Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রশংসায় ভাসছেন হিজাব পরিহিতা মুসকান

রাহাদ উদ্দিন | প্রকাশের সময় : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০১ এএম

বোরকা ও হিজাব পরিহিতা এক ছাত্রী বিবি মুসকান খান। একটি স্কুটি করে কর্নাটকের পিইএস কলেজে আসেন অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে। কিন্তু কলেজ প্রাঙ্গনে হিজাব পরে তাকে প্রবেশ করতে দেখে অশ্রাব্য ভাষায় হিজাব বিরোধী সেøাগান ও জয় শ্রীরাম সেøাগান দিতে থাকে গেরুয়া ওড়না পরা ছাত্র নামধারী একদল হিন্দু উগ্রবাদী। কিন্তু ভয় না পেয়ে মুখের উপর ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনি দিয়ে একাই লড়ে যান মুসকান।

সম্প্রতি এমন ঘটনা ঘটে ভারতের বিজেপিশাসিত কর্ণাটকের পিইএস কলেজে। ইতোমধ্যে ঘটনার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল। ভাইরাল হওয়া হিজাব পরিহিতা ওই ছাত্রী এখন আলোচনার শীর্ষে। এই সাহসী পদক্ষেপের কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রসংশায় ভাসছেন মুসকান।

মুসকানের প্রশংসায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাহফুজুর রহমান অপু নামে একজন লিখেছেন, গেরুয়া গুণ্ডাদের দেশে তুমি বারুদের বখতিয়ার, ফিনকির তুফানে সুনামি উঠুক ‘আল্লাহু আকবার’।

আবুল বাসার নামে একজন লিখেছেন, শত শত লোকের জয় শ্রীরাম ধ্বনির সম্মুখে আমার এক মুসলিম বোনের ‘আল্লাহু আকবার’ সাহসী তাকবীর শুনে একজন মুসলিম হিসেবে গর্বে মন ভরে উঠলো।
উগ্রবাদী গেরুয়াদের উদ্দেশে রাজিব ইসলাম লিখেছেন, তোদের হাজারো সেøাগান আমার একজন বোনের ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনির কাছে নস্যি। শাহরিয়ার নামে একজন লিখেছেন, বোন তুমি ধর্মকে সম্মানিত করেছো, মেয়েদের পর্দাকে সম্মানিত করেছো, বিশ্ব দরবারে দেখিয়েছো নেকড়েরা সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প যতই ছড়িয়ে দিক না কেন, সিংহের মত গর্জন করে তা রুখে দিতে জানি। আব্দুল্লাহ আল মাহদি নামক একজন লিখেছেন, একদল ‘গেরুয়া শেয়াল’ এর মাঝে এক সিংহী! কর্ণাটকের সিংহী!

এদিকে ঘটনাস্থল থেকে ফিরে মঙ্গলবার রাতেই এনডিটিভিতে সরাসরি লাইভে যুক্ত হন মুসকান। সেখানে উপস্থাপকের এক প্রশ্নের জবাবে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, স্যার আমি ভীত ছিলাম না। আমি সেখানে গিয়েছিলাম অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে। কিন্তু তারা আমাকে ভেতরে যেতে দিচ্ছিল না। কারণ, আমি বোরকা পরে গিয়েছিলাম। কোনোভাবে একসময় আমি ভেতরে প্রবেশ করি। এ সময় তারা আমাকে উদ্দেশ্য করে জয় শ্রীরাম সেøাগান দিচ্ছিল। তখন আমিও ‘আল্লাহু আকবার’ বলে চিৎকার শুরু করি।

যদি কলেজে আপনাকে বোরকা পরে ক্লাস করতে না দেয় তাহলে আপনি কি বোরকা ছেড়ে দিবেন নাকি আন্দোলন চালিয়ে যাবেন? এমন প্রশ্নে মুসকান বলেন, আমি আন্দোলন চালিয়ে যাবো। বোরকা তো একজন মুসলিম মেয়ের অংশ। শিক্ষা আমাদের অগ্রাধিকার। এক টুকরো কাপড়ের জন্য তারা আমাদের শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট করছে। সাক্ষাৎকারের এ ভিডিওটিও ইতোমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। সাক্ষাৎকারে দেওয়া তার বক্তব্য ও ছড়িয়ে গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

এদিকে কর্ণাটকে হিজাব নিষিদ্ধের প্রতিবাদে সেখানকার শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে গতকাল বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সংহতি সমাবেশ করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা হিজাব নিষিদ্ধের তীব্র নিন্দা জানিয়ে অতি দ্রুত এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানের দাবি জানান। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্য থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন মোড় ঘুরে অপরাজেয় বাংলায় গিয়ে শেষ করেন তারা।

সংহতি সমাবেশে জয়দেব চন্দ্র রায় নামে একজন বলেন, এটার জন্য আসলেই আমি একজন সনাতন ধর্মাবলম্বী হিসেবে খুব লজ্জা বোধ করছি। তিনি বলেন, এটা রাষ্ট্রীয়ভাবে করা হচ্ছে এবং সেখানে ‘জয় শ্রীরাম’ বলে আমাদের কিছু সনাতন ধর্মাবলম্বী সেøাগান দিচ্ছে এবং এর বিরুদ্ধে কথা বলছে। বোরকা পরা একটা ভালো জিনিস। আমি বোরকার পক্ষে। যেটা পরলে আমাদের মা বোন সুরক্ষিত থাকবে। আমি তো মনে করি আমার মা কিংবা বোন যদি বোরকা পরতে চায় পরতে পারে। এটাতে তো কাউকে বাধ্য করা যাবে না। কিন্তু সেখানে এরকম হবে এটা তো আমার জন্য লজ্জার। এটা যে রাষ্ট্রীয়ভাবে করা হচ্ছে আমি এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

জয়দেব আরো বলেন, আমাদের বিভিন্ন সময় ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এ বিষয়ে আমাদের সচেতন থাকতে হবে যাতে এই ভুল কাজগুলো মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া না হয়।
সায়দা জান্নাত নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ভারতের সংবিধান অনুযায়ী হিজাব পরা একজন ব্যক্তির সাংবিধানিক অধিকার। এই বিষয়ে যখন নিষেধাজ্ঞা আসে তখন চুপ করে থাকার সময় থাকে না। ছেলে ও মেয়েরা কী পরবে এটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমি আশা করি ভবিষ্যতে আর এ ধরনের ঘটনা ঘটবে না এবং এর একটি সুরাহা হবে।

জাহিদ হাসান নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা যখন এখানে দাঁড়িয়ে ভারতের মেয়েদের জন্য সংহতি প্রকাশ করছি তখন এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও আমাদের স্যার -ম্যাডামদের কাছ থেকে হিজাব নিয়ে কথা শুনতে হয়। যারা হিজাব পরেন তারা পিছিয়ে পড়া, পক্ষপাতদুষ্ট এসব বলা হয়। আমরা বলতে চাই বাংলাদেশেও যে যার ইচ্ছা মতো পোশাক পরবে। এটাতে কোন বাধা দেয়া চলবে না। এখন যে টিচার এটা করবে আমরা তা নথিভুক্ত করে রাখবো।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নুসরাত তাবাসসুম বলেন, মানুষ কোন পোশাক পরবে আর কোন পোশাক পরবে না সেটা তার নিজস্ব বিষয়। মুসলিম পরিচয় দেখে এভাবে পুরো উপমহাদেশে ইসলাম বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেয়া এবং কট্টর হিন্দুত্ববাদ সন্ত্রাস তৈরি করা এটা আমরা বর্তমান ভারত সরকারের একটি হিন্দুত্ববাদী চাল হিসেবে দেখছি। হিজাব যে শুধু মুসলিম নারীরা পরে তা নয়। আমরা যদি খ্রিষ্টান সেবিকাদের দেখি তারাও হিজাব পরে। অনেক হিন্দু বিধবারাও মাথা ঢাকতে পছন্দ করে। কিন্তু এভাবে বাধানিষেধ সৃষ্টি করা অত্যন্ত সন্ত্রাসমূলক কাজ।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী আশরেফা তাসনিম বলেন, হিজাব পরাকে যখনি আমি আফগানি ও তালেবানি পোশাকের সাথে তুলনা করব তখন এটা হচ্ছে সাম্প্রদায়িকতার প্রতীক। আমরা যে অসাম্প্রদায়িকতার নামে বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিচ্ছি সবার মনে এটাই সবচেয়ে বড় সহিংসতা।

সমাপনী বক্তব্যে ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আকরাম হোসেন বলেন, ভারতের যে ঘটনা নিয়ে আজকে আমরা সংহতি জানাতে দাঁড়িয়েছি এই ঘটনা বাংলাদেশেও ঘটে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হিজাব, বোরকা বা টিশার্ট পরে আসার কারণেও শিক্ষকদের হাতে নারী শিক্ষার্থীদের হেনস্তার শিকার হতে হয়। কোন শিক্ষার্থীর পোশাকের স্বাধীনতাকে খর্ব করা চলবে না। পোশাকের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়ার কারণে ভারতের শিক্ষার্থীরা যে প্রতিবাদ জারি রেখেছে তার প্রতি আমরা সংহতি জানাই। পোশাকের স্বাধীনতা যেখানেই কেড়ে নেওয়া হবে সেখানেই আমরা শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াবো। ###



 

Show all comments
  • jack ali ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০০ পিএম says : 0
    May Allahs curse upon BJP, RSS, SHIVESENA, Hindu priests and those Hindu who kill, rape, burn muslims shop s, houses and loot muslim's moneny gold and valuable prosperities...>>O'Allah give back India again to us so that we will rule with Justice as such people will be able to live in peace without any prosecutions what so ever , live with human dignity and there will be no more poor people in India.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হিজাব পরিহিতা মুসকান
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ