Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাসে যাত্রীদের মাল লুটের পর তরুণীকে ‘গণধর্ষণ’ করে ডাকাতরা

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১০:৪৯ এএম

দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতরা কেবল ডাকাতি করে ক্ষান্ত হয়নি। তারা বাসে থাকা এক তরুণী যাত্রীকেও ‘ধর্ষণ’ করেছিল। সম্প্রতি দেশে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে ডাকাতদের কবলে পড়া বাসযাত্রী এক চিকিৎসকের ফেইসবুক স্ট্যাটাস। সেই ঘটনা গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। দেশব্যাপী প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। এরপরই বিভিন্ন সূত্র ধরে পুলিশি তদন্ত শুরু হয়। সেই তদন্তে এখন একের পর এক গা শিউরে ওঠা তথ্য সামনে আসছে। গ্রেপ্তার ডাকাতদের বরাতে ‘ধর্ষণের’ একটি ঘটনার কথাও বলছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ছয়টি থানায় বাস ডাকাতির সাতটি মামলায় এখন পর্যন্ত ৪০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সোনারতরী পরিবহনে ডাকাতি ও ধর্ষণ :

পুলিশ বলছে, মহাসড়কে স্বল্পসময়ের ব্যবধানে বেশ কয়েকটি ডাকাতির ঘটনা সামনে এসেছে। এগুলোর মধ্যে গত ১৪ জানুয়ারি বগুড়া থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী ‘সোনারতরী পরিবহনের’ একটি বাসে ডাকাতির সময় ধর্ষণের ওই ঘটনা ঘটে বলে গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পেরেছে পুলিশ। তবে এখনও ঘটনার শিকার নারীর সন্ধান মেলেনি।

ওই ডাকাতিতে অংশ নেওয়া কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের তেজগাঁও বিভাগ।

ডিবির তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) ওয়াহেদুল ইসলাম সোমবার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বাস ডাকাতির সাতটি মামলায় আমরা ৪০ জনকে গ্রেপ্তার করেছি। ওদের মধ্যে একজন ডাকাত গত মাসে টাঙ্গাইলের দিকে একটা বাসের মধ্যে যাত্রীকে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে। তবে আমরা এখনও নির্যাতনের শিকার নারীকে পাইনি।’

সোনার তরী পরিবহনে ডাকাতির সঙ্গে জড়িত গ্রেপ্তার ৬ জন হলেন- নাঈম হোসেন (২০), রাসেল আকন্দ (২৭), রফিকুল ইসলাম (২১), মজিদুল ইসলাম (৩৮), আবদুল মজিদ (৩৮) ও আলমগীর প্রধান (৩২)।

এ গ্রুপের হোতা সুমন ও শাহীন নজরদারিতে রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

মামলা নেয়নি টাঙ্গাইলের কোনো থানা :

সোনার তরী পরিবহনে ডাকাতির এ ঘটনার পর শুরুতে মামলা করতে গিয়ে ঝামেলায় পড়ে বাস কর্তৃপক্ষ। ওই বাসের সুপারভাইজার শহীদুল ইসলাম তিন দিন ঘুরেও টাঙ্গাইলে কোনো থানায় মামলা করতে পারেননি।

চিকিৎসক শফিকুলের পোস্টের পর সামনে আসা এ ডাকাতির বিষয়ে ২৪ জানুয়ারি সুপারভাইজার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘টাঙ্গাইলের পুলিশ মামলা নেয়নি। তারা সাভারে যেতে বলে। তিন দিন ঘুরে পরে সাভার থানায় মামলা করি।’

এ ডাকাতির সঙ্গে জড়িতদেরই সম্প্রতি গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ, যারা তাদের সহযোগীদের ধর্ষণের ঘটনা সামনে আনেন।

যে কৌশলে ডাকাতি হয়েছিল বাসটিতে :

ডাকাতির শিকার বাস চালক ও হেলপার এবং পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ডাকাতদের দেওয়া ঘটনার বর্ণনা থেকে জানা যায়, সোনার তরী পরিবহনের বাসটি ১৪ জানুয়ারি বিকেল ৫টার দিকে বগুড়া থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসে। বাসে আগে থেকেই ৩৮ জন যাত্রী ছিলেন। যমুনা সেতু পার হয়ে টাঙ্গাইলের অ্যালেঙ্গা থেকে ৭ থেকে ৮ জন যাত্রী তোলা হয়। তাদের কয়েকজন ইঞ্জিন কাভারে বসেন।

বাসটি সাভার এলাকায় আসার পর ডাকাতরা বাসের নিয়ন্ত্রণ নেয়। এরপর তারা বাসটি ইউ টার্ন নিয়ে আবারও টাঙ্গাইলের দিকে চালাতে থাকে। সারারাত চলার পর ভোরের দিকে তারা বাসটি টাঙ্গাইলের মির্জাপুর এলাকায় ফেলে পালিয়ে যায়।

বাসে ছিলেন দুই নারী যাত্রী:

চালক ও হেলপারের ধারণা অ্যালেঙ্গা থেকে ওঠা যাত্রীরাই ডাকাত। তিনি গণমাধ্যমককে বলেন, বাসে দুজন নারী যাত্রী ছিলেন, একজন বয়স্ক, একজন কম বয়স্ক। তবে বাস ফেলে ডাকাতেরা পালিয়ে যাওয়ার পর তিনি ওই যাত্রীদের দেখতে পাননি।

চালক মো. পাভেল বলেন, অ্যালেঙ্গা থেকে প্রতিজন ১০০ টাকা দরে তারা ৭-৮ জনকে বাসে তুলেছিলেন। ওই যাত্রীদের ঢাকায় আসার কথা ছিল। বাসে আগে থেকেই ৩৮ জন যাত্রী ছিলেন। চন্দ্রা, বাইপাইল এলাকায় বেশ কয়েকজন যাত্রী নেমে যান।

বাসের দরজা বন্ধ করা মাত্রই কিছু যাত্রী রূপ নেয় ভয়ঙ্কর ডাকাতে:

চালক মো. পাভেল বলেন, ‘সাভার থানা রোডের আগে গেণ্ডা বাসস্ট্যান্ডে দুজন যাত্রী নামার পর আমার হেলপার দরজাটা লাগানো মাত্রই ডাকাতরা ভয়ঙ্কর রূপে আবির্ভূত হয়। তখন রাত সোয়া ১১টার মতো বাজে। হেলপার দুয়ারটা লাগাইছে, আমি খালি গিয়ার লাগাইছি। ওমনি একজন আইসা আমারে ছুরি ধরল। বাসে তখন ডাকাতরাসহ ২০ থেকে ২৫ জন যাত্রী। আমাদের তিনজন স্টাফকে (চালক, হেলপার, সুপারভাইজার) হাত বাইন্দা, চোখ বাইন্ধ্যা, মুখে টেপ মাইরা পিছনে ফালায়া রাখে।’

‘এরপর রাতভর গাড়ি চলছে। গাড়ি নিয়া তারা কই কই গেছে তা আমরা কইতে পারি না। ভোরবেলায় টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে ডাকাতরা গাড়ি রাইখা পালিয়ে যায়। তখন ওই মহিলা যাত্রীদের আর দেখিনি। সুপারভাইজার শহীদও হ্যাগোরে খুঁইজ্জা পাইল না।’

তরুণী যাত্রীকে পেছনের সিটে নিয়ে ধর্ষণ করে পেট কাটা শাহীন ও জাকির:

মামলার তদন্তে যুক্ত একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘ওই বাসে ডাকাতি করতে অ্যালেঙ্গা থেকে উঠেছিলেন ১০ জন। তাদের মধ্যে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে, ডাকাতির একপর্যায়ে বাসে থাকা তরুণীকে পেছনের সিটে নিয়ে ধর্ষণ করে পেট কাটা শাহীন ও জাকির নামে দুজন। তারা দুজনই পলাতক।’

অস্ত্রপচারের পরও ডাকাতিতে পেট কাটা শাহীন :

গ্রেপ্তার ডাকাতরা পুলিশকে বলেছে, শাহীনের পেটে একটা অস্ত্রপচারের পর তার শরীরের বর্জ্য বের হওয়ার জন্য চিকিৎসকেরা স্যালাইনের ব্যাগের মতো একটি ব্যাগ তার পেটের সঙ্গে যুক্ত করে দিয়েছেন। ওটা সবসময়ই ওর শরীরে ঝুলতে থাকে। ওই অবস্থাতেই শাহীন একাধিক ডাকাতিতে অংশ নিয়েছে। সর্বশেষ সোনার তরী পরিবহনে ধর্ষণ করেছে বলেও দাবি তার সহযোগীদের।

ডাকাতদের বিরুদ্ধে ডিবির সাঁড়াশি অভিযান:

সোনার তরীতে ডাকাতিসহ সাতটি মামলার তদন্ত তদারককারী কর্মকর্তা ডিবির তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) শাহাদাৎ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের প্রচুর অভিযান হচ্ছে। রাত জেগে জেগে তাদের গতিবিধির ওপর নজর রাখছেন কর্মকর্তারা। এর মধ্যেই ৪০ জনের মতো ডাকাতকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে তাদের অন্য সহযোগীদের বিষয়ে তথ্য নেওয়া হচ্ছে।’

চিকিৎসকের ফেইসবুক পোস্ট থেকে ডাকাতির ঘটনা ভাইরাল :

সোনার তরী বাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটে ১৪ জানুয়ারি। ১ সপ্তাহ পর ২১ জানুয়ারি ডাকাতির শিকার হন ফেইসবুকে পোস্ট দেওয়া ভুক্তভোগী চিকিৎসক ডা. শফিকুল ইসলাম সজীব।

এরপর ডাকাতির ঘটনায় মামলা নেওয়া ও না নেওয়া নিয়ে থানা পুলিশের পেরেশানির সংবাদ সামনে এলে তদন্ত ও অভিযানে নামে পুলিশ। তখন জানতে পারে ওই সময়ের আশেপাশে বেশ কয়েকটি ডাকাতির ঘটনা ঘটে।

এসব ডাকাতির মামলায় এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার ৪০ জনের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আগের অপরাধের মামলা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ডাকাতি, অস্ত্র, খুন এমনকি জোড়াখুনের মামলার আসামিও রয়েছেন এদের মধ্যে।

পুলিশের ওয়্যারলেস ডাকাত সুমনের হাতে :

মামলার তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, সোনার তরী বাসের ডাকাতি ঘটনার অন্যতম হোতা সুমন একজন পোশাক কর্মী, থাকেন আশুলিয়ায়। তাকে পুলিশ দীর্ঘদিন ধরে খুঁজছে। আশুলিয়ায় তার বাসায় একাধিকবার অভিযানও হয়েছে।

প্রায় দেড় বছর আগে বাসযাত্রী এক পুলিশ সদস্যের কাছ থেকে অন্য মালামালের সঙ্গে ওয়্যারলেস সেটটিও লুটে নিয়েছিল সুমন ও তার সহযোগীরা। ওয়্যারলেস হারিয়ে ওই পুলিশ সদস্য এখন পর্যন্ত বরখাস্ত হয়ে রয়েছেন। সেটটি উদ্ধারের ওই মামলায় কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের পর তারা সুমনের বাসার হদিস দেন। সেখানে তল্লাশি চালিয়ে একটি নকল ওয়্যারলেস জব্দ করা গেলেও আসলটি এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি।



 

Show all comments
  • MD Belal Hossain ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১১:৩৭ এএম says : 0
    জানোয়ারদের ক্রসফায়ারে দেওয়া হউক
    Total Reply(0) Reply
  • Mahmodul Hasan ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১১:৩৮ এএম says : 0
    দেশ আবার হানাদারদের কবলে
    Total Reply(0) Reply
  • আবদুল মান্নান ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৩:৩৩ পিএম says : 0
    তদন্ত সাপেক্ষে অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হোক
    Total Reply(0) Reply
  • ইব্রাহিম রহমান ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৩:৩৫ পিএম says : 0
    অনতিবিলম্বে এই ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত হওয়া দরকার
    Total Reply(0) Reply
  • সফিক আহমেদ ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৩:৩৭ পিএম says : 0
    প্রশাসন অপরাধীদের সহায়তা করছে কিনা , সেটাও তদন্ত হওয়া দরকার
    Total Reply(0) Reply
  • Abdullah ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৭:০৪ পিএম says : 0
    সঠিক তদন্ত করে বিচারের আওতায় আনা হউক।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ