পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শুধু রফতানি বাণিজ্যেই নয়, আমদানি বাণিজ্যের পালেও হাওয়া লেগেছে। রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়ে চলেছে বাংলাদেশ। যদিও আমদানির এ তথ্য করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় সময় গত ডিসেম্বর পর্যন্ত। ওই সময়ে বিভিন্ন পণ্যের আমদানি বাড়ছে অস্বাভাবিক গতিতে। আর এতে অর্থনীতি গতি ফিরে পেয়েছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সম্প্রতি বলছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি মহামারির পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে। খুব শিগগিরই তা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। গত ডিসেম্বর মাসে ৮৪৩ কোটি ৬৭ লাখ (৮ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন) ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি (সি এন্ড এফ) করেছে বাংলাদেশ, যা ২০২০ সালের ডিসেম্বরের চেয়ে ৫৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেশি। বর্তমান বিনিময়হার (প্রতি ডলার ৮৬ টাকা) হিসাবে টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ৭২ হাজার ৫৫৬ কোটি টাকা।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই এক মাসে পণ্য আমদানিতে এতো বেশি অর্থ ব্যয় হয়নি। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাওয়া লেগেছে আমদানির পালে। বাড়ছে ডলারের চাহিদা। এতে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভে পড়েছে টান। বেড়ে যাচ্ছে ডলারের দাম; কমছে টাকার মান। এর আগে নভেম্বর মাসে ৭৮৫ কোটি ৪৬ লাখ (৭ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছিল, যা ছিল এক মাসের হিসাবে এতদিন সর্বোচ্চ।
আমদানি বাড়াকে দেশের অর্থনীতির জন্য মঙ্গল বলছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা। তবে, রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে রফতানির পাশাপাশি রেমিট্যান্স আরও বাড়ানোর দিকে জোর দিতে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন তারা। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএসস) গবেষক ও রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখত বলেন, আমদানি বাড়া মানে বিনিয়োগ বাড়া। বিনিয়োগ বাড়া মানে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হওয়া। সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার হওয়া।
বাংলাদেশ ব্যাংক গত বৃহস্পতিবার আমদানি সংক্রান্ত হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায় চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথমার্ধে অর্থাৎ জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে সবমিলিয়ে ৪ হাজার ২১২ কোটি ২৫ লাখ (৪২ দশমিক ১২ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য আমদানি করেছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৫৪ দশমিক ৫০ শতাংশ বেশি।
২০২০-২১ অর্থবছরের এই ছয় মাসে ২ হাজার ৭২৬ কোটি ৯২ লাখ (২৭ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছিল, যা ছিল আগের বছরের (২০১৯-২০) জুলাই-ডিসেম্বর চেয়ে ৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ কম।
করোনা মহামারির কারণে আমদানি কমে যাওয়ায় গত অর্থবছরের প্রথমার্ধে আমদানি বেশ কমে গিয়েছিল। কিন্তু ইউরোপ-আমেরিকাসহ অন্যান্য দেশে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় দ্বিতীয়ার্ধে এসে আমদানি বাড়তে শুরু করে। শেষ পর্যন্ত ৬৫ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলারের রেকর্ড আমদানি খরচ নিয়ে ২০২০-২১ অর্থবছর শেষ হয়। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের শুরু থেকে বাংলাদেশেও করোনার প্রকোপ স্বাভাবিক হতে শুরু করে। দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুরোদমে চালু হয়। সেই সঙ্গে বাড়তে থাকে আমদানি। এখন প্রতি মাসেই রেকর্ড হচ্ছে।
বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আমদানি বাড়াকে দেশের অর্থনীতির জন্য ‘মঙ্গল’ হিসেবেই দেখছেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক মঞ্জুর হোসেন। তিনি বলেন, গত দুই বছর করোনা মহামারির মধ্যেই দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়েছে। প্রথম দিকে আমদানি কমলেও পরে বেড়েছে। এখন করোনার প্রকোপ ফের বাড়লেও উৎপাদন কর্মকাণ্ডসহ সবকিছুই চলছে স্বাভাবিক গতিতে। তাই আমদানি বাড়ছে। এটা অর্থনীতির জন্য ভালো। মঞ্জুর হোসেন বলেন, পদ্মা সেতু, বঙ্গবন্ধু টানেল, মেট্রোরেলসহ বড় বড় প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলেছে। এ সব প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আমদানিতে মোটা অংকের অর্থ ব্যয় হচ্ছে। এ ছাড়া বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল, খাদ্যসহ অন্যান্য পণ্যের দামও বেড়েছে। এসব কারণেই গত অর্থবছরে আমদানি খাতে খরচ প্রথমবারের মতো ৬৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এবার আরও বাড়বে বলে মনে হচ্ছে। এতে উদ্বেগের কিছু নেই। করোনার পর বিশ্ববাজারে অনেক পণ্যের চাহিদা হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে। সে কারণে রফতানিতেও রেকর্ড হচ্ছে। দেশের ভেতরেও চাহিদা বেড়েছে। সব মিলিয়ে সব খাতে উৎপাদন কর্মকাণ্ড চালাতে গিয়ে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, কাঁচামালসহ সব পণ্যের প্রয়োজন হচ্ছে। সে কারণেই আমদানিতে জোয়ার এসেছে। এখানে একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, আমদানি বাড়া মানে বিনিয়োগ বাড়া। বিনিয়োগ বাড়া মানে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হওয়া। সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার হওয়া। তবে, আমদানির আড়ালে যাতে এক পণ্যের জায়গায় অন্য পণ্য না আসে, বিদেশে টাকা পাচার না হয়, সে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে সতর্ক থাকতে হবে।
গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, আশার কথা হচ্ছে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে এই জুনেই যান চলাচল করবে। মেট্টোরেলও চালু হবে এই বছরে; বঙ্গবন্ধু কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণকাজও শেষ হবে। এই তিনটি বড় প্রকল্প বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় ভিন্নমাত্রা যোগ করবে। আরও কয়েকটি বড় প্রকল্পের কাজ চলছে। কয়েকটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ শেষ হয়েছে। আরও কয়েকটির কাজ চলছে। সে পরিস্থিতিতে ২০২৩ সাল থেকে অন্য বাংলাদেশ পাবে দেশবাসী। আর এসব উন্নয়নযজ্ঞকে কেন্দ্র করেই বিনিয়োগের ছক কষছেন উদ্যোক্তারা। সে সব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পণ্য সরঞ্জাম আমদানি করছেন তারা। এতেই বাড়ছে আমদানি। তিনি বলেন, স্বস্তির জায়গা হচ্ছে আমাদের রিজার্ভ এখনও সন্তোষজনক অবস্থায় আছে। রফতানিও আয় ভালো আসছে। কয়েক মাস কমলেও এখন আবার রেমিট্যান্স বাড়তে শুরু করেছে। তাই আমদানি বাড়লেও চিন্তার কিছু নেই।
রফতানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেছেন, করোনার নতুন ধরন ওমিকনের মধ্যেও আমাদের রফতানির প্রধান বাজার ইউরোপ-আমেরিকায় রফতানি বাড়ছে। এখন করোনাকে সঙ্গে নিয়েই সব দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। মানুষ আগের মতো পোশাক কিনছে। সে কারণে প্রচুর অর্ডার পাওয়া যাচ্ছে। রফতানিতে উল্লম্ফন হচ্ছে। দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এতে রফতানিসহ অন্যান্য খাতের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল, ক্যাপিটাল মেশিনারিসহ অন্যান্য পণ্যের আমদানি বাড়ছে। তার প্রভাব পড়েছে সামগ্রিক আমদানিতে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সঙ্গে বিদ্যমান ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের পাশাপাশি নতুন বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। এ কারণে মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানির পালে হাওয়া লেগেছে। এ ছাড়া রফতানি বৃদ্ধির কারণে বেড়েছে শিল্পের কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্যের আমদানিও।
গত ২৬ জানুয়ারি ‘বাজেট ২০২১-২২: প্রথম প্রান্তিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি ও আয়-ব্যয়ের গতিধারা এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ সংক্রান্ত প্রতিবেদন’ জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। করোনার বৈশ্বিক বিপর্যয়ের কারণে উচ্চ প্রবৃদ্ধির ধারা কিছুটা ব্যাহত হয়েছে জানিয়ে ওই প্রতিবেদনে তিনি বলেন, সরকারের নেয়া বিভিন্ন কার্যক্রমের ফলে দ্রুতই প্রবৃদ্ধি ঘুরে দাঁড়ায়। রাজস্ব আয়, রফতানি প্রবৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, ব্যাপক মুদ্রা সরবরাহ ও মূল্যস্ফীতিসহ মৌলিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচকগুলোর অবস্থান সন্তোষজনক। টাকা-ডলার বিনিময় হার স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নেও ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে। ফলে খুব শিগগির অর্থনীতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) পণ্য রফতানি থেকে ২৯ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ; যা গত অর্থবছরের চেয়ে ৩০ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ছিল ২২ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, এই সাত মাসে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স কমেছে ১৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ। জুলাই-জানুয়ারি সময়ে মোট ১১ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যঅন্স এসেছে দেশে। গত অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ১৪ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার।
রিজার্ভে টান
আমদানির জোয়ারে বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভে টান পড়েছে। গত বৃহস্পতিবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪৫ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার। গত ৫ জানুয়ারি এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের আমদানি বিল পরিশোধের পর বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ ৪৪ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছিল। গত এক মাসে তা বেড়ে এখন ৪৫ বিলিয়ন ডলারের ওপর অবস্থান করছে। অথচ গত বছরের আগস্টে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙ্গে ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।