Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

উত্তরে মৌ মৌ ঘ্রাণ

নয়টি জেলার গাছে গাছে হাসছে আমের মুকুল এবার বাম্পার ফলনের আশা টার্গেট ১০ লাখ মেট্রিক টন মধু মাসের ফলের জন্য টনিকের কাজ করেছে মাঘের শেষ বৃষ্টি

মহসিন রাজু, বগুড়া থেকে | প্রকাশের সময় : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০৩ এএম

ফাল্গুনের অগেই এবার আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চলের জেলায় জেলায় আমের শাখায় বেরিয়েছে মৌ মৌ গন্ধমাখাা মুকুল। যেন গাছে গাছে হাসছে মুকুল শোভা! আম, জাম, লিচু ও কাঁঠালের জন্য মাঘের তৃতীয় সপ্তাহের শেষে হালকা থেকে ঝিরঝির বৃষ্টি টনিকের মতো কাজ করেছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চলের ৯টি জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ধারণা করছে এবার মৌসুমে সব জাতের আমের উৎপাদন ১০ লাখ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাবে।

প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে বসন্তে আম গাছে মুকুল আসে। কিন্তু এবার বসন্তের অনেক আগেই আম গাছে মুকুল আসায় সেটা ফলনে কি নেতিবাচক হবে? ইনকিলাবের এমন প্রশ্নের জবাবে রাজশাহী ফল গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ আলিমুদ্দিন বলেন, কোন সমস্যা হবে না। আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে আম গাছগুলোতে মুকুল বের হলেও তাতে গুটি বাঁধেনি। বিশেষ করে গুটি হতে হলে মুকুলে যে ফুল ফোটে সেটা কিন্তু ফোটেনি।

তিনি বলেন, আম গাছে আগাম মুকুল আসার পর এবার গুটি বাঁধতে ফুল যথা সময়ে ফুটবে। আর ফলনও হবে স্ব^াভাবিক। বিশেষ করে মাঘের শেষ দিকে এবার যে বৃষ্টি হয়ে গেল সেটা প্রকৃতির এক দারুন উপহার। ওই বৃষ্টি আমসহ মধু মাসের ফল জাম. লিচু ও কাঁঠালের জন্যও হবে বিশেষ ফলদায়ক।
কৃষি ও ফল বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আগামী দুই মাস মার্চ-এপ্রিলে শিলা বৃষ্টি না হলে এবং সামনে আরও দুই সপ্তাহ যদি ঘন কুয়াশা না হয় তাহলে চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চলে এবার আমসহ মধু মাসের অন্যান্য ফলের বাম্পার ফলন হবে। তাদের মতে, শুধু মাত্র আমের ব্যবসা ১০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, রাজশাহীতে এবার ১৮ হাজার হেক্টরে আমের চাষ হচ্ছে। বগুড়া, রংপুর, ঠাকুরগাঁ, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, নাটোর, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় এবার আম চাষের জমি লক্ষাধিক হেক্টরের বেশি হবে। আবহাওয়া যদি অনুকূলে থাকে এবং শিলা বৃষ্টি না হয় তাহলে আমের ফলন ১০ লাখ মেট্রিক টনের বেশি হতে পারে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট, রাজশাহীর পুঠিয়া, বানেশ^র, রংপুর এবং বগুড়ার আমের পাইকাররা বলেছেন, সময়ের আগে গাছে মুকুল আসার পর পরই আম বাগানগুলো অগ্রিম বিক্রি শুরু হয়ে গেছে। রাজধানীসহ দেশের বড়বড় ব্যাপারীরা রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁর বিশাল বিশাল আমবাগানগুলো গাছের মুকুলের ধরণ দেখে অগ্রিম বুকিং দিয়ে রেখেছেন।
এদিকে মধু মাসের ফল ব্যাবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি মাহমুদ শরীফ মিঠু জানিয়েছেন, গত বছর করোনাভাইরাসের মধ্যেও ৬০০ কোটি টাকার আমের ব্যবসা হয়েছে। এবার সে ব্যবসার পরিমাণ টাকার অঙ্কে হাজার কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলে তারা ধারণা করছেন।

বগুড়া, রংপুর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁও, নাটোর, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর এবং পঞ্চগড় জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা প্রায় একই কথা বলেছেন। তাদের ধারণা, আগাম মুকুল আসাটা ভালো। আর এই ভালো যদি শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে তাহলেই বাম্পার ফলন হবে। বিশেষ করে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লক্ষাধিক হেক্টরের আমচাষের বাগান থেকে এবার উৎপাদনের পরিমাণ ১০ লাখ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের উদ্যানতত্ত্ববিদ ড. মোখলেছুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, বাংলাদেশের এক নম্বর আম হচ্ছে খিরসাপাত। এই আমের প্রায় কাছাকাছি আছে ল্যাংড়া এবং হিমসাগর। তবে একমাত্র জিআই সনদপ্রাপ্ত আম খিরসাপাত। এর বাইরে ফজলি, সুরমা ফজলি, আশ্বিনা, দেওভোগ, রাজভোগ, গোলা, লকনা, আম্রপালি, গোপালভোগ, লক্ষণভোগ। থাইল্যান্ডের কাটিমন আম বর্তমানে রাজশাহীতে চাষ।

রংপুরের হাড়িভাঙ্গা, দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁওয়ের সূর্যপুরির মত ট্রাডিশনাল আমের উৎপাদন এবার বেশি হবে। এর বাইরে জাপানের বিখ্যাত এবং সবচেয়ে দামি আম ‘সূর্যডিম’ উত্তরের শেষ জেলা পঞ্চগড়ে হচ্ছে। পাশাপাশি তাদের উদ্ভাবিদ গুনে মানে স্বাদে গন্ধে অতুলনীয় বারী ১১, ১৩, ১৪, ১৭ ও ১৮ জাতের আমের চাষ হচ্ছে ব্যাপকভাবে। বিদেশে রফতানি উপযোগি এইসব আম ভবিষ্যতে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পথ উন্মুক্ত কবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ