পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রশ্নবিদ্ধ ডিজিটাল হজ ব্যবস্থাপনা : তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠিত
শামসুল ইসলাম : গত হজে পরিচালক হজ-এর চরম কেলেংকারির ঘটনায় ডিজিটাল হজ ব্যবস্থাপনা এখন প্রশ্নবিদ্ধ। সরকারের ডিজিটাল হজ ব্যবস্থাপনার গোটা প্রক্রিয়াকে ফাঁকি দিয়ে ৭৫১ জন বেসরকারী হজযাত্রীকে হজে পাঠানো হয়েছে। অত্যন্ত ঠা-া মাথায় আশকোণাস্থ হজ অফিসের সিন্ডিকেট চক্র উল্লেখিত হজযাত্রীদের কোনো প্রকার প্রাক-নিবন্ধন ও চূড়ান্ত নিবন্ধন ছাড়াই অবৈধভাবে হজে পাঠিয়ে মোটা অংকের বকশিস হাতিয়ে নিয়েছে।
নিবন্ধনবিহীন এসব হাজী হজ শেষে দেশে ফিরেছে কি না তা’ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। দীর্ঘ দিন যাবত হজ অফিসের একই চেয়ারে বসে সিন্ডিকেট চক্র হজ মৌসুমে নানা অপকর্মের সাথে জড়িত হয়ে কালো টাকার মালিক বনে গেছে। পরিচালক হজ ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামালও এই সিন্ডিকেট চক্রের বাইরে যেতে পারেননি। ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান এ সিন্ডিকেট চক্রের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছেন। ধর্মমন্ত্রী সরকারী বিধি ভঙ্গ করে ই-হজ সিস্টেমের বাইরে নিবন্ধনবিহীন ৭৫১ জন হজযাত্রীকে কীভাবে হজে পাঠানো হয়েছে এবং এ ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোঃ হাফিজ উদ্দিনকে আহবায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। তদন্ত কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হচ্ছেন, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব (হজ) মোঃ জাকের হোসাইন ও সিনিয়র সহকারী সচিব রুহুল আমিন। তদন্ত কমিটি গত সোমবার আশকোণাস্থ হজ অফিসে সরেজমিনে তদন্ত করে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্যাদির সন্ধান পেয়েছে। তদন্ত কমিটি কঠোর সতর্কতার সাথে তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। গতকাল ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক হাফিজ উদ্দিনের সাথে তার দপ্তরে সাক্ষাতকালে ৭৫১ জন হজযাত্রীকে দুর্নীতির মাধ্যমে হজে প্রেরণ প্রসঙ্গে তিনি কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। উপ-সচিব (হজ) জাকের হোসাইনও তদন্তের স্বার্থে এ প্রসঙ্গে মুখ খুলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
হজ মৌসুমে পরিচালক হজ ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল রিপ্লেসমেন্ট-এর একজন হজযাত্রীর ডিও লেটার ইস্যু করতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে এক সপ্তাহ পর্যন্ত যাচাই-বাছাই করেছেন। গ্রাম-গঞ্জের হাসপাতালগুলোর ডাক্তারদের কাছে একাধিক বার ফোন করে হজযাত্রীদের মেডিকেল সার্টিফিকেট শনাক্ত করেছেন। এর আগে রিপ্লেসমেন্টের হজযাত্রীদের ডিও ইস্যু করা হতো না। কিন্তু প্রাক-নিবন্ধন ও চূড়ান্ত নিবন্ধন ছাড়াই কীভাবে পরিচালক হজ ৭৫১জন হজযাত্রীর ডিও লেটার ইস্যুর মাধ্যমে হজ ভিসা করিয়ে হজে পাঠিয়েছেন। হাবের শীর্ষ পর্যায়ের একজন নেতা এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। যাচাই-বাছাই না করেই পরিচালক হজ-এর ডিও লেটার দিয়ে এবার ঢাকাস্থ সউদী দূতাবাস থেকে হজ ভিসা সংগ্রহ করে নিবন্ধনবিহীন হজযাত্রীদের হজে পাঠানোর ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে। অভিযুক্ত হজ এজেন্সিগুলো হজ অফিসের অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের হজযাত্রী প্রতি মোটা অংকের বকশিস দিয়ে প্রাক-নিবন্ধন ও চূড়ান্ত নিবন্ধন ছাড়াই এসব হজযাত্রীকে নির্বিঘেœ হজে পাঠিয়েছে।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নিয়োগপ্রাপ্ত আইটি ফার্ম বিজনেস অটোমেশন লিমিটেডের পরিচালক ও হজ অফিসের সাবেক পরিচালক (হজ) বজলুল হক বিশ্বাস নিবন্ধনবিহীন ৭৫১জন হজযাত্রীকে সরকারী বিধি তোয়াক্কা না করে ডিও লেটার ইস্যু করে হজে পাঠানোর দূর্নীতির জন্য বর্তমান পরিচালক হজ ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামালকে দায়ী করেছেন। গতকাল তিনি ইনকিলাবকে বলেন, আইটি ফার্ম বিজনেস অটোমেশন সরকারের সাথে চুক্তি মোতাবেক হজযাত্রীদের প্রাক-নিবন্ধন এবং প্রাক-নিবন্ধিত হজযাত্রীদের চূড়ান্ত নিবন্ধন করে থাকে। নিবন্ধনের পরে হজযাত্রীদের একটি ডাটাবেইজ তৈরি করে দেয়া হয়। উল্লেখিত ডাটাবেইজ ব্যবহার করে হজ অফিস ঢাকা ডিও-এর মাধ্যমে হজ এজেন্সির হজযাত্রীদের ভিসা সংগ্রহ করে। তিনি বলেন, আইটি ফার্ম কর্তৃক তৈরিকৃত তথ্য ভান্ডারে নিবন্ধিত হজযাত্রীদের তালিকার সঙ্গে মিলিয়ে হজ অফিস থেকে পাসপোর্ট ও তালিকাসহ ভিসার জন্য সউদী দূতাবাসে ডিও দেয়া হলে রেজিস্ট্রেশন বিহীনভাবে এসব হজযাত্রীর হজে যাওয়ার কেলেংকারি ঘটনা ঘটতো না। হজ অফিস হজ ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এইচ এমআইএস) এ স্থানান্তরিত হজযাত্রীদের তথ্যের সঙ্গে মিলিয়ে দেখলে কোন অনিবন্ধিত হজযাত্রীর ভিসা পাওয়ার সুযোগ থাকতো না। এ কাজটি সম্পন্ন করতে হজ অফিস অজ্ঞাত কারণে নিরব ভূমিকা পালন করছে। এসব বিষয়ে আইটি ফার্মের কোনো প্রকার সম্পৃক্ততা নেই বলেও সাবেক উপ-সচিব (হজ) ও আইটির পরিচালক বজলুল হক বিশ্বাস উল্লেখ করেন। হজ অফিসের পরিচালক হজ ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল রাতে এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে ইনকিলাবকে বলেন, টাকা খেয়ে ৭৫১ জন হজযাত্রীর ডিও ইস্যু করার অভিযোগ সঠিক নয়। নিবন্ধনবিহীন এসব হজযাত্রীর ডিও’র জন্য যারা ইচ্ছাকৃত ভাবে এ ঘটনার সাথে জড়িত তাদের খুঁজে বের করে শাস্তি দেয়া দরকার। হজ ভিসার ডিও ইস্যু প্রসঙ্গে পরিচালক হজ বলেন, প্রতিটা ডিওর খুঁটি নাটির বিষয় আমার দেখার কথা না। তিনি বলেন, এসব হজযাত্রীদের মোফাকে পাঠিয়েছে, তা’ দেখতে হবে। পরিচালক হজ বলেন, কিছু হলেই হাব নেতারা পরিচালক হজের বিরুদ্ধে দুর্নীতির কথা তোলেন। তিনি বলেন, আইটি ফার্ম বিজনেস অটোমেশন হজযাত্রীদের ডাটা এন্ট্রি টালি করে। তবে আইটি ফার্মের সীমাবদ্ধতা আছে বলেও পরিচালক হজ স্বীকার করেন। এবার হজে প্রাক-নিবন্ধন ও চূড়ান্ত নিবন্ধন ছাড়াই ডিজিটাল চুরি মাধ্যমে ৭৫১ হজযাত্রীকে হজে পাঠানো হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে গতকাল ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সহকারী প্রোগ্রামার মো. নাজমুল হাসান বলেন, এসবি’র চোখ ফাঁকি দিয়ে কীভাবে এসব হজযাত্রী হজে গিয়েছে তা’ আমাদের বোধগম্য নয়। ৭৫১ জনের মধ্যে বেশ কিছু হজযাত্রী হজে যায়নি বলেও তিনি দাবি করেন। দেড় শতাধিক হজ এজেন্সি এ কেলেঙ্ককারি সাথে জড়িত বলে তিনি স্বীকার করেন। সরকার গঠিত তদন্ত কমিটি এক সপ্তাহের মধ্যে এ ব্যাপারে তাদের তদন্ত রিপোর্ট ধর্ম সচিবের কাছে পেশ করবে। যেসব বেসরকারী হজ এজেন্সিগুলো উল্লেখিত হজ কেলেঙ্ককারি সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে হাব কী ব্যবস্থা নিচ্ছে এ বিষয়ে জানতে চেয়ে হাব মহাসচিব শেখ আব্দুল্লার সাথে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি পরে কথা বলবেন বলে জানান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।