পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সিরাজগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা : সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায় টাকা চুরির মিথ্যা অভিযোগে ১২ বছরের শিশু রফিকুল ইসলাম আপেলকে ধরনার সাথে ঝুলিয়ে প্রায় ১০ ঘণ্টাব্যাপী নারকীয় কায়দায় নির্যাতন করেছে প্রভাবশালীরা। তাকে চিকিৎসার জন্য গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শিশু আপেল ওই উপজেলার সগুনা ইউনিয়নের কুন্দুইল পূর্বপাড়ার দরিদ্র কৃষক জায়েদুল ইসলামের ছেলে। অভিযোগে প্রকাশ, উপজেলার কুন্দইল পূর্বপাড়া গ্রামের প্রভাবশালী মমিনের দেড় লাখ টাকা চুরির মিথ্যা অপবাদে গত বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এ নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার বিকেলে সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালের অর্থপেডিক বিভাগে গিয়ে কথা হয় নির্যাতিত শিশু আপেলের সাথে। এ প্রতিবেদকের কাছে আপেল বর্ণনা করতে থাকে ভয়াল সেই নির্যাতনের কথা। এ সময় ভয় আর আতংক তাকে ঘিরে ধরে। এসময় এ প্রতিবেদক অভয় দিলে সে জানায়, ২৬ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে সে তার বাড়ির পাশে বসেছিল। এমন সময় ওই গ্রামের মৃত মকবুল সরকারের ছেলে আব্দুল হান্নান তাকে ডেকে নিয়ে প্রতিবেশী মৃত মকবুল সরকারের ছেলে আব্দুল মমিনের বাড়িতে নিয়ে যান। এ সময় ওই বাড়িতে একই গ্রামের বাকের খার ছেলে মঞ্জিল, মজিদ, তৈজুদ্দিন, মৃত আলতাফ কেরানীর ছেলে রসুল, মৃত ময়দান সরকারের ছেলে মঈনুল, অলি, মৃত চুনুর ছেলে মোজদার, মৃত মহসীন সরকারের ছেলে মোয়াজ্জেম হোসেনসহ সবাই আব্দুল মমিনের বাড়ি থেকে গত বুধবার রাতে চুরি হওয়া দেড় লাখ টাকা শিশু আপেল চুরি করেছে বলে অভিযোগ করে তা ফেরত দিতে বলে। একথা শুনে শিশু আপেল টাকা নেয়নি বলে জানালে শুরু হয় তার উপর অমানবিক নির্যাতন। শিশু আপেলের ভাষ্যমতে প্রথমে মঞ্জিল তাকে লাঠি দিয়ে হাতে পায়ে পিটাতে শুরু করে। উপস্থিত উল্লেখিত ব্যক্তিরা একে একে এলোপাথারি মারপিট শুরু করে। কিন্তু শত কাকুতি-মিনতি করেও পাষ-দের মন গলাতে পারেনি। পরে দু’হাত ঘরের ধরনার সাথে উঁচু করে বেঁধে তার উপর শুরু করে নির্যাতন। চুরির স্বীকারোক্তি না পেয়ে তাদের অত্যাচারের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। লেপ-তোষক সেলাই করা সুঁচ দিয়ে তার হাতে-পায়ের আঙুলে ঢুকিয়ে চুরির স্বীকারোক্তি নেয়ার চেষ্টা করে। এতেও কোনো ফল না পেয়ে নির্যাতনের ধরন আবারো পাল্টে সাড়া শরীওে বৈদ্যুতিক শক দিতে শুরু করে। তাদের এমন পৈশাচিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে এক পর্যায়ে চুরি করেছে বলে শিশু আপেল স্বীকার করে। তখন নির্যাতনকারীরা টাকা বেড় করতে আপেলকে নিয়ে তার বাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি চালিয়ে টাকা না পেয়ে আবারও শুরু করে পৈশাচিক নির্যাতন। এসময় নির্যাতনকারীরা তার নাকের ভিতর গরম পানি ঢালতে থাকে। সে জ্ঞান হারিয়ে ফেললেও তাদের নির্যাতনের মাত্রা একটুও কমেনি। এসব বর্ণনা করতে গিয়ে শিশু আপেল ভয়ে বার বার আঁৎকে ওঠে। তাকে সান্ত¦না ও অভয় দিলে আবারো শুরু করে বাকি নির্যাতনের বর্ণনা। এক পর্যায়ে বৈদ্যুতিক কাজে ব্যবহৃত প্লাস দিয়ে বাম কানের খানিক অংশ ছিড়ে ফেলা হয়। এ সময় আপেলের আর্তচিৎকারে প্রতিবেশীরা ওই নির্যাতনকারীদের কাছ থেকে শিশুটিকে বাঁচানোর জন্য আকুতি জানালেও কোনো কাজ হয়নি। যেই শিশুটিকে ছেড়ে দিতে বলে ওই নির্যাতনকারীরা তার কাছেই চুরি যাওয়া দেড় লাখ টাকা দাবি করে। এ ব্যাপারে কথা হয় নির্যাতিত শিশু আপেলের বাবা জায়েদুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, নির্যাতনকারীরা এলাকায় অত্যন্ত প্রভাবশালী। তারা অন্যায় কিছু করলেও কেউ তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায় না। আমার ছেলে আপেলকে তারা বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে মিথ্যা চুরির অপবাদ দিয়ে অমানষিক নির্যাতন করেছে। আমার ছেলেকে মুমূর্ষু অবস্থায় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে তাড়াশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। সেখানে ছেলের অবস্থার উন্নতি না হলে মঙ্গলবার দুপুরে সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করে। এ বিষয়ে থানার ওসি সাহেবের কাছে আমার ছেলেকে নির্যাতনের বিষয়ে অভিযোগ করলেও তিনি এখনো অভিযোগটি এজাহার হিসেবে রেকর্ড করেননি। এ ব্যাপারে তাড়াশ থানার ওসি এটিএম আমিনুল ইসলাম শিশু আপেলের নির্যাতনের ঘটনা স্বীকার করে বলেন, উভয় পক্ষ থানায় অেিভযোগ করেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।