পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মো: শামসুল আলম খান : বাঙালির অনেক উৎসবের মতোই পিঠা উৎসব অনেক প্রাচীন অনুষঙ্গ। যান্ত্রিকতার শেকলে বাঁধা জীবনে চিরায়ত ঐতিহ্যের প্রতীক পিঠা-পায়েস উৎসব এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। অনেকটাই ভাটার টান পড়েছে এ সংস্কৃতিতে। ফলত পিঠা-পুলির সঙ্গে বাঙালির চিরন্তন মিলন মোহনার অনির্বচনীয় আনন্দও ফিকে হয়ে আসছে।
পঞ্জিকার নিয়ম অনুসারে প্রকৃতি থেকে বিদায় নিয়েছে শীত। আর মাঘের শেষ দিনে অবিচ্ছেদ্য এ গ্রামীণ ঐতিহ্য বেশ ঘটা করেই উদযাপন করলো বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা কল্যাণ সমিতি। এমন আয়োজনে রকমারি পিঠার চিরচেনা স্বাদ ও গন্ধ মাতিয়ে দিলো সবাইকে। বিলুপ্ত প্রায় এ উৎসবে এসে অনেকেই যেন ফিরে গেলেন হারানো শৈশবে।
শুক্রবার রাতে ময়মনসিংহ নগরীর ৫০ বাউন্ডারী রোডস্থ গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজে এ উৎসবের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য ও ময়মনসিংহের সাবেক জেলা প্রশাসক লোকমান হোসেন মিয়া।
বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা কল্যাণ সমিতির সভাপতি নাজমুল ইসলামের সভাপতিত্বে এ উৎসবে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগ সদস্য মো: ইকরামুল হক টিটু।
ফাগুনের হাত ধরেই প্রকৃতিতে আসে বসন্ত। বাঙালির মিলন বার্তা বাহক ঋতুরাজ বসন্তের সূচনার খানিক সময় আগে অনিন্দ্য সুন্দর এ পিঠা উৎসবে ঠাঁই পায় ভাপা, পাটি সাপটা, তেলের পিঠা, নকশী পিঠা, ঝাল পিঠা, চিতই পিঠা, সবজি পুলি, কলার পিঠা, ডালিম পিঠা, লবঙ্ক পিঠা, ফুল পিঠাসহ ১৫ জাতের পিঠা।
প্রায় অর্ধ-শতাধিক কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অংশ নেয় এ পিঠা উৎসবে। বড় বড় বক্সে সাজানো রকমারি পিঠার স্বাদ-গন্ধ চেখে ও খেয়ে দেখতে মাঘের শেষ সন্ধ্যায় সেখানে হাজির হয়েছিলেন বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। তাদের মুখে মুখেও ছিল সুস্বাদু ও জনপ্রিয় এসব পিঠার গুণকীর্তন।
বাহারি নাম-বর্ণের এ পিঠা উৎসব চলার সময়েও মঞ্চের ঠিক বাম পাশে উনুনে আগুন চড়িয়ে চালের গুঁড়া, নারকেল আর খেঁজুরের গুড় দিয়ে ভাপা পিঠা তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছিলেন মো: সেলিম। পঁয়ত্রিশের মতো বয়স তার।
পাতলা কাপড়ের আস্তরণে হাঁড়ির টগবগে ফুটা গরম পানিতে ভাপ দিয়ে গোল আকারের এ পিঠা তৈরি করে যাচ্ছিলেন তিনি। নগরীর যে কোন উৎসব-পার্বণেই ভাপা পিঠা তৈরিতে ডাক পড়ে এই সেলিমের।
দু’জন সঙ্গী নিয়ে সন্ধ্যা থেকেই সহজলভ্য উপাদানে মজাদার এ পিঠা বানানোর ধুম পড়েছিল। এ জন্য মজুরি বাবাদ তিনি পাবেন ৩ হাজার টাকা।
বাঙালির চিরায়ত লোকজ সংস্কৃতির সঙ্গে নতুন প্রজন্মকে পরিচয় করিয়ে দিতেই নিজের স্কুল পড়ুয়া মেয়ে ফারহানা আক্তার জ্যোতিকে (১৪) নিয়ে পিঠা উৎসবে এসেছেন মিনারা খাতুন।
স্মৃতি হাতড়ে বলেন, এমন একটা সময় ছিল যখন আত্মীয় স্বজনদের নিমন্ত্রণ করে পিঠা খাওয়ানোর একটা রেওয়াজ প্রচলিত ছিল। কিন্তু এখন সেসব শুধুই স্মৃতি। শীতের সময়ে এখন আর সাত সকালে ঘরে আসা অতিথিদের পিঠা দিয়ে আপ্যায়ন করা হয় না।
এসবের ফলে দিনে দিনে পরিবারিক ও সামাজিক বন্ধনের মাধ্যমগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন সুদৃঢ় করার এ মাধ্যমে শহরের নতুন প্রজন্মের কাছে গ্রামীণ সংস্কৃতির পরিচয় করিয়ে দিতেই এ উৎসবের সুদূরপ্রসারী তাৎপর্য রয়েছে।
স্কুলপড়ুয়া জ্যোতি এ পিঠা উৎসবে আসতে পেরে যারপরনাই উচ্ছ্বসিত। তার মতে, পিঠা খাবারের চেয়ে এতো পিঠা একসঙ্গে দেখার আনন্দই আলাদা।
গত কয়েক বছর যাবত শীতে বাহারি পিঠা উৎসবের আয়োজন করে আসছেন বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা কল্যাণ সমিতির সভাপতি নাজমুল ইসলাম। পিঠা উৎসবের মধ্য দিয়ে তিনি বাঙালিত্বকে খুঁজে পান। কারিগরি শিক্ষা আন্দোলনের এ সংগঠকের মতে, অন্তত বছরের একটা দিন সবাই একসঙ্গে পিঠা খেয়ে প্রাণের উচ্ছ্বাসে মেতে উঠা নিঃসন্দেহে আনন্দের।
পিঠা উৎসব আয়োজনের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র মো: ইকরামুল হক টিটু বলেন, পিঠা উৎসব বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে বলিষ্ঠ করার একটি উদ্যোগ। এ উৎসবের মধ্য দিয়ে নিজেদের ভেতর সম্প্রীতি গড়ার সুযোগ তৈরি হয়।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য ও ময়মনসিংহের সাবেক জেলা প্রশাসক লোকমান হোসেন মিয়া বলেন, নানা টানাপোড়েনে বাঙালির জীবন থেকে পিঠা-পুলি উৎসব হারিয়ে যেতে বসেছে। এ উৎসবের মাধ্যমে আমরা একে অপরের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিচ্ছি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।