Inqilab Logo

শুক্রবার ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৯ ভাদ্র ১৪৩১, ০৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

এবার সরাসরি পণ্য যাবে ইউরোপে

রফতানিতে সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মুক্ত চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়েছে ‘এমভি সোঙ্গা চিতা’

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০৩ এএম

চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়েছে আলোচিত জাহাজ ‘এমভি সোঙ্গা চিতা’। এই জাহাজে সরাসরি চট্টগ্রাম থেকে ইউরোপের দেশে যাবে রফতানি পণ্য। এ জাহাজকে ঘিরে বাংলাদেশের জন্য উম্মুক্ত হতে যাচ্ছে নতুন সমুদ্র পথ। রফতানি বাণিজ্যে যোগ হচ্ছে নতুন দিগন্ত। পণ্য রফতানিতে সময় এবং অর্থ সাশ্রয় করতে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সরাসরি ইউরোপ যাবে জাহাজ- এমন প্রত্যাশা বহুদিনের। সেই স্বপ্ন এবার বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে। সরাসরি পণ্য রফতানি হলে ইউরোপের বাজার বাড়ার সম্ভাবনা দেখছেন ব্যবসায়ীরা।

কারণ এখন আগের চেয়ে কম খরচে এবং কমপক্ষে ১৩ থেকে ১৫ দিন আগে পণ্য পৌঁছানো যাবে। এসব কারণে সোঙ্গা চিতার আগমনকে অন্য মাত্রা দিয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তারা জানান, গতকাল শনিবার জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটিতে ভিড়েছে। আগামীকাল সোমবার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ইতালির রেভেনা বন্দরের উদ্দেশ্যে ৯৮৩ রফতানি পণ্যের কন্টেইনার নিয়ে যাত্রা করবে এমভি সোঙ্গা চিতা। সেজন্য সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে দেশের এ প্রধান সমুদ্র বন্দর কর্তৃপক্ষ। আজ রোববার বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান জাহাজটি পরিদর্শন করবেন। তার সাথে থাকবেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত।

চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তারা জানান, এমভি সোঙ্গা চিতা জাহাজটিকে সরাসরি বার্থিংয়ের সুবিধা দেওয়া হয়েছে। যাতে জেটিতে ভেড়ার জন্য বর্হিনোঙ্গরে অপেক্ষায় থাকতে না হয়। এছাড়া জাহাজটির কন্টেইনার উঠা-নামায় গ্যান্ট্রি ক্রেনসহ সব কারিগরি ও প্রশাসনিক কাজেও অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে, যাতে দ্রুত সেটি গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হতে পারে। গেল বছরের ডিসেম্বরে আরেকটি জাহাজের পরীক্ষামূলক যাত্রা সফল হওয়ায় এবার নিয়মিত যাত্রা শুরু হচ্ছে। এখন থেকে দুটি জাহাজ নিয়মিত চলবে বাংলাদেশ থেকে সরাসরি ইউরোপের পথে। বর্তমানে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের অন্যতম বৃহৎ বাজার ইউরোপের দেশগুলোতে পণ্য রফতানি হয় সিঙ্গাপুর, কলম্বোসহ অন্য দেশের মাদারপোর্ট ঘুরে। সেখানে অপেক্ষায় থাকতে হয় বড় জাহাজের বুকিং পেতে। এতে ক্রেতাদের হাতে পণ্য পৌঁছাতে দেরি হয়, খরচও বাড়ে। প্রতিযোগীদের চেয়ে পিছিয়ে পড়ার বড় কারণ এটাও। মাদারপোর্টগুলোতে জটের কারণে জাহাজে বুকিং পেতে দেরি হয়ে যাওয়ায় বিদেশে রফতানি বিঘ্নিত হয়। তাতে বাজার হারানোর আশঙ্কাও তৈরী হয়। এসব বাধা দূর করতে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রথমবারের মত ইউরোপের ইতালিতে শুরু হচ্ছে জাহাজে করে সরাসরি রফতানি পণ্য পরিবহন।

জানা গেছে, ইতালিসহ ইউরোপের কয়েকজন ক্রেতার আগ্রহে ইতালির ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার প্রতিষ্ঠান আরআইএফ লাইন এবং সহযোগী প্রতিষ্ঠান ক্যালিপসো কোম্পানিয়া ডি নেভিগেশন চট্টগ্রাম-ইতালি সরসারি জাহাজ চলাচলের এই সেবা চালু করছে। এ সেবার স্থানীয় প্রতিনিধি রিলায়েন্স শিপিং অ্যান্ড লজিস্টিকস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রাশেদ জানিয়েছেন ৯৪৫ টিইইউএস খালি কন্টেইনার এবং ক্যাপিটাল মেশিনারি ভর্তি সাত টিইইউএস কন্টেইনার নিয়ে জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছে। ফেরার সময় ৯৮৩ টিইইউএস কন্টেইনার নিয়ে যাবে, যেগুলোর ৯৮ শতাংশই তৈরি পোশাক। ইতালির ক্রেতাদের পাশাপাশি ইউরোপের আরও কয়েকটি দেশের ক্রেতাদের অর্ডার করা তৈরি পোশাক থাকবে তাতে। এর আগে গত ২৩ ডিসেম্বর ইতালি থেকে খালি কন্টেইনার নিয়ে পরীক্ষামূলক যাত্রায় চট্টগ্রামে পৌঁছায় ‘ক্যাপ ফ্লোরেস’ নামের একটি জাহাজ। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে যাত্রার পর ১৬-১৭ দিনে জাহাজটি ইতালির রেভেনা বন্দরে পৌঁছাবে। আর সরাসারি হওয়ায় ভাড়া ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ কমে যাবে। আপাতত দুটি জাহাজ চলবে। সফল হলে জাহাজের সংখ্যা আরও বাড়বে।

নতুন এ সমুদ্রযাত্রাকে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে বাংলাদেশের পণ্য রফতানির নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে বলে মনে করেন রফতানিকারক, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও বিদেশি ক্রেতাদের প্রতিনিধি ফ্রেইট ফরোয়ার্ডাররা। তারা বলছেন, সরাসারি যাত্রায় খরচ ও সময় কমলে ইউরোপের দেশগুলোর পাশাপাশি আমেরিকান ক্রেতারাও আগ্রহী হয়ে উঠতে পারেন। সেক্ষেত্রে পোশাক রফতানি খাতে প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে লড়াইয়ে আরও একধাপ এগিয়ে যেতে পারবে বাংলাদেশ। তাতে সমৃদ্ধ হবে দেশের অর্থনীতি।

বিজিএমইএ নেতারা বলছেন, তৈরী পোশাকের ৪০ শতাংশই যায় ইউরোপের দেশগুলোতে। ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দর হয়ে সেখানে পৌঁছাতে সময় লাগে ৩০ দিনের মত। এই সার্ভিসে আগের তুলনায় পণ্য পৌঁছাবে অর্ধেক সময়ে। খরচও কমবে। এটা সফল হলেই ইউরোপের অন্য দেশগুলোও সরাসরি জাহাজে পণ্য পরিবহন শুরু করে দেবে বলে আশা করেন তারা। ইতালির আশেপাশে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাকের ক্রেতা অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রিস, বুলগেরিয়া, স্পেন, রুমানিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থাকায় এ যাত্রার সাফল্য সেসব দেশকেও সরাসরি পণ্য পরিবহনে আগ্রহী করে তুলতে পারে বলে মনে করেন রফতানিকারকেরা। এতদিন ভিয়েতনাম, লাওস, কম্বোডিয়া, হংকং, চীনসহ অন্য দেশগুলো সরাসরি ইউরোপে রফতানিপণ্য পাঠালেও বাংলাদেশ পিছিয়ে ছিলো।



 

Show all comments
  • Adv Parvin Najiyah ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১:৪০ এএম says : 0
    যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এতে দেশের বাণিজ্য বাড়বে।
    Total Reply(0) Reply
  • হাসান আল মেহেদী ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১:৪০ এএম says : 0
    ইউরোপের মার্কেটে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়বে বলে আশা করি।
    Total Reply(0) Reply
  • মামুন রশিদ চৌধুরী ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১:৪১ এএম says : 0
    অত্যন্ত ভালো উদ্যোগ। ইউরোপের সাথে বাণিঝ্য জোরদার হোক।
    Total Reply(0) Reply
  • Mahammad Jakir Saiyed ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৮:২৪ পিএম says : 0
    আমি একজন ভারতীয় । আমি চাই বাংলাদেশের আরো উন্নতি হোক আসা করি ।। ইনশাআল্লাহ একদিন এই ছোট বাংলাদেশ খুব জলদি তার স্বপ্নের গন্তবে হাজির হবে ।।।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ণ্য যাবে ইউরোপে

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ