পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সাখাওয়াত হোসেন বাদশা : গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা পাচ্ছে না বাংলাদেশ। দুই সপ্তাহ আগেই এ নিয়ে ভারতকে চিঠি দিয়েছে। কিন্তু সাড়া মেলেনি। উল্টো গঙ্গার পানি প্রাপ্তির পরিমাণ আরও কমেছে। শুক্রবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবণ পদ্মায় অনুষ্ঠিত ত্রিশ বছর মেয়াদি গঙ্গার পানি চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশ-ভারত কারিগরি কমিটির বৈঠকেও বিষয়টি উত্থাপন করা হয়। কিন্তু সমস্যা সমাধানে ভারতের কাছ থেকে কোনো সাড়া মেলেনি। উল্টো ভারতীয় প্রতিনিধি দলের প্রধান শ্রী সি লাল জানিয়ে দিয়েছেন, ত্রিশ বছর মেয়াদি গঙ্গা চুক্তির বাইরে এই বৈঠকে অন্য কোনো ইস্যু নিয়ে আলোচনার সুযোগ বাংলাদেশের নেই। গঙ্গার বাইরে কোনো ইস্যু নিয়ে আলোচনা করতে হলে তা করতে হবে রাজনৈতিক পর্যায়ে কিংবা যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকে।
এরপরও গঙ্গা চুক্তি মোতাবেক পানির ন্যায্য হিস্যা না পাওয়া, হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচে পদ্মার পানি অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়া, গজলডোবা বাঁধের কারণে তিস্তায় নাব্য সঙ্কট, দীর্ঘ ৬ বছর যাবৎ জেআরসি’র বৈঠক না হওয়ার প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের প্রধান জেআরসি সদস্য মো. মোফাজ্জল হোসেন। বৈঠকে ভারতকে জানানো হয়, গঙ্গা চুক্তি অনুযায়ী সর্বনিম্ন পঁয়ত্রিশ হাজার কিউসেক পানি পাওয়ার কথা থাকলেও জানুয়ারি মাসে প্রায় ১০ হাজার কিউসেক পানি কম দেওয়া হয়েছে। আর চুক্তির ইন্ডিকেটিভ সিডিউল অনুয়াযী পানি কম পাওয়া গেছে ৭৭ হাজার ৯৩৫ কিউসেক।
গত ১ জানুয়ারি থেকে শুষ্ক মৌসুম শুরু হওয়ার পর বাংলাদেশ ত্রিশ বছর মেয়াদি গঙ্গা চুক্তি মোতাবেক কী পরিমাণ পানি পাচ্ছে- তা সরেজমিন দেখতেই এই প্রতিনিধি দলের ঢাকা আসা। বৃহস্পতিবার প্রতিনিধি দলটি হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচে পদ্মায় কী পরিমাণ পানি পাওয়া যাচ্ছে তা পর্যবেক্ষণ করেন। চারদিনের সফর শেষে গতকাল শনিবার যৌথ নদী কমিশনের ভারতীয় প্রতিনিধি দলটি ঢাকা ছেড়েছেন। গঙ্গা চুক্তির পর উভয় দেশ কী পরিমাণ পানি পাচ্ছে তা পর্যবেক্ষণের জন্য এই কারিগরি কমিটি গঠন হয়েছে। প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে এই ভারতের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরে আসে এবং বাংলাদেশ থেকে একটি প্রতিনিধি দল ফারাক্কা পয়েন্টে কী পরিমাণ পানি রয়েছে তা পর্যবেক্ষণের জন্য ভারত সফরে যায়। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে যৌথ নদী কমিশনের সদস্য মোফাজ্জল হোসেন ইনকিলাবকে জানান, বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল কবে যাবে, তার দিনক্ষণ এখনও ঠিক হয়নি। তিনি বলেন, চুক্তি মোতাবেক আমরা পানি পাচ্ছি না, বিষয়টি উত্থাপন করেছি। ভারতের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেয়া হয়েছে, বাংলাদেশ যাতে সর্বনিম্ন ৩৫ হাজার কিউসেক পানি বুঝে পায়, এটি তারা দেখবে। ভারতের প্রতিনিধি দল আরও জানায়, উজানে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় গঙ্গায় ফারাক্কা বাঁধের সামনে পানিরপ্রবাহ অনেক কমে গেছে। যে পরিমাণ পানি জমছে, তাই দু’দেশ ভাগাভাগি করে নিচ্ছে। তিনি বলেন, গঙ্গা চুক্তির ৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আমরা ফারাক্কা পয়েন্টে ভারতকে পানিরপ্রবাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে বলেছি। সেইসাথে যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকটি অনুষ্ঠানের জন্য বাংলাদেশের অবস্থান জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, দু’দেশের স্বার্থেই এই বৈঠক হওয়া জরুরি।
এদিকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ফারাক্কায় পানিরপ্রবাহ কমে যাওয়ার মূল কারণ হচ্ছে ভারত ফারাক্কার উজানে ছোট-বড় তিন শতাধিক খাল কেটে গঙ্গার পানি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। এতে করে ফারাক্কা পয়েন্টে শুষ্ক মৌসুমে যে পরিমাণ পানি আসার কথা তার চেয়েও অনেক কম আসছে। প্রতি শুষ্ক মৌসুমেই গঙ্গায় পানিরপ্রবাহ কমে যাচ্ছে। গঙ্গা অববাহিকার উজানে শুষ্ক মৌসুমে কখনও আগাম বৃষ্টিপাত হলে কিংবা হিমালয়ের বরফ গলার মাত্রা বেশি হলে ফারাক্কায় পানিরপ্রবাহ যৎসামান্য বৃদ্ধি পায়। তবে এই বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশ হয়তো কখনও হিসাবে শর্ত অনুযায়ী ৩৫ হাজার কিউসেক পানি বুঝে পায় ঠিকই, কিন্তু এই পানি বাংলাদেশের নদ-নদীর নাব্য ধরে রাখার জন্য মোটেও যথেষ্ট নয়। যার কারণেই দেশের অধিকাংশ নদ-নদী পানিশূন্য হয়ে পড়ছে।
জেআরসি’র তথ্যানুযায়ী, শুষ্ক মৌসুমের শুরুতে জানুয়ারির প্রথম দশ দিনে (১-১০ জানুয়ারি) গঙ্গা নদীর ফারাক্কা পয়েন্টে পানি জমেছিল ৭২ হাজার ৩৩৫ কিউসেক। এ থেকে বাংলাদেশকে ৩৫ হাজার কিউসেক দিয়ে ভারত নেয় ৩৭ হাজার কিউসেক পানি। এখানে চুক্তির ইন্ডিকেটিভ সিডিউল অনুযায়ী বাংলাদেশ ৬৭ হাজার ৫২৬ কিউসেক পানি পাওয়ার কথা। ১১ থেকে ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় দশ দিনে গঙ্গা নদীর ফারাক্কা পয়েন্টে পানি ছিল ৬২ হাজার ৭৮৮ কিউসেক। এ থেকে বাংলাদেশকে দেয়া হয় ৩১ হাজার ৩৯৪ কিউসেক এবং ভারত নেয় ৩১ হাজার ৩৯৫ কিউসেক পানি। এখানে চুক্তির ইন্ডিকেটিভ সিডিউল অনুযায়ী বাংলাদেশ ৫৭ হাজার ৬৭৩ কিউসেক পানি পাওয়ার কথা। ২১ থেকে ৩১ জানুয়ারি তৃতীয় দশ দিনে গঙ্গা নদীর ফারাক্কা পয়েন্টে পানি ছিল ৬২ হাজার ২৮ কিউসেক। এ থেকে বাংলাদেশকে দেয়া হয় ৩১ হাজার ১৪ কিউসেক এবং ভারত নেয় ৩১ হাজার ১৪ কিউসেক পানি। এখানে চুক্তির ইন্ডিকেটিভ সিডিউল অনুযায়ী বাংলাদেশ ৫০ হাজার ১৫৪ কিউসেক পানি পাওয়ার কথা।
ফারাক্কার বিরূপ প্রভাবে পদ্মার বুকজুড়ে জেগে উঠে বিশাল বিশাল বালু চর। নদীর মাঝখান থেকে বালু খেকোরা ট্রাকবোঝাই করে বালু নিয়ে যাচ্ছে। পদ্মায় নৌপথ সচল রাখা হয়েছে খননের মাধ্যমে। শুধু পদ্মাই নয়; যমুনা, মেঘনাসহ দেশের সকল নদ-নদীর নৌপথ সচল রাখা হয়েছে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে। গড়াই, ফেনী, মুহুরি, সুরমা, কুশিয়ারা ও তিস্তা নদীর অবস্থা আরও ভয়াবহ। এসব নদীনির্ভর সেচ প্রকল্পগুলোর অবস্থাও শোচনীয়। পানির অভাবে তিস্তা, জিকে, মহুরি, মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পে এবার সেচযোগ্য জমির পরিমাণ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। পরিস্থিতির এই ভয়াবহতা নিরূপণে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় একেবারেই ব্যর্থ। যার চরম মূল্য দিচ্ছে এদেশের কৃষকরা।
জেআরসি’র মন্ত্রী পর্যায়ের সর্বশেষ ৩৭তম বৈঠকটি বসেছিল ২০১০ সালে মার্চে দিল্লিতে। আর ৩৮তম বৈঠকটি হওয়ার কথা ঢাকায়। ইতোপূর্বে ২০১৩ সালের ১৮-১৯ জুন ঢাকায় জেআরসি’র ৩৮তম বৈঠক অনুষ্ঠানের প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছিল। ওই সময় ভারতে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় ছিল। কিন্ত প্রস্তুতির প্রায় শেষ পর্যায়ে এসে দিল্লির পক্ষ থেকে বৈঠকটি বাতিল করা হয়। কেন এবং কী কারণে এই বৈঠক বাতিল করা হয়েছিল, তার বিশেষ কোনো কারণও বাংলাদেশকে জানানো হয়নি। তবে বাংলাদেশ ধরে নিয়েছিল ওই সময় ভারতে নির্বাচন থাকায় বৈঠকটি হয়নি। পরবর্তীতে ভারতে নরেন্দ্র মোদি সরকার গঠনের পর বাংলাদেশের পানিসম্পদমন্ত্রী জেআরসি’র বৈঠক অনুষ্ঠানের তাগিদ দিয়ে একটি চিঠি পাঠায়।
এর জবাবে ভারতের পানিসম্পদ ও নদী উন্নয়নমন্ত্রী উমা ভারতী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, আপাতত জেআরসি’র বৈঠকে অংশ নেওয়া সম্ভব নয়। ওই সময় পানিসম্পদমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে উমা ভারতী জানান, বর্তমানে ভারতের সংসদে বাজেট অধিবেশন চলছে। পরবর্তীতে পারস্পরিক সুবিধামতো সময়ে বাংলাদেশে সফরে আসবো। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে ভারত সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয় উল্লেখ করে চিঠিতে তিনি আরও বলেন, দুই দেশের মধ্যে বহুমুখী সহযোগিতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। ১৯৯৭ সালের গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি তার একটি প্রমাণ।
পানিসম্পদমন্ত্রীকে এমন চিঠি দিলেও জেআরসি’র বৈঠকের দিনক্ষণ আজও জানাননি উমা ভারতী। ফলে জেআরসি’র বৈঠক না হওয়ায় দু’দেশের মধ্যে আটকে আছে ৫৪টি অভিন্ন নদী সংক্রান্ত অনেক অমীমাংসিত সিদ্ধান্ত।
দেশের পানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জেআরসির বৈঠকের ওপর অনেকটাই নির্ভর করছে অভিন্ন নদীর পানি সমস্যার সমাধানের বিষয়টি। বিশেষ করে জেআরসি’র বৈঠক না বসার অর্থ তিস্তা চুক্তি নিয়ে কালক্ষেপণ করা। চুক্তি না থাকার কারণে তিস্তার নব্য সঙ্কট মারাত্মক রূপ নিয়েছে। চুক্তি থাকলেও বাংলাদেশ গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা বুঝে পাচ্ছে না।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক মহাপরিচালক হাবিবুর রহমান জানান, তিস্তায় যে হারে পানি কমে আসছে, এই ধারাবাহিকতা চলতে থাকলে ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে তীব্র পানি সঙ্কটে পড়বে বাংলাদেশ। তিস্তায় ভয়াবহ পানি হ্রাসের ফলে হাজার হাজার বিঘা জমিতে সেচকাজের ব্যাঘাত ঘটবে। চুক্তি মোতাবেক বাংলাদেশ গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যাও পাচ্ছে না বলে তিনি জানান।
জানা যায়, পানি উন্নয়ন বোর্ড তিস্তা প্রকল্পে সেচযোগ্য জমির পরিমাণ ৮ হাজার হেক্টরে নামিয়ে এনেছে। এছাড়া নীলফামারীর তিন উপজেলার বাহিরে তিস্তার সেচ ক্যানেলে পানি সরবরাহ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অথচ তিস্তায় স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ থাকলে সেচযোগ্য জমি দাঁড়াতো ৬৬ হাজার হেক্টরে। গেল বছর তিস্তায় সর্বনিম্ন পানি ছিল ২৪০ কিউসেক। এবার তিস্তায় সর্বনিম্ন পানি কত পাওয়া যাবে- তা নিয়ে উদ্বিগ্ন স্থানীয় প্রশাসনসহ নদী অববাহিতার কৃষকরা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পানিসম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ইনকিলাবকে বলেন, গঙ্গা চুক্তি মোতাবেক বাংলাদেশ পানি পাচ্ছে না- বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে ভারতকে জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আসা করে বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র ভারত বাংলাদেশকে গঙ্গার চুক্তি মোতাবেক পানির নায্য হিস্যা প্রদান করবে। তিনি দীর্ঘ ৬ বছর ঝুলে থাকা জেআরসি বৈঠকের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন। তার মতে, এই বৈঠকটি হলে দু’দেশের মধ্যে অমীমাংসিত অনেক সমস্যারই সমাধান হতো।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।