Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘গুম-খুন বন্ধে রাজনীতির স্বাভাবিক গতিধারা ফিরিয়ে আনতে হবে’

সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজের ওয়েবিনার

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০১ এএম

বাংলাদেশে ভয়াবহ গুম-খুনের চিত্র তুলে ধরে গুম-খুনের ঘটনা বন্ধে রাজনীতির স্বাভাবিক গতিধারা ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন বিশিষ্টজনরা। পাশাপাশি তারা অতীতে ঘটে যাওয়া প্রতিটি গুমের ঘটনার স্বচ্ছ তদন্ত করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনাও জরুরি বলে মন্তব্য করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘জোরপূর্বক নিখোঁজ এবং রাষ্ট্রের দায়’ শীর্ষক ওয়েবিনারে বক্তারা এ মত দেন। সিজিএস এর নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় এতে সভাপতিত্ব করেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী।

সুপ্রিম কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, বিচারবহির্ভ‚ত হত্যার পেছনে জড়িত যারা বেঁচে আছে আজ না হোক ৩০ বছর পর তাদের বিচার হবে। ল্যাটিন আমেরিকার ৭০ দশকের মানবাধিকার লংঘনের ঘটনাগুলোর বিচার হচ্ছে। বাংলাদেশেও এগুলোর বিচার হবে। কতগুলো জিনিসের বিচার না হলে সমাজ টিকে থাকতে পারে না। আজ হোক ১০ বছর পরে হোক, যারা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছেন, তারা হুকুমের আসামি বলে কাঠগড়ায় দাঁড় হবেন। এত বড় অন্যায় করে যারা, গুমের মতো বড় অপরাধ করে বুক ফুলিয়ে আছেন, এই সমাজকে টিকে থাকতে হলে- এদের বিচার হতেই হবে। আমরা লিবিয়া হবে, সিরিয়া হবে এটা চাই না।

আইন সালিশ কেন্দ্রের (আসক) মহাসচিব ন‚র খান লিটন বলেন, সংক্ষিপ্ত পথে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ, সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জন, বিরোধী মত দমন- এই তিন উদ্দেশ্যে গুম-খুনসহ বিচারবহির্ভ‚ত হত্যাকান্ড ঘটে থাকে। রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব হচ্ছে দায় না এড়িয়ে ঘটনাগুলো স্পষ্ট করা। এই ধরনের অপরাধ কারা করেছে সেটাও স্পষ্ট করা দরকার। তিনি আরও বলেন, দেশে জবাবদিহিতার সংস্কৃতি নেই কারণ ক্ষমতায় আসতে কারও সমর্থন দরকার হয় না। সেক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করা হয়। এসব ঘটনার জন্য পুরো বাহিনীকে দোষারোপ করছি না। কিন্তু অনেকের নাম চলে আসবে। যারা ফিরে এসেছেন, তাদের বর্ণনা আমরা শুনেছি। তারা যে বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে রাষ্ট্রও চলতে পারে না। একমুহ‚র্তও চলার সুযোগ নেই। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা) এর নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান গুম-খুনের পেছনে নাগরিক সমাজের যথাযথ ভ‚মিকা না রাখার কারণকে দায়ী করে বলেন, নাগরিকরা আওয়ামী লীগ এবং বিএনপিতে বিভক্ত হয়ে গেছে। দমনমূলক আইন দিয়ে তাদের থামিয়ে দেয়া হচ্ছে। এর প্রতিকার হিসেবে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। আমাদের দল বা ব্যক্তির ক্ষেত্রে না দাঁড়িয়ে সিস্টেম চেঞ্জের কথা বলতে হবে। আমরা সবসময় সেনা শাসনের বিরুদ্ধে কথা বলি। কিন্তু এর বাইরে আমরা যেতে পারিনি। অর্থ ও রাজনীতি ভিন্ন জিনিস। দুটোকে ভিন্ন করতে যে সিস্টেম দরকার, সেটি করতে হবে।

আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট অসীম কুমার উকিল এমপি বলেন, দেশে গুম-খুনের ঘটনাগুলো অস্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় চলে এসেছে। কোনো ক্ষেত্রেই এসব ঘটনা কাক্সিক্ষত হতে পারে না। রাজনীতির স্বাভাবিক গতিধারা ব্যাহত হলে অস্বাভাবিক প্রক্রিয়া চালু হয়। যার ধারাবাহিকতায় এগুলো হচ্ছে। গণতন্ত্রের ধারাগুলো যত বেশি শক্তিশালী হবে, রাজনীতির স্বাভাবিক প্রক্রিয়া সহজ হবে। গুম, খুন কমে আসবে। তিনি আরও বলেন, গণতন্ত্রের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতার পালাবদল হলো নির্বাচন। নির্বাচনের আগে অংশীজনের বিমুখিতা অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর স্বতঃস্ফ‚র্ত, আন্তরিক ও দায়িত্বপূর্ণ অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র শক্তিশালী হবে বলে আশা করি।

বিএনপি নেতা মো. হারুনুর রশীদ এমপি বলেন, যারা গুমের শিকার হচ্ছে, তারা আইনের আশ্রয় লাভের সুযোগ পাচ্ছেন না। দায়িত্বশীলদের জবাবদিহিতার ঘাটতি রাজনীতিতে ছন্দপতন ঘটাচ্ছে। সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী হতো, তাহলে এসব ঘটনা বন্ধ হয়ে যেত। রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে যারা তারা দায় নিচ্ছে না। রাষ্ট্রের যে দয়িত্ব সেখানে দায় এড়ানোর বক্তব্য অত্যন্ত দুঃখজনক। বর্তমানে গণতান্ত্রিক পরিমন্ডলে সঙ্কট দেখা যাচ্ছে সেগুলো দূর করতে হবে। এ জন্য রাষ্ট্রকেই দায়িত্ব নিতে হবে।

সিজিএস সভাপতি ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, গুম খুন সবই রাজনৈতিক না। টাকার জন্য অনেক ঘটনা ঘটছে। রাজনীতিবিদরা এগুলো স্বীকার করছেন না। ২০১৪ সালে ও ২০১৮ সালে নির্বাচনের আগে গুম-খুন বেশি হয়েছে। কারণ যেন নির্বাচনে লোকজন না দাঁড়ায়। রাষ্ট্রের দায়িত্ব এগুলো প্রতিহত করা। স্যাংশনের মাধ্যমে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে না। আমাদের নিজেদের এগিয়ে আসতে হবে। স্বচ্ছ ও শক্তিশালী মানবাধিকার কমিশন গঠন করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ