পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চাঞ্চল্যকর অনেক মামলারই তদন্ত প্রত্যাশিত সময়ে শেষ করতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এমনকি আসামি শনাক্ত, গ্রেফতার ও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি পাওয়ার পরও বিচারের জন্য আদালতে অনেক মামলার চার্জশিট জমা দিতে দেরি করছে তদন্তকারী সংস্থা। আর এসব কারণে শুরু হচ্ছে না স্পর্শকাতর বহু মামলার বিচার।
সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনী, ইসলামিক অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ফারুকী, গোপীবাগের লুৎফুর রহমান ফারুকসহ ৬ জন, ধানমন্ডির চিকিৎসক কাজী সাবিরা রহমান লিপি, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যাকান্ড অন্যতম।
এছাড়াও অ্যাডভোকেট, শিক্ষক-শিক্ষিকা, ব্যবসায়ী, রাজনীতিক খুনের ঘটনাগুলো দীর্ঘ সময়েও রহস্য উদ্ঘাটিত না হওয়ায় তদন্ত কার্যক্রম ডিপফ্রিজে চলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। কোন কোন খুনের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) পরিবর্তন করা হয়েছে এক ডজনেরও বেশি বার। এসব চাঞ্চল্যকর খুনের মামলা তদন্ত করছে পুলিশ, র্যাব, সিআইডি, ডিবি ও থানা পুলিশ। অথচ হত্যা রহস্য উদ্ঘাটিত হচ্ছে না দীর্ঘদিনেও।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ক্লুলেস খুনের ঘটনাগুলোর তদন্ত কর্মকর্তা বদল হয়েছে বারবার। অনেক খুনের ঘটনার রহস্য উন্মোচনে দীর্ঘসূত্রতায় পড়ে গেছে। কোন কোন ঘটনায় খুনীরা এতই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও ধূর্ত যে খুনের ঘটনা এমনভাবে ঘটানো হয়েছে, আসলেই ক্লুলেস করে রাখা হয়েছে। এসব ক্লুলেস খুনের ঘটনা তদন্তের এক পর্যায়ে এসে হাল ছেড়ে দিয়েছে তদন্ত কর্তৃপক্ষ। আবার এমনও হয়েছে যিনি একটি চাঞ্চল্যকর খুনের ঘটনা তদন্ত করছেন তার কাঁধে আরও একটি চাঞ্চল্যকর খুনের ঘটনা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। এতে তদন্ত কর্মকর্তা আর কিনারা করতে পারছেন না। মামলার তদন্তের ভাগ্য চলে গেছে ডিপফ্রিজে।
সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ ইনকিলাবকে বলেন, রাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী সবার বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। সঠিক সময়ের মধ্যে অনেক হত্যা মামলার তদন্ত শেষ হচ্ছে না। ফলে নিহতের পরিবার বা অন্যান্যরা ন্যায় বিচার পেতে বিলম্ব হচ্ছে। অনেকে ক্ষেত্রে অনেকেই ন্যায় বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
তিনি বলেন, বিচারের জন্য দুটি প্রক্রিয়া রয়েছে। এর একটি হচ্ছে তদন্ত এবং অপরটি হলো আদালতের মাধ্যমে। আমাদের দেশের পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে তদন্তকারী কর্মকর্তার চেয়ে মামলার সংখ্যা অনেক বেশি এবং অন্যান্য জটিলতাও রয়েছে। ফলে হত্যার মতো গুরুত্বপূর্ণ মামলার তদন্ত ফাইল চাপা পড়ে রয়েছে। নিহতের পরিবারের বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। তদন্ত বিলম্বিত হওয়ায় ন্যায় বিচার বিঘ্ন ঘটে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, চাঞ্চল্যকর হত্যার মধ্যে কয়েকটি মামলা ঝুলে আছে দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে। পাঁচ বছরেও হত্যাকাণ্ডের মোটিভই উদ্ঘাটন করা সম্ভব হয়নি এমন মামলাও আছে। তদন্ত চলছে, শিগগিরই অগ্রগতি সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যাবে, এমন কিছু বক্তব্য দিয়েই পুলিশের তদন্ত সংস্থা দায় এড়িয়ে যাচ্ছে।
পুলিশ সদর দফতরের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স উইংয়ের এআইজি মো. কামরুজ্জামান ইনকিলাবকে বলেন, হত্যা মামলার তদন্তের সময় আদালত থেকে নিতে হয়। প্রকৃত খুনীদের গ্রেফতার এবং তদন্ত সম্পন্ন করতে অনেক লম্বা সময় লেগে যায়। সব মামলা দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করা সম্ভব হয় না। তবে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাই বিলম্বের সঠিক কারণ বলতে পারবেন।
তদন্ত বিলম্ব হলে হত্যাকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত খুনীরা ছাড় পেয়ে যায় এবং অনেক সময় নিহতের পরিবার ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দীর্ঘ সময় পরেও তদন্তে খুনীদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে এমন অনেক নজির রয়েছে। হত্যা মামলার তদন্তে পুলিশের প্রতিটি ইউনিট বিচক্ষণতার সাথে তদন্ত করছে বলে এআইজি মো. কামরুজ্জামান মন্তব্য করেন।
মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন ইনকিলাবকে বলেন, অনেক হত্যা মামলার তদন্ত বছরের পর বছর শেষ হয় না, এটা বিচারহীনতার বিষয় বলে আমি মনে করি। হত্যা মামলার তদন্ত বিলম্বিত হলে এ ধরণের ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা থাকে। হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় আনা এবং দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করা হলে এমন অপরাধ করতে অনেকেই ভয় পাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, পুলিশের অদক্ষতা ও অজ্ঞাত কারণে চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার রহস্য অনুদ্ঘাটিত রয়ে যাচ্ছে। আসামিরাও চিহ্নিত হচ্ছে না। ফলে বিচার পাচ্ছে না নিহতদের পরিবারের সদস্যরা। তবে ঘাতকরা এমন কিছু আলামত রেখে যায় তাতে খুনীদের শনাক্ত করা খুব সহজ। অবশ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করে হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারে এমন দক্ষতা পুলিশের মধ্যে গড়ে ওঠেনি। পুলিশের দক্ষতা বাড়াতে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেয়া প্রয়োজন। অন্যথায় পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থা দিন দিন কমবে।
চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলা তদন্ত করছেন এমন বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, পুরনো মামলার তদন্ত করতে গিয়ে তারা দেখতে পেয়েছেন, দীর্ঘদিনে খুনের ঘটনাস্থলও আর আগের মতো নেই। খুনের পারিপার্শ্বিক অনেক কিছুই তারা পাচ্ছেন না। শুরুতে খুনের নেপথ্যে যাদের সন্দেহ করা হতো, দীর্ঘদিনে তাদের ব্যবহৃত নানা ডিভাইসেও পরিবর্তন এসেছে। এতে প্রযুক্তিগত তদন্তও খুব একটা কাজে আসছে না। কোনো কোনো ঘটনায় খুনি শনাক্ত হলেও অবস্থান পরিবর্তন করায় খুঁজে পাওয়া যায় না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।