Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হিলারির ইমেইল তদন্তে এফবিআই’র সিদ্ধান্তে প্রচলিত রীতিনীতি উপেক্ষা

প্রকাশের সময় : ৩ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

দি নিউইয়র্ক টাইমস : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে নাড়া দেয়ার সম্ভাবনা সম্পন্ন দু’টি তদন্তের ব্যাপারে এফবিআই ও বিচার বিভাগ এই গত গ্রীষ্মে কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণের সম্মুখীন হয়। প্রথম ঘটনা হল ডোনাল্ড জে. ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণা চেয়ারম্যান পল মানাফোর্ট ও ইউক্রেনে তার গোপন ব্যবসা। দ্বিতীয় ঘটনা হচ্ছে, হিলারি ক্লিনটনের পারিবারিক ফাউন্ডেশনের সাথে দাতাদের সম্পর্ক।
ফেডারেল আইন বলবতকারী কর্মকর্তাদের মতে, বিচার বিভাগের আহ্বানে এফবিআই নির্বাচনের এত কাছে এসে সমন জারি বা অন্য পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে এ সব ঘটনাকে প্রকাশ্যে না আনতে সম্মত হয়। এ প্রেক্ষাপটে হিলারি ক্লিনটনের ইমেইলের ব্যাপারে পুনঃতদন্তে জন্য গত সপ্তাহে কংগ্রেসের কাছে এফবিআই’র পরিচালক জেমস বি. কোমির চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত দীর্ঘস্থায়ী নীতি থেকে সরে আসাই শুধু নয়, তা এফবিআই ও বিচার বিভাগকে সরাসরি নির্বাচনের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে যা বিচার বিভাগের কর্মকর্তারা পরিহারের চেষ্টা করছিলেন।
বিচার বিভাগের আপত্তি উপেক্ষা করে কোমির পত্র প্রেরণ দলীয় পর্যায়ে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। এ ঘটনায় খবরের বন্যা সৃষ্টি হয় যাতে সরকারের অভ্যন্তরীণ আলোচনা প্রকাশ হয়ে পড়ে এবং এফবিআই এজেন্ট ও দফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব ও মাঝে মধ্যে অবিশ^াসের কথা ফাঁস করে দেয়। কোমির পদক্ষেপের প্রেক্ষিতে এফবিআই তড়িঘড়ি করে হিলারির এক শীর্ষ মহিলা সহকারী হুমা আবেদিনের একগাদা ইমেইল বিশ্লেষণ শুরু করেছে। এফবিআই কর্মকর্তারা বলেছেন, নির্বাচন দিনের আগে এসব ইমেইলের পর্যালোচনা সম্পন্ন হওয়া ক্রমেই অসম্ভব হয়ে পড়ছে, যদিও তারা এ কথাও বলছেন যে ৮ নভেম্বরের আগেই বিষয়টি জানানোর সুযোগ হতে পারে।
এফবিআইতে পরিবেশ থমথমে এবং এফবিআই এজেন্ট ও এবং আগামী দিনগুলো কি বয়ে আনবে তা নিয়ে কেউ কিছু বলতে রাজি নন; বিশেষ করে এজেন্ট ও বিশ্লেষকরা নির্বাচনের দিন নাগাদ যদি হুমা আবেদিনের ইমেইলগুলোর পর্যালোচনা শেষ করতে না পারেন। কর্মকর্তারা বলছেন, কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হবে না এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে অসাধারণ কিছু ঘটতে হবে। কিন্তু এ বিষয়ে তথ্যের অনুপস্থিতি এ জল্পনা-কল্পনাকে জোরদার করছে যে ইমেইলগুলো অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ।
কোমির একজন উপদেষ্টা ও কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক ড্যানিয়েল সি.রিচম্যান বলেন যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সত্ত্বেও হিলারির ইমেইলের ব্যাপারে কংগ্রেসকে জানানোর কোমির সিদ্ধান্ত এফবিআই’র স্বাধীনতা রক্ষা করেছে যা থেকে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট লাভবান হবেন।
রিচম্যান বলেন, নতুন ইমেইলগুলো পর্যালোচনা না করা পর্যন্ত কোমির নীরব থাকা উচিত ছিল বলে যারা বলেন, তারা নভেম্বরের পর দেশ শাসন সম্পর্কে সামান্যই চিন্তা করেন। যদি এফবিআই’র পরিচালকের ব্যুরোর কাজে হস্তক্ষেপ করা থেকে কংগ্রেসকে বিরত রাখার এবং কোনো বিষয় দেখা হয়েছে বা হচ্ছে বলে কংগ্রেসকে আশ্বস্ত করার ক্ষমতা না থাকে তাহলে নতুন প্রশাসনকে চড়া মূল্য দিতে হবে।
উভয় দলের সাবেক আইন বলবতকারী কর্মকর্তারা বলছেন যে, বিচার বিভাগের দিকনির্দেশনা ভঙ্গ করার কোমির সিদ্ধান্ত এ সমস্যার সৃষ্টি করেছে। গ্রীষ্মে ক্লিনটন ফাউন্ডেশন ও মানাফোর্টের ব্যাপারে তদন্ত এফবিআই যেভাবে সামাল দিয়েছিল, তিনিও যদি সেভাবে তা সামাল দিতেন তাহলে তিনি ভবিষ্যতে রিপাবলিকানদের সমালোচনার সম্মুখীন হতে পারতেন, কিন্তু সেক্ষেত্রে তিনি বৃহত্তর নীতি রক্ষা করতে পারতেন।
ইউক্রেন ঘটনায় জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণা চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করা মানাফোর্টের সাথে বিদেশীদের সম্পর্ক নিয়ে ওয়াশিংটনে এজেন্টরা তদন্ত করছে। ২০০৫ সাল থেকে এক দশক ধরে মানাফোর্ট ২০১০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভিক্টর এফ. ইয়ানুকোভিচসহ ইউক্রেনের রাজনীতিকদের পরামর্শ দেন। মানাফোর্ট ও হিলারি সংশ্লিষ্ট ঘটনাগুলো পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক ফেডারেল আইন বলবতকারী কর্মকর্তাগণ কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে।
একটি ইমেইলে মানাফোর্ট তার ব্যবসায়িক লেনদেনে এবিআই’র তদন্তের কথা অস্বীকার করেন এবং বলেন যে, এগুলো হচ্ছে ডেমোক্র্যাটদের পরিচালিত ক্ষোভের ময়লা যারা হুমা আবেদিনের ইমেইল থেকে মনোযোগ সরাতে চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, আমার ব্যবসায়িক কর্মকা- নিয়ে তদন্তের কিছু নেই। আগস্টে দি নিউইয়র্ক টাইমস-এর খবরে বলা হয়েছিল যে, ইউক্রেনের দুর্নীতি দমন তদন্তকারীরা মানাফোর্টকে গোপনে ১২.৭ মিলিয়ন ডলার অর্থ দেয়ার হাতে লেখা লেজার খুঁজে পেয়েছেন। ইউক্রেনের নব প্রতিষ্ঠিত জাতীয় দুর্নীতি দমন ব্যুরোর তদন্তকারীরা জোর দিয়ে বলেন যে, এ অর্থ প্রদান হচ্ছে অবৈধ লেনদেনের একটি অংশ যার সুফলভোগীদের মধ্যে নির্বাচিত কর্মকর্তারাও ছিলেন।
টাইমস পত্রিকার খবরে বলা হয়, ইউক্রেনে অন্যান্য কৌঁসুলিরা অফশোর শেল কোম্পানিগুলোর একটি গ্রুপকে পরীক্ষা করছে যে, ইয়ানুকোভিচের অন্তরঙ্গ মহলের সদস্যরা বিলাসী জীবনযাপনের অর্থায়নের জন্য ব্যবহার করতেন যার মধ্যে ছিল ব্যক্তিগত চিড়িয়াখানা, গলফকোর্স ও টেনিসকোর্টসহ একটি প্রেসিডেন্ট প্রাসাদও। ঐ কৌঁসুলিরা ১৮ মিলিয়ন ডলারের এক চুক্তি যাতে ইউক্রেনীয় কেবল টেলিভিশন সম্পদ মানাফোর্ট এবং এক রুশ ধনকুবের ও প্রেসিডেন্ট পুতিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র ওলেগ ডেরিপাসকার যুগ্ম অংশীদারিত্বের কাছে বিক্রি করা হয়েছে সেটিসহ বহু লেনদেনের বিষয়ও অনুসন্ধান করছেন।
মানাফোর্টের ব্যবসায়িক লেনদেন সম্পর্কে টাইমসের রিপোর্ট প্রকাশের চারদিন পর তিনি ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণার চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এফবিআই’র অপরাধ তদন্ত অব্যাহত রয়েছে যদিও এজেন্টরা বিচার বিভাগের দিক নির্দেশনা অনুসরণ করছেন এবং এ বিষয়ে প্রকাশ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি।
একই সময়ে আগস্ট মাসে মানাফোর্ট তদন্ত নিম্নমাত্রায় রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এফবিআই ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের ব্যাপারে সমন জারি করবে কিনা তা নিয়ে সমস্যায় পড়ে। মানাফোর্ট ঘটনার মতই তা ছিল প্রাথমিক পর্যায়ে। এ মামলার ব্যাপারে ব্রিফকৃত কয়েকজন আইন বলবতকারী কর্মকর্তার মতে, নিউইয়র্ক ভিত্তিক তদন্তটি বেশি সাক্ষ্য প্রমাণ যোগাড় করতে পারেনি এবং তার অধিকাংশ তথ্যের ভিত্তিই ছিল সংবাদপত্রের খবর এবং ‘ক্লিনটন ক্যাশ’ নামক বই।
এ বইতে দৃঢ়তার সাথে বলা হয়েছে যে, বিদেশী সূত্রগুলো সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও ক্লিনটন ফাউন্ডেশনকে অর্থ দিয়েছে এবং বিনিময়ে হিলারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে পররাষ্ট্র দফতরের কাছ থেকে আনুকূল্য লাভ করেছে। হিলারি দৃঢ়তার সাথে এ দাবি অস্বীকার করেছেন।
বিচার বিভাগ ও এফবিআই’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিভিন্ন বৈঠকে একমত হন যে ক্লিনটন ফাউন্ডেশন প্রকাশ্য তদন্ত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে এবং এ ধারণা হতে পারে যে তারা ট্রাম্পের পক্ষে কাজ করছেন। তবে তারা স্বীকার করেন যে এ ব্যাপারে অপেক্ষা করা হলে রিপাবলিকানদের সমালোচনার পথ খুলে যেতে পারে যারা তদন্ত করার দাবি করছিলেন।
তারা মামলাটি চালু রাখতে এবং তাদের পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে সম্মত হন। এ সিদ্ধান্ত কিছু এজেন্টকে ক্ষুব্ধ করে যারা ভাবেন যে এফবিআই নেতারা রাজনৈতিক কারণে তাদের নিয়ন্ত্রণ করছেন।
কোমির মিত্ররা বলছেন, গত সপ্তাহে তিনি যখন শুনলেন যে এজেন্টরা হুমা আবেদিনের ছাড়াছাড়ি হওয়া স্বামী ্অ্যান্থনি ডি.ওয়েইনারের ল্যাপটপ থেকে নতুন ইমেইল আবিষ্কার করেছে তখন তিনি আর নির্দেশনা অনুসরণ করেননি। তিনি ভাবলেন, এ অনুসন্ধানের খবর নিশ্চিত ভাবে প্রকাশ পাবে এবং তখন মনে হবে যে তিনি কংগ্রেসের কাছ থেকে তথ্য লুকিয়েছেন। কর্মকর্তারা বলেন, তিনি আরো ভাবলেন যে ক্লিনটন ঘটনায় তিনি শুধু একাই বিশ^স্ত কন্ঠ।
তবে এফবিআই এজেন্টরা যাদের অনেকেই কোমি ও তার নেতৃত্বসুলভ রীতির বলিষ্ঠ সমর্থক, তারা তার সিদ্ধান্তের পক্ষে লড়াই করেছেন। তারা স্বীকার করেন যে তিনি এক বাধ্যবাধকতার মধ্যে রয়েছেন, তবে তারা বলেন, এফবিআই’র বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সাম্প্রতিক ইতিহাসে দেখা যায়নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হিলারির ইমেইল তদন্তে এফবিআই’র সিদ্ধান্তে প্রচলিত রীতিনীতি উপেক্ষা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ