পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশেষ সংবাদদাতা : নারীদের কাজগুলো পুরুষদের ভাগ করে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, যদি দু’জনের মধ্যে কাজ ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নেওয়া এবং ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে একসঙ্গে সময় কাটানো যায় তাহলে সংসারে একটা সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
রাজধানীতে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে গতকাল শনিবার বিকেলে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) উইমেন নেটওয়ার্কের পাঁচ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। বিশ্বে বাংলাদেশের নারীদের অবস্থান ৮৬তম থেকে ৬৪তম স্থানে এসেছে বলেও অনুষ্ঠানে তথ্য দেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশের পুরুষেরা এমনই অদ্ভূত ধরনের, দেখা গেল একই সঙ্গে দু’জন চাকরি থেকে এলেন। পুরুষ সদস্য বলেন উফ! আমি ভীষণ ক্লান্ত, এক কাপ চা বানিয়ে দাও তো। আর মেয়েদের কাজটা কী? ছেলেমেয়ে কোথায় কী করছে, রান্নাবান্না কী হলো। খাবার দিতে হবে, সবকিছু পরিষ্কার করতে হবে। তাকে একাই করতে হয়। এ ক্ষেত্রে পুরুষেরা যদি একটু সচেতন হন, তাহলে কিন্তু তার (নারীর) কষ্টটা একটু লাঘব হয়। যদি একজন রান্না করেন, খাবার পরিবেশন করেন, এরপর আরেকজন সাফ করার দায়িত্বটা নিতে পারেন। এতে লজ্জার কিছু নেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি এটা শিখেছি আমার ছেলের কাছে। আমি যখন আমার ছেলের কাছে গিয়েছি, দেখেছি ওরা দুজনই চাকরি করে বাসায় ফিরত। আমার বউমা রান্না করে খাবার সাজালো। এরপর খাওয়া-দাওয়া হলো। আমার ছেলে বলল, বাকি কাজটা এখন তার। সে নিজেই টেবিল তুলবে, সমস্ত হাঁড়িপাতিল ধুয়ে সবকিছু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে। তারপর একসঙ্গে বসে টেলিভিশন দেখবে, গল্পগুজব করবে, সেইভাবে তারা সময় কাটায়। কাজে সহযোগিতা করলে লজ্জার কিছু নেই। সংসারের কাজে পুরুষদের ‘না’ বলারও সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, পারি না বলার কোনো যৌক্তিকতা নাই। না পারলে শিখতে হবে।
‘যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমি বুঝি না। আমি রান্না করি শুনে সবাই অবাক হয় কেন? আমার রান্না করলে ছেলে-মেয়েরা পছন্দ করে। তাই আমি রান্না করি। প্রত্যেক মা-ই তাই করে। ব্যক্তিগত জীবনের আরও কথা জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এখন আমার নাতিরাও আমার কাছে আবদার করে। সেদিন নাতি বললো, আমি ভাত খাবো না, পোলাও খাবো। তোমার হাতের রান্না খাবো, আর আমি রান্না করতেই বাধ্য হলাম।
তিনি বলেন, আমাদের সমাজ পুরুষশাসিত। তাই পুরুষরা দ্রুত টায়ার্ড হয়ে পড়েন। কাজেই আর টায়ার্ড হবেন না বলে আশা করি। তারাও নারীদের কাজে সহযোগিতা করবেন। ‘মা’ হিসেবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুন্দর আগামী গড়তে কাজ করার জন্য প্রশাসনের নারী কর্মকর্তাদের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী তার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুব রহমানের স্মৃতিচারণ করে বলেন, অন্তত মৃত্যুর পর বাবার সাথে যদি দেখা হয় তখন যেন বলতে পারি, আপনার প্রিয় মানুষগুলোর জন্য এগুলো করে এসেছি।
বাবা-মা, ভাইসহ পরিবারের ১৮ জন নিকটাত্মীয়কে ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট হারানোর কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এই অবস্থায় কোনো মানুষ সুস্থ হয়ে দায়িত্ব পালন, এটা সকলে পারে না। ক্ষমতা আমাকে কিছুই দেবে না। ক্ষমতা একটা সুযোগ দেশের মানুষের সেবা করা, কল্যাণ করা। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন কর্মসূচি সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দ্রুত শেষ করতে কর্মকর্তাদের তাগাদা দেন প্রধানমন্ত্রী।
দুর্যোগ মোকাবেলায় সাধারণ মানুষের সাহসী ভূমিকার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা একদিকে উন্নয়নের, আরেকদিকে দুর্যোগ মোকাবেলার রোল মডেল। আমরা দেশটাকে সুন্দরভাবে গড়তে চাই, যেন আর ক্ষুধার্ত-বুভূক্ষ না থাকে।
তৃণমূলের মানুষের জীবনমানের উন্নয়নে গুরুত্ব আরোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু শহরভিত্তিক নয়, উন্নয়ন তৃণমূল পর্যন্ত করতে হবে। তৃণমূল পর্যন্ত ক্রয় ক্ষমতা বাড়াতে হবে। জনগণের উন্নয়ন না হলে সকল কষ্টই বৃথা যাবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার নারীদের উচ্চপদে নিয়োগ দিয়েছে। ১৯৯৬ সালে যখন সরকার গঠন করি তখন হাইকোর্টের বিচারপতি, সংসদে স্পিকার কিংবা কোনো জেলাতেও ডিসি পদে নারী কর্মকর্তা ছিলেন না। আমরা ক্ষমতায় এসে নারীদের উচ্চপদে নিয়োগ দিতে শুরু করি। এখন দেশের বিরোধী দলের নেতা, স্পিকার, সংসদ সদস্যসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং অন্যান্য ক্ষেত্রেও নারীদের উচ্চপদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। বিমান বাহিনী, সেনাবাহিনী নৌবাহিনীতেও নারীরা দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর পদেও নারী আছেন, বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটেও নারী ভিসি নিয়োগ দিয়েছি। তাদের যোগ্যতা কর্মক্ষেত্রে প্রমাণ করে বেশ প্রশংসা পাচ্ছেন তারা।
তিনি বলেন, আগে ভাবা হতো, নারীরা পুরুষের মতো উচ্চপদে সব কাজে দক্ষতার পরিচয় দিতে পারবে না। কিন্তু সব পদে মেয়েদের নিয়োগের ব্যবস্থা করেছি। তারা প্রমাণ করেছেন, তারাও পারেন। আমি বিশ্বাস করি নারীদের অগ্রগতি ছাড়া রাষ্ট্রের উন্নতি সম্ভব নয়, তাই এসব পদক্ষেপ নিয়েছি।
ইসলামে নারীর মর্যাদা সমুন্নত রাখা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে আজ সব ক্ষেত্রে নারীরা তাদের অর্জন নিশ্চিত করছে। তিনি বলেন, নারীদের এই এগিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।
খেলাধুলায় নিজের আগ্রহের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খেলাধুলায় নারীদের আগ্রহী করতে আমরা নানা পদক্ষেপ নিয়েছি। বর্তমানে ক্রিকেট, ফুটবল, ব্যাডমিন্টন, টেনিসসহ বিভিন্ন খেলায় বাংলাদেশের মেয়েরা অংশ নিচ্ছে এবং তারা বেশ ভালোও করছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।