্রুততম সময়ের মধ্যে শুনানি হবে।
এদিকে পরিবেশ কর্মকর্তাদের দেয়া এই সার্টিফিকেট ধরে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় তল্লাশি দেয়া হয়। তাতে দেখা যায়, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের সাধারণ ও সংস্থাপন শাখার সুপারিণটেনডেন্ট মো: আব্দুল লতিফ গত ৬ ফেব্রুয়ারি জানান, রিট পিটিশনটি (৪২০৭/২০২১) মহামান্য হাইকোর্টের ০৬/০২/২০২২ ইং তারিখ পর্যন্ত কোনো আদেশ হয়নি।
পরে রিটটির নকল তোলা হয়। তাতে দেখা যায়, এই নম্বরের (৪২০৭/২০২১) রিটটি দায়ের করেছেন ঢাকার ১২/১৭, শান্তিনগর বাজার রোডস্থ ‘ক্লাসিক বিল্ডার্স’র মালিক এসএম ফারুক। তিনি বাংলাদেশ রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব,সড়ক ও জনপথের রাজশাহী জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীকে বিবাদী করে রিটটি করেন। অ্যাডভোকেট দেব দুলাল বড়াল তার পক্ষে রিটটি ফাইল করেন। অর্থাৎ পরিবেশ অধিদফতরের দ্ইু কর্মকর্তা ওসমান গনি মৃধাকে এসএম ফারুকের করা রিটের নম্বর বসিয়ে আইনজীবীর সার্টিফিকেট সরবরাহ করেছেন। রিটের নম্বর জালিয়াতি করে তৈরি করা হয় আইনজীবীর এ সার্টিফিকেট। ভুয়া নম্বরের কথিত এই রিটের ভিত্তিতেই ওসমান গনি মৃধার সঙ্গে প্রতারণা করা হয়। তার আবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো হয়রানির মধ্যে ফেলা হয়।
এদিকে পরিবেশ অধিদফতরের একটি সূত্র জানায়, ‘নিউ মীর পোল্ট্রি ফার্ম’র মালিক মো: মোশাররফ হোসেন এবং পরিবেশ অধিদফতরের দুই কর্মকর্তার মধ্যে মোটা অঙ্কের ঘুষ লেনদেন হয়। এ কারণেরই তারা ফার্মটি সরিয়ে নেয়া কিংবা মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থাই নেননি। পরিবেশ অধিদফতর থেকে কোনো প্রতিকার না পেয়ে নিরীহ ওসমান গনি মৃধা এখন পরিবেশ অধিদফতর,স্থানীয় প্রশাসন এবং হাইকোর্টের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুনের বক্তব্য নিতে ফোন করা হয়। কিন্তু তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে পরিদর্শক মো: হাবিবুর রহমান ফার্মের মালিক মোশাররফ হোসেনের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেন, ৪/৫শ’ মুরগীর একটি ফার্ম। এখানে মোটা অঙ্কের লেনদেন হবে কোত্থেকে ! এ বিষয়ে স্যার (মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ-আল মামুন) ব্রিফ করবেন। ওয়ার্কিং আওয়ারে স্যারকে ফোন করুন।
সার্টিফিকেটের বিষয়ে অ্যাডভোকেট দেব দুলাল বড়াল এ প্রতিবেদককে বলেন, আমি একটি সার্টিফিকেট দিয়েছি। পরিবেশ অধিদফতর কোনটি আপনাকে দিয়েছে এ মুহূর্তে আমি ঠিক বলতে পারবো না। সার্টিফিকেটের ভেতরেও একটি নম্বর রয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ