পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের একজন বোরকা-পরা কলেজ ছাত্রী প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে উঠেছেন। শত শত কট্টর হিন্দুত্ববাদীর সামনে ‘আল্লাহু আকবর’ সেøাগান দিয়ে আলোচিত ও প্রশংসিত হয়েছেন তিনি। হিজাব নিষিদ্ধের এই প্রতিবাদ এখন ছড়িয়ে পড়েছে পুরো ভারতজুড়ে।
অ্যাক্টিভিস্টরা বলছেন, হিজাব নিষিদ্ধের ঘটনা ভারতে একটি বিস্তৃত প্রবণতার আরেকটি উদাহরণ। যেখানে প্রায় আট বছর আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিম জনসংখ্যার ওপর দমন-পীড়ন শুরু হয়েছে। তাদের মতে, মুসলিম মহিলাদের হিজাব পরার পছন্দ অস্বীকার করে, সরকার তাদের ভারতীয় সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতাকে অস্বীকার করছে। ‘এটি ভারতীয় সংস্কৃতিকে একত্রিত করার জন্য, এটিকে শুধুমাত্র হিন্দু-রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য বিজেপির একটি ব্যাপক প্রচেষ্টা,’ বলেছেন ২৩ বছর বয়সী মুসলিম কর্মী আফরিন ফাতিমা, যিনি তার নিজ শহর এলাহাবাদে ছাত্রদের সমর্থনে বিক্ষোভ করছেন। তিনি বলেন, ‘ভারতে মুসলিম নারীরা বিচ্ছিন্ন এবং পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে।’
কর্ণাটকের অন্যান্য সরকারি-চালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিজাব পরা শিক্ষার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করার পরে একটি ছোট প্রতিবাদ হিসাবে যা শুরু হয়েছিল তা এখন জাতীয় শিরোনাম হচ্ছে। এরপর থেকে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে অন্যান্য শহরেও। নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে প্ল্যাকার্ড ধারণ করে এবং সেøাগান দিয়ে এই মাসে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে হাজার হাজার শিক্ষার্থী রাস্তায় নেমেছিল। রয়টার্স জানিয়েছে, কলকাতা ও হায়দ্রাবাদে আরও শত শত শিক্ষার্থী বিক্ষোভ করেছে। কর্ণাটকের শিক্ষামন্ত্রী বি. সি. নাগেশ বলেন যে, তিনি ধর্মীয় পোশাকের ওপর রাষ্ট্রের আদেশের উল্লেখ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিজাব নিষিদ্ধ করাকে সমর্থন করেন। তিনি বলেন, ‘সরকার এ বিষয়ে দৃঢ় যে, স্কুল ধর্ম পালনের একটি প্ল্যাটফর্ম নয়।’
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, সমস্যাটি স্কুলের পোষাক কোডের চেয়ে গভীরে চলে। কর্ণাটক একটি বিজেপি শাসিত রাজ্য যেখানে জনসংখ্যার মাত্র ১৩ শতাংশ মুসলিম। আইনজীবী মোহাম্মদ তাহিরের মতে, কর্ণাটক হল হিন্দুত্ব মতাদর্শের একটি ‘হটবেড’ যা অনেক ডানপন্থী গোষ্ঠী দ্বারা সমর্থিত, যা ভারতকে হিন্দুদের ভ‚মিতে পরিণত করতে চায়। তিনি আদালতে আবেদনকারীদের একটি দলের প্রতিনিধিত্ব করছেন। কর্ণাটক হিন্দুদের কাছে পবিত্র বলে বিবেচিত গরু বিক্রি ও জবাই নিষিদ্ধ করেছে। এটি একটি বিতর্কিত ধর্মান্তর বিরোধী বিলও প্রবর্তন করেছে, যা আন্তঃধর্মীয় দম্পতিদের বিয়ে করা বা লোকেদের ইসলাম বা খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত করা আরো কঠিন করে তোলে।
আইনজীবী তাহিরের মতে, আগামী বছরের গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য নির্বাচনের আগে রাজ্যে ধর্মীয় উত্তেজনা বাড়বে। ‘এসব বিষয় (হিজাব নিষিদ্ধের মতো) ভোটের জন্য সমগ্র সম্প্রদায়কে মেরুকরণ করা খুব সহজ,’ তিনি বলেন। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে, ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রের জন্য ভারতীয় মুসলিমরা বলেছে যে, তারা ‘রাজ্যের ইতোমধ্যেই উত্তপ্ত সাম্প্রদায়িক আগুনে কলেজ এবং স্কুল ক্যাম্পাসগুলোকে গ্রাস করার জন্য হিন্দুত্ববাদী শক্তি এবং কর্ণাটকের বিজেপি সরকারের প্রচেষ্টার তীব্র নিন্দা করে।’ ‘কলেজ ক্যাম্পাসগুলো এভাবে বিজেপি এবং অন্যান্য ডানপন্থী হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠদের জন্য আরেকটি খেলার মাঠে রূপান্তরিত হয়েছে,’ বিবৃতিতে বলা হয়েছে। সিএনএন রাজ্য কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু কোনো সাড়া পায়নি।
হিজাব বিতর্ক ভারতে মুসলিম মহিলাদের বিরুদ্ধে অনলাইন আক্রমণের একটি ধারা অনুসরণ করে। জানুয়ারির গোড়ার দিকে, ভারত সরকার একটি ওয়েবসাইট তদন্ত করছিল যেটি মুসলিম মহিলাদের বিক্রির প্রস্তাব দেয়। এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো এ ধরনের একটি জাল অনলাইন নিলাম দেশে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। ‘তারা অনলাইনে আমাদের জন্য এসেছিল,’ ফাতিমা বলেছেন, যাকে অনলাইন অ্যাপে প্রদর্শিত হয়েছিল। ‘এখন, তারা সরাসরি আমাদের ধর্মীয় অনুশীলনকে টার্গেট করছে। এটি একটি কলেজে শুরু হয়েছিল, এবং বেড়েছে। আমার বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই যে, এটি সেখানে শেষ হবে।’
মঙ্গলবার, নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী মালালা ইউসুফজাই, হিজাব নিষিদ্ধের ঘটনাকে ‘ভয়াবহ’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি টুইটারে লিখেছেন, ‘মহিলাদের প্রতি আপত্তি রয়ে গেছে, কম বা বেশি পোশাক পরার জন্য। ভারতীয় নেতাদের অবশ্যই মুসলিম নারীদের প্রান্তিককরণ বন্ধ করতে হবে।’ স্টুডেন্টস ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ার সর্বভারতীয় সভাপতি ভি পি সানু হিজাব নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করে বলেছেন যে, এটি ‘মুসলিম মহিলাদের শিক্ষার অধিকার অস্বীকার করার কারণ হিসাবে’ ব্যবহার করা হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার উত্তরপ্রদেশে একটি বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী মোদি মুসলিম মহিলাদের কথা সংক্ষিপ্তভাবে উল্লেখ করেন যখন সেই রাজ্য স্থানীয় নির্বাচনে ভোট দেয়া শুরু করেছিল। তিনি বলেন, তার সরকার ‘প্রতিটি নির্যাতিতা মুসলিম নারীর পাশে দাঁড়িয়েছে।’ তিনি হিজাব নিষেধাজ্ঞার কথা উল্লেখ করেননি, তবে বলেন যে, সরকার তিন তালাকের বিতর্কিত মুসলিম অনুশীলন বাতিল করে মুসলিম মহিলাদের ‘স্বাধীনতা’ দিয়েছে, যা একজন মুসলিম পুরুষকে তালাকের আরবি শব্দ তিনবার ‘তালাক’ বলে তার স্ত্রীকে তালাক দেয়ার অনুমতি দেয়। ভারত সরকার ২০১৯ সালে বিষয়টিকে নিষিদ্ধ করেছে।
‘আমি আল্লাহু আকবর বলেছিলাম কারণ আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম। এবং যখন আমি ভয় পাই, আমি আল্লাহর নাম নিই’। কথাগুলো বলেন কর্নাটকের মান্ডা জেলার একটি প্রি-ইউনিভার্সিটি কলেজের বি.কম দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী মুসকান খান। তিনি বলেন, আমি এখানে হিন্দু বা মুসলিম কোন জাতপাত ছড়াচ্ছি না। আমি শুধু আমার শিক্ষার জন্য, আমার অধিকারের জন্য দাঁড়িয়েছি। আমরা হিজাব পরছি বলে আমাদের ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। আমরা বছরের পর বছর ধরে এটি পরছি। এটি নতুন কিছু নয়। আমাদের শুধু হিজাব পরার অনুমতি দরকার। আমাদের শুধু দরকার শিক্ষা। আমাদের প্রিন্সিপাল আমাদের সঙ্গে আছেন, শিক্ষকরা আমাদের সাথে আছেন। বাইরে থেকে এসে কিছু লোক কেবল নজর কাড়ার চেষ্টা করছে। আর সংবিধানের প্রতি আমাদের আস্থা আছে। হাইকোর্ট থেকে নেতিবাচক কিছুই আসবে না। গত বুধবার বিবিসি হিন্দি সার্ভিসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মুসকান খান এসব কথা বলেছে।
কর্নাটকে হিজাব বিতর্কের মাঝে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হয়েছেন ভারতের প্রখ্যাত গীতিকার জাভেদ আখতার। কর্ণাটকে ঘটে যাওয়া ঘটনার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি একরাশ বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। এর আগে কমল হাসান হিজাব বিতর্কের তীব্র নিন্দা করেছেন। এবার হিজাব বিতর্ক নিয়ে নিজের বিরক্ত সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন জাভেদ আখতার। তিনি লিখেছেন, ‘আমি কখনই হিজাব বা বোরখার পক্ষে ছিলাম না। আমি এখনও এ নীতির পাশে আছি। তবে ছোট ছোট মেয়েদের ভয় দেখানো হচ্ছে। পড়াশুনার পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে। এই কট্টরপন্থীদের জন্য আমার অবজ্ঞা ছাড়া আর কিছুই নেই। এটা কি তাদের ‘মানুষত্বে’র ধারণা”।
মুসকান খানের হাতে জমিয়তে ওলামার ৫ লাখ টাকা
সাহসী পদক্ষেপের জন্য গত বুধবার সন্ধ্যায় সাইয়েদ মাহমুদ আসআদ মাদানীর পুরস্কারের পাঁচ লাখ রুপি মুসকান খানের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে বলে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ সূত্রে জানা গেছে। জমিয়ত উলামা কর্ণাটকের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা শামসুদ্দিন কাসমী সূত্রে জানা গেছে, মাওলানা সাইয়েদ মাহমুদ আসআদ মাদানীর নির্দেশে মাওলানা মুফতি ইফতিখার আহমদ কাসেমীর একটি প্রতিনিধি দল জমিয়ত উলামায়ে হিন্দ ঘোষিত ৫ লাখ টাকার চেক মুসকানের কাছে হস্তান্তর করেছেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জমিয়ত উলেমা কর্ণাটকের নেতৃস্থানীয় ওলামায়ে কেরাম।
গত মাসে উদুপি জেলার সরকারি বালিকা পিইউ কলেজে ছয়জন মুসলিম ছাত্রীকে হিজাব পরার কারণে শ্রেণিকক্ষের বাইরে বসতে বাধ্য করা হয়। সেই সময় কলেজ প্রশাসন জানায়, ইউনিফর্মের অংশ নয় হিজাব এবং ওই ছাত্রীরা কলেজের নিয়ম লঙ্ঘন করেছে।
ছাত্রীদের ক্লাসে হিজাব পরার বিষয়ে আপত্তি জানায় স্থানীয় ডানপন্থী বিভিন্ন গোষ্ঠী। পরে এই রাজ্যের অন্যান্য এলাকাতেও হিজাব পরার বিরুদ্ধে গেরুয়া ওড়না পরে অনেক শিক্ষার্থী অবস্থান নিয়ে আন্দোলন শুরু করে। তারা কলেজে হিজাব নিষিদ্ধের দাবি তোলে এবং হিজাববিরোধী বিভিন্ন ধরনের সেøাগান দেয়। সূত্র : সিএনএন, বিবিসি হিন্দি সার্ভিস, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।