Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

সুন্দরবনের ‘ঝুঁকি’ পর্যবেক্ষণে আসছে ইউনেস্কো দল

প্রকাশের সময় : ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : তেল ও কয়লাবাহী জাহাজডুবির পাশাপাশি রামপাল প্রকল্পের কারণে সুন্দরবনের পরিবেশগত ঝুঁকি মোকাবেলায় সরকারের পদক্ষেপ জানতে ইউনেস্কোর একটি প্রতিনিধি দল আগামী মাসে (মার্চ) বাংলাদেশে আসছে।
প্রতিনিধি দলটি তিন মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকাবাসী, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, গণমাধ্যম, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করবে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন প্রধান বন সংরক্ষক মো. ইউনুছ আলী। তিনি বলেন, ‘সুন্দরবনের আউটস্ট্যান্ডিং ইউনিভার্সেল ভ্যালুস-রক্ষায় আমাদের ম্যানেজমেন্ট পরিকল্পনা কী, তেল ও কয়লা জাহাজডুবির ঘটনায় কোনো ক্ষতি হচ্ছে কি না এবং রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে সম্ভাব্য ঝুঁকি মোকাবেলায় সরকারের প্রস্তুতি দেখতে তারা আসবে।’ মার্চে সুবিধাজনক সময়ে অন্তত এক সপ্তাহের জন্য বিশেষজ্ঞ দলটি আসবে বলে ইউনুছ জানান।
প্রতিনিধি দলে সিঙ্গাপুর, কানাডা ও জেনেভার বিশেষজ্ঞরা থাকবেন। আইইউসিএন-এর একটি প্রতিনিধি দলও তাদের সঙ্গে থাকবে। সবার সঙ্গে আলোচনা শেষে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন ইউনেস্কোর সদরদপ্তরে পাঠাবেন বলে জানান সরকারি এ কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, ‘এটা একটা ইতিবাচক দিক। আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে প্রকৃত চিত্র তুলে ধরতে ইউনেস্কোর এ ধরনের উদ্যোগ ভালো।’
তিন সদস্যের এ দল নৌ, জ্বালানি ও খনিজ এবং বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করবে বলে জানান ইউনুছ আলী। ‘সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে নৌ চলাচল দেখভাল করে নৌ মন্ত্রণালয়। জাহাজডুবির পর সুন্দরবন সংলগ্ন প্রতিবেশ, পানি-মাটি ও মাছের কী ক্ষতি হয়েছে, কী কী আরও হতে পারে, তা নিরূপণে আলোচনা হবে।’
এছাড়া ও বিদ্যমান পরিবেশে সম্পদ আহরণ-ব্যবস্থাপনায় পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় কী কী উদ্যোগ নিয়েছে তা নিয়ে আলোচনা হবে; আর জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের কাছে রামপাল নিয়ে সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলো চিহ্নিত করা এবং তা মিটিগেশনের কী উপায়, পদক্ষেপ কী নেয়া হচ্ছে, তা জানতে চাইবে তারা।
জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা- ইউনেস্কো ১৯৯৭ সালে বিশ্বের বর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনকে ‘বিশ্বঐতিহ্য’র তালিকাভুক্ত করে। ২০১২ সালে বাংলাদেশ সরকার সুন্দরবন সংলগ্ন বাগেরহাটের রামপালে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ভারতের সঙ্গে চুক্তি করে। চুক্তির পর থেকেই তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটিসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ উদ্যোগে নির্মিত কয়লাভিত্তিক এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তীব্র বিরোধিতা করে আসছে।
তাদের ভাষ্য, এই প্রকল্প সুন্দরবন ও সেখানে থাকা বণ্যপ্রাণীদের জন্য ‘ভয়াবহ হুমকি’র কারণ হয়ে উঠবে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর সুপার ক্রিটিক্যাল টেকনোলজি ও উন্নতমানের আমদানি করা কয়লা ব্যবহার করা হবে। এতে সালফার, ফ্লাইঅ্যাশ ও অন্যান্য উপাদানজনিত বায়ুদূষণের পরিমাণ ‘ন্যূনতম পর্যায়ে’ থাকবে, যার ফলে পরিবেশের ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে না।
রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প সুন্দরবনের কফিনে
প্রধান পেরেক -সুলতানা কামাল
রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পকে সুন্দরবনের কফিনের প্রধান পেরেক হিসেবে মন্তব্য করে অনতিবিলম্বে প্রকল্পের কাজ বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি। কমিটির পক্ষ থেকে সুন্দরবনের পাশে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর বিদ্যুৎ প্রকল্প ও কারখানা বন্ধে সরকারের হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়েছে। গতকাল (শনিবার) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল এ দাবি জানান।
সুন্দরবনের পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষা (ইআইএ) সঠিকভাবে হয়নি মন্তব্য করে সুলতানা কামাল তা প্রত্যাখ্যান করেন। জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে রামপাল প্রকল্পের ইআইএ করার দাবি জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন বলেন, সরকার সুন্দরবন রক্ষার বিষয়টি পাত্তাই দিচ্ছে না। এ কারণে সুন্দরবনের চারপাশে পরিবেশ ধ্বংসকারী বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান করার উদ্যোগ অনুমোদন দিচ্ছে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের অন্যতম ক্ষতিগ্রস্ত দেশ। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব দরবারে জলবায়ু ক্ষতির বিষয়টি বেশ ভালোভাবে তুলে ধরছেন। কিন্তু সরকার দেশের মধ্যেই সুন্দরবনের পাশে এমন শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছে, যা বাংলাদেশকে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ শামসুল আলম বলেন, সুন্দরবন আমাদের সুরক্ষা দিচ্ছে তাই সুন্দরবনকে সুরক্ষা দেয়া আমাদের দায়িত্ব। দেশে-বিদেশে রামপাল ইআইএ প্রত্যাখ্যাত হয়েছে এ মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমরা অক্ষত সুন্দরবন চাই।
প্রকল্পের পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষা (ইআইএ) সঠিকভাবে হয়নি দাবি করে জাতিসংঘের অধীনে রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষা (ইআইএ) করার দাবি জানান সুলতানা কামাল এ কথা জানান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সুন্দরবনের ‘ঝুঁকি’ পর্যবেক্ষণে আসছে ইউনেস্কো দল
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ